জীবন সংগ্রামে টিকে থাকা কিছু মানুষের আত্মসম্মানবোধ সত্যিই মুগ্ধ করার মত
আসসালামু আলাইকুম
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন ?আশা করছি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।আমিও আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভাল আছি।
জীবন সংগ্রামে টিকে থাকা কিছু মানুষের আত্মসম্মানবোধ সত্যিই মুগ্ধ করার মত
আমাদের জীবনে চলার পথে অসংখ্য বাধা-বিপত্তি আসে । সে বাধা-বিপদ থেকে কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। সেই মুহূর্তে নিজের আত্মসম্মানবোধ টিকিয়ে রাখা বেশ কঠিন একটি বিষয় । মূলত যারা এটি করতে পেরেছে তারা জীবনে সফল হয়েছে বলে আমি মনে করি ।কেননা দেখা যায় যে আমাদের সমাজে এমন অনেক লোক আছে যাদের আত্মসম্মানবোধ নেই বললেই চলে । কেননা তারা সামান্য একটু বিপদ হলেই দেখা যায় নিজের আত্মসম্মানকে জলাঞ্জলি দিয়ে অন্যের কাছে হাত পাততে ও দ্বিধাবোধ করে না। নিজের সম্মানের কথা তারা একবারও চিন্তা করেনা। এরকম অসংখ্য লোক রয়েছে সমাজে। তারা কিন্তু নিজের আত্মসম্মানকে টিকিয়ে রেখে নিজের চেষ্টায় পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করতে পারে। কিন্তু তারা তা না করে অন্যের কাছে হাত পাতবে । কেননা তাদের নিজস্ব আত্মসম্মানবোধ বলে কিছুই নেই। নিজে পরিশ্রম করে খেটে খেলে আত্ম সম্মানবোধ কমে না বরং বাড়ে।
আত্মসম্মানবোধের জ্বলন্ত একটি উদাহরণ আজ আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরব ।যার কারণেই মূলত আজ আমার এই পোস্টটি লেখা । সত্যি আমি সেদিন ভীষণভাবে অবাক হয়েছিলাম লোকটির আত্মসম্মান বোধ দেখে এবং মুগ্ধ ও হয়েছিলাম। মূলত কয়েকদিন আগে আমি মার্কেটে গিয়েছিলাম ।তো মার্কেটের গেটে ঢোকার কিছুদূর আগে রাস্তার পাশ দিয়ে অসংখ্য হকার থাকে। তারই মাঝে হঠাৎ আমার চোখ পড়ল এক বয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে আছে একটি ওজন মাপার মেশিন নিয়ে । আর সবাইকে ডাকছেন মা একটু ওজন মেপে যান, বাবা একটু ওজন মেপে জান । আর লোকটির গা গড়িয়ে ঝরঝর করে ঘাম ঝরছে । বেশ বয়স্ক লোকটি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না, একটু কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি কিছুদূর হেঁটে যাবার পর আবার দাঁড়িয়ে পড়লাম হঠাৎ করে । তখন আমার লোকটার জন্য ভীষণ মায়া হতে লাগলো । বয়স্ক মানুষ কিভাবে সবাইকে অসহায়ের মত ডাকছে । কিন্তু সেরকম কেউই তার ডাকে সাড়া দিচ্ছে না । অসংখ্য লোকের চলার পথ সেটি তার পরেও সবাই যার যার মত ব্যস্ত ।সবাই যার যার মতো ছুটছে । কেউ তার কথায় কান দিচ্ছে না । আমার মনে হলো লোকটা কে কিছু সাহায্য করি । আবার ভাবলাম সে একটি কাজ করছে তাকে সাহায্য দিতে গেলে সে যদি না নেয়। আবার তাকে সাহায্য দিতে গেলে বিষয়টা তার জন্য লজ্জাস্কর ও হতে পারে । সে আবার কিভাবে রিঅ্যাক্ট করবে সে বিষয়টাও চিন্তা করছিলাম । এভাবে কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে চিন্তা করলাম।
তারপর চিন্তা করলাম সে যেহেতু সবাইকে ওজন মাপার জন্য ডাকছে, তাহলে সে যেই কাজটা করছে আমি সেই কাজটাই করতে তাকে সাহায্য করি। আমি তার ওজন মাপার ওই টাকাটাই দেই । সেটা হয়তো সে না করতে পারবে না । তারপর আমি লোকটির কাছে যাই । যেয়ে আগে আমি টাকাটা দেই । লোকটি বলে আপনি আগে মেশিনে দাঁড়ান ,তারপর টাকা দেন ।আমি বললাম আমার ওজন মাপতে হবে না, আমার ওজন আমার জানা আছে আমি এমনিতেই দিচ্ছি ।লোকটি বলল না আমি এভাবে কারো কাছ থেকে টাকা নেই না । তখন আমার নিজের কাছে কেমন যেন লজ্জা লাগলো । যেটা ভেবেছিলাম ঠিক সেটাই হলো ।
তারপর লোকটি বলল মা ঠিক আছে আপনি শুধু মেশিনের উপর পা টা রাখেন। তাহলে আমি টাকাটা নিতে পারব । বিষয়টা আমাকে এমন ভাবে নাড়া দিল যা সত্যিই অবাক করার মত । তারপর আমি আমার একটা পা মেশিনের উপর রাখলাম। লোকটা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বলল ঠিক আছে আমি আপনার ওজনটা দেখলাম না। এই বলে টাকাটা নিল । মানে সে তার জায়গায় অটল থাকলো । কাজের বিনিময়ে টাকা নিল, নিজের কাছে পরিষ্কার থাকলো ।আবার আমাকে খুশি করার জন্য ওজনটা দেখলো না।
সত্যি এরকম মানুষ আজও সমাজে আছে ভেবে অবাক হলাম। কেননা অসংখ্য মানুষকে চলার পথে দেখি। কাউকে সাহায্য করতে গেলে কেউ না করে না । অকপটে টাকা নিয়ে নেয় ।কিন্তু এই লোকটি ছিল একদম ব্যতিক্রম। কতটা আত্মসম্মানবোধ থাকলে একটা মানুষ এরকম আচরণ করতে পারে ।জীবন যুদ্ধে সংগ্রাম করে চলেছে তবুও নিজের সম্মানকে খাটো করে নয় ।নিজের সম্মানকে উঁচু করেই সে তার কাজ করে যাচ্ছে ।হয়তো তার এই কাজের বিনিময়ে তার সংসারের দুবেলা দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা হচ্ছে ।খুব জানতে ইচ্ছে করছিল তার পরিবারে কে কে আছে কিন্তু সাহস হলো না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তার করুণ অসহায় ঘাম ঝরা মুখটি দেখে ফিরে এলাম। সত্যি সমাজের এই মানুষগুলোর জন্য কিছু করার সামর্থ্য থাকলে, করতে পারলে মনে হয় অনেক বেশি মানসিক শান্তি পেতাম।সমাজের এই অসহায় আত্মসম্মান বোধে উজ্জীবিত মানুষগুলোকে সত্যিই মন থেকে স্যালুট জানাতে ইচ্ছে করে। বেঁচে থাকুক , ভালো থাকুক এই মহান মানুষগুলো।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি ।আগামীতে আবার দেখা হবে নতুন কোন লেখা নিয়ে ।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ।আমার ব্লগ টি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফটোগ্রাফার: | @wahidasuma |
---|---|
ডিভাইস: | OPPO Reno8 T |
🔚ধন্যবাদ🔚
@wahidasuma
আমি ওয়াহিদা আফরোজ সুমা।আমি একজন হাউজ ওয়াইফ। সমাজবিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্স করেছি।ঘুরে বেড়াতে , ঘুমাতে এবং গান শুনতে আমি ভীষন পছন্দ করি।বাগান করা আমার শখ।এছাড়াও আর্ট , বিভিন্ন রেসিপি ট্রাই করতেও ভালো লাগে। আমি 🇧🇩বাংলাদেশি🇧🇩।বাংলা আমার মাতৃভাষা।আমি বাংলায় কথা বলতে ও লিখতে ভালোবাসি।ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগকে এই সুযোগটি করে দেওয়ার জন্য।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আমাদের সমাজে এরকম মানুষ এখনো পর্যন্ত আছে শুনে অনেক ভালো লেগেছে। আসলে এরকম অনেক মানুষই আছে যারা কিনা কাজের বিনিময়ে টাকা নিয়ে থাকে। এমনিতে তারা টাকা নেয় না। আর ওই লোকটার মধ্যে আত্ম সম্মানবোধ টা অনেক বেশি ছিল। আমি তো নিজেই অনেক বেশি মুগ্ধ হলাম এই লোকটার আত্মসম্মানবোধ দেখে। এরকম মানুষ গুলোর জন্য কিছু করতে পারলে সত্যি অনেক ভালো লাগতো। এত সুন্দর একটা পোস্ট আপনি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন দেখে খুব ভালো লেগেছে।
হ্যাঁ আপু লোক টিকে দেখে সত্যি আমি নিজেও ভীষণ অবাক হয়েছি । এরকম মানুষ এখনো সমাজে রয়েছে ।যাই হোক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
যেখানে চারদিকে তাকালে শুধুই লোভী মানুষের ভিড় সেখানে উনার মত একজন মানুষ কিন্তু সত্যি একটি উদাহরণ। আমার কাছে কিন্তু দারুন লাগলো এমন একজন মানুষের কাহিনী শুনে। আসলে আত্মসম্মানবোধ হলো যার যার ব্যাক্তিগত সম্পদ। যা অনেক অভাবেও নষ্ট হবার নয়। ধন্যবাদ আপু এমন একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
