আজ ভুত চতুর্দশী - বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর।
![]() |
---|
কথিত আছে আজকের দিনে আমাদের প্রিয় মানুষগুলো যারা আমাদের কাছ থেকে শারীরিক ভাবে চিরতরে ওপারের লোকে চলে গিয়েছেন, তাদের আত্মা আজকের দিনে তাদের প্রিয় জনদের সাথে দেখা করতে এই পৃথিবীতে ফিরে আসে।
আমার শীর্ষক পড়ে নিশ্চই বুঝেছেন কেনো আমি প্রবাদটি আমার লেখার শুরুতেই সংযোগ করেছি?
অনেকেই এগুলো বাতুলতা অথবা কুসংস্কার আবার কেউ কেউ হাস্যকর বিষয় হিসেবে নেবেন।
আর, ঠিক সেই কথা মাথায় রেখেই প্রথমেই জানিয়ে রাখি, যেকোনো বিষয় বিশ্বাস করা অথবা না করা আমাদের ব্যাক্তিগত পছন্দ।
সেই তর্ক বিতর্ক নিয়ে আমি এখানে আসিনি।
তবে, আমি বহু প্রিয়জন হারিয়ে আজ একা! আজ পর্যন্ত সকলেই স্বপ্নে আসলেও আত্মার দেখা আজও মেলেনি।
এখন বিষয় হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তাকে ও কেউ সচক্ষে দেখেন নি;
কিন্তু তার অস্তিত্ব আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারি না!
ঠিক তেমনি যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই সকল নিয়মগুলো সৃষ্টির পিছনে নিশ্চই কোনো না কোনো যুক্তি আছে। সবটা আমার জানা নেই বা বলতে পারেন আগ্রহ নেই। আর ঠিক সেই কারণে, বড়দের অনুসরণ করেই এখনও সব মেনে চলার চেষ্টা করি।
![]() |
---|
আজকের এই দিনে বেশ কিছু নিয়ম পালন করতে দেখেছি ছেলেবেলায় আমাদের বাড়িতে।
যেমন ধরুন ১৪ শাক খাওয়া, মানে একসাথে ১৪ প্রকারের শাক রান্না করা হয় আজকের দিনে।
আবার সন্ধ্যার সময় কেউ ১৪ প্রদীপ আবার কেউ কেউ ১৪ টি মোমবাতি ঘরের সব কোনায় কোনায় জ্বালিয়ে দেয়।
এটা আমাদের ১৪ পুরুষের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়, এছাড়াও ছোটবেলায় শুনেছি ঘরের যেখানে যেখানে অন্ধকার সেই সকল জায়গায় এই বাতি জ্বালাতে হয়।
![]() |
---|
এর পিছনের যুক্তি আত্মার প্রবেশ রুদ্ধ করা। যেমন ছোটবেলায় কালী পুজোর দিন মা বলতেন চুল ছেড়ে বেরোতে নেই, তান্ত্রিক ছিল কেটে নিয়ে যায়, তন্ত্র সাধনার জন্য!
সত্যি মিথ্যে জানিনা, তবে ছোটবেলা থেকে যা শুনে এসেছি, সেটাই আপনাদের সাথে ভাগ করে নিচ্ছি।
তবে, আজকের দিনটি ছেলেবেলায় বেশ উপভোগ করতাম।
সেই সময় আজকের মত বাজার থেকে হাবিজাবি মেলানো ১৪ শাক কিনে আনার ব্যাপার ছিল না।
সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে সকালেই বেরিয়ে পড়তাম ১৪ শাক নিজেরাই তুলে আনতে।
কারণ তখন বাড়ির আসে পাশে প্রচুর শাক এমনিতেই পাওয়া যেত।
এইরকম ফ্ল্যাট কালচার তখন ছিল না, সুপুরি গাছের গোড়া থেকে থানকুনি পাতা, আবার কল তলায় গিমাশাক, ইত্যাদি অবহেলাতেই জন্মাতো, কোনো যত্নের প্রয়োজন পড়ত না।
তখন গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর গল্প ছিল না, যে ঋতুতে যেটা ধরায় থাকার কথা তেমনটাই হতো।
শীতকালে, গরম আর বর্ষাতে বৃষ্টির আকাল দেখা দিত না।
তখন মোমবাতির পরিবর্তে মা দুপুর বেলায় প্রদীপ গুছিয়ে রাখতো, নিজে সলতে কেটে তুলো দিয়ে, তারপর তেল দিয়ে প্রদীপ তৈরি থাকতো।
সন্ধ্যেবেলায় আমি, দিদি আর মা এই তিনজন বাড়ির তিন দিক বেছে নিয়ে প্রদীপ জ্বালানোর তোড়জোড় চলত।
অন্যদিকে বাবা ছাদে উঠে টুনি লাইট লাগাতেন।
কি মজার ছিল সেই দিনগুলো!
