তিন বন্ধুর পুরান ঢাকা অভিযান (তৃতীয় পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগ8 months ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


লালবাগ কেল্লা ঘোরাফেরা শেষে যখন নাজিরা বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে যাবো তখন একটা ভুল করে ফেললাম। আসলে আমরা তিন বন্ধুর ভিতরে কেউই পুরান ঢাকার অলিগলি খুব একটা ভালোভাবে চিনি না। ভালোভাবে বলতে কি বলতে গেলে মোটেই চিনি না। কারণ আমাদের তিনজনের কারোরই সেদিকে থাকার অভিজ্ঞতা ছিলো না। আমি কিছুটা রাস্তাঘাট চিনি। তবে যেখানে ছিলাম সেখান থেকে নাজিরা বাজার যেতে হলে কোন দিকে যেতে হবে সেটা বুঝতে পারিনি। সেই কারণে আমরা ভুল পথে চলতে শুরু করেছিলাম। চিন্তা করেছিলাম কিছুদূর হেঁটে সামনে এগিয়ে তারপর রিকশায় উঠবো। কিন্তু কিছুদূর আগানোর পরও যখন দেখি এলাকাগুলো তেমন একটা পরিচিত মনে হচ্ছে না। তখন বুঝতে পারলাম আমরা উল্টোদিকের রাস্তায় চলে এসেছি। যাই হোক সেখান থেকে আমরা বুঝতে পারছিলাম না নাজিরা বাজার কতো দূরে। আমরা মনে করেছিলাম হয়তো নাজিরা বাজারের আশেপাশেই রয়েছি।

IMG_20231201_163954.jpg

রিক্সা ঠিক করতে গেলে যখন রিক্সাওয়ালা ভাড়া বেশি চাইলে তখন কিছুটা সন্দেহ হলো। প্রথমে মনে করেছিলাম রিক্সাওয়ালা হয়তো আমাদের ভাবসাব দেখে ভাড়া বেশি চাচ্ছে। কিন্তু কয়েক জন রিক্সাওয়ালার সাথে কথা বলার পর বুঝতে পারলাম আসলে আমরা ভুল পথে চলে এসেছি। যাই হোক তারপরে একটি রিকশায় দরদাম করে উঠে বসলাম। রিকশা চলতে শুরু করলে আমি আশেপাশের এলাকা গুলো ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর যখন রিক্সা নাজিরা বাজার এর কাছাকাছি পৌঁছোলো তখন আমি বুঝতে পারলাম আমরা আসলে অন্যদিকে চলে গিয়েছিলাম। নাজিরা বাজার পৌঁছতে আমাদের রিকশায় করে প্রায় আধা ঘন্টা লাগলো। যখন নাজিরা বাজার এর কাছাকাছি পৌঁছেছিলাম ইতিমধ্যে আসরের আযান দিয়ে দিয়েছিলো। তখন আমি ওদেরকে বললাম তোরা সামনে যেতে থাক। সামনে গেলেই বিসমিল্লাহ কাবাব ঘর দেখতে পাবি। তোরা সেখানে অপেক্ষা কর। আমি নামাজ পড়ে আসছি। এই বলে আমি মসজিদে ঢুকে গেলাম নামাজ পড়ার জন্য।


IMG_20231201_163414.jpg

নামাজ পড়ে বের হয়ে যখন বন্ধু রাসেলকে ফোন দিলাম তখন ও জানালো ওরা বিসমিল্লাহ কাবাব ঘরের পাশেই রয়েছে। আমি দ্রুত হেঁটে ওদের কাছে পৌঁছলাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম বাইরে বসে আছিস কেন? তখন ওরা বলল কাবাবের দোকানে এখনো কাবাব তৈরি করা হয়নি। আরো ঘন্টাখানেক সময় লাগবে। তখন চিন্তা করতে লাগলাম কি করা যায়? তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি হাটাহাটি করে দেখি। যদি এর ভেতরে কাবাব প্রস্তুত হয় তাহলে তখন আমরা রেস্টুরেন্টে ঢুকবো। কিন্তু কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি শেষ করে যখন আবার সেই কাবাবের রেস্টুরেন্টের সামনে এসে পৌঁছালাম দেখলাম তখন ও তাদের খাবার প্রস্তুত হয়নি। তখন আমি ওদেরকে বললাম চল তাহলে কয়েকটা দোকান পরেই বিখ্যাত হাজির বিরিয়ানি রয়েছে। সেখান থেকে বিরিয়ানি খেয়ে আসি। আমার প্রস্তাবে ওরা দুজনেই রাজি হয়ে গেলো। আমি তখনও জানতাম না যে ওরা দুজন দুপুরে ভারী কোন খাবার খায়নি। তারপর তিন বন্ধু মিলে হাজির বিরিয়ানিতে গিয়ে উপস্থিত হলাম। সেখানে পৌঁছে দেখলাম সন্ধ্যার সময়ে সেখানে তেমন কোন ভিড় নেই। বলতে গেলে হাজির বিরিয়ানির দোকানটা ফাঁকাই ছিলো। যার ফলে আমরা সহজে সেখানে বসার জন্য টেবিল পেয়ে গেলাম।


IMG_20231201_164002.jpg

হাজির বিরিয়ানি অনেক বিখ্যাত হলেও সেখানে ভেতরে বসার জন্য খুব বেশি চেয়ার টেবিল নেই। যাই হোক আমরা বসে তিন জনের জন্য বিরিয়ানি অর্ডার করলাম। তবে অর্ডার করার সময় আমি ওয়েটারকে বলে দিলাম যে শেষবার যখন আমি এখান থেকে বিরিয়ানি খেয়েছি সেই অভিজ্ঞতাটা মোটেই ভালো ছিলো না। কারণ আমার বিরিয়ানির প্লেটে তেমন মাংস ছিলো না। আজকে যেনো তেমনটা না হয়। ওয়েইটারের মুখ দেখে অবশ্য বুঝতে পারলাম না কথাটা সে কিভাবে নিলো। কিন্তু বিরিয়ানী যখন টেবিলে পরিবেশন করলো তখন দেখতে পেলাম বিরিয়ানির ভেতরে বেশ ভালো পরিমাণে মাংস রয়েছে। বিরিয়ানির প্লেট টেবিলে আসার সাথেই তিন বন্ধু মিলে খাওয়া শুরু করলাম। নামে বিরিয়ানি হলেও হাজির বিরিয়ানি কে আমার কাছে সবসময় একটা হালকা মশলা যুক্ত তেহারি মনে হয়। আমরা সাধারণত যে ধরনের বিরিয়ানি খেয়ে থাকি এটা তার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এই বিরিয়ানিতে মসলার পরিমাণ থাকে খুবই কম আর তেহারি মত ছোট ছোট পিস মাংস থাকে এর ভিতর। আমাদের তিন বন্ধুর ভিতরে রাসেল অবশ্য মাংস বা বিরিয়ানি এই টাইপের খাবার খুব একটা পছন্দ করেনা। ওর পছন্দ হচ্ছে সবজি, মাছ, ভাত এগুলো। তবে ওকেও দেখলাম বিরিয়ানিটা বেশ তৃপ্তি নিয়ে খেলো। ফেরদৌসের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম ফেরদৌসেরও বিরিয়ানি বেশ ভালো লেগেছে। আসলে যারা একটু কম তেল মসলাযুক্ত খাবার পছন্দ করে তাদের কাছে এই বিরিয়ানিটা ভালো লাগবে। তবে যারা অনেক মসলাদার বিরিয়ানি খেয়ে থাকে তাদের কাছে এই বিরিয়ানিটা ভালো নাও লাগতে পারে।


IMG_20231201_163341.jpg

খাওয়া শেষ হলে আমরা বিল মিটিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে এলাম। হাজীর বিরিয়ানি খেয়ে আমাদের মোটামুটি পেট ভরে গিয়েছিলো। তারপরও চিন্তা করলাম আবার কবে এদিকে আসা হয় তার ঠিক নাই। তাই কাবাবের দোকানে গিয়ে দেখি এখন তাদের কাবাব হয়েছে কিনা? যদি কাবাব তৈরি হয়ে থাকে তাহলে সেখান থেকে অল্প করে হলেও কিছু কাবাব খেয়ে টেস্ট করে দেখবো। কারণ আমি বিভিন্ন ফুড ব্লগারদের ভিডিওতে বিসমিল্লাহ কাবাব ঘরের কাবাবের বেশ সুনাম শুনেছি। তাই আমার আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল নাজিরা বাজার গেলে বিসমিল্লাহ কাবাব ঘর থেকে কাবাব খাওয়ার। এই গল্প হবে পরের পর্বে। (চলবে)

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানঢাকা

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 8 months ago 

পুরান ঢাকার অলিগলি অনেক, তাই হেঁটে গেলে গুগল ম্যাপে লোকেশন সেট করে নেওয়া ভালো, নয়তো প্রথম থেকেই রিকশা দিয়ে চলে যাওয়া ভালো। যাইহোক হাজির বিরিয়ানি আমার খুব পছন্দ। কারণ আমি বেশি তেল এবং মসলাযুক্ত খাবার পছন্দ করি না। তাই আমার কাছে হাজির বিরিয়ানি পারফেক্ট মনে হয়। যাইহোক বিরিয়ানি খেয়ে তো মনে হচ্ছে আপনারা বিসমিল্লাহ কাবাব ঘর থেকে কাবাবও খেয়েছেন। পরবর্তী পর্বে বিস্তারিত জানতে পারবো তাহলে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 66902.20
ETH 3248.49
USDT 1.00
SBD 2.64