রেজা স্টিল
ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় হুট করে যখন খোলাহাটি ক্যান্ট পাবলিকের হোস্টেলে উঠলাম সেই সময়েই পরিচয় হয়ে উঠল বায়েজিদের সঙ্গে। যেহেতু একই রুমে দুজন উঠেছি তারপরে আবার একই ক্লাসে পড়ি, তাই বলা যায় খুব দ্রুতই সম্পর্কটা বেশ গাঢ় হয়ে গেল। এভাবেই দেখতে দেখতে অনেকটা সময় একসঙ্গে কাটিয়ে দিলাম। যদিও আমি ক্যান্ট পাবলিকে বেশি দিন পড়াশোনা করতে পারিনি, যার কারণে মাঝপথেই সেখান থেকে বিদায় হয়েছি আমি। হয়তো ছোটবেলা থেকেই আমার বন্দী জীবনটা সেভাবে টানতো না, এটাই ছিল হয়তো মুখ্য ব্যাপার।
তবে বায়াজিদ তো মাধ্যমিক পর্যন্ত সেখানে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছিল, অতঃপর উচ্চ মাধ্যমিকে ঢাকা কমার্স কলেজে ভর্তি হয়ে যায়। আর ততদিনে আমি নিজের এলাকায় বেশ ভালো ভাবে, নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলাম। তবে ওর সঙ্গে মুঠোফোনে টুকটাক কথা হতো। দেখা আর সেভাবে হয়ে উঠতো না।
হোস্টেলে থাকাকালীন সময়ে, মা আমার জন্য প্রায়ই আমার পছন্দের টাকি মাছের শুটকির তরকারি নিয়ে যেত, যদিও বায়েজিদের প্রথম দিকে শুটকি খাওয়ার প্রবণতা ছিল না, তবে একবার যখন শখ করে আমার মায়ের হাতের শুটকির রান্না খেয়েছিল, তারপর থেকে বলা যায়, সে এখন বেশ ভালই শুটকি মাছ খেতে পারে।
ও যখন কমার্স কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছে, ততদিনে আমি প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তি হয়ে গিয়েছি। পরে শুনেছিলাম, ও নাকি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তে বিবিএ বিষয়ে ভর্তি হয়েছিল। যদিও মাঝে একবার দেখা হয়েছিল, কোন এক রোজার ভোররাতে সেহরির সময়, তাও সেটা স্বল্প সময়ের জন্য। মূলত ও ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিল আর আমার বাসার উপর দিয়েই বাসে করে ও ওর বাড়িতে যাচ্ছিল। আর যেহেতু সেহরির সময় হয়েছিল সেই সময়,তাই বাস যাত্রা বিরতি দিয়েছিল।
তারপর আর অনেকটা বছর দেখা হয়নি। মাঝে আমারো পড়াশোনা শেষ হয়ে গেল, ও মোটামুটি সেইসময় অনার্স শেষ করে ফেলল আর কিছুদিনের জন্য বেসরকারি কিছু কোম্পানিতে খন্ডকালীন সময়ের জন্য চাকরিও নিয়েছিল। আর এদিকে আমি চেম্বার দিয়ে বসে গিয়েছিলাম নিজের এলাকাতে।
একদিন হুট করে ভোরবেলাতে মুঠোফোনে ওর কল, আমাকে বলল আমি তোর এলাকাতে যাচ্ছি ব্যবসায়িক কাজের জন্য। অনেকটা দিন পরে সেবার একসঙ্গে কিছুটা সময়ের জন্য গল্পস্বল্প করেছিলাম। মূলত ওর বাবা সেসময় কিডনিজনিত রোগে ভুগছিল, এমনিতেই জটিল রোগ তার ভিতরে দেশে-বিদেশে বহু জায়গায় চিকিৎসা করিয়েছে। মধ্যবিত্তদের কাছে এ ধরনের জটিল রোগ হওয়া অনেকটা খরচ সাপেক্ষ ব্যাপার। এই রোগগুলো এমনিতেই যেমন ভালো হয় না, তেমন আবার অর্থনৈতিকভাবেও বেশ পঙ্গু করে দিয়ে যায় পুরো পরিবারকে।
