জীবন থেকে নেয়া গল্প |||~~বিপদেই চেনা যায় কে আপন কে পর||~~
বিপদেই চেনা যায়, কে আপন কে পর
সকলকে শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও বেশ ভালো আছি। আর আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকলেই সব সময় ভালো থাকবেন এটাই প্রত্যাশা করি।♥♥
বন্ধুরা, আজ আমি সিয়ামের জীবনে ঘটে যাওয়া এক বাস্তব মুহূর্ত আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি। কারণ বাস্তবতা- বাস্তব অভিজ্ঞতা মানুষকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে যায়। আর সেই শিক্ষার্থী কেউ জেনে নেওয়া যায় কে আপনার কতটা আপন কতটা পর। জানিনা কেন যেন এই ঘটনাটা দুদিন ধরে মনের ভেতর অনেক বেশি দোলা দিচ্ছিল। আর সেজন্যই ভাবলাম লিপিবদ্ধ করে রাখি ঘটনাটি।
অনেক বেদনা ভরাত্রান্ত হৃদয়ে আজকের এই গল্প লেখা। ২০২৩ সালে রমজান মাস। সিয়াম তখন রামপুরা মেসে থাকত। হঠাৎ করে সে অসুস্থ হয়ে যায় প্রচন্ড জ্বর সেই সাথে চোওয়ালের ব্যথা। ওই যখন ব্যথায় কথা বলতে পারছিল না আমি ছটফট করছিলাম। কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না!! ওদের মেসেজে সিনিয়র দাদা ছিল তার সাথে কথা বললাম। ওকে একটু ডাক্তার দেখানোর জন্য। এরপর আমার এক বন্ধু যে সুপ্রিম কোর্টে জব করে। ওকে বললাম অনুনয়-বিনয় করে। ও তখন সিয়ামকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। মাথায় পানি দিয়ে দেয়। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র এনে দিয়ে সে চলে যায়। এদিকে তার অবস্থার আরো বেশি অবনতি হতে থাকে। আর যেহেতু ঈদের আগে আগে বাস,ট্রেন প্রচুর পরিমাণে জ্যাম রাস্তায়। আমি যেতে চাইলেও অনেক সময় লাগবে। তাই দিশাহারা হয়ে পড়েছিলাম।
আমার বড় বোনের মেয়ে যাকে আমি নিজের মেয়ের মতো মানুষ করেছিলাম। সেও থাকতো ঢাকা জিরানিতে। তিন থেকে চার দিন ছেলেটা এত বেশি অসুস্থ ছিল। তারপরও তারা তাকে দেখতে যেতে পারে নাই। বরং নানা রকম ব্যস্ততা দেখিয়েছিল। যেখানে সিয়াম চোখ খুলে তাকাতে পারছিল না সেখানে ওকে বলতেছিল ওর বাসায় যেতে। সে সময় সিয়ামের গাল গলার সবকিছু ফুলে গিয়েছিল। ওর মামস হয়েছিল। এমত অবস্থায় আমি আমার বন্ধুর সাথে কথা বলে,সিদ্ধান্ত নিলাম কোনরকমে ওকে প্লেনে করে বাসায় পাঠানো যায় কিনা।আমার বন্ধু ওর ওখানে গিয়ে ওর মাথায় পানি দিয়ে গোটা গাম মুছে এরপর ওষুধ খাইয়ে,ওকে নিয়ে এয়ারপোর্ট গিয়ে সেখানে টিকিট করে বিমানে পর্যন্ত তুলে দিয়েছিল। যে মানুষটির সাথে আমাদের রক্তের কোন সম্পর্ক ছিল না। এদিকে সিয়াম যখন সৈয়দপুর এয়ারপোর্টে এসেছিল, মাত্র ৪০ মিনিটে সেখান থেকে ওর বাবা গিয়ে ওকে বাসায় নিয়ে আসে এবং ওকে ডাক্তার দেখানোর পর আলহামদুলিল্লাহ ও সুস্থ হয়ে যেতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লেগে যায়।
আমার বড় বোনের মেঝো মেয়ে টাঙ্গাইলে জব করে। বেশ কিছুদিন আগেও অনেক অসুস্থ হয়ে যায়। সেখানে ওর দুলাভাই শত ব্যস্ত তারপরেও ওকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে ওকে চিকিৎসা করায়। অর্থাৎ যাবতীয় কাজকর্ম করে। ঠিক এই জায়গাটাতেই মনে একটা খটকা। যে মানুষগুলো সিয়ামের জন্য একদিন এতোটুকু সময় বের করতে পারল না , শুধুমাত্র খালাতো ভাই বলে। কিন্তু নিজের বোন বা শালীর জন্য তারা যা করেছে তাতে প্রমাণ দিয়েছে নিজার পরের পার্থক্যটা। যেটা আমি সহজে করতে পারতাম না। যাইহোক বন্ধুরা দিন চলে যায় সময় চলে যায় কিন্তু গল্পগুলো থেকে যায় হৃদয়ের গভীরে। তখন অন্যরকম একটা অনুভূতি ছুঁয়ে যায়। অথচ এই মেয়েটার জন্য কি করি নাই আমি!!!!!! যাক সেসব কথা শুধু এতোটুকুই বলবো বিপদে পড়লে প্রিয়জন আপনজনদেরকে চেনা যায় এবং বোঝাও যায়।
অথচ রক্তের সম্পর্ক ছাড়া যে মানুষগুলো হঠাৎ পরিচিত তারাই কিন্তু আপন জনের চেয়েও বেশি বড় কাজে চলে আসে। আজকের এই গল্প থেকে কে কতটুকু নিতে পারলেন আমি জানিনা। তবে আমি সকলকে অনুরোধ করব আত্মীয়তার সম্পর্কগুলো আমরা যেন গভীর বন্ধুরা আবদ্ধ করে রাখতে পারি। এরকম আফসোসের কোন গল্প যেন তৈরি হতে না দেই। তবে এ কথাটা সত্য যে মানুষগুলো নিবেদিত প্রাণে অন্যের জন্য কাজ করে যায়। তারা তাদের কাছে মূল্যায়ন পায় না। তবে সবাই যে এরকম তাও কিন্তু না।
আমি সেলিনা সাথী। আমার প্রফেশন, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার ও মোটিভেটর। আমি একজন সমাজ কর্মি ও সংগঠক। এছারা ও তৃনমূল নারী নেতৃত্ব সংঘের নির্বাচিত সভাপতি বাংলাদেশ। আমি "নারীসংসদ" এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি "সাথী পাঠাগার"। আমার লেখা মোট ১০ টি একক ও যৌথ কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। একুশে বই মেলায় প্রতি বছর একটি করে কাব্য গ্রন্থ প্রকাশের চেস্টা করি। আমার লেখা কাব্যগ্রন্থের মধ্যে "মিস্টি প্রেম" (উপন্যাস), "অশ্রু ভেজা রাত" (কবিতা), "জীবন যখন যেমন" (কবিতা), "একুশের বুকে প্রেম" (কবিতা), "নারীকন্ঠ" (ম্যাগাজিন) অন্যতম।
কমিউনিটি : **আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আসলে আপু আপনি ঠিক বলেছেন সবাই একই রকম হবে তা কিন্তু নয়। তবে বেশির ভাগ মানুষ আপনজনেরা উপকার করলে এমন প্রতিদান দেয়। কথায় আছে আপু আপনার চেয়ে পর ভালো পরের চেয়ে জঙ্গল ভালো। সত্যি আপু বিপদে পড়লে ঠিক মানুষ চেনা যায়। আসলে আপু দিন চলে যায় কথা গুলো মনে থাকে। ধন্যবাদ আপু।
এটা ঠিক আমরা বিশ্বস্ত মানুষগুলোর কাজ এই কষ্ট পায় আঘাত পাই। আর প্রিয়জনদের কাছে তো বটেই।
