দেওয়ানি মামলার ধাপ : পর্ব-০১
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি আল্লাহর অশেষ রহমতে সকলেই ভালো আছেন। আল্লাহর রহমতে আলহামদুলিল্লাহ ভালই আছি। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে জানতে হচ্ছে যে, আমার হাতের ফোনটি হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়ার কারণে আপনাদের মাঝে ছিলাম না। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। অবশেষে সে সুস্থ্য হয়ে আবার আমার হাতে এসে পৌঁছেছে। ইনশাআল্লাহ এখন থেকে নিয়মিত আপনাদের সঙ্গে থাকতে পারবো।
নানা করনে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে দেওয়ানি মামলার সংখ্যা, ফলে অনেকেই জানতে চান দেওয়ানি মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে। আজ আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করতে চলেছি একটি দেওয়ানী মামলার বিভিন্ন ধাপ সম্পর্কে। তবে দেওয়ানি মামলার সকল ধাপ সমূহ আলোচনা করতে গেলে লেখাটি অনেক বড় হয়ে যাবে। তাই আমি এই বিষয়ে পর্ব আকারে আলোচনা করবো। তারই ধারাবাহিকতায় আজ লিখতে বসেছি দেওয়ানি মামলার বিভিন্ন ধাপ এর ১ম পর্ব। আশা করি লেখাটি পড়ার পর দেওয়ানি মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাবেন।
দেওয়ানি মামলা
জমির মালিকানা বা দখলের বিষয়ে কিংবা কোন অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে যে মামলা করা হয় তাকে বলা হয় দেওয়ানি মামলা বা সিভিল স্যুট।
- শুরুতেই বলে রাখি, একটি দেওয়ানী মামলা দায়ের থেকে বিচার শেষ হওয়া পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় ১৯০৮ সালের সিভিল প্রসিডিউর কোড বা দেওয়ানি কার্যবিধিতে বর্ণিত বিধি-বিধান দ্বারা। সিভিল প্রসিডিউর কোডটির সংক্ষিপ্ত নাম সিপিসি(CPC).
একটি দেওয়ানী মামলা দায়ের থেকে নিষ্পত্তি পর্যন্ত তিনটি প্রধান ধাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
ধাপ তিনটি হলো:
- ১| প্রাক-বিচার পর্ব (Pre-trial Stage)
- ২| বিচার পর্ব (Trial Stage)
- ৩| বিচার পরবর্তী পর্ব (Post-trial Stage)
আজ আমি আপনাদের সাথে শুধুমাত্র প্রাক-বিচার পর্ব (Pre-trial Stage) সম্পর্কে আলোচনা করব।
প্রাক-বিচার পর্ব (Pre-trial Stage)
প্রাক বিচার পর্বের আবার কয়েকটি ধাপ রয়েছে, ধাপগুলো হল:
- ক| মামলা দায়ের (আরজি পেশ),
- খ| সমন ইস্যু,
- গ| লিখিত জবাব দাখিল,
- ঘ| বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি,
- ঙ| ইস্যু গঠন,
- চ| চূড়ান্ত শুনানির তারিখ নির্ধারণ।
এবারে এই ধাপগুলো সম্পর্কে আপনাদের প্রাথমিক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো।
ক| মামলা দায়ের (আরজি পেশ):
একটি দেওয়ানি মামলার প্রাক বিচার পর্ব শুরু হয় মামলা দায়ের এর মধ্য দিয়ে। দেওয়ানি মামলা দাখিল করতে হয় আরজি দাখিলের মাধ্যমে। আরজি কে ইংরেজিতে বলা হয় “Plaint”। যিনি দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন তাকে বলা হয় বাদি (Plaintiff), আর যার বিরুদ্ধে মামলা করা হয় তাকে বলা হয় বিবাদী(Defendant)।
আরজিতে বাদী ও বিবাদীর নাম, ঠিকানা উল্লেখ সহ মামলার সম্পত্তি বা বিষয়বস্তুর পুরো বিবরণ, মামলা দায়ের এর কারণ ও বাদী কি কি প্রতিকার চান তা সুনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়, সাথে সমর্থিত দলিল গুলোর মুলকপি এবং নির্ধারিত নিয়মে কোর্ট ফি সহ অন্যান্য খরচাদি জমা দিতে হয়।
খ| সমন ইস্যু:
মামলা দায়েরের পর এই মামলার বিষয়টি অবগত করা সহ আরজি এর বিপরীতে যদি কোন দাবি দাওয়া থাকে তা আদালতে এসে বলার জন্য ডাকা হয় বিবাদীকে। এজন্য মামলা দায়েরের পর বিবাদীর উদ্দেশ্যে আদালত থেকে ইস্যু করা হয় সমন। এই সমনের খরচা বহন করতে হয় বাদী পক্ষকে।
গ| লিখিত জবাব দাখিল:
বিধি মোতাবেক আদালত কর্তৃক সমন পাওয়ার পর বিবাদী যদি আদালতে উপস্থিত না হন তাহলে মামলা চলে যেতে পারে একতরফা বিচারে। সে ক্ষেত্রে মাঝের কয়েকটি ধাপ বাদ দিয়েই মামলা চলে যাবে ইস্যু গঠনের ধাপে। তবে সমন পাওয়ার পর বিবাদী নিজেও আদালতে হাজির হতে পারেন কিংবা অ্যাডভোকেট এর মাধ্যমে লিখিত বক্তব্য প্রদান করতে পারেন। এই লিখিত বক্তব্যকে বলা হয় লিখিত জবাব। ইংরেজিতে বলা হয় “Written Statement” সংক্ষেপে বলা হয় W.S। তবে লিখিত জবাবে বিবাদী বাদীর আংশিক দাবি মেনে নিতে পারেন বা পুরোটাই অস্বীকার করতে পারেন অথবা কিছু দাবি মানতে পারেন আবার কিছু পাল্টা দাবিও করতে পারেন। বিবাদীর পাল্টা দাবি থাকলে লিখিত জবাব দাখিলের পর মামলা চলে যায় পরের ধাপে।
ঘ| বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি:
জবাব দাখিলের পরবর্তী ধাপ হলো বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি। ইংরেজিতে এই ধাপটিকে বলা হয় “Alternative Dispute Resolution” সংক্ষেপে “ADR”। মূলত বিচারের দীর্ঘ প্রক্রিয়া এড়ানোর পাশাপাশি আদালত ও পক্ষদের খরচ ও সময় বাঁচে সেই উদ্দেশ্যে এই বিকল্প ব্যবস্থাটির প্রবর্তন করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় আদালত নিজেই উদ্ভূত বিরোধ বিকল্পভাবে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করেন কিংবা আদালত লিগ্যাল এইড অফিসার বা উভয় পক্ষের এ্যাডভোকেটদের অথবা আদালতের প্যানেল ভুক্ত কোন মধ্যস্থতাকারীর নিকট মধ্যস্থতার জন্য পাঠাতে পারেন। কিন্তু নানান সীমাবদ্ধতার কারণে এই প্রক্রিয়ায় দেওয়ানি বিরোধ খুব একটা নিষ্পত্তি হয় না বললেই চলে। যার ফলে মামলাটি পরের ধাপে চলে যায়।
ঙ| ইস্যু গঠন:
এই ধাপে আদালত বিচার্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকেন। একপক্ষের দাবি এবং অপরপক্ষের অস্বীকৃতির উপর ভিত্তি করেই নির্ণয় করা হয় বিচার্য বিষয়। বিচার্য বিষয় নিরূপণ করাকে দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে বলা হয় ইস্যু গঠন। ইংরেজিতে বলা হয় “Framing of Issues”। ইস্যু গঠনের সময় মূলত কয়েকটি প্রশ্ন নির্ধারণ করা হয়, বিচারের সময় যে প্রশ্নগুলোর উত্তর আদালতকে অবশ্যই জানতে হয় রায় প্রদানের ভিত্তি হিসেবে।
চ| চূড়ান্ত শুনানির তারিখ নির্ধারণ:
ইস্যু গঠনের পর আদালত মামলার চূড়ান্ত শুনানির জন্য একটি তারিখ ধার্য করে থাকেন। চূড়ান্ত শুনেনিকে ইংরেজিতে বলা হয় “Peremptory Hearing”, সংক্ষেপে “PH”। আদালত অঙ্গনে এই PH কথাটি বেশি প্রচলিত। এই চূড়ান্ত শুনানির তারিখ ধার্য্য করার মধ্য দিয়েই শেষ হয় দেওয়ানী মামলার প্রথম ধাপ তথা প্রাক-বিচার পর্ব বা Pre-trial Stage.
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
আপনার পোস্টটা দেখে অনেক কিছু শিখতে পারলাম। অনেক কিছু অজানা জিনিস জানতে পারলাম। ভালো লাগলো পোস্টটা খুব। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটা লেখা পোস্ট করার জন্য । ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। ইনশাআল্লাহ আপনিও ভালো থাকবেন
দেওয়ানি মামলা যেটা আপনার পোষ্টের মাধ্যমে এই প্রথম জানতে পারলাম। আসলে আমি এই ধরনের মামলা করা এবং এই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানা কখনোই হয়নি। তবে আপনি বেশ সুন্দরভাবেই বিষয়টি আমাদের সাথে উপস্থাপন করেছেন। ধন্যবাদ শিক্ষনীয় একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য। ভালো থাকবেন।
আসলে জমি জমার যে কোনো প্রকার সমস্যার সমাধান করতে গেলে আপনাকে অফিসিয়ালি মামলায় যেতে হবে। তাই আমি মনে করি প্রত্যেকটি মানুষের মামলা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা উচিত।
আপনি একটু ব্যতিক্রমধর্মী পোস্ট লিখেছেন আজ, সত্যি বলতে এ সম্পর্কে কোনো ধারনাই পূর্বে ছিলো না আমার। মামলা, আদালত এসবের নাম শুনলেই কেন জানি ভয় করে😀।।
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য।।
এই পোষ্টের মাধ্যমে দেওয়ানী মামলার ধাপগুলো অনেক সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। এ বিষয়ে কোন কিছু জানা ছিল না। আপনার পোষ্টের মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আশা করছি পরবর্তী পর্বে আরো নতুন কিছু বিষয় জানতে পারবো। আপনার জন্য রইল অনেক শুভকামনা, ভালো থাকবেন।