জরুরী কিছু সেবা নিয়ে ভাবছি
সন্ধ্যেবেলা বাহির থেকে ফিরেই প্রতিদিন একবার ঘুমিয়ে নেই। কমপক্ষে দুই থেকে তিন ঘন্টা আরামসে ঘুমাই। তারপর যখন ঘুম থেকে জেগে উঠি,তখন থেকেই মূলত আমার দৈনন্দিন কাজকর্ম শুরু হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আমাকে যদি কেউ নিশাচর বলে, তাহলে ভুল হবে না।
ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকিয়ে থেকে নিজের কাজকর্ম করতে করতে কখন যে মাঝরাত থেকে ভোর হয়ে যায়, সেদিকে খেয়াল করেই ওঠা হয় না। যেহেতু সমসাময়িক সময়ে গ্রামের বাড়ির নির্মাণ কাজের জন্য বেশিরভাগ সময় গ্রামেই অবস্থান করা হয়, তাই বলতে গেলে ভোরবেলার দিকে যখন নিজের কাজকর্ম শেষ হয়ে যায়, তখন কিছুটা সময়ের জন্য বাড়ির সামনে একটু পায়চারি করি।
ভোরের হিমশীতল বাতাস ইচ্ছে করেই একটু শরীরটাতে মাখিয়ে নেই। সারারাতের একঘেয়েমি কাজের পরে, ভোরবেলার এই বাতাস যেন কিছুটা হলেও শরীর ও মনকে চাঙ্গা করে তোলে।
অন্যান্য দিনের মতো আজ সকালেও হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। বাড়ির পিছনের মোজাম কাকুর সঙ্গে হঠাৎই দেখা। কাকু খুব কাছ দিয়ে হেঁটে গেল, তবে নিজেদের ভিতরে ভাবের আদান প্রদান হলো না। এমনিতেই বয়সে সে বেশ প্রবীণ, তার ভিতরে এই সকালবেলা দ্রুত হেঁটে যাওয়া দেখে বুঝতে পারছিলাম, সে হয়তো ফসলের জমিতে যাচ্ছে। কেননা তার পিঠে কীটনাশক স্প্রে করার মেশিন ছিল।
এই সহজ-সরল মানুষগুলোর ভিতরে বড্ড সচেতনতার অভাব, কীটনাশক স্প্রে করতে জমিতে যাচ্ছে অথচ মুখে কোন কাপড় দেওয়া নেই। ব্যাপারটা তাৎক্ষণিক আমাকে ভাবিয়েছিল, তবে সেভাবে তার সঙ্গে আর কথা বলতে পারিনি।
কিছুক্ষণ বাহিরে হাঁটাহাঁটি করে বাড়িতে ফিরে এসে যখন ঘুমিয়েছি, তখন হঠাৎই আশেপাশের মানুষজনের চিৎকার চেঁচামেচিতে কাঁচা ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। জানতে পারলাম জমিতে গিয়ে মোজাম কাকু খানিকটা সময় কীটনাশক স্প্রে করার পরে, আকস্মিকভাবে ওখানেই শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিল। যেহেতু আশেপাশে তেমন লোকজন ছিল না,তাই তাকে ধরে যে কেউ প্রাথমিক চিকিৎসা দেবে এই সুযোগটাও ছিল না।
হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে জমিতেই মরে পড়েছিল সে । মানুষ মারা যাবে, এটা যেমন চিরন্তন সত্য। তেমনটা যদি সচেতনতা অবলম্বন করা যায়, তাহলে মৃত্যু হার কিছুটা কমে আসে। মোজাম কাকুর সঙ্গে আসলে জমিতে কি ঘটেছিল, তা এখনো অনেকটা ধোঁয়াশা। তবে তার মৃত্যুর কারণগুলো যখন আমি একটু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যালোচনা করার চেষ্টা করছিলাম, তখন দেখলাম মূলত কীটনাশক স্প্রে করার সময় কোনভাবে তার নাক দিয়ে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে কীটনাশক শরীরের ভিতর ঢুকে গিয়েছিল, যার কারণে হয়তো এই অবস্থা হয়েছিল। তাছাড়া পূর্ব থেকেই নাকি তার শ্বাসকষ্ট জনিত ও কিছুটা হৃদরোগ সমস্যা ছিল।
যে মানুষটাকে কিছুটা সময় আগেই সুস্থ স্বাভাবিক দেখলাম, হঠাৎই তার এমন মৃত্যু আমাকে বেশ ব্যথিত করেছে। অবশেষে গ্রামের কিছু তরুণ ছেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম, তাদের প্রত্যেককেই বুঝিয়ে বললাম কীটনাশক স্প্রে করার সঠিক নিয়মকানুন। সত্যি বলতে কি, এখানকার লোকজন সঠিক নিয়মকানুন সবাই জানে,তবে কিছুটা গোঁড়ামির কারণে এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটে। তাছাড়া তাদের এটাও বললাম যে, যেহেতু এখান থেকে সরকারি হাসপাতাল কমপক্ষে ২০ কিলোমিটার দূরে, তাই এরকম পরিস্থিতিতে প্রাথমিক চিকিৎসাটা নিশ্চিত করা খুবই জরুরী।
যদি আমরা গ্রামের সকলে মিলে ambu bag, oxygen cylinder, blood pressure checkup machine কিংবা mini DEFIBRILLATOR অর্থাৎ dc shock machine কিনতে পারি তাহলে এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা
অনেকাংশেই কমে আসবে। তাছাড়া এই মেশিনগুলোর ব্যবহারবিধি খুবই সহজ, যা তোমাদের কে দু-একবার দেখিয়ে দিলেই তোমরা নিজেরাই পরবর্তী সময়ে বেশ ভালোভাবে শিখে যাবে। আর এই মেশিন গুলোর দাম খুব যে বেশি তেমনটাও না, বলতে গেলে সাধ্যের মধ্যেই আছে।
গ্রামের তরুণ ছেলেগুলো, আমার কথায় কিছুটা সায় দিয়েছে। এখন দেখি কতদূর কি করা যায়। তবে এমন মৃত্যু সত্যিই বড্ড বেদনাদায়ক।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
এভাবে কীটনাশক স্প্রে নাকে ঢুকে গিয়ে হঠাৎ মৃত্যু হওয়ায় তা খুবই বেদনাদায়ক। এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। তবে একটি বিষয় বলতে চাই। এই যে রোজ রাত্রি জেগে ভোর হতে দেখেন, তা শরীরের জন্য ভালো নয়। এক আধটা দিন এমন আমারও হয় বটে, কিন্তু রোজ করিনা। ঘুম আসায় আমারও সমস্যা আছে। কিন্তু চেষ্টা করি ঘুমোতে। তাই ঘুমানোর চেষ্টা করবেন
অবশ্যই দাদা, চেষ্টা করব আপনার কথা মেনে চলার জন্য।
এরকম ভাবে মৃত্যু হলে সেটা সত্যি অনেক বেশি বেদনাদায়ক হয়ে থাকে। আপনি বর্তমানে যে সেবা নিয়ে ভাবতেছেন আমি মনে করি এগুলো হলে বেশ ভালোই হয় গ্রামে। তরুণ ছেলেগুলো আপনার কথায় সায় দিয়েছে, এই বিষয়টা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে শুনে। আশা করছি আপনাদের এই উদ্যোগটা সফল হবে। আপনি ভোরবেলায় আপনার ওই কাকাকে দেখেছিলেন, কিন্তু হঠাৎই ঘুম থেকে উঠে শুনলেন উনি মারা গিয়েছে। বিষয়টা মেনে নেওয়া আসলেই সম্ভব না। এত বেশি রাত জেগে কাজ করা শরীরের জন্য ভালো না ভাইয়া, চেষ্টা করবেন ঘুমানোর জন্য। রাতে ঘুমিয়ে ভোর বেলায় কাজ করার চেষ্টা করবেন, এতে কাজ আরো ভালোভাবে হবে।
এটা সত্য তরুণ ছেলেগুলো সায় দিয়েছে, এখন দেখি কতদূর কি করা যায়।
এমন মৃত্যু আসলে মেনে নেওয়া যায় না। উনি কীটনাশক স্প্রে করার সময় যদি অন্ততপক্ষে মুখের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার করতেন, তাহলে হয়তোবা এমনটা না ও হতে পারতো। যাইহোক দারুণ একটি উদ্যোগ নিয়েছেন ভাই। এসব জিনিসপত্র আপনারা কিনে যদি গ্রামের মানুষদেরকে জরুরী সেবা দিতে পারেন,তাহলে এর চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে। দোয়া করি আপনারা এই যাত্রায় যাতে সফল হোন। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
একার পক্ষে তো এসব জিনিস কেনা কিছুটা কষ্টসাধ্য, তবে সম্মিলিতভাবে যদি করা যায়, তাহলে হয়তো কিছুটা ভালো হবে।
সত্যিই খুব খারাপ লাগলো পোস্ট টি পড়ে। কিছু সময় আগে যে মানুষটি হন হন করে হেঁটে যাচ্ছিল তার এমন মৃত্যু সত্যি ই বেদনাদায়ক। এমনিতেই উনি হার্টের পেসেন্ট তার মধ্যে মাস্ক না পরে কীটনাশক ছিটানো এটা একদম ঠিক হয়নি।সুস্থ মানুষের জন্য তো ঠিক নয়।আর উনি যেহেতু অসুস্থ ছিলেন এমনটা করা উচিত হয়নি।সবাইকে শুধু সচেতন ই নয় বাধ্য করতে হবে কিছু কিছু নিয়ম মানার জন্য। আপনি সেটা পারবেন বুঝাতে সবাইকে।কাকুর এই মৃত্যুটাকে কেন্দ্র করে ই সবাইকে সচেতন করা সহজ হবে বলে আমি মনে করি।
এসব ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া মুখ্য বিষয় আপু।
আসলে দাদা কারো যদি শ্বাসকষ্ট থাকে এবং তার ওপর যদি এই ধরনের বিষাক্ত কীটনাশক নাকের ভিতর দিয়ে ফুসফুসে চলে যায়, তাহলে তো অনেক বড় ক্ষতি হয়। তবে একটু আগে যে লোকটার সাথে আপনার দেখা হল, সেই লোকটারই যদি মৃত্যুর খবর আপনার কানে আসে কিছু সময় পরে তাহলে তো খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। তবে মানুষটা যদি একটু সচেতন হয়ে কীটনাশক দিতে যেত জমিতে তাহলে হয়তো তাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হতো না। তবে আপনারা সবাই মিলে যে উদ্যোগটা গ্রহণ করেছেন, সেটা যদি সাকসেসফুল করতে পারেন তাহলে আমি মনে করি খুব ভালো একটা কাজ হবে।