হ্যাঁ আপু সমাজের এত লোভী মানুষের ভিড়েও কিছু ভাল মানুষ রয়েছে যেমন এই লোকটি ।ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
আপু আপনার শেয়ার করা ঘটনাটি পড়ে আমার কাছে ভীষণ ভালো লাগলো। আমাদের সমাজে সত্যি ই এমন মানুষ আছে হাজারো লোভী মানুষের ভীড়েও।এদের আত্মসম্মান বোধ খুব টনটনে।টাকার কাছে তারা তাদের আত্মসম্মান বোধকে বিসর্জন দেন না।এ ধরনের মানুষ গুলোকে দেখলে শ্রদ্ধা বেড়ে যায়। ধন্যবাদ জানাই আপনাকে সুন্দর একটি ঘটনাকে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
হ্যাঁ আপু টাকার কাছে সবাই নিজের আত্মসম্মানকে বিসর্জন দেয়। কিন্তু এই লোকটি ছিল একদমই ব্যতিক্রম ।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
ঘটনাটা পড়ে খুবই ভালো লাগলো আপু। সত্যি এমন মানুষ পাওয়া যায় না। আমি অবাক হলাম এই ঘটনাটা পড়ে। লোক টার আত্মসম্মান বোধ সত্যিই প্রখর। সে তার নিজের জায়গাতেও অটুট থাকলো এবং আপনাকে খুশি করার জন্য ওজনটা ও দেখলো না। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি ঘটনা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
হ্যাঁ আপু বিষয়টা সত্যি আমাকেও ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল। নিজের আত্মসম্মান কেউ রক্ষা করেছে এবং আমাকেও খুশি করেছে ।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
এখনো এরকম কিছু মানুষ রয়েছে তাদেরকে দেখলে সত্যি আমরা মুগ্ধ হয়ে যাই। মানুষের ভেতর আত্মসম্মানবোধটা এরকম ভাবে এখনো পর্যন্ত রয়েছে এগুলো ভাবতেই ভালো লাগে। এখন তো এরকম অনেক মানুষ রয়েছে যারা কিনা কোনো কাজে একবার ব্যর্থ হলে, সেটা থেকে পিছনে নেমে যায়। তাদের ভেতর আর আত্মসম্মানবোধ টা থাকে না। কিন্তু একটা মানুষের মধ্যে আত্ম সম্মানবোধটা থাকাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আসলে এখন আমাদের সমাজটা এরকম হয়ে গিয়েছে যে, আত্ম সম্মান যাদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত রয়েছে তাদেরকে দেখলে আমরা অনেক অবাক হয়ে যাই। কারণ এরকম মানুষ এখন কম দেখা যায়।
হ্যাঁ ভাইয়া এরকম আত্মসম্মানবোধ এখন খুব কমই দেখা যায় । যার কারণে আমরা এত বেশি অবাক হই ।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
পরিশ্রম করে খেটে খেলে আত্ম সম্মানবোধ বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে সময়ে এরকম মানুষ পাওয়া খুবই মুশকিল। তবে টাকা দিয়ে সবকিছু হয় না, দিন শেষে আত্মসম্মানবোধ অনেক মূল্যবান সম্পদ। যা সবাই ধরে রাখতে পারে না। চমৎকার একটি ঘটনা শেয়ার করলেন আপু আমাদের মাঝে। ধন্যবাদ আপু আপনাকে সুন্দর একটি ঘটনা আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য।
হ্যাঁ ভাইয়া আত্ম সম্মানবোধ সকলের অনেক মূল্যবান সম্পদের । যেটি রক্ষা সবাই করতে পারেনা ।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
খুব সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন আপনি। আসলে আত্মসম্মানবোধ থাকাটাই মানুষের মূল বিষয়৷ এই বিষয় যদি না থাকে তাহলে কখনো সে কোন ধরনের কাজ করতে দ্বিধাবোধ করবে না৷ যেকোন ধরনের খারাপ কাযে সে অতি তাড়াতাড়ি এগিয়ে যাবে৷ যদি তার ভেতরে এই আত্মসম্মানবোধ থাকে তাহলে সে কখনোই কোন ধরনের খারাপ কাজে লিপ্ত হবে না এবং সবসময়ই সে তার ভালো কাজের পাশাপাশি অন্যের উপকার করার চেষ্টা করবে৷ ধন্যবাদ এই সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য৷