অমর একুশে ও আমার ব্যক্তিগত চিন্তা ভাবনা।

in আমার বাংলা ব্লগ5 months ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের এই দিনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বাংলার দামাল ছেলেরা রাজপথে নেমেছিলো। বুকে তাজা রক্তের বিনিময়ে তারা মাতৃভাষা বাংলার সম্মান অক্ষুন্ন রেখেছিলো। ছোটবেলা থেকেই বছরের কয়েকটি দিনের প্রতি আমার একটা অন্যরকম আকর্ষণ থাকতো। এই দিনগুলিতে মনের ভেতর ভিন্ন রকম একটা অনুভূতি লক্ষ্য করতাম। এখনো সেই বিষয় কিছুটা রয়ে গিয়েছে। আমি গতকাল রাত থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম আজকে সকালে উঠে হাটাহাটি শেষ করে শহরের মূল শহীদ মিনার গুলোতে যাবো। সেখানে গিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি দেখে আসবো। যদিও আমি কখনোই শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাইনি। আমার কাছে এই বিষয়টা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি কখনো। সবসময় আমার কাছে এই ধরনের কাজ অনেকটা লোক দেখানো মনে হয়।

IMG_20240221_072251.jpg

আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি হাঁটতে বের হয়েছিলাম। আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম নির্ধারিত সময় হাটাহাটির পরে আমি শহীদ মিনার গুলো দেখতে যাবো। কারণ আমি যদি আগে শহীদ মিনার গুলোতে যেতাম তাহলে আর আজকের হাটাহাটি করা হোতো না। যথারীতি আমি হাটাহাটি শেষ করে প্রথমে আমাদের শহরে অবস্থিত রাজেন্দ্র কলেজের ডিগ্রী শাখায় চলে গেলাম। কারণ একটা সময় ডিগ্রি শাখার শহীদ মিনার টাকে শহরের মূল শহীদ মিনার হিসেবে দেখা হোতো। শহরের সমস্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এখানে এসে ফুল দিতো। অবশ্য মাঝে মাঝে অম্বিকা ময়দানে অবস্থিত যে শহীদ মিনারটি সেখানেও ফুল দিতে দেখেছি। এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি কিছুটা সন্ধিহান। যাই হোক হাঁটাহাঁটি শেষে আমি রওনা দিলাম রাজেন্দ্র কলেজের ডিগ্রী শাখার উদ্দেশ্যে। কিন্তু সেখানে পৌঁছে তেমন কাউকেই দেখতে পেলাম না।


IMG_20240221_071617.jpg

আমি আশা করেছিলাম সেখানে তৈরি করা বঙ্গবন্ধুর নতুন ম্যুড়ালটির সামনে হয়তো অনেক লোকজন দেখতে পাবো। কিন্তু সেখানে পৌঁছে দেখতে পেলাম লোকজনের সংখ্যা একেবারেই কম। তারপর একটু হেঁটে সামনে এগিয়ে যখন রাজেন্দ্র কলেজের শহীদ মিনাররর সামনে পৌঁছলাম সেখানে দেখলাম জায়গাটা পুরোপুরি ফাঁকা। দুটি মেয়েকে দেখলাম শহীদ মিনারের বেদিতে উঠে ছবি তুলছে। আমিও সেখান থেকে দু তিনটি ছবি তুললাম। তারপর চিন্তা করতে লাগলাম এখন কি করা যায়? পরবর্তীতে মনে হোলো সবাই মনে হয় অম্বিকা ময়দানে অবস্থিত যে শহীদ মিনারটি সেখানে ফুল দিতে গিয়েছে। তখন আমি রাজেন্দ্র কলেজ ক্যাম্পাস থেকে অম্বিকা ময়দানের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলাম। রাজেন্দ্র কলেজের ডিগ্রী শাখা থেকে অম্বিকা ময়দানের দূরত্ব একেবারেই কম। মাত্র ৪-৫ মিনিটে আমি সেখানে পৌঁছে গেলাম। যেটা চিন্তা করেছিলাম সেটাই হোলো। দেখতে পেলাম অম্বিকা ময়দানের শহীদ মিনারের সামনে প্রচুর ফুল রয়েছে। বুঝতে পারলাম আমি আসার অনেক আগেই সবাই ফুল দিয়ে যার যার মত বাড়ি চলে গিয়েছে। অবশ্য একুশে ফেব্রুয়ারিতে অনেকে রাত বারোটার পরেও ফুল দিতে আসে। শহরের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ গতকালকে রাত বারোটার সময় শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়েছিলো। পরবর্তীতে এটা ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছি।


IMG_20240221_071751.jpg

এই যে মানুষের এত আগ্রহ এই যে ফুল দেয়া নিয়ে হুড়োহুড়ি। অনেক সময় সেটা গোলমালে পর্যন্ত পৌঁছায়। এসব কিছুতেই কি আসলে ভাষা শহীদদের বা তাদের পরিবারের লোকজনের কিছু যায় আসে? আমি কেন বলেছি এ সমস্ত কিছুই লোক দেখানো তার কারণ হচ্ছে খোঁজ নিলে জানতে পারবেন ভাষা শহীদদের পরিবারের অনেকে এখনো দীনহীন ভাবে জীবন যাপন করছে। দেশের জন্য মাতৃভাষার জন্য যারা এত বড় আত্মত্যাগ স্বীকার করেছিলো তাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছুই করা হয়নি। ফুল দেয়া আর নানা রকম অনুষ্ঠানের পেছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়। কিন্তু যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো তাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছুই করা হয় না। এই কারণেই আমি এগুলিকে লোক দেখানো ছাড়া অন্য কিছু মনে করি না। যদি আমরা সত্যিকারের ভালবাসা তাদের প্রতি প্রদর্শন করতাম তাহলে তাদের পরবর্তী প্রজন্মের অবস্থা এত খারাপ থাকতো না। তাদের স্মৃতির রক্ষার্থে ও যে বিশেষ কিছু করা হয়েছে এমনটা নয়। আশেপাশে যত ভীড় দেখেন যত হুড়োহুড়ি দেখেন এ সমস্ত কিছুই রাজনৈতিক। অবশ্য কিছু সাধারন মানুষও তাদের নিজেদের আবেগের জায়গা থেকে শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসে। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় সারা দেশে শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার পিছনে যে পরিমাণ টাকা খরচ করা হয় তার অর্ধেক টাকাও যদি ভাষা শহীদদের পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করার কাজে ব্যয় করা হোতো। তাহলