আরেকটি আফগান রূপকথার জন্ম।

in আমার বাংলা ব্লগ10 months ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


দুদিন আগে পাকিস্তান বনাম আফগানিস্তানের ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হোলো। আফগানিস্তান কাগজে-কলমে কম শক্তির দল হলেও গত কয়েক বছর যাবৎ দেখা যাচ্ছে তারা পাকিস্তানের সাথে যখনই খেলা হয় তখন দারুণভাবে লড়াই করে। বেশ কিছু ম্যাচ তারা জয়ের কাছাকাছি গিয়েও শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি। যার ফলে এই ম্যাচটি নিয়ে সাধারণ দর্শকের ভেতরে ব্যাপক আগ্রহ ছিলো। বর্তমানে আফগানিস্তানের সাথে পাকিস্তানের খেলা হলে সেটি এই দুই দলের দর্শকদের ভেতরে আলাদা উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়। যথারীতি সেদিন টস জিতে পাকিস্তানের অধিনায় বাবর আজম ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়।

IMG_20231025_182809.jpg

IMG_20231025_182716.jpg

স্ক্রিন শট নেয়া হয়েছে NBI Sports নামের চ্যানেল থেকে

এদিন পাকিস্তানি দুই ওপেনার আবদুল্লাহ শফিক এবং ইমামুল হক প্রথম থেকেই বেশ দেখে শুনে খেলতে শুরু করেন। পরে ধীরে ধীরে তারা রানের গতি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেন। এভাবে খেলতে খেলতে দশ ওভার শেষে পাকিস্তানের স্কোর হয় ৫৬ রান। কিন্তু তখনই ইমামুল হক একটি বাজে শট খেলে তার উইকেটটি বিলিয়ে দেন। পরবর্তীতে ক্রিজে আসেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম। তিনিও এসে শুরু থেকে কিছুটা দেখে শুনে খেলতে থাকেন। পরে আস্তে আস্তে তিনি বিভিন্ন রকম শট খেলার দিকে মনোযোগ দেন। বাবর আজম এবং আব্দুল্লাহ শফিকের ভিতরে একটি ভালো পার্টনারশিপ গড়ে ওঠে। যখনই মনে হচ্ছিল এই জুটি একটি বড় পার্টনারশিপ উপহার দেবে। ঠিক তখনই ১১০ রানের মাথায় আবদুললা শফিক আউট হয়ে যান। পরবর্তীতে ক্রিজে আসেন পাকিস্তানের বর্তমান সময়ের সবচাইতে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ান। কিন্তু এদিন রিজওয়ান খুব দ্রুত আউট হয়ে যান। পরবর্তীতে বাবর আজমের সাথে পাকিস্তানের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান সউদ শাকিলের একটি পার্টনারশিপ গড়ে ওঠে। যখনই মনে হচ্ছিল তাদের পার্টনারশিপটি বেশ বড় হবে। ঠিক তখনই সউদ শাকিল আউট হয়ে যান।


IMG_20231025_182746.jpg

স্ক্রিন শট নেয়া হয়েছে NBI Sports নামের চ্যানেল থেকে

এর পরে ক্রিজে আসেন ইফতেখার আহমেদ। তিনি বাবরের সাথে জুটি বেঁধে খেলতে থাকেন। কিন্তু ঠিক যে সময় বাবর আজমের ক্রিজে থাকার খুবই প্রয়োজন ছিলো সেই সময় তিনি আফগান স্পিনার নূরের বলে আউট হয়ে যান। তখনও পাকিস্তানের স্কোর বোর্ডে রান জমা হয়েছে মাত্র ২০৬। ততক্ষণে ৪২ ওভার এর খেলা হয়ে গিয়েছে। সেই সময় মনে হচ্ছিলো পাকিস্তান ভালো কোন স্কোর করতে পারবে না। কিন্তু পরবর্তীতে সাদাব খান এবং ইফতেখার আহমেদের ভেতরে দারুন এক জুটির কল্যাণে পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত ২৮২ রান করতে সমর্থ হয়। স্কোরবোর্ডে ২৮২ রান তোলার পর অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষক মনে করছিলো জেতার জন্য এই রানটা যথেষ্ট কিন্তু। তখনও কেউ জানতো না তাদের জন্য কি চমক অপেক্ষা করছিলো।


