দেনাপাওনা গল্পের বিষয়বস্তু রিভিউ। @farhanahossin
আজ আবসর সময়ে রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর এর দেনাপাওনা গল্পটা পড়েছি। তাই ভাবলাম এই গল্পটার বিষয়বস্তু নিয়ে একটা রিভিউ আপনাদের সাথে শেয়ার করি।
গল্পের প্রধান চরিত্র নিরুপমা। পাচ ছেলের পরে এক মেয়েকে পেয়ে রাম সুন্দর অনেক আনান্দিত ছিলেন। নিরুপমা ছিলো তার বাবা মায়ের চোখের মানি। নিরুপমা বিবাহ উপযোগী হলে তার বাবা রায় বাহাদুরের ছেলের সাথে নিরুপমার বিয়ে ঠিক করে। আর বিয়ের পণ নির্ধারণ করা হয়, ১০০০০ টাকা। এইদিকে পণের টাকা যোগার করতে গিয়ে নিরুপমার বাবা বিপদে পরেন,সময় মতো টাকা গুছিয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু সম্পুর্ন টাকা পরিশোধ করতে না পারায় রায়বাহাদুর তার ছেলের সাথে নিরুপমার বিয়ে দিতে বাধা দেন, কিন্তু পাত্র তার তার বাবার মতের বিরুদ্ধে নিরুপমাকে বিয়ে করে।
বিয়ের পরে নিরুপমার স্বামী তাকে তার শশুর বাড়ি রেখে কাজে ফিরে যায়। এদিকে নিরুপমার শাশুড়ী তার ওপর নানান রকম নির্যাতন শুরু করে। একদিন নিরুপমার বাবা তার মেয়ের সাথে দেখা করতে আসে, কিন্তু পনের ৬-৭ হাজার টাকা শোধ করতে না পারায় তাকে তার মেয়ের সাথে দেখা করতে দেওয়া হয় না। তার কিছুদিন পরে রাম সুন্দর ২-৩ হাজার টাকা ধার করে আনলে তাকে অপমান করে তারিয়ে দেওয়া হয়, তখন সে খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারে যে সম্পুর্ন টাকা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত সে তা তার মেয়ে কে নিজের বাড়ি নিয়ে রাখতে পারবে না।
নিরুপমার শাশুড়ী দিন দিন তার ওপর মানুষিক নির্যাতন শুরু করে। নিরুপমার শাশুড়ীর কাজের দাস দাসীরও নিরুপমার সাথে খারাপ আচরণ করতে শুরু করে। সব মিলিয়ে নিরুপমার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। সবসময়ের মানুসিক যন্ত্রণায় সে অসুস্থ হয়ে উঠে। কিন্তু তার অসুস্থতাকে তার শাশুড়ী সাজানো নাটোক বলে, নিরুপমাকে কোনো ডাক্তার দেখায় না।
অন্যদিকে নিরুপমার বাবা শশুড়বাড়িতে মেয়ের নির্যাতনের কথা চিন্তা করে উতলা হয়ে উঠে, এবং সে সিদ্ধান্ত নেয় গোপনে তার বাড়ি বিক্রি করে পণের টাকা পরিশোধ করে এবার সে তার মেয়েকে বাড়ি এনে রাখবে। কিন্তু, নিরুপমার দাদারা সব জেনে যায় এবং তারা রামসুন্দরকে অনেক বাধা দেয় কিন্তু কোনো লাভ হয় না। সমস্ত পরিবারটিকে নিরাশ্রয় করতে বাধা দিল নিরুপমা। সে স্পষ্ট বলল, সে এই বাড়ির বধূ, টাকার থলি মাত্র নয়। অর্থের বিনিময়ে তার প্রাণের মূল্য নির্ধারিত হতে পারে না। মেয়ের যুক্তির কাছে হার মেনে ফিরে গেল রামসুন্দর।
কিন্তু এই খবর দাসীদের মাধ্যমে নিরুপমার শাশুড়ী জানতে পেরে যায়,আর নিরুপমার ওপর আরো বেশি অত্যাচার শুরু করে। নিরুপমা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যায়, পরে একদিন বাড়িতে ডাক্তার আশে, সেই প্রথম এবং সেই শেষ। চিকিৎসার কোনো সুযোগ না দিয়ে নিরুপমার মৃত্যু ঘটলো। পরে অবশ্য, রায়বাড়ির যথাযথ মর্যাদা রেখে মহা ধুমধামের সঙ্গে এ-বাড়ির বধুর অন্তিম সংস্কার করা হয়েছিল। জীবিতকে যতই লাঞ্ছনা করা হোক, মৃতের প্রতি অমর্যাদা শাস্ত্রবিরুদ্ধ মহাপাপ। গল্পের উপসংহারে এই ভয়ঙ্কর সমাজ সমস্যার কুৎসিত রূপটি উদঘাটিত হয়েছে। নিরুপমা স্বামী নতুন সংসার পাতার জন্য স্ত্রীকে তার কাছে পাঠিয়ে দেবার জন্য বাড়িতে চিঠি দিয়েছিল। উত্তরে নিরুপমার শাশুড়ি জানিয়েছিল, " এবারে বিশ হাজার টাকা পণ এবং হাতে হাতে আদায়।" এই শেষ বাক্যে পণপ্রথার বিরুদ্ধে লেখক, রবীন্দ্রনাথের বিদ্রূপ ও শৈল্পিক প্রতিবাদ উচ্চারিত হয়েছে।
আজকে এই পর্যন্তই। আর আমার লেখার মাঝে কোনো ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আল্লাহ হাফেজ।