আসলে আপন মানুষগুলোকে বিপদে পড়লেই চেনা যায়। তবে আপনার বোনের মেয়ে কাজটি মোটেও ঠিক করেনি। এর আগেও উনার সম্পর্কে জেনেছিলাম যে আপনি উনাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। যাইহোক একজন অন্য মানুষ হয়েও আপনাদের জন্য অনেক কিছু করেছে আর ভাইয়ের জন্য অনেক কিছুই করেছেন জেনে ভালো লাগলো। বিপদে পড়লেই আসলে মানুষ চেনা যায়।
একটা সময় আসলে মানুষ অতীত ভুলে যায়। বর্তমানের ঝলমলে রঙিন আলোয় পুরনো স্মৃতিগুলো মন হয়ে যায়। যার জ্বলন্ত উদাহরণ আমি।
একদম সত্য কথা যে বাস্তবতা অনেক কিছু শিখায় আমাদের জীবনের চলার পথে ৷ আমরা বুঝতে পারি আসল মানুষ কারা নকল ৷ কারা শুধু সুখে পাশে থাকে ৷ আমাদের জীবনে এসব অনেক মানুষ যারা কখনো দুঃখে পাশে থাকবে না ৷ আর সেগুলো করে খুব কাছের মানুষ ৷ যেটা আপনার ব্লগে তুলে ধরেছেন ৷
আর যাই বলেন এটা চরম সত্য যে বিপদে বোঝা যায় কে আপন কে পর ৷ যা হোক অনেক সুন্দর একটি পোষ্ট পড়লাম ৷
এটা ঠিক বিপদেই প্রিয় মানুষগুলোকে চেনা যায় নিখুঁতভাবে। তবে আমার জীবনে আমি যতগুলো মানুষের উপকার করেছি। তারা প্রায় প্রত্যেককেই আমাকে আঘাত দিয়েছে। আর এখন আমার সয়ে গেছে।
এটা আপু একদম ঠিক বলেছেন বিপদে পড়লে মানুষ চেনা যায়। বাস্তবতা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। এই পৃথিবীতে একেক মানুষের মন একেক রকম। তবে নিজের থেকে পর ভালো পরের থেকে জঙ্গল ভালো। একজন অন্য মানুষ হয়ে ভাইয়ার জন্য অনেক কিছু করেছে। আসলে সৃষ্টিকর্তা কোন না কোন মাধ্যমে কারো না কারোর জন্য একটি পথ বের করে দেয় আমাদের ভালো থাকার জন্য। পোস্টটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপু আপনাকে।
পোস্ট টি হৃদয় ছুয়ে গেলো আপু। অসুস্থ হলে এবং বিপদে পড়েই শুধু চেনা যায় কে আপন কে পর।আসলে কাছের মানুষের অবহেলা কখনো মেনে নেয়া যায় না।দূরের কেউ হলে মনে হয় সে তো আমার কেউ না এমনটা করতেই পারে। এজন্যই কথায় আছে নিজের চেয়ে পর ভালো পরের চেয়ে জঙ্গল ভালো।আসলে বিপদ কেটে যায় সময় তার নিজ গতিতে চলে যায় কিছু কথা অমৃত থেকে যায়।সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আপনার ছেলে সুস্থ হয়েছে কিন্তুু আপনার বোনের মেয়ের কথা চিরজীবন মনের মধ্যে বেদনা হয়ে থাকবে।
আপনার বন্ধু সিয়াম ভাইকে এয়ারপোর্টে নিয়ে গিয়ে প্লেনে তুলে দিয়েছিল,সেই পোস্টটি আমি পড়েছিলাম। উনি অনেক সহযোগিতা করেছিলেন তখন। আসলে এমন বন্ধু পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। যাইহোক দিনশেষে আমরা আপন মানুষগুলোর কাছ থেকেই সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাই। তবে এটা অবশ্যই ঠিক, বিপদে পরলে মানুষ চেনা যায়। খারাপ সময় গুলোও ঠিকই অতিবাহিত হয়ে যায়, তবে খারাপ সময়ের ঘটনাগুলো মনের মধ্যে দাগ কেটে থাকে সারাজীবন। যাইহোক আপনাদের জন্য অনেক অনেক দোয়া এবং শুভকামনা রইল।