আগুনে পুড়ে ছাই
আমার থেকে দুই ব্যাচের ছোট হলেও, মোল্লাকে কলেজের কম বেশি সকলেই চিনতো। হয়তো সেটা তার ব্যক্তিত্বের কারণে। ছেলেটা কলেজে ভর্তির পর থেকেই বেশ বন্ধুসুলভ ছিল, চেষ্টা করতো সকলের সঙ্গে মেশার জন্য এবং তাছাড়া বড় ভাইদের কে বেশ ভালোই সম্মান দিত। তাই হয়তো মোল্লা নামটি সহজেই ছড়িয়ে গিয়েছিল।
আমার যখন ইন্টার্ন শেষ হয়, সে সময় একবার মোল্লার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তখন, ও নিজেই তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। মূলত টুকটাক পরামর্শ নিতে চেয়েছিল আমার কাছ থেকে । তবে সেসময় ওকে আমি খুব একটা বেশি ভালো পরামর্শ দিতে পারি নি, কেননা আমার নিজেরই অনেক কিছু জানা-বোঝার ঘাটতি ছিল। তারপরেও বলেছিলাম, অন্যদের সঙ্গে কথা বলে নেওয়ার জন্য, হয়তো তারা তোমাকে সুপরামর্শ দিতে পারে।
তারপর তো দীর্ঘ বিরতি, সেভাবে কখনোই আর মোল্লার সঙ্গে দেখা হয়ে ওঠেনি। যেহেতু আমরাও কলেজ থেকে বিদায় নিয়ে ছিলাম এবং নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছিলাম, তাই সবার সঙ্গে যোগাযোগটা অনেকটা হালকা হয়ে গিয়েছিল।
আমি যখন চেম্বার করতাম, সেসময় এক ওষুধ কোম্পানির উপজেলা ভিত্তিক সায়েন্টিফিক সেমিনারে হঠাৎই মোল্লার সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। ছেলেটাকে দেখে সেদিন বেশ ভালোই লেগেছিল। কেননা নিজের কলেজের পরিচিত ছোট ভাই। দীর্ঘ সময় গল্প হয়েছিল ওর সঙ্গে। শুনেছিলাম, ও পার্শ্ববর্তী উপজেলাতেই চেম্বার দিয়েছে। বেশ ভালোই প্র্যাকটিস করার চেষ্টা করছে ও। দিনে বেশ ভালোই রোগী দেখে।
সেদিনের পর থেকেই টুকটাক মুঠোফোনে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়াতে ওর সঙ্গে কথা হতো। একটা সময়ের পরে তো আমি নিজেই চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছি, তারপরেও ওর সঙ্গে কথোপকথন হতো। যে বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছি, কর্মজীবনে সেই বিষয়ে যখন কেউ ক্রমাগত ভালো করে যায়,তখন নিজের থেকেই ভালোলাগা কাজ করে।
এলাকায় চেম্বার করে বেশ ভালই সুনাম কুড়িয়েছে মোল্লা। একটা সময়ের পরে তো বিবাহ বন্ধনেও আবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল, কে জানে হঠাৎই ওকে এরকম বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। সেদিন রাতে, ও যখন চেম্বার করে বাড়ি ফিরছিল, তখনও সবকিছু ঠিকঠাক ছিল।
মূলত মাঝরাতের দিকে ও হঠাৎই খবর পায়, ওর চেম্বার যে মার্কেটে ছিল সেখানে আগুন লেগেছে। মুহূর্তেই বিষাদের ছাপ যেন চতুর্দিকে ছড়িয়ে গেল। কেননা মোল্লা সশরীরে গিয়ে দেখে, ওর যেমন চেম্বারটা পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে, তেমনটা পুরো মার্কেট আগুনে জ্বলজ্বল করছে। যদিও পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসেছিল, তবে যা শেষ হওয়ার, তা তো অনেক আগেই হয়েছে। মোল্লার এমন ক্ষতিতে বেশ খারাপই লাগছে, কেননা হুট করে যখন পেটে লাথি পড়ে যায়, তখন একটু উঠে দাঁড়াতে বেশ ভালোই কষ্ট করতে হয়।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আসলে আগুন লাগলে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না, একেবারে সবকিছু পুড়ে শেষ হয়ে যায়। আপনার কলেজের ছোট ভাই মোল্লার জন্য সত্যিই খুব খারাপ লাগছে। এমন অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো বেশ কঠিন। কারণ এমন পরিস্থিতি আমাদের এখানে একসময় প্রায়ই ঘটতো। আগুনে পুড়ে কতো পরিবারের স্বপ্ন যে ভেঙে গিয়েছে, তার কোনো হিসাব নেই। যাইহোক তবুও শুভকামনা রইল মোল্লা ভাইয়ের প্রতি। পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
এটা ঠিকই বলেছেন ভাই, এমন পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন , তারপরেও আমি আশাবাদী ।
ভাই আপনার লেখাটা পড়ে সত্যিই ভীষণ খারাপ লাগলো। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আসলে কিছুই করার থাকে না তাকিয়ে দেখা ছাড়া। তারপরেও আপনার পরিচিত ছোট ভাই যেন আবার নতুন করে শুরু করতে পারেন এই শুভকামনা রইল ।ভালো থাকবেন সবসময়।ধন্যবাদ।
আসলে যার যায় সেই বোঝে, ব্যাপারটা অনেকটাই জটিলতা সম্পন্ন আপু। আমিও চাই, ও নতুন করে ঘুরে দাঁড়াক।
পরিচিত মানুষ গুলোর সাথে দীর্ঘ দিন পর দেখা হলে বেশ ভালোই লাগে ৷ একটা সময়ের পর আমাদের জীবন থেকে অনেকেই হারিয়ে যায় , হয়তো সবার জীবনের মোড় একেক দিকে ঘুরে যায় , এজন্যই ৷ তবে তাদের সাথে আবারও দেখা হওয়া এবং সম্পর্ক ধরে রাখা , ব্যাপারটা আসলেই ভীষণ ভালো লাগার ৷ তবে যাই হোক , মার্কেটে আগুন লেগেছে মানে অনেকেরই স্বপ্ন আশা পুড়ে ছাই হয়েছে ৷ তেমনই ভাবে মোল্লা ভাইয়ের জীবনেও এটা একটা কালো অধ্যায় ৷ জীবন আসলে মাঝে মাঝে ভীষণ কঠিন , এভাবেই সব শেষ হয়ে যায় নিমিষেই ৷ ওনাদের সবার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল ৷
মোল্লার গল্পটি পড়ে খারাপ লাগলো । আর অনেকদিন পরে পুরনো বন্ধু-বান্ধবদের সাথে দেখা হলে কিন্তু ভালোই লাগে গল্পটা খুব ভালো জমে ওঠে । চেম্বারটা বেশ ভালোই চালাচ্ছিল হঠাৎ করে এরকম একটা ঘটনা ঘটলে তখন পথে বসে পড়ার মত অবস্থা হয় । ঠিকই বলেছেন হুট করে পেটে লাথি পড়লে তখন ঘুরে দাঁড়াতে আসলেই অনেক সময় লাগে । সবকিছু উপরওয়ালার ইচ্ছা এখন তাকে ধৈর্য ধরে সামনের দিকে এগোতে হবে ।
এটা একদম ঠিক বলেছেন আপু, একদম পথে বসে যাওয়ার মতই অবস্থা ওর। আশাকরি ও ঘুরে দাঁড়াবে।
এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আসলেই কষ্টকর! মোল্লা ভাইয়ের দোকানটা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। তার জন্য কষ্ট হবে ঘুরে দাঁড়ানোর। তবে মোল্লা ভাইয়ের জন্য দোয়া রইল যেন সে আবার দাঁড়াতে পারে নতুন করে 🌼
এমন পরিস্থিতি যেন, কারো সঙ্গে না ঘটে, এই প্রত্যাশাই ব্যক্ত করছি।
আপনার সেই কলেজ জীবনের মোল্লা ভাইয়ের গল্প পড়েছিলাম। পড়েবেশ ভালই লাগছিল। তবে শেষের দিকে যেয়ে একদম থমকে গেলাম। ঠিক বলছেন যখন পেটের মধ্যে লাথি পড়ে তখন সবকিছু শেষ হয়ে যায়। যেহেতু মোল্লা ভাইয়ের একমাত্র আয়ের উৎস ছিল ওই চেম্বারটা। কিন্তু সামান্য ব্যবধানের কারণে সবকিছু পড়ে শেষ হয়ে যায়। তাছাড়া মোল্লা ভাই তো বেশ বিপদে পড়ে যাবে এখন।
মোল্লা ছেলেটা আসলে ভালোই বিপদের ভিতরে আছে এখন, তবে আশাবাদী ও ঘুরে দাঁড়াবে।