তখনই শুনেছিলাম, ও মূলত ঢাকা থেকে বিরামপুরে একবারে চলে এসেছে এবং ওর বাবার শারীরিক অবস্থা যেহেতু খুবই নাজুক, তাই নিজেই ও চেষ্টা করছে ওর বাবার ব্যবসাতে হাল ধরার জন্য। যদিও এ যাত্রায় ওর বাবা ওকে কিছুটা মানসিক সাপোর্ট ও ব্যবসায়িক কিছু তথ্যাদি দিয়ে সহযোগিতা করেছিল, বাকি পথটাকে ওকে নিজের থেকেই এগিয়ে যেতে হয়েছিল। হুট করেই তো মাঝে ওর বাবার প্রস্থান। এমনিতেই অনেকগুলো লোন হয়ে গিয়েছিল, তার ভিতরে ব্যবসাটাও ঠিকঠাক মত চলছিল না। সব মিলিয়ে একদম করুন অবস্থা।
তবে বায়েজিদ এদিক থেকে একটু স্মার্টলি চিন্তা ভাবনা করে, তার বাবার পুরনো ব্যবসাটাকে নতুন করে সাজিয়েছে এবং খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তার বাবার রেখে যাওয়া লোনগুলোও পরিশোধ করেছে। কতটা যে কাঠ-খড় ও পুড়িয়েছে, তা হয়তো স্বল্প সময় লেখায় বলে প্রকাশ করা বেশ কঠিন, তবে তারপরেও ওর স্মার্ট চিন্তাভাবনাই ওকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে।
যেহেতু আগে ওদের দোকানে শুধুমাত্র স্টিলের বাক্স বানানো হতো, তখন ও নিজের থেকেই চেষ্টা করেছে স্টিলের আলমারি ও অন্যান্য প্রডাক্ট বানানোর জন্য। যেহেতু ওদের ওয়ার্কশপ ছিল তাই মূলত ওর সিদ্ধান্তকে বাস্তবে পরিণত করতে খুব একটা সময় লাগেনি। এইতো এখন দিব্যি চলে যাচ্ছে সংসার, ছোট একটা রাজকন্যার বাবা হয়েছে বায়েজিদ। দাম্পত্য জীবনেও সে বেশ ভালই খুশি। তাছাড়াও ও যেহেতু ওদের ফ্যামিলির বড় সন্তান, তাই বাকি দু-ভাই আর এক বোনকে এখনো পড়াশোনা করাচ্ছে ও। তাছাড়া ওর মা বেশ ভালই সাপোর্টিভ।
এখন বিরামপুর সোনালী ব্যাংকের পাশে, আগে যে মামুন ট্রেডার্স ছিল তা এখন বর্তমানে রেজা স্টিল নামে পরিচিত। এটা বায়েজিদের ব্র্যান্ড, যার প্রত্যেকটা স্তরে স্তরে রয়েছে বায়েজিদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর হার না মানার বহু গল্প। সেদিন রাতে যখন ওর সঙ্গে কথা হলো মুঠো ফোনে, তখন ওর কথাগুলো শুনছিলাম আর গর্বে যেন বুকটা ভরে যাচ্ছিল। কারণ শৈশবের বন্ধু যখন সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়, তখন একপ্রকার গর্ব হওয়া নিতান্তই স্বাভাবিক।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1713129735239393536?t=Fh-c7jzon5iCp2eXi6RkXQ&s=19
আসলে ভাইয়া সফলতার গল্প শুনতে কার না ভালো লাগে। আপনার শৈশবের বন্ধু বায়োজিদ তার বাবার ব্যবসাকে নতুনভাবে পুনরায় তার মত করে শুরু করে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া ব্যবসাকে পুনরায় উজ্জীবিত করে এখন নিজে পুরো পরিবার নিয়ে ভালো একটা অবস্থানে আছে জানতে পেরে বেশ ভালই লাগলো। আসলে প্রত্যেকের জীবনে একজন একটা সময় খুবই দুঃখের ও কষ্টে দিন কাটে, একটা