IMG_20231025_182829.jpg

স্ক্রিন শট নেয়া হয়েছে NBI Sports নামের চ্যানেল থেকে

এই টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আফগানিস্তান অধিনায়ক ঘোষণা দিয়েছিলেন এবার ক্রিকেটপ্রেমীরা আফগানিস্তানের ব্যাটিংয়ের ক্ষমতা দেখবে। এতদিন সবাই আফগানিস্তানকে শুধু বোলিং সর্বস্ব দল হিসেবে চিন্তা করতো। আফগানিস্তানের দুই ওপেনার পাকিস্তানি বোলারদের উপরে চড়াও হয়ে খেলতে থাকে। না তারা কোন উল্টাপাল্টা শট খেলেনি একদম প্রপার ক্রিকেটিং শট খেলার মাধ্যমে তারা দ্রুত রান তুলে যাচ্ছিলো। রাহমানউল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদরান দুজনে মিলে মাত্র ২১ ওভারেই ১৩০ রান তুলে ফেলেন ২৮২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে। তারপর আফগানিস্তান পরাপর দুটো উইকেট হারায়। তখন অনেকে চিন্তা করেছিলো পাকিস্তান হয়তো খেলায় ফিরে আসবে। কিন্তু পরবর্তীতে রহমত শাহ এবং হাসমতুল্লাহ শহীদি বাকি কাজটা ঠান্ডা মাথায় শেষ করেন। এই ধরনের স্কোর কিভাবে চেজ করতে হয় সেটা আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানেরা দারুন ভাবে দেখিয়েছেন। কখনোই তারা মাথা গরম করে অতিরিক্ত শট খেতে যাননি। যেই সময়ে ঠিক যেমন খেলা দরকার ঠিক তেমনটাই খেলেছেন।


প্রথমবারের মতো আফগানিস্তান পাকিস্তানের বিপক্ষে কোন ওয়ানডে ম্যাচ জিতেছে। সেটাও আবার বিশ্বকাপের মতো দারুণ মঞ্চে। এদিন আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানরা যেমন দারুন ব্যাটিং করেছেন তেমন পাকিস্তানের বোলাররা খুবই বাজে বোলিং করেছেন। সেই সাথে পাকিস্তানের ফিল্ডিং ও ছিলো জঘন্য। এই ম্যাচটা দেখে আমার মনে হয়েছে স্কোরবোর্ডে ২৮২ রান তোলার পরে পাকিস্তানি টিমের সদস্যরা কিছুটা রিলাক্স হয়ে গিয়েছিলো। তারা হয়তো ওভার কনফিডেন্ট হয়ে গিয়েছিলো। তারা মনে করেছিল তারা সহজেই ম্যাচটা জিতে যাবে। কিন্তু আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় তারা খুবই দারুণ একটা জয় পায়। একই বিশ্বকাপে আফগানিস্তান পরপর দুটো বড় দলকে হারিয়ে ক্রিকেটে তাদের শক্ত অবস্থানের জানান দিচ্ছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে আফগানিস্তানের এই জয়ে বিশ্বকাপটা আরো জমে উঠেছে। এই বিশ্বকাপে এখন আর ফেভারিট বলে কেউ নেই। যে কেউ যে কাউকে হারাতে পারে। আশা করি বিশ্বকাপের পরের ম্যাচগুলো ও এমন উপভোগ্য হবে।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।




🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 10 months ago 

খেলাটি আমার দেখার সুযোগ হয়নি। তবে বিভিন্ন চ্যানেলে রিভিউ দেখে যেটা বুঝলাম যে এবার আফগান দল উড়িয়ে দিল বিশ্ব সেরা পাকিস্তান কে। আসলেই কিন্তু সত্য বলেছেন ভাইয়া এই বিশ্বকাপে এখন আর ফেভারিট বলতে কেউ নেই। যেই যে কোন সময়ে ঘটিয়ে দিতে পারে একটি অঘটন। সুন্দর লিখেছন ভাইয়া।

 10 months ago 

এই ম্যাচে আফগানিস্তান এককথায় দুর্দান্ত খেলেছে। খুব ভালো বোলিং করে তারা পাকিস্তানকে মোটামুটি অল্প রানেই আটকাতে পারতো,কিন্তু শেষের দিকে ইফতেখার আহমেদ চমৎকার ব্যাটিং করে। সেই সুবাদে পাকিস্তান ফাইটিং স্কোর গড়তে সক্ষম হয়। কিন্তু আফগানিস্তানের প্রথম চারজন ব্যাটসম্যান চমৎকার ব্যাটিং করে। যার ফলে আফগানিস্তান ৮ উইকেটের বিশাল জয় পায়। আফগানিস্তান টিম বর্তমানে বেশ ফর্মে রয়েছে। তাই চলতি বিশ্বকাপে আমার মনে হচ্ছে আফগানিস্তান আরও অঘটন ঘটাতে পারে। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 10 months ago 

গতদিন পাকিস্তানে বিপক্ষে আফগানিস্তান দুর্দান্ত একটি জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। পাকিস্তানের এতো গতির বোলারদের বলগুলো অত্যন্ত সাবলীলভাবে মোকাবেলা করে আফগানিস্তান জয়ের বন্দরে নোঙ্গর ফেলাতে সক্ষম হয়। সত্যি এবারের বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের ঘটানো আর একটা অঘটন।

 10 months ago 

আসলেই এই বিশ্বকাপে ছোট দলগুলো নতুন নতুন রূপকথার গল্প লিখছে। অলরেডি আফগানিস্তান দুইটি ম্যাচ বড় দলের সাথে জিতে গেছে। এভাবে জিতে যাবে কেউ কখনো ভাবেনি তাদের দারুন পারফরম্যান্স আমাকে মুগ্ধ করেছে।

 10 months ago 

ক্রিকেট খেলা যদিও খুব বেশি দেখা হয় না।তবে কমিউনিটিতে অনেকের পোষ্টের মাধ্যমে বর্তমানের বিষয় সম্পর্কে খুব সহজেই জানতে পারছি।তাছাড়া আপনাদের সুন্দর বর্ননা পড়ে সহজেই ধারণা পাওয়া যায়।আফগানিস্তান কম শক্তিশালী দল হয়েও পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতে গেছে এটা সত্যিই আনন্দের।এই খেলায় জয়ের মাধ্যমে তারা বুঝিয়ে দিল যে,তারা কম শক্তিসম্পন্ন দল নয়।ভালো লাগলো আপনার পোষ্ট পড়ে, ধন্যবাদ ভাইয়া।

 10 months ago 

আসলে ভাই আফগানিস্তানের খেলা দেখলে মনে হয় অনেক পুরনো টিম এটা। আফগানিস্তানের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে এরকম খেলোয়াড় তৈরি করাটা কঠিন একটা ব্যাপার তার পরেও তারা এটা করে যাচ্ছে। এদের যে খেলার ভাব আমি মনে করি খুব তাড়াতাড়ি এরা বিশ্বকাপের ট্রফিটা ছুয়ে দেখতে পারবে। পাকিস্তানের বিপক্ষে আফগানিস্তানের জয়টা সত্যি বেশ রোমাঞ্চকর ছিলো। আসলে এটা রূপকথার গল্পের মতই। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.030
BTC 59317.93
ETH 2530.37
USDT 1.00
SBD 2.47