অজ্ঞান পার্টি
এই ঈদ যাত্রার সময় ঘরমুখো মানুষ এমনিতেই বেশ আনন্দে থাকে। দীর্ঘ সময় কর্মের তাগিদে পরিশ্রম করে পরিবার-আত্মীয়-স্বজন সকলের জন্য কেনাকাটা করে কিংবা দীর্ঘ সময়ের উপার্জিত অর্থ একত্রিত করে নিয়ে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করে।
তবে এতসবের মাঝেও কিছু আনন্দ যাত্রাপথেই ফিকে হয়ে যায়। এটা একদম চিরন্তন সত্য, উৎসবের সময় গুলোতে কিছু কুটিল বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ বেশ সজাগ থাকে। তাদের মূল লক্ষ্যই থাকে,ঘরমুখো মানুষের ঈদ যাত্রা কে বিঘ্ন ঘটানো।
তিন মাসের বেতনের পুরো টাকা জমিয়েছে সাইদুর। গার্মেন্টসের কাজগুলো কতটা পরিমাণ কায়িক পরিশ্রমের হয়,তা আর নতুন করে বলতে চাই না বরং যারা এ কর্মের ব্যাপারে জানেন তাদের এই বিষয়ে ধারণা থাকা নিতান্তই স্বাভাবিক।
গত ঈদেও সে গ্রামের বাড়িতে যাইতে পারেনি। তার ইচ্ছে ছিল, দুমাস অতিরিক্ত ডিউটি করে একদম কোরবানি ঈদের সময় গ্রামের বাড়িতে যাবে। এজন্যই টাকাগুলো জমিয়ে ছিল সে, তাছাড়াও বাড়ির সকলের জন্য কেনাকাটা এবার করেছিল। নিউমার্কেট থেকে সকলের জন্য নতুন চকচকে কাপড়। বাড়ির কোন সদস্যই তার তালিকা থেকে বাদ যায়নি।
যদিও গার্মেন্টস কর্মী, তারপরেও তার অন্তরটা বেশ নরম। কিছু টাকা আগেই বাড়িতে পাঠিয়েছিল, বাড়ির সদস্যদের বলেছিল এবার কোরবানি দিতেই হবে। বাড়ির লোকজন সেভাবেই বন্দোবস্ত করেছিল।
সরকারি হাসপাতালের জীর্ণশীর্ণ বিছানায় থাকা অবস্থায় হঠাৎই যখন চোখ খুলে সাইদুরের, তখন যেন কোন কিছুই মনে করতে পারছিল না সে। শিরায় স্যালাইন চলছে ক্রমাগত, তার তো এখন এখানে থাকার কথা না। গত রাতে সে যখন বাসে উঠেছিল, তখন থেকেই তার মনের ভিতরে বাড়ি ফেরার আনন্দ কাজ করছিল।
রাস্তায় আগের থেকে এখন অনেক যানজট। ঢাকা পার হতেই অনেকটা সময় লেগে গিয়েছিল, তারপরেও যেহেতু সে বাড়ি ফিরছে, তাই এ যানজট সে যেন কিছুটা সহজভাবে গ্রহণ করেছিল।
এমনিতেই বাড়তি ভাড়া দিয়ে টিকিট কেটেছে সে, তার ভিতরে বাসের সার্ভিস অনেকটাই যা-তা অবস্থা। জানালার পাশে সিট ছিল বিধায় হয়তো তেমনটা তার অসুবিধা হচ্ছিল না। সাইদুর এমনিতেই বড্ড মিশুক মানুষ, সহজেই পাশের সিটে বসে থাকা আর এক মাঝবয়সী লোকের সঙ্গে মুহূর্তেই ভাব জমিয়ে ফেলেছিল।
যাত্রাপথে টুকটাক এমন হয়, সবাই চেষ্টা করে আশেপাশে যারা বসে তাদের সঙ্গে একটু খোশগল্প করার জন্য। এমনিতেই যেহেতু বাসের ভিতরে গাদাগাদি অবস্থা, তাই এমন খোশগল্প বাসের ভিতরের পরিবেশ কে মুহূর্তেই আনন্দঘন করে তুলেছিল।
হাসপাতালের বিছানায় বড্ড ফুঁপিয়ে কান্না করার চেষ্টা করছে সাইদুর। তার সবকিছু কেড়ে নিয়েছে অজ্ঞান পার্টির লোকজন। সে ভুলেও বুঝে উঠতে পারেনি, গতরাতে বাসে তার আশেপাশে যে লোকগুলো গল্প করছিল, তারা মূলত অজ্ঞান পার্টির লোক ছিল। সাইদুরের ঈদ আনন্দ যেন বিষাদে পরিণত হয়েছে, পুরো পৃথিবীটাকে তার কাছে এখন নরকের মত লাগছে।
হাসপাতালের পাশের বিছানার এক লোকের সহযোগিতায়, সে তার বাড়িতে ফোন করেছে। নির্মম ঘটনাগুলো সে বলার চেষ্টা করছিল এবং বলছিল তাকে যেন দ্রুত হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
আচ্ছা এমন ঘটনার শিকার, শুধুই কি সাইদুর নাকি উৎসবের সময় এমন ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটে ? সাইদুরের মত মানুষগুলোর জন্য বড্ড কষ্ট হয়, যদি আরেকটু বাড়তি সুযোগ-সুবিধা তাদের যাত্রাপথে দেওয়া যেত কিংবা বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা যদি নিশ্চিত করা যেত, তাহলে হয়তো এমন ঘটনা অনেকাংশেই কমে যেত।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
