রাজাবিরাট ভ্রমণ
আজকে মূলত আমার গ্রামে থাকার এবারের মত শেষদিন। হয়তো আবারও আসলে আগামী মাসের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে আসবো। যেহেতু এবার দীর্ঘদিন গ্রামে ছিলাম, খুব যে ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে তা বলবো না বরং এই কঠিন ঠান্ডায় অভিজ্ঞতার কথা যদি বলতেই হয়, তাহলে বলবো সময়টা বেশ কষ্টকর ছিল।
ভিডিও লিংক
আজ বিকেলে আমি আর আমার পরিচিত বড় ভাই মিলে, সোজা ঘুরতে গিয়েছিলাম রাজাবিরাট এলাকায়। খুবই সাম্প্রতিক সময়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে লোকজন এসে বিরাট রাজার এখানকার যে মাটির নিচে বাসভবন ছিল, সেটা পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করছে। মূলত সংরক্ষণ করার জন্য।
যেহেতু শ্বশুরবাড়ি থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরেই এমন কিছুর সন্ধান হঠাৎ করেই মিলেছে, তাই আগ্রহটা আমার বেশিই কাজ করছিল। অতঃপর যেমন ভাবনা তেমন কাজ।
পৌরাণিক কাহিনী মতে গাইবান্ধার রাজা বিরাট নেপাল রাজ্যের বৈরাট নগরাধিপতি মহারাজ উত্তরের একমাত্র পুত্র ছিলেন। তিনি মৃগয়ার্থে বৈরাট নগর হতে আলোচ্য বিরাটে আগমন করেন। এই বিরাট বনের এক উচ্চ ভূমিতে রাজবাড়ী ও নগর স্থাপন করেন। মহাভারতে বিরাট রাজাকে বিরাট নামেই অভিহিত করা হয়।
ইতিহাস জানতে কার কেমন লাগে আমি জানিনা, তবে আমি সময় সুযোগ পেলে কিছু জানার চেষ্টা করি। আমরা যখন বিরাট রাজার বাড়ির প্রাঙ্গণে পৌঁছে গিয়েছিলাম তখন মূলত একদম বিকেল হয়ে গিয়েছে। এই জায়গাটা মূলত আগে থেকে অনেকটাই উঁচু জায়গা ছিল। লোকোমুখে প্রচলিত ছিল নানা রকম কথা। তবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে যে তথ্যগুলো দিয়েছে তা মোটামুটি সত্যি এবং তথ্যগুলো শোনার পরে, এলাকার লোকজনের চিন্তাধারাতেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।
সবার এখন আগ্রহের প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে, এই বিশাল উঁচু জায়গাটি নিয়ে। তাছাড়াও ইতিমধ্যেই খনন কাজ চলছে, যার কারণে বাড়িটির প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের কিছু অংশ সাদৃশ্যমান হয়েছে। কৌতূহলী লোকজনের প্রতিনিয়তই ভীড় এখানে। আর এমনটা হওয়া নিতান্তই স্বাভাবিক। তবে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে, তাই স্থানীয় লোকজন তেমন কোন কিছুই আর করতে পারছে না। তাছাড়া প্রতিনিয়ত তো দর্শনার্থীরা আসছেই।
তবে কিছু নিয়মকানুন মেনে সেখানে যেতে হয়, যেমন কোন কিছুর ক্ষতি সাধন করা যাবে না বা বিকৃত করা যাবে না, এখনো পুরোটা খনন কাজ সম্পন্ন হয়নি, সবেমাত্র শুরু হয়েছে তাতেই এলাকায় একটা গুঞ্জন উঠে গিয়েছে। হয়তো সেই গুঞ্জনের কিছু কথা কানে এসেছিল বিধায়, আমরাও ব্যাপারটা স্বচক্ষে দেখার জন্য গিয়েছিলাম।
তাছাড়াও এই বাড়িটার পিছনে একটা পুরনো কালীমন্দির ও বিশাল পুকুর আছে। লোকোমুখে শোনা কথা অনুযায়ী, সেই পুকুরটা আর কালীমন্দিরটাও রাজার সময় থেকেই নাকি আছে। যদিও ইতিমধ্যেই পুকুর সংস্করণ ও কালী মন্দিরের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। হয়তো সব মিলে যদি বলতেই হয়, তাহলে এক কথাতেই বলে দেবো, রাজবাড়ীটি যদি খনন করে পুনরুদ্ধার করা যায় এবং পুকুর ও কালী মন্দির এর সঙ্গে যদি একত্রিত করা যায়, তাহলে হয়তো পরবর্তীতে এখানে দর্শনার্থীরা আরো বেশি ভীড় জমাবে।
