সার্কাস
বাসার সামনের দোকানে সন্ধ্যেবেলা করে প্রায়ই চা খেতে যাই, বলতে পারেন এটা অনেকটা আমার নেশাতে পরিণত হয়ে গিয়েছে। যেহেতু প্রায়ই যাই, তাই মোটামুটি সেখানে যারা আমার মত আগত কাস্টমার আসে, তাদের সঙ্গে এক প্রকার সখ্যতা হয়ে গিয়েছে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, যেহেতু চায়ের দোকানটা একদম চৌরাস্তার মোড়ে অবস্থিত, তাই সেখানে প্রশাসনের লোক কিংবা সাংবাদিক এই দুই পেশার লোকের সমাগম সেখানে খুব বেশি। এর পিছনে অবশ্য যথেষ্ট কারণ আছে, মূলত চৌরাস্তার মোড়ে ট্রাফিক বক্স আর হাইওয়ে পুলিশের ভ্রাম্যমান চৌকি অবস্থিত । তাছাড়া তার সন্নিকটেই সাংবাদিক অফিস।
এজন্য সারাদিন এই চায়ের দোকানটাতে বেশ ভালই ভিড় থাকে। তাছাড়া এ ভিড় আরো বেড়ে যায় সন্ধ্যের পরে। যেহেতু এখানে প্রায়ই যাতায়াত করা শুরু করেছি , তাই বিভিন্নরকম অভিজ্ঞতা প্রতিনিয়ত হয়েই যাচ্ছে।
আমি মোটামুটি সব জায়গাতেই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করি। এই যে আজ সন্ধ্যেতে কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে, এক পুলিশ সদস্যের হয়তো কিছু বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য হয়েছে, যার কারণে দেখা গিয়েছে পরিবেশটা অনেকটাই ঘোলাটে।
কেউ যেন কাউকে ছেড়ে কথা বলছে না বরং পারলে দুটো কথা আরো সঙ্গে অতিরিক্ত জুড়িয়ে দিচ্ছে। পুলিশ বক্স ও হাইওয়ে চৌকি থেকে মুহূর্তেই বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসে হাজির হয়েছে আর ও দিকটা থেকে সকল সাংবাদিকরা একত্রিত হয়েছে। যার কারণে মুহূর্তেই রাস্তায় যানজট লেগে গিয়েছে।
সত্যি কথা বলতে গেলে কি, মাঝে মাঝে এমন কর্মকাণ্ড হওয়া ভালো। তাতে আর যাইহোক রাস্তায় বের হওয়া পথযাত্রী কিংবা আমার মত যারা ভবঘুরে মানুষ আছে, তারা ফ্রিতে এক প্রকার সার্কাস দেখতে পারে।
একটা তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে, বিষয়টা শেষমেষ এতটাই জটিল হয়ে গিয়েছিল যে, পরিশেষে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসে বিষয়টা তাৎক্ষণিক মীমাংসা করেছিল। তবে মীমাংসা করেই বা আর কি হবে,উৎসুক জনতা তো এমনিতেই বুঝতে পেরেছিল কি চলছিল সেখানে।
সন্ধ্যাবেলার দিকে যেহেতু চৌরাস্তা তে অনেকটাই ভিড় থাকে, সেজন্য মোটরসাইকেল চালকরা চেষ্টা করে, যানজটের ফাঁক-ফোকড় দিয়ে এদিক সেদিক বেরিয়ে যাওয়ার জন্য, মানে অনেকটাই ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে। ঠিক তেমনি একটি কাজ করেছিল এক মোটরসাইকেল চালক।
মানলাম, মোটরসাইকেল চালক আইন লঙ্ঘন করেছে, তার জন্য তো শাস্তি আছে। হয়তো সেটা মামলা দেওয়া কিংবা জরিমানা করা। তবে কোনো অবস্থাতেই তো, ভিকটিমের কাছ থেকে অহেতুক মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা ব্যাপারটা তো অযৌক্তিক। এই অযৌক্তিক কাজটাই সন্ধ্যা বেলায় হয়েছিল, আর তা দেখেছিল এক সাংবাদিক। সে একটু মাঝখান থেকে ভাগ চেয়েছিল আর তাতেই বেঁধে যায় বিপত্তি।
