গ্রামে খালার বাড়িতে দাওয়াত খেতে গিয়ে || 10% Beneficiary To @shy-fox 🦊
আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা
সবাই কেমন আছেন? আশা করছি মহান সৃষ্টিকর্তার রহমতে ভালো আছেন সবাই। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
দিনটা ছিল বৃহস্পতিবার । রাতে খাবার সময় আম্মুকে বলছিলাম অনেক দিন থেকে হাঁসের মাংস খাওয়া হয় না, খুব হাঁসের মাংস খেতে ইচ্ছে করছে। আব্বু বলল ঠিক আছে কাল হাঁস কিনে আনবে। শুক্রবার সকালে আব্বু বাজার যাওয়ার আগেই আমার ছোট মামীর ফোন আসলো আজ সবাই মিলে মামীর বড় বোনের বাড়ি গ্রামে যাবো। আমি বড় বোন হাঁসের মাংস রান্না করবে তাই আমাদের সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে। একদম সময়োপযোগী দাওয়াত। এখানে না বলার কোন অবকাশই নেই।
আমরা সবাই গ্রামে যাওয়ার জন্য তৈরি। আমি, আব্বু, আম্মু, আমার ছোট ভাই , আমার ছোট মামা, মামি, মামাতো বোন, ভাই ও নানী সহ আমরা দাওয়াত খেতে যাব। আব্বু আমার ছোট, ভাই মামা ও আর এক খালাতো ভাই তারা বাইকে করে রওনা দিলো। আর আমরা লেডিস গ্রুপ রওনা দিলাম অটো রিক্সায় করে। এই গ্রামটি শহর থেকে খুব একটা দূরে না, তাই অটো রিক্সা করেই যাওয়া যায়।
শহর পেরিয়ে যখন গ্রামের দিকে গাড়ি প্রবেশ করলো, গ্রামের অপরূপ দৃশ্য মুগ্ধ করলো আমাকে। রাস্তার পাশ দিয়ে ধান ক্ষেত কি অপরূপ লাগে দেখতে। কিছুদূর যেতে দেখতে পেলাম কাঁচা রাস্তায় কয়েকটি মুরগি বাচ্চা সহ দাঁড়িয়ে আছে। কচুরিপানায় ভর্তি পুকুর, সবুজে সবুজ নয়। আরেকটি পুকুরের পাশে আবার খুব সুন্দর একটি ফুলের গাছও দেখতে পেলাম। বেগুনি কালারের ফুল গুলো দেখতে অপরূপ লাগছিল। এরকম গ্রামীন পরিবেশ সত্যিই মন ভালো করে দেয়।
মনমুগ্ধকর গ্রামীণ পরিবেশের ভেতর দিয়ে গাড়ি চলতে চলতে মেরিনা আন্টির বাড়ি চলে আসলো। মেরিনা আন্টি হল আমার মামীর বড় বোন। বাড়িতে ঢুকতেই অতিথি আপ্যায়ন শুরু হয়ে গেল। আমাদের জন্য পায়েস বানিয়ে রেখেছিল আন্টি। প্রথমেই পায়েস আর মিষ্টি খেতে দিল আমাদের। আন্টির পায়েস অসাধারণ হয়। আমি এক বাটি খেয়ে পরে আরো আরো এক বাটি নিয়েছিলাম।
পায়েস মিষ্টি খেয়ে আমি শুয়ে শুয়ে রেস্ট করছিলাম। তারপর আমার মামাতো বোন এসে বলল দিদিমণি চলো গ্রামটা ঘুরে দেখি। গ্রামে সচরাচর যাওয়া হয় না। এরকম পরিবেশে ঘুরলে মনটা শান্ত হয়ে যায় তাই আমি অদিলাকে বললাম চল যাই। বাড়ির বাইরে বের হয়ে দেখি আব্বু আর আম্মু লেবু গাছে লেবু ছিড়ছে আর পেঁপে গাছ থেকে পেঁপে পারছে। মেরিনা আন্টির বাসার এই লেবুটা অসাধারণ। মাঝে মাঝেই আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। আব্বুকে লেবু ছিড়তে দেখে আমিও লেবু ছিড়তে চলে গিয়েছিলাম। এই লেবু গাছটা অনেক বড়। লেবু ছিঁড়তে গাছের ভেতরে যেতে হয়। ভেতরে গিয়ে লেবু গাছের কাটার আদর খেয়েছি কিছু। তবে মজা ও লেগেছে।
এই গ্রামে একটি বিখ্যাত মসজিদ আছে। আর মসজিদের সামনে দুটো বড় বড় তাল গাছ আছে। এই মসজিদটি তালতলা মসজিদ নামে পরিচিত এই এলাকায়। এলাকাবাসীর ধারনা এই মসজিদটি জ্বীন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। এই মসজিদটি কবে হয়েছে কে বানিয়েছে সে সম্বন্ধে কারোরই কোন ধারনা নেই। এজন্যই তারা মনে করে বহু বছর আগে জ্বীন এই মসজিদটি বানিয়েছে। আমি মসজিদের বাইরে থেকে এই ছবিটি তুলেছি। নামাজের সময় বাদে বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে তাই ভেতরে গিয়ে ছবি তুলতে পারিনি। মসজিদের ভেতর থেকে অনেক বড় দেখা যায় কিন্তু ভেতরে নাকি খুবই কম জায়গা রয়েছে নামাজ পড়ার জন্য। মানে মসজিদটির দেয়ালগুলো খুবই চওড়া।
বেশ কিছুক্ষণ গ্রামের চারদিকটা ঘোরার পর খাবার সময় হয়ে আসলো। এদিকে খুদাও লাগলো প্রচুর। বাড়িতে গিয়ে দেখি খাবারো রেডি করেছে তারা। খাবার আইটেমে ছিল পোলাও, হাঁসের মাংস, মাছ ভাজা আর সবজি। হাস, মাছ আর সবজি তিনটাই আন্টির বাসায়। আন্টির বাসার পেছনে আন্টিদের বড় একটি পুকুর আছে । সেখানকার তাজা তাজা মাছ চমৎকার লেগেছিলো খেতে। আর আন্টির রান্না বরাবরি আমার অনেক পছন্দের। বেশ তৃপ্তি করে সবাই মিলে খেলাম একসাথে।
দুপুরের খাওয়া শেষ করে সবাই মিলে সুখের দুখের অনেক গল্প করতে করতে বিকেল হয়ে এলো। বিকেলবেলা আন্টি বানিয়ে খাওয়ালো তালের পিঠা আর সাথে চা। আমাদের সামনেই তালের রস করলো, তারপর পিঠা বানালো। গরম গরম পিঠা দারুন লাগে খেতে। পিঠা আর চা খাওয়ার মাঝেও দারুন আড্ডা হল আমাদের। অনেকদিন পর গ্রামে গিয়ে সবাই মিলে বেশ সুন্দর কিছু মুহূর্ত পার করলাম।
জীবনটা খুব ছোট তাই এর খুশির সময় গুলো মিস করা একদমই উচিত নয়। আমাদের জীবনটা যান্ত্রিক হয়ে গিয়েছে। তাই যান্ত্রিক জীবন থেকে বেরিয়ে এসে গ্রামে ঘুরতে গেলে যে শান্তি পাওয়া যায় সত্যিই তার তুলনা হয় না।
আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আবার দেখা হবে আপনাদের সাথে নতুন একটি পোস্টে। সে অব্দি সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন ও সাবধানে থাকবেন। ধন্যবাদ।
চিত্র উঠানোর জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | Tecno spark 5 pro |
---|---|
লোকেশন | কুড়িগ্রাম,বালাকান্দি |
w3w | link |
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপু হাঁসের মাংসের কথা মনে করিয়ে দিলেন। অনেকদিন হল হাঁসের মাংস খাইনি। আগে জানলে আপনার সাথে দাওয়াতে চলে যেতাম। আপনার কপাল মনে হয় পাচ আংগুল থেকে বড় তা না হলে ঐ সময়েই মামীর বোনের বাসায় দাওয়াত পড়ে যায়? মুরগির বাচ্চা, কচুরিপানা দেখে গ্রামের কথা মনে পরে গিয়েছে। গ্রামের ছবিগুলো খুব সুন্দর লাগছে দেখতে। গিয়েছেন হাঁসের মাংস খেতে আর খেয়ে এসেছেন পোলাও, হাঁসের মাংস, মাছ ভাজা, সবজি, মিষ্টি, পায়েস, পিঠা। তবে হাঁসের মাংসের কালার বলছে অনেক মজা হয়েছে। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
ফ্যামিলির সাথে ঘুরতে গেছেন এক আন্টির বাড়ি দাওয়াত খেতে। আপনি মনে মনে হাঁসের মাংস খেতে চেয়েছেন। সেই আন্টি হাঁস রান্না করে আপনাকে খেতে দিয়েছে। সত্যি শহরের কোলাহল থেকে গ্রামের নীরব পরিবেশ দেখতে ভালো লাগে। সময় পেলে আমিও গ্রামে ঘুরতে যায়। পুকুরের মাছ খেয়েছেন মাছগুলো খেতে নিশ্চয়ই মজা ছিল। ধন্যবাদ আপনাকে এরকম একটি ঘোরাঘুরির পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
দিলে তো লোভ লাগিয়ে। সেই দিনের সেই দাওয়াতে আমিও ছিলাম। আর সেই দিনের খাবার গুলো দেখে আজ নতুন করে, আবারো ভীষণ খেতে ইচ্ছে করছে। সত্যিকার অর্থেই হাঁসের মাংসগুলো খেতে খুবই সুস্বাদু ও মজার হয়েছিল। সেই সাথে তালের পিঠা যেন এখনো মুখে লেগে আছে। প্রতিটা খাবারই অসম্ভব স্বাদের ছিল। তোমার পোষ্টের মাধ্যমে সেই দাওয়াত খাওয়ার কথা মনে করে, সেই দিনে আবারও ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে। ধন্যবাদ তোমাকে এত সুন্দর বর্ণনার মাধ্যমে দাওয়াত খাওয়ার দিনটি উপস্থাপন করার জন্য।