তাছাড়াও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের যে ছক আমি সেখানে দেখলাম, হয়তো তখন আশেপাশের কোন বাড়িঘর আর থাকবে না এবং পুরো জায়গাটা তারা ঘিরে ফেলবে উঁচু ইটের দেয়াল দিয়ে এবং একদম বেশ ভালোভাবে সংরক্ষিত করা হবে। যদি পর্যটনের ব্যবস্থা করা হয়, তাও সেটা হয়তো টিকিটের বিনিময়ে হবে।
তবে একটা ব্যাপারে বেশ হতাশ হলাম, যেহেতু এটা দীর্ঘ কয়েকশো বছরের পুরনো রাজবাড়ি তবে কেন এতদিন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই রাজবাড়ি সংরক্ষণের ভূমিকা পালন করেনি, সেটা ভাবতেই যেন একটু গুলিয়ে যাচ্ছি। তারপরেও যতটুকুই কাজ হচ্ছে, সেটা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। সব মিলিয়ে আজকে পড়ন্ত বেলায়, বেশ ভালোই সময় কেটেছে আমাদের। তারই কিছু খন্ড চিত্র ও ভিডিও আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম, আশা করি ভালো লাগবে।
ধন্যবাদ সবাইকে।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
VOTE @bangla.witness as witness
![witness_vote.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmW8HnxaSZVKBJJ9fRD93ELcrH8wXJ4AMNPhrke3iAj5dX/witness_vote.png)
OR
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1747906442768863464?t=87UMfOSFVvhZTmymrQzDkg&s=19
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে অসাধারণ একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন ভাইয়া। আমাদের দেশের আনাচে কানাচে অনেক প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শণ আছে। সেসব নিদর্শণ অবহেলার কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আশার কথা, দেরিতে হলেও রাজাবিরাটের বাসভবনের খনন কাজ চলছে সংরক্ষণ করার জন্য। যা আপনি লেখা, ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। এইসব প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শণ আমাদের সংস্কৃতির অংশ। মূল্যবান সম্পদ। লেখাটি শেয়ার দেয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদা আপনাকে।
ধন্যবাদ আপু পোস্টটি পড়ে সাবলীল ভাবে মন্তব্য করার জন্য।
অনেক আগের দেখছি রাজার বাড়িটি, সেটাও আবার মাটির নিচে। এটা যদি ভালো করে খনন করা হয় তাহলে আমার মনে হয় পর্যটন আসা শুরু করবে এবং রাজা বিরাট সম্পর্কেও জানতে পারবে। ইতোমধ্যে যেহেতু প্রত্নতত্ত্ব বিধরা কাজ শুরু করেছে আশা করছি এটা ভালো করেই সংরক্ষণ করবে। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের একটা প্রমাণ হিসেবে থেকে যাবে।
এমনটাই ভাই আমিও আশা করছি কারণ এটা পর্যটন কেন্দ্র হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ভাই এবার সারা দেশেই প্রচুর ঠান্ডা পরেছে। আর আপনাদের দিকে ঠান্ডা সবসময়ই একটু বেশি থাকে। যাইহোক প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ দেরিতে হলেও চমৎকার একটি উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বেশ তৎপরতার সঙ্গে কাজ করবে এবং রাজবাড়ীটি খুব শীঘ্রই খনন করে পুনরুদ্ধার করবে। তাহলে নিঃসন্দেহে সেখানে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকবে। যাইহোক ফটোগ্রাফি গুলো দেখে ভীষণ ভালো লাগলো ভাই। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
এটা সত্য যে তারা দেরিতে হলেও বেশ ভালো একটা কাজ হাতে নিয়েছে। আশাকরি ফলপ্রসূ হবে।