দুপক্ষ নিজেদের স্বভাবজাত অভ্যাস সকলের সামনে এমন ভাবে প্রদর্শন করেছিল, যাতে উৎসুক জনতা বুঝতে পেরেছিল বিষয়টা মূলত টাকা ভাগাভাগি কেন্দ্র করে, তাছাড়া আর কিছুই না। হয়তো একদল একটু কম পেয়েছে আর একদল একটু বেশি, তাই নিয়ে এই লংকা কান্ড ঘটে গেল। আর ফাঁক তালে আমি চা খেতে গিয়ে, সার্কাস দেখে আসলাম।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
বাহ ভালই উপভোগ করেছেন ভাইয়া। আমি তো প্রথমে ভেবেছিলাম পুলিশের ঘুষ নেওয়া সাংবাদিক দেখে রিপোর্ট করতে চেয়েছে। এখন দেখছি সাংবাদিক ভাগ চাইছে। সাংবাদিকও দেখছি পুলিশের মত হয়ে গিয়েছে। তাহলে আর বাকি থাকলো কি ? বেশ ভালই সার্কাস উপভোগ করেছেন আসলেই।ধন্যবাদ।
রিপোর্ট করার ভয় দেখিয়েই তো টাকা ভাগ চেয়েছে, মানে চোরের উপর বাটপারি।
হাহাহা! বেশ মজা পেলাম। সাংবাদিক আর পুলিশের টাকার ভাগাভাগি! এমনিতেই ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করছে, সেটার বিনিময়ে টাকাও খাচ্ছে পুলিশ। বিনিময়ে কিছুই বলছে না চালকদের! তাহলে ট্রাফিক আইনটা থাকলো কই! প্রশ্ন থেকে যায়, এভাবে আর কতোদিন? উৎসুক জনতাও বুঝতে পেরেছিল, টাকা নিয়েই দুজনের মাঝে ঝগড়া হলো।
এইভাবে আর কতদিন এটা বলা মুশকিল, তবে কবে সঠিক ভাবে সবকিছু ঠিকঠাক হবে, তা বলা আরও কঠিন।
ভাই পুলিশদের নিয়ে আসলেই কিছু বলার নেই। নিয়ম কানুন যত বাড়ছে, তাদের পকেট ততই ভারী হচ্ছে। এই মাসের ১৯ তারিখে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাতে গিয়েছিলাম সিএনজি নিয়ে আমাদের মদনপুর থেকে। তো যাওয়া আসার সময় বাদ দিয়ে, আমরা ৩ ঘন্টা বাণিজ্য মেলায় ঘুরবো, এমন চুক্তি হয়েছিল সিএনজি ড্রাইভারের সাথে এবং ভাড়া হচ্ছে ৯০০ টাকা। তো আসার সময় পুলিশ আমাদের সিএনজি আটকালো। কারণ ড্রাইভার উল্টো রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়েছিলো জ্যাম ছিলো বলে। দ্বিতীয়ত গাড়ির কোনো কাগজপত্র নেই। শেষ পর্যন্ত ১০০০ টাকা আদায় করলো সিএনজি ড্রাইভারের কাছ থেকে। সেই টাকা সিএনজি ড্রাইভার আমার কাছ থেকে নিয়ে পুলিশকে দিলো। মানে আমাদেরকে নিয়ে আসা বাবদ যা ভাড়া,সবই নিয়ে গিয়েছিলো পুলিশ। পরবর্তীতে আমি ভাড়া বাড়িয়ে ১১০০ টাকা দিয়েছিলাম বেচারার মুখের দিকে তাকিয়ে। যাইহোক পুলিশ আর সাংবাদিকদের ভাগাভাগি তো সার্কাসের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। বেশ ভালোই মজা নিয়েছেন ভাই। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার ব্যাপারটা জেনে বেশ ব্যথিত হলাম। তবে আমি বেশ ভালই মজা পেয়েছি, আমার চোখের সামনে এমন সার্কাস দেখে।
গল্পটি সার্কাস ই আসলে টাকার ভাগাভাগি ভিকটিম থেকে দুজনই নিবে।এখানে সাংবাদিক এর তো কোনো অধিকার নেই টাকার ভাগ চাওয়ার।যদিও দুজনই অন্যায় করেছেন তারপরেও সাংবাদিক এর বিষয়টি একদম অযৌক্তিক লেগেছে আমার।পুলিশ তো নিয়েই থাকে এটা কমন ব্যাপার।তবে এই ঘুষ নেওয়ার ব্যাপারটা সমাজ থেকে বিদায় হোক সেটাই চাই আমরা সাধারণ মানুষ।ভালো লাগলো আপনার লেখাটি। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।