বজ্রপাতে নষ্ট টেলিভিশন ভালো করতে গিয়ে কিছু আত্মোপলব্ধি
নমষ্কার,
প্রতিনিয়ত একটা না একটা বাধার সম্মুখীন হয়েই চলেছি। আমার সাথে বারবারই এমন ঘটনা ঘটে। বিগত চার পাঁচ বছর হলো যেকোনো কাজ করতে নিলে তাতে বাধা আসবেই এটা মোটামুটি নিশ্চিত। ঝামেলা ছাড়া কোনও কাজ কখনো হবে না। জীবনে এমনি অনেক সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ করেই গত সপ্তাহে বজ্রপাতে বাড়ির টেলিভিশন টা নষ্ট হয়ে যায়। মা আমাকে বলেছিল ডিস লাইন টা খুলে রাখতে। আসলে এত ঝড় বৃষ্টি হচ্ছিল যে আমি মায়ের কথাটা শুনতে পাইনি। আর তার একটু পরেই অনেক জোরে বাজ পড়ে টেলিভিশন টা নষ্ট হয়ে যায়।
মা তারপরে আমার সাথে অনেক রাগারাগি করেন কেন আমি কথা শুনলাম না। আসলে আমার আর তখন কি বা করার ছিল। যেটা ঘটার সেটা তো ঘটেই গেছে। খুব বেশি দিন হল নেয়া হয়নি টেলিভিশন টা। সাড়ে তিন বছরের মতো হবে হয়তো। বজ্রপাতের পরে আসল যে সমস্যাটা হচ্ছিল সেটা হল টেলিভিশনে ডিশের লাইন ধরছিল না। টিভি অন হচ্ছে অফ হচ্ছে এবং চ্যানেল বদলানো যাচ্ছে কিন্তু ডিস লাইন থেকে কোন চ্যানেল ধরছেনা। আমার মনে হল খুব মেজর কোন প্রবলেম হয় তো না। আমাদের পাশের বাড়ির আন্টির টিভিটা নষ্ট হয়ে গেছে। ওদের টিভিটা অন হচ্ছিল না একদম। সে যাই হোক টিভিটা তো এখন ঠিক করতে হবে। মা রাগ করে টেলিভিশনটা সারাতে দিচ্ছিল না। আসলে বাড়িতে আরেকটা টিভি আছে ওটার জন্য এই টিভি দেখার এত গুরুত্ব দিচ্ছিল না কেউ।
সকালবেলা বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে আমার দিদি বলে দিল তোর তো সব কাজে বাধা আসে বেশি, তাই কোন কাজ শুরু করার আগে মন্দিরে গিয়ে একটু প্রণাম করে আয়। তারপর মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে দিনটা শুরু কর। দেখবি সবকিছু ভালোভাবে হবে। সত্যি বলতে সকাল-সকাল এমন কথা কখনো মাটিতে ফেলা যায় না। আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রথমে মন্দিরে চলে গেলাম এবং প্রণাম সারলাম। মন্দিরে গেলে সব সময় আমার মনটা অনেক ভালো হয়ে যায় এবং হালকা হয়ে যায়।
এবার টিভি নিয়ে বেরোনোর পালা। শুরুতেই আমার ইচ্ছে ছিল সিঙ্গার সার্ভিস সেন্টারে যাওয়া। কারণ কোন কিছু চেঞ্জ করতে হলে সার্ভিস সেন্টার থেকে চেঞ্জ করলে একদম আসল জিনিসটা পাওয়া যাবে। আমি যথারিতি চলে গেলাম সার্ভিস সেন্টারে টিভিটা নিয়ে। ওখানে গিয়ে রীতিমত অবাক হয়ে গেলাম। সবকিছু দেখে আমাকে উনারা জানালেন যদি টিভির সার্কিট চেঞ্জ করতে হয় তাহলে ওনাদের চার্জ সহ মোট ৫২০০ টাকা খরচ হবে। আর যদি চ্যানেল টিউনার চেঞ্জ করতে হয় তবে সার্ভিস চার্জ সহ ১৪০০ টাকা খরচ পরবে।
আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম আমাকে তাহলে এখনই চেক করে বলে দিন আমার টিভির কোথায় আসল প্রবলেম। আর তাতে করে আমারও একটা আইডিয়া হয়ে যাবে বাজেট নিয়ে। কিন্তু উনারা সেই মুহূর্তে আমাকে কিছুই জানাতে রাজি না। আমাকে বললেন টিভিটা রেখে যেতে হবে। দুই দিন পরে কাজ হয়ে গেলে আমাকে ইনফর্ম করবেন তারা এবং তখন এসে নিয়ে যেতে হবে বিল পরিশোধ করে। ব্যাপারটা আমাকে বেশ অবাক করে দিলো। কারণ উনারা আমাকে আগে থেকে কিছুই জানাবেন না । পরে যা বলবেন তাই শুনতে হবে। আমি সাথে সাথে বললাম, ঠিক আছে আমরা বাইরে থেকেই টিভিটা সারানোর চেষ্টা করি।