আজ সবটাই ফাঁকা, সবটাই অন্ধকার!
![]() |
---|
![]() |
---|
![]() |
---|
![]() |
---|
![]() |
---|
![]() |
---|
গতকাল একটু প্রয়োজনে বাজারে গিয়েছিলাম, ফেরার পথে বেশ কয়েকটি বাড়িতে আলোর রোশনাই দেখে বেশ ভালো লাগলো তাই কয়েকটা ছবি তুলে এনেছিলাম।
সাথে মোমবাতি আর একটা লাইটের চেন কিনে এনেছিলাম ঠাকুরের সামনে জ্বালাবো বলে।
এটা আসলে এখন ভালো লাগার চাইতেও ছোটবেলা থেকে দেখে আসা অভ্যেস হয়ে গেছে।
আজ থেকে আমার মন খারাপের পর্ব শুরু আর চলবে সেই ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। কোনো মানুষ ভালো পোশাক পড়লে, হাসিমুখে কথা বললেই তার জীবন সুখ শান্তিতে ভরা এটা ভাবা যুক্তিহীন।
কেউ কেউ হয়তো অবাক হবেন শুনলে তবে কেনো জানিনা এখন কর্মের পাশাপশি সু-নজর আর কু-নজরেও মাঝেমধ্যে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়! বিশেষ করে যখন পিছনের দিনগুলোর কথা ভাবতে বসি।
যাইহোক, আপনারা যারা এই নিয়ম মানেন তারা কিভাবে দিনটি কাটান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না।
![I9Ws6mn5yoT8JYcTf1.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmXWAyVb1Cc1XAWU6HFRVVZopNCk2VhWTCH1VVxJdBwBJD/I9Ws6mn5yoT8JYcTf1.gif)
![6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo1R3nByagojBFK9X9VyMfrNoTUUqjGSvWpqdmMgU31CjnNeqLcAbmdrcdhwjg36qCE8hXx2eEL9gcF5xj7.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmc8yviUiSxfyoxr2Hiq7W5HcV2ytbSck6fdFkomrJ2PfH/6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo1R3nByagojBFK9X9VyMfrNoTUUqjGSvWpqdmMgU31CjnNeqLcAbmdrcdhwjg36qCE8hXx2eEL9gcF5xj7.gif)
Upvoted. Thank You for sending some of your rewards to @null. It will make Steem stronger.
যদি প্রথমে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই খুব সুন্দর একটি পোস্ট ও আপনার ছোটবেলার একটি স্মরণীয় দিন আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য।
একটা কথা না বললেই নয় , আপনার পোস্ট পড়তে আমার বেশ ভালো লাগে এক টা মজার ব্যাপার খুঁজে পাই। আপনার পোষ্টের পড়তে পড়তে শেষ হয়ে গেলেও এক্স কল করে দেখতে থাকি শেষ হলো কিনা ।
আপনার ছোটবেলার সেই স্মরণীয় দিন টা গতকাল আবারও এসেছিল ছোটবেলা কি কি করেছেন আপনার মায়ের সাথে, দিদির সাথে মিলে প্রদীপ জ্বালাতেন, আপনার বাবা ছাদের উপরে ঘণ্টা বাজাতে আপনি এই জিনিসগুলো খুব মিস করেন। যেটা আপনার পোস্টের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
আমরা বড় হওয়ার সাথে সাথে আমাদের ছোটবেলার আনন্দ মুহূর্তগুলো আমাদের কাছ থেকে অনেকটা দূর হয়ে যায় তবে, মাঝেমধ্যে আমাদের ভিতরে এমন ভাবে নাড়া দিয়ে উঠে, তখন আবার কল্পনাতে সেই ছোট বেলা তে ফিরে যাই।
এই আত্মা উঠে আসে এই ব্যাপারটা আমার আগে জানা ছিল না।আপনার পোস্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, তবে আমার মনে হয় এরকম হতে পারে। যাইহোক আপনার পোস্টটি পড়ে ভালো লেগেছে আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
প্রথমেই বলতে চাই আপনার উৎসব সুন্দর কাটুক দিদি। তারপর বলতে চাই, দিদি কোন কারনে মন খারাপ করবেন না।ভালো খারাপ যাই ঘটুক, সৃষ্টিকর্তার ওপর সবসময় ভরসা রাখবেন।
আসাধারণ লিখেছেন ম্যাম। ১৪পদ শাক,১৪ প্রদীপ,এগুলো ১৪ পুরুষদের উদ্দেশ্য উৎসর্গ করা হয় তা এতো বিস্তারিত ভাবে জানা ছিল না আমার।তবে কার্তিক মাসের শেষের দিকে জমি থেকে নানা ধরনের শাক পাতা তোলে দেখতাম নানু দাদু রা রান্না করতো।আর বলতো এই সময় খেতে হয় নানা ধরনের শাক। আসলে এই টাই না কি আমি ঠিক বলতে পারছিনা।তবে প্রথা
মানুষের কল্যানের জন্যই তৈরি হয়েছে। শুধু শুধু ই যুগ যুগ ধরে পালন করতো না যদি এর পিছনে কোন যুক্তিক কারন না থাকতো।আর আপনার
মন খারাপ থাকবে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুনে খুব খারাপ লাগছে ম্যাম।সবার আলমারি তে থাকে
নতুন কাপড় আর আমার আলমারি ভর্তি স্মৃতি।এই বাক্যটি ই বলে দিচ্ছে প্রিয়জন হারানোর ব্যথা কতটা কষ্টের ব্যাপার। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
'সকলের আলমারিতে বন্দী থাকে জামাকাপড় আর আমার আলমারি ভর্তি স্মৃতিতে'। এই কথাটা হয়তো আমাদের সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।আমার মাকে দেখতাম তার বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত তার ছোটবেলা থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে। আবার একই কথা আমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কখনো এসব স্মৃতি আমাদের হাসায় ,আবার কখনোবা কাঁদায় ।
আমার ছোটবেলা থেকে বিয়ের আগে পর্যতো কালীপুজোর সাথে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সন্ধ্যায় আলো জ্বালানো হতো ঘরে ঘরে। সন্ধ্যা থেকে তারাবাতি ,বাজি ,পটকা ,হাওয়াই (আমরা এই নামেই ডাকতাম )ছুটানো হতো আকাশে। এরকম হাজারো স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এই পুজোর সাথে।
অনেক কিছুই মনে পরে গেলো আপনার লেখা পরে। ধন্যবাদ পুরোনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেবার জন্য।ভালো থাকবেন সবসময়। শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
আমি ভুত চতুর্দশীতে শুধু ১৪ শাক খেয়েছি, তাও আমার দিদি পাঠিয়েছে বলে খাওয়া হয়েছে, না হলে হতো না। প্রদীপ জ্বালানো আর হয়নি। আমি আত্মার অস্তিত্ব অবশ্যই মানি আর এটাও বিশ্বাস করি যে আত্মা অবিনশ্বর।
দীপাবলির শুভেচ্ছা রইল আপনাকে।
বিশ্বাসে মেলায় বস্তু,তর্কে........ অনেক সময় এসব বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয়না তবুও করতে হয়।ভূত চতুর্দশী বাংলাদেশেও পালিত হয়।দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য বজায় রাখতে খারাপ লাগে না।