এমন ঘটনা সত্যই মর্মান্তিক। তবে যেহেতু বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও বাড়ি ফেরার সময় এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে তাই সাবধানতার কোন বিকল্প নেই।
যাত্রীরা সবসময় অন্যের দেয়া খাবার, পানীয় এমনকি যেকোন জিনিস গ্রহন থেকে বিরত থাকা উচিত।
প্রায়শই দেখি, বাস কিংবা গণপরিবহনে ওঠার পর যাত্রাপথে হকার বা ফেরি করে বেড়ানো ফেরিওয়ালাদের থেকে বিভিন্ন ফল, ঝালমুড়ি বা চানাচুর ইত্যাদি কিনে খায়।
প্রথমত এসব খাবার স্বাস্থ্যমত নয়, দ্বিতীয়ত চেতনানাশক কিছু এজেন্ট থাকতে পারে - যার ব্যাপারে কোন নিশ্চয়তা পাওয়া যায় না খাবারের আগে।
সেজন্য অবশ্যই নিরাপদে থাকতে হলে এসব খাবার পরিহার করা উচিত।
শেষ পর্যন্ত নিজের সতর্কতা নিজের কাছে।
ধন্যবাদ, বাস্তবসিদ্ধ একটি বিষয় সামনে নিয়ে আনার জন্য, 💐
আসলেই দিনশেষে সতর্কতা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা বড্ড জরুরী। বেশ ভালো লাগলো আপনার মন্তব্যটা।
কষ্টদায়ক একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন ভাইয়া। সাইদুরের মত অনেকেই এই অজ্ঞান পার্টির শিকার হয়ে থাকেন। যারা এই অজ্ঞান পার্টির সাথে যুক্ত তারা অমানুষ। আইনশৃংখলা রক্ষার সাথে যারা যুক্ত তাদের উচিত এইসব অমানুষদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করা। এবং মানুষের নিরাপদ চলাফেরা নিশ্চিত করা। সাইদুর দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠুক, এই কামনা করি।পোস্টটি শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
দিনশেষে আসলেই নিরাপত্তা বড্ড জরুরী আপু।
উৎসব এর সময় আসলেই আমরা অহরহ এমন ঘটনা শুনতে পাই এবং বাস্তবে এটা ঘটে বাসে,ট্রেনে সব খানেই অজ্ঞান পাটির লোক এখন তো আবার নতুন জোট বের হয়েছে শয়তানের শ্বাস। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে লাভ নেই এদের যারা ধরবে তারা কিছুই করতে পারে না এদের।বড় একটা জোট কাজ করে এদের পেছনে।অনেক সুন্দর একটা বিষয়ে মনে করিয়ে দিলেন ভাইয়া ধন্যবাদ। সবার যাত্রা সুন্দর হোক।
শয়তানের শ্বাস ব্যাপারটা আমিও সমসাময়িক সময়ে শুনেছি ভাই।
সাইদুল ভাইয়ের মতো এরকম অনেক মানুষ আছে যারা যাত্রা পথে নিজের কষ্টে উপার্জিত সব কিছু হারিয়ে ফেলে। এরকম ঘটনা অনেক ঘটছে। আসলে কিছু কিছু মানুষ আছে যারা অসৎ উপায়ে অন্যের কষ্টে অর্জিত টাকাগুলো ছিনিয়ে নেয়। সেই মানুষগুলোর মনুষত্ব কখনো জন্মাবে না। আপনার পোস্ট পড়ে সাইদুল ভাইয়ের জন্য সত্যি অনেক খারাপ লাগলো ভাইয়া।
নিয়তি বড্ড অসহায়, কখন কার সঙ্গে কি ঘটবে, তা বলা মুশকিল।
মন খারাপ করার মতো পোস্ট। আপনার সুচারু বুনন লেখাটিকে প্রাণ দিল। খুব ভালো লাগল।
ভালো থাকবেন। আনন্দের সাথে থাকবেন।
ভালো লাগলো, আপনার মন্তব্য জেনে।
সাইদুরের ব্যাপারটা জেনে বেশ খারাপ লাগলো। আসলে ঈদের সময় এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। ঈদের সময় এমন অনাকাঙ্খিত বিপদে পরলে, পরিবারের আনন্দ একেবারে মাটি হয়ে যায়। তাই বাসের মধ্যে অপরিচিত লোকের সাথে কথা না বলাই উত্তম। যাইহোক এমন সচেতনতামূলক একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা গুলো, বড্ড বেদনা দিয়ে যায়।
অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সাইদুরের ঈদ আনন্দ বিষাদে পরিণত হলো। খুবই কষ্টদায়ক বিষয়। ঈদের সময় সবাই যখন বাড়ি ফিরে তখন মলম পার্টিগুলো সুযোগ খোঁজে। এরা নিরীহ মানুষদের অজ্ঞান করে সবকিছু হাতিয়ে নেয়। তাই আমরা সদা সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। ধন্যবাদ আপনাকে এমন একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।