সময় সেটা আবার তার সুখের মুখ দেখে। বাইজিদের জীবনের সেরকমই হয়েছে। তবে এই ক্ষেত্রে বায়েজিদ একজন মেধাবী হওয়ায় খুব দ্রুতই তাকে পরিবর্তন করতে পেরেছে এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার শৈশবের বন্ধু একটি সফলতার গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আসলে ওর সামনে যে সমস্যাটুকু এসেছিল তা ও খুব স্মার্টলি হ্যান্ডেল করেছিল, যার কারণেই হয়তো ও খুব দ্রুত নিজের অবস্থার পরিবর্তন করে ফেলতে সক্ষম হয়েছিল।
স্কুল লাইফের বন্ধুত্বগুলাই এরকম হাজার বছর পরেও কথা হলে মনে হয় যেন ঠিক সেই আগের স্কুল লাইফের বন্ধুর মতোই আছে! যেহেতু একই রুমে থেকেছেন বায়েজিদ ভাইয়ের সাথে ভালো একটা বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল। তবে বায়েজিদ ভাইয়ের বাবা মারা যাওয়ার বিষয়টা খারাপ লাগলো। বাবার শেষ সম্ভলটুকু ভালোভাবেই দাড় করিয়েছে, বাবার লোনগুলোও পরিশোধ করতে পেরেছে। বন্ধুর এমন সাফল্যের খবর না পেলে কার না ভালো লাগে!
আমি যখন গতরাতে, ওর সাফল্যের কথাগুলো শুনছিলাম, তখন অনেকটাই গর্ববোধ করছিলাম নিজের কাছে। কারন আমার বন্ধু বলে কথা।
আসলেই কিডনিজনিত রোগ এবং ক্যান্সার একটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে একেবারে শেষ করে দেয়। চিকিৎসা না করলেও আফসোস হয়,আবার চিকিৎসা করালে একেবারে নিঃস্ব হয়ে যেতে হয়। আমি মনে করি শৈশবের বন্ধু বান্ধব সবচেয়ে বেশি আপন হয়। আপনার বন্ধু বায়েজিদ পুরাতন ব্যবসাকে বড় করেছে এবং বেশ সফল হয়েছে, এটা জেনে ভীষণ ভালো লাগলো। যাইহোক পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাই। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
এটা সত্য, আসলে ওকে বেশ ভালই কষ্ট করে আজকের এই অবস্থানে আসতে হয়েছে।
অনেকদিন পরে আপনার বন্ধুর ফোন কল পেয়ে অবশ্যই বেশ ভালো লাগা কাজ করছে। সত্যি বলেছেন ভাই আসলে জটিল রোগ গুলো মধ্যবিত্ত অথবা গরিব ফ্যামিলিদেরকে পঙ্গু করে দেয়। তবে এটা শুনে ভালো লাগলো আপনার বন্ধুর বাবার সেই ব্যবসাটাকে আবার নতুন করে আপনার বন্ধু রেজা সাজিয়ে নিয়েছে স্মার্ট চিন্তাধারার মাধ্যমে। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ ভাই, আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।❤️❤️❤️
মানুষের জীবনের উঠে আসার কাহিনীগুলো অনেক কঠিন হয়।তেমনি আপনার শৈশব বন্ধুর জীবন সম্পর্কে পড়ে ভালো লাগলো।অনেকেই গ্রাম্য পরিবেশ থেকে স্বাধীন জীবন রেখে হোস্টেলের ঘরবন্দি জীবনে বাঁধাধরা নিয়মে থাকতে পারে না।এমনিতেই আমি টাকি মাছ খাইনা।তার উপরে আবার আমি শুঁটকি খেতে পছন্দও করি না, বিশেষ করে উগ্র গন্ধটার জন্য।যাইহোক আপনার মায়ের হাতের রেসিপি খেয়ে আপনার বন্ধুর ভালোলেগেছিল জেনে ভালো লাগলো।ধন্যবাদ ভাইয়া।