গ্রে-৩
গত পর্বে
এভাবেই দিন ভালই কাটছিল।ঘটনার শুরু হয় দুই বছর আগে,এক বিদেশী কোম্পানী আমাদের এলাকায় আসে। তারা আমাদের এলাকায় একটা কোম্পানী দিতে চায়।সংসদ সদস্য বাবার উপর দায়িত্ব দেন সব কিছুর কারন এলাকার লোকজন বাবাকে ভালবাসে। তারা জানে বাবা তাদের ভাল ছাড়া খারাপ করবে না।আর বাবাও খুশি হয় কারন এলাকায় কারখানা হলে লোকের কর্মসংস্থান বাড়বে।জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।কিন্তু মানুষ ভাবে এক হয় আরেক.......
বর্তমান পর্বে
আমার বাবা এলাকার ভালো টাই চেয়েছিল।পেছনে কোন স্বার্থ ছিল না।উনি এলাকার পতিত জমি গুলো দেখালেন।কারন এই জমি গুলোতে যদি কারখানা বানানো যায় তবে ফসলিজমির কোন ক্ষতি হচ্ছে না,জমিটা লোকালয় থেকে দূরে ফলে এলাকার পরিবেশের ক্ষতি হবে না।আবার পতিত জমিও কাজে লাগতেছে। কিন্তু সেই জমি গুলো কারখানার লোকদের ভাল লাগল না।তারা বাবাকে বলল এলাকার পাশের কিছু জমি দিতে।বাবা তাদের বুঝালেন অনেক,সব দিক খুলে বললেন।কিন্তু তারা নাছোড় বান্দা।
এদিকে আমার বাবাও তাই,তিনিও অস্বীকার করলেন। তারা অনেক বুঝালো,কিন্তু বাবা নারাজ।তারপর তারা উপঢৌকন এর রাস্তা ধরল।তারা বাবাকে টাকা দিয়ে কিনতে চাইলো। কিন্তু এখানেই তারা ভুল করল,বাবা রেগে গিয়ে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেন। কিন্তু তারাও ঝানূ ব্যবসায়ী।তারা হার মানবে কেন? তারা বাবার উপরের পদের লোক কে ধরল।আর সবাই যে বাবার মত আদর্শবাদী হবে তার কি মানে আছে? গ্রামের কয়েকটা কৃষক এর জমি গেলে তার কি আসে যায়? তার তো নিজের ব্যাংক ভরানো দিয়ে কথা।
তিনি রাজি হয়ে গেলেন। তিনি এসে এলাকার লোকদের বোঝাতে লাগলেন,কিন্তু এলাকার লোক তার কথা মোটেই বিশ্বাস করল না।তাদের এক কথা তারা কিছুতেই জমি দেবে না। এভাবে কথায় যখন কাজ হল না,তখন সেই নেতা নিল ভিন্ন একটি পথ।তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন সাপ কে পরাস্ত করতে হলে আগে সাপের মাথা কাটতে হয়। তাই তারা আগে বাবাকে সরানোর পরিকল্পনা নিল।আরো বেশি টাকা ঘুষ দিতে রাজি হল,কিন্তু বাবা অনড় দেখে তারা হাল ছেড়ে দিল।
অন্তত আমরা তাই মনে করেছিলাম,এরপর কয়েকমাস গেল।এলাকার সব কিছু আবার স্বাভবিক হয়ে গেছে ততদিনে। কিন্তু একদিন বাবা একটি কাজে শহরে গেলেন,তারপর আর ফিরলেন না। আমি তো এখানে, ওদিকে পরিবারের সবাই চিন্তায় অস্থির।আমি চিন্তায় পড়ব জন্য আমাকে কেউ কিছু জানায় নি।কিন্তু কয়েকদিন পর আমি পেপারে জানতে পারলাম।জানার সাথে সাথেই চলে গেলাম গ্রামে। কতবার যে থানায় দৌড়িয়েছি তার কোন ইয়ত্তা নেই। শেষে কিছুদিন আগে বাবার প্রাণহীন দেহটি পাওয়া গেল।
থানায় গেলাম মামলা করতে, কিন্তু থানা কিছুতেই মামলা নেবে না। বার বার ঘুরারে লাগল,শেষে একজন পরিচিত লোক একদিন আমাকে ডেকে নিয়ে বলল, শোনো এগুলো করে শুধুমাত্র টাকা আর শ্রম এর অপচয় হবে কাজের কাজ কিছুই হবে না।অনেক উপরের নির্দেশ আছে এই মামলার কিছুই হবে না।তুমি ঢাকা যাও, পারলে পরিবার কেও নিয়ে যাও উনারাও এখানে নিরাপদ নয়। আমার সাথে যোগাযোগ রেখো। তোমার বাবা আমার আদর্শ ছিল। অনেক উপকার করেছেন আমার।আমি যতটা পারি সাহায্য করব।
উনাকে আমি বললাম এলাকার লোক কে ফেলে আমি কোথাও যাব না।উনারা আমার মুখ চেয়ে আছে। তখন উনি বললেন,তুমি বাচ্চা।তুমি রাজনীতীর কিছুই বোঝো না।তুমি কাদের কথা ভাবছ? এলাকাবাসী? এই বলে উনি হাসলেন।তারপর বললেন তোমার বাবার পরিণতি দেখে সবাই ভয় পেয়ে গেছে,এখন প্রায় সবাই জমি দেওয়ার পক্ষে।সবার কাছেই তো নিজের প্রাণ প্রিয় তাইনা? আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।আমি বললাম.............
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.