তারপরে টিভিটা নিয়ে চলে গেলাম আমার দাদার এক পরিচিত মেকানিকের কাছে। মজার ব্যাপার হলো উনাকে গিয়ে বলার সাথে সাথে বুঝে ফেললেন টিভির কি সমস্যা। ডিস লাইন টা একবার শুধু লাগিয়ে চেক করে নিলেন। তারপর বললেন টিউনার আইসি চেঞ্জ করলে ঠিক হয়ে যাবে। আমি কিন্তু উনাদের একবারের জন্যও বলিনি বজ্রপাতে টিভি নষ্ট হয়ে গেছে। টিভির মেইন সার্কিটটা খোলার পর কি যেন একটা সুক্ষ্ম জিনিস দিয়ে চেক করে সাথে সাথেই বলে দিলেন ঝড় বৃষ্টি থেকে এরকম হয়েছে। কোন সমস্যা নেই ঠিক হয়ে যাবে। অল্প সময় লাগবে।
তারপর দুইটা আইসি চেঞ্জ করে দিলেন। মোটামুটি 20 মিনিটের মাঝেই টিভি আমার একদম ঠিকঠাক হয়ে গেল। আমি রীতিমত অবাক হয়ে গেলাম। আর সবশেষে আমার কাছ থেকে ৭০০ টাকা চাইলেন। আমি একটু দরদাম করে ৫৫০ টাকা দিলাম। উনিও খুশি মনে নিয়ে নিলেন। তারপর টিভি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসলাম।
দারুন একটা অভিজ্ঞতা হল আমার। অভিজ্ঞতা জিনিসটা যে কতটা জরুরী এবং মূল্যবান সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। যে মানুষটার কাছ থেকে টিভিটা সারালাম উনারা না কোন প্রফেশনাল ট্রেনিং প্রাপ্ত, না কোথাও থেকে অনেক উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন। শুধুমাত্র কাজ করতে করতেই শিখেছেন। আর আজকে তাদের অভিজ্ঞতা এতটাই দারুন হয়ে গেছে টিভি তে হাত দিলেই বুঝতে পারেন কোথায় কি সমস্যা এবং দ্রুত তার সমাধানও করে ফেলেন। পাঠ্যপুস্তক এর অন্তর্নিহিত জ্ঞানের থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা কতটা জরুরী সেটা বুঝতে আর বাকী রইল না আমার।
একটা সার্টিফিকেট বা একটা ভালো রেজাল্ট দিয়েই কখনো কারো যোগ্যতা বিচার করা যায় না। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এমন ভাবে গড়ে উঠেছে সেখানে ভালো ইউনিভার্সিটি এবং ভাল রেজাল্টই সব। জানিনা আমাদের জ্ঞানচক্ষু কবে উন্মোচিত হবে। আমাদের এই মানসিকতার জন্যই উন্নত বিশ্বের থেকে এখনো এতটা পিছিয়ে আছি। যত দ্রুত সম্ভব আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার এতে সমাজের তথা পুরো জাতির কল্যাণ হবে।
জীবন আসল এমনই কাজের সময় বাধা বিপওি আসবেই। গত বছর ঝর বৃষ্টির সময় আমার টিভিটা নষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলো,পরে সার্ভিস সেন্টার থেকে ঠিক করে নিয়েছি।ভালো লাগলো।ধন্যবাদ
হ্যাঁ আপু। আশীর্বাদ রাখবেন। অনেক ভালো থাকবেন।
বজ্রপাতে টেলিভিশন নষ্ট হওয়ার ঘটনা আমাদের বাসায় ঘটিয়েছিল অনেক আগে আমি তখন বুঝতাম না বজ্রপাতের সময় টেলিভিশন ডিস লাইন লাগিয়ে রাখতাম বা বিদ্যুৎ এর লাইন লাগানোই থাকত। পরে শুনলাম যে বজ্রপাতের সময় কখনই বিদ্যুতের লাইন এবং ডিস লাইন টিভির সাথে সংযোগ রাখা উচিত নয়। আসলে এই ধরনের বিব্রতকর অবস্থা মাঝে মাঝে পড়তে হয়। তবে ভবিষ্যতে অনেক কিছু থেকে সাবধান হওয়ার জন্য হয়তো আপনার ছোট কিছুর উপর দিয়ে পার হয়ে গেছে। তবে বাসায় একটু রাগ হবে আর কি স্বাভাবিক। ১৪০০ টাকা লেগেছে মানে ভালই খরচ হয়েছে। আসলে যারা যে কাজ বছরের পর বছর ধরে করে সেখানে তারা এমন স্পেশালিস্ট হয়ে ওঠে এমন দক্ষ হতে তারা সেই কাজে হাত দিলেই বুঝতে পারে তার কোথায় কি সমস্যা হচ্ছে।
আপু ৫৫০টাকা লেগেছে মোট। আর এটা একদম ঠিক যে কাজের সাথে লেগে থাকলে দক্ষতা ঠিক চলে আসবে। অনেক ভালো থাকবেন।
জীবনে আসলে বাধা-বিপত্তি থাকবে সেটা নিয়ে কিন্তু আমাদের জীবনে চলতে হয় ভাই , নার্ভাস হওয়ার কিছুই নেই। যেখানে ঝামেলা বেশি সেই কাজ বেশি সুন্দর হয়। তবে বিপদের সময় অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করতে হবে। টিভিটা নষ্ট হওয়ার পরে সেরে নিয়েছেন খুব ভালো করেছেন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
অনেক সুন্দর গুছিয়ে কথা গুলো বলেছেন ভাই। অনেক ভালো লাগলো। ভালোবাসা রইলো ❤️
পোস্টের শেষে কিছু বাস্তব মুখী কথা বলেছেন। আসলেই সফল মানুষকে দেখে অনেকেই বলে, যে তার ভাগ্য ভালো তাই তিনি সফল হয়েছেন। এবং সবকিছুকেই কেন জানি একটিমাত্র কাঠিতে সবকিছু নির্ধারণ করে যা আমার কাছে বেক্তিগতভাবে অনেক খারাপ লাগে। যখন বজ্রপাত হয় বৃষ্টি হয় তখন আমাদের সকলের উচিত এবং ডিশের লাইনের তার টা খুলে রাখা।।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থা টাই কেমন যেন এলোমেলো। ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পেয়ে ভাই। অনেক ধন্যবাদ।
অনেক বাস্তব একটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। সত্যি বলতে গ্রন্থগত বিদ্যা আর বাস্তবিক বিদ্যার মধ্যে অনেক তফাৎ সেটি আপনি আপনার পোষ্টের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো প্রিয় ভাই।
খুব সুন্দর বলেছেন। ভালোবাসা রইলো আপনার জন্যও ভাই ❤️❤️
গ্রন্থ গত বিদ্যার বাইরেও প্যাক্টিক্যাল লাইফের কাজ করেও অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। পোস্টের শেষের দিকের যে কথা গুলো লিখেছেন তার সাথে আমি একমত পোশন করছি। নিজের স্কিল থাকলে যে কোন জায়গায় নিজের একটি ভাল জায়গা করে নেয়া যায়। আমাদের দেশের ইডুকেশন স্টিস্টেম অনেক পিছিয়ে আছে। এর জন্য আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।
আমি চাই সমাজের সকল স্তরের মানুষের মাঝে শুভবুদ্ধির উদয় হোক। সবাই মিলে সামনের দিকে এগিয়ে যাই। অনেক ধন্যবাদ ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য।
আমাদের মতন তখন আমাদের বোম্বা সিঙ্গার টিভি ছিল। হটাৎ অফ হলো আর পাওয়ার আসে না। এদিকে ওয়ারেন্টি গ্যারান্টি কিছুই নেই। তবু সিঙ্গারের শো রুমে নিয়ে গেলাম। ওরা মোটামুটি ২৪০০ টাকা খরচের একটা ফর্দো ধরিয়ে দিলো। আমি বললাম মিঞা আমারে কি মনে হয় আমি চর থেকে আসছি । আমার কথা শুনে উনি বললো আপনার টিভি আমি সারতে পারবো না। আমি বললাম আপনাকে দিয়ে সারালে তো আপনি সারবেন। আপনার পতন নিশ্চিত কথাটা বলে আমার এক কাকার কাছে নিয়ে গিলাম। মাত্র ৮০ টাকার একটা কনডেনচার লাগিয়ে ২০০ টাকা চার্জ নিলো। টিভি ঠিক। ভাই তোমার মতই আমার অবস্থা কোন কাজ শুরুতে ঠিক থাকলেও শেষে এসে গোল পাকিয়ে যায়। অদ্যাবদি এমন টি হচ্ছে। ঠাকুরের নাম নিয়েই চলি । তবুও। কেন জানি না আমার সাথেই হচ্ছে।তারপরও ঠাকুরের নাম নিয়েই চলতে হবে।তবে সত্যি বলতে সিঙ্গারের টিভি মেকানিক কিন্তু সত্যি সত্যি তার চাকরি হারিয়েছে ২ মাস পরে। ভাল থাকবে ধন্যবাদ।
দাদা আপনি সব সময় অনেক চমৎকার করে গুছিয়ে মন্তব্য করেন। সত্যি অনেক উৎসাহিত হই আপনার মন্তব্য পেলে। এভাবেই পাশে থাকবেন দাদা। প্রণাম রইলো।