স্মৃতিতে বর্ষা ও শৈশব।
আসসালামু আলাইকুম। আমি @sabbirakib. আজ আপনাদের সাথে আষাঢ়ের শেষ কটি দিনে বর্ষার শৈশব স্মৃতি শেয়ার করবো।
আমার শৈশব কেটেছে গ্রামে। চাঁদপুর জেলায়, ডাকাতিয়া নদীর অববাহিকায়। আমাদের গ্রামের মাঝ দিয়ে প্রবাহমান ডাকাতিয়ার রূপ বদলে যেত বর্ষায়। বছরের অন্য সময়টায় নদীতে পানি থাকতো কম। স্রোত থাকার প্রশ্নই উঠেনা। কিন্তু বর্ষা আসলেই নদী ফুলেফেঁপে উঠত, পানিতে টইটম্বুর হয়ে যেত। আশেপাশের গ্রামের ভরে থাকা পানি নিয়ে যেত মেঘনা হয়ে বঙ্গোপসাগরে। আমরা নদীতে যেতেম দল বেঁধে সাতার কাটার জন্য। ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাতাম নদীতে। কখনও শামুক-ঝিনুক কুড়িয়ে আনতাম বাড়িতে পালা হাঁস-মুরগির খাবারের জন্য। বেশিরভাগ সময় আসতে দেরি হলে এগুলো নিয়ে আসতাম। শামুক-ঝিনুক দেখলে মায়েদের বকার তীব্রতা কমে যেত।
দুপুরে বৃষ্টির সময় আমাদের আরেকটি প্রিয় কাজ ছিল ফুটবল খেলা। আমরা ছোটরা ছোট ফুটবল নিয়ে খেলতাম। বড়রা খেলতো বড় ফুটবল নিয়ে। প্রায় সময়ই নানা কারনে ঝগড়া লেগে যেত। গ্রামের ফুটবল মানেই টুকটাক ঝগড়া হবেই।
প্রচুর ধান চাষের জমি ছিল। আমরা সেসব ধানের জমিতেই খেলতাম। বর্ষার শেষ দিকে আমন বা আউশ রোপন করা হয়। এর জন্য হালচাষ করা লাগতো। কিন্তু যে জমিতে খেলা হত সেখানে দুই চাষ কম দিলেও নাকি চলত। ফুটবল খেলার কারনে আগাছাগুলো মরে ছাফ হয়ে যাতে। মাটিও কিছুটা নরম হত। গৃহস্থরা খুশি হত? তাদের জমিতে খেললে। তাছাড়া, গ্রামের মানুষ ফুটবল খুবই পছন্দ করত। কাবাডির জায়গাটা ফুটবল ততদিনে দখল করে ফেলেছিল। খেলোয়াড় দিনদিন কমে যাওয়ায় মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলে কাবাডির প্রতি। এই ভিন দেশী খেলাটিই তাদেরকে বেশি টানত৷ এখন তো গ্রামে কাবাডির অস্তিত্বই নেই। ছোটরা তো বোধকরি নামও জানেনা কাবাডির।
সারাদিন বৃষ্টিতে ভেজার পর প্রায় সন্ধ্যাতেই বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের নাক দিয়েও পানি ঝরত। কত যে মার খেয়েছি মায়ের হাতে এজন্য তার ইয়াত্তা নেই। জ্বর আমাদের বিশেষ হত না। যা হত, তা ওই সর্দি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। এজন্য অবশ্য আমাদের ঔষধও খুব একটা খাওয়া লাগতো না। বর্ষায় গড়ে প্রতিদিন আমরা ৩/৪ ঘন্টা পানিতে থাকতাম। সম্ভবত এজন্যই জ্বর আমাদের কাবু করতে পারত না। পরদিন দেখা যেত ঠিকই আবার বৃষ্টিতে ভিজতে চলে গেছি কোথায় না কোথায়! পানিতে নেমে লাফালাফি করতাম। একটা খেলা খেলতাম ছোঁয়াছুঁয়ি। এই খেলার মাধ্যমেই আমরা সাতারে খুবই দক্ষ হয়ে উঠি। তাছাড়া, পানির মধ্যে গোল্লাছুট খেলাও আমাদের বেশ পছন্দের ছিল। মাটিতে খেলার চেয়ে পানিতে খেলে বেশি মজা পেতাম। আইডিয়া করতে হতো কোনদিক দিয়ে আমার বিপক্ষ যেতে পারে। গোল্লাছুট আর ছোঁয়াছুঁয়ি খেলার মাধ্যমেই আমরা ডুবসাঁতারে এক্সপার্ট হয়ে উঠি।
বর্ষার স্মৃতি এপর্যন্তই। লেখাটি কেমন হয়েছে তা অবশ্যই জানাবেন। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন এই কামনায়। আল্লাহ হাফেজ।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Hi, Greetings, Good to see you Here:)
শৈশবের সৃতি ভুলা যায় না। শৈশবের কথা মাঝে মাঝে মনে হলে শৈশবে কাটানো দিনগুলোতে ফিরে যেতে মনে চায়।
একদম ঠিক বলেছেন ভাই।
X/Twitter promotion Link