আমার মামাতো ভাই গুলজার এর স্মৃতিচারণ
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।
আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আর আজকের পোস্ট হচ্ছে আমার মামাতো ভাই গুলজার হোসেনের মৃত্যুর স্মৃতিকে কেন্দ্র করে। আমার এই মামাতো ভাই আমার প্রায় সমবয়সের ছিল। এই হবে হয়তো আমার থেকে প্রায় চার পাঁচ মাসের কিংবা ছয় মাসের বড়। আমরা একই সাথে নানা বাড়িতে ভীষণ দুষ্টামি করতাম। কাঁঠাল গাছ থেকে কাঁঠাল পেরে খাওয়া, নারিকেল গাছ থেকে নারিকেল পেরে খাওয়া, আম গাছ থেকে আম পেড়ে খাওয়া, পুকুরে গিয়ে বরশি দিয়ে মাছ ধরা, আবার একই সাথে দুইজনে পুকুরে সাঁতার কেটে কেটে গোসল করা।
শুধু আমরা দুজনে নয় বরং আমার নানার বাড়িতে গেলে, আমার প্রায় সবগুলো মামাতো ভাই-বোনদের সাথে আমার কাটানো সময় গুলো খুবই সুন্দর ছিল। তবে যেহেতু গুলজার আমার সমবয়সের ছিল, এজন্যই তার সাথে আমার ভাবটাও একটু বেশি ছিল। তো আমার এই মামাতো ভাইটি খুবই উদাসীন প্রকৃতির ছিল। যার কারণে তার কাছে লেখাপড়া একদমই ভালো লাগত না। কখনো সে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনাতো করতোই না, ভালো মত স্কুলেও যাতায়াত করত না। একদিন আমার মামা তার এরকম আচরণ দেখে খুব রাগারাগি করলে, সে মামার ওপরে রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে ঢাকায় চলে গিয়েছিল।
তখন ওর বয়স ছিল খুব সম্ভবত ১৫ থেকে ১৬ বছর। আর ও যে ঢাকায় চলে গিয়েছিল তা আমার মামা সহ নানা বাড়ির কেউই চিন্তাও করতে পারেনি। তখনকার সময় মোবাইলের ব্যবহার না থাকার কারণে, তৎক্ষণাৎ ভাবে জানতেও পারেনি গুলজার কোথায় ছিল। তাই বাড়ির সবাই খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ ছিল। তো এক মাস কেটে যাওয়ার পর গুলজার একদিন বাড়িতে চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিল, সে ঢাকায় গিয়ে একটি কোম্পানিতে কাজ নিয়েছিল। এভাবেই তার ঢাকা থাকাকালীন সময় প্রায় এক থেকে দেড় বছর কেটে যাওয়ার পর, হঠাৎ একদিন আমার নানার বাড়িতে একটি লোক আসে, যে কিনা গোলজারের সাথে একই কোম্পানিতে ও একই ম্যাচে থাকতো। আর সে এসে খবর দিয়েছিল গোলজার ভিশন অসুস্থ।
আর এ কথা শুনে আমার মামা সহ আমার বেশ কয়েকজন আত্মীয় গোলজার কে দেখার জন্য ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। তবে আমার এ সকল আত্মীয় ঢাকায় গিয়ে গুলজার এর অবস্থা দেখে খুবই কষ্ট পেয়েছিল। কেননা গোলজার রাতের বেলায় কার এক্সিডেন্ট করে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। আমার মামা গুলজারের এমন অবস্থা দেখে ভীষণ কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিল। এভাবেই হাসপাতালে প্রায় তিন দিন কেটে যাওয়ার পর, অবশেষে গোলজার মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে লড়তে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিল।
আর যখন আমার মামাতো ভাই গুলজার মারা গিয়েছিল, তখন তার চেহারাটি নাকি খুবই বিভৎস হয়ে গিয়েছিল। এক্সিডেন্টে তার এমনই পরিস্থিতি হয়েছিল, যে কেউ দেখলেই নাকি ভয় পেয়ে যেত। এমত অবস্থায় একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে আমার মামা ও আত্মীয়-স্বজন সবাই মিলে তাকে আমার নানার বাড়িতে নিয়ে এসেছিল। আর যখন আমার মামার বাড়িতে গুলজারের লাশ নিয়ে এসেছিল, তখন সেই মুহূর্তে আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। সকলের কান্নাকাটি ও আর্তচিৎকার আজও যেন আমার কানে ভেসে বেড়াচ্ছে। গুলজার এর মায়ের বুকফাটা আহাজারি সত্যিই খুবই কষ্টের ছিল। একদম তরতাজা একটি প্রাণ নিমিষেই যেন শেষ হয়ে গিয়েছিল।
আমার মামাতো ভাই গুলজার কে যখন দাফন কাফনের জন্য গোসল করাতে শুরু করেছিল, তখন সেখানে থাকা দুই এক জন ব্যক্তি গুলজারের এমন বিভৎস এক্সিডেন্টের শরীর দেখে খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিল। যার কারণে তারা গোসল করাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। পরবর্তীতে আবার যারা সাহসী ছিল, তাদের মধ্যে গুলজারকে গোসল করাতে রাজি হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে গোলজারের দাফন কাফন শেষে, আমার নানার পারিবারিক কবরস্থানে নিয়ে কবর দেয়া হয়েছিল। কি মর্মান্তিক এক্সিডেন্ট যার কারনে গোলজারের সমস্ত চেহারাটাই বীভৎস হয়ে গিয়েছিল। যা মনে করলে আজও বুকের ভেতর হু হু করে ওঠে।
আজ আমি আছি, আছে আমার অন্যান্য মামাতো ভাই ও বোনেরা। শুধুমাত্র আমাদের মাঝে নেই গুলজার নামের সেই মামাতো ভাইটি। আজ আমার পরিবারে যখন সবাই মিলে, গুলজার এর নাম নিয়ে অনেক গল্প করছিল, তখন আমার তার কথা খুবই মনে পড়ে যাচ্ছিল। তাই ভাবলাম আজ না হয় আমার সেই মামাতো ভাইয়ের করুন পরিস্থিতির কথা গুলো আপনাদের মাঝে তুলে ধরি। আর আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে পারলে আমার মনটা হয়তো কিছুটা হালকা হয়ে যাবে। কেননা আপনারা সকলেই আমার পরিবারের সদস্য।আপনারা সকলেই আমার মামাতো ভাই গুলজার এর জন্য দোয়া প্রার্থনা করবেন, যাতে করে সে জান্নাতুল ফেরদৌস লাভ করতে পারে।
আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপনার মামাতো ভাইয়ের কথা শুনে খুব খারাপ লাগলো। এত ছোট বয়সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। তাও কোম্পানিতে চাকরি করে ভালো একটা পজিশনে যাওয়ার চেষ্টা করছিল কিন্তু অ্যাক্সিডেন্টে তার সবকিছু কেড়ে নিল। এমন এক্সিডেন্ট সন্তানের দেখলে বাবা আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। অনেকে অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেলে তাদের শরীরের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। এজন্যই তো ভয়ে লোকজন গোসল করাতে চাচ্ছিল না। এরকম মৃত্যু গুলো সারা জীবন কষ্ট দেয় কাছের মানুষদেরকে।
আপু, আমার মামাতো ভাই গুলজারের মৃত্যুর সময় তার শরীরের অবস্থা এতটাই ভয়ানক হয়েছিল, যা দেখে অনেকেই ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তার মৃত্যুর কথা আজও মনে পড়লে আমার কাছে খুবই খারাপ লাগে।
আপনার মামাতো ভাই গুলজার হোসেন এর স্মৃতি স্মরণ পরে অনেক খারাপ লাগলো। আপনার মামাতো ভাই আপনার সমবয়সী। বন্ধুর মতো চলাফেরা করেছেন। আসলে রাগ করে গেলেও কখনো তার মা-বাবার মন থেকে মুছে যায় নাই। কিন্তু এক্সিডেন্ট করে যখন ঢাকায় হাসপাতালে তখন তার মা-বাবার মন অনেক খারাপ লাগলো। তবে এভাবে পৃথিবী থেকে চলে যাবে এটা কল্পনাই করা যায় না। তার মৃত্যুর স্মৃতি স্মরণ পোষ্ট পড়ে সত্যি ই আমার নিজের কাছে অনেক খারাপ লাগলো।
হ্যাঁ আপু, আমি আমার মামাতো ভাইয়ের সাথে বন্ধুর মতো চলাফেরা করতাম। তাই তার মৃত্যুর কথা মনে পড়লে এখনও আমি খুবই ব্যথিত হই।
আপন মানুষগুলো হঠাৎ করে মারা গেলে অনেক খারাপ লাগে। কারণ স্বাভাবিক মৃত্যু এবং ও স্বাভাবিক মৃত্যু অনেক পার্থক্য আছে।গুলজার আপনার মামাতো ভাই এবং আপনার সমবয়সী। ছোটকাল থেকে একসাথে বড় হয়েছেন এই কারণে তার কথা আর বেশি মনে পড়বে। যদিও সে রাগ করে মৃত্যুর আগে বাড়ি থেকে বের হয়ে ঢাকা ছিলেন। অ্যাক্সিডেন্টে তিনদিন পর সেই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেল। সত্যি আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক খারাপ লাগলো। সত্যি আপনার পোস্টটি পড়ে আমার নিজের আপনজন হারানোর কথা বেশি মনে পড়ে গেল।
আমার মামাতো ভাইয়ের মৃত্যুর কথা মনে পড়লে আজও আমার কাছে খুবই খারাপ লাগে। কেন না সে আমার কাছে ভাইয়ের থেকেও বন্ধুর মত ছিল বেশি। মহান আল্লাহতালার কাছে তার জন্য কামনা করছি, সে যেন জান্নাতুল ফেরদৌস লাভ করেন।
মানুষের জীবনটা আসলেই ক্ষণস্থায়ী। কখন কিভাবে কার মৃত্যু ঘটবে, সেটা আসলে কল্পনাও করা যায় না। তবে এমন অস্বাভাবিক মৃত্যু মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় মারাত্মক এক্সিডেন্ট করার পর অনেক মানুষের চেহারা একেবারে বিভৎস হয়ে যায়। আপনার মামাতো ভাই গোলজারের এমন মৃত্যুর কথা জেনে,সত্যিই খুব মর্মাহত হলাম। আল্লাহ যেন ওপারে উনাকে খুব ভালো রাখে। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
বেদনাদায়ক একটি ঘটনা।আসলে এমন অকাল মৃত্যু গুলো কোন ভাবেই মেনে নেয়া সম্ভব হয় না।একটি দূর্ঘটনা সারাজিবনের কান্না কথাটি চিরন্তন সত্য এবং বাস্তব।খুব সুন্দর ছিলো আপনার সাথে আপনার মামাত ভাই এর শৈশব গুলো।শুনে বেশ ভালো লাগলো আর শেষ পরিনতি গুলো পড়ে খুব খারাপ লাগলো।কি আর বলবো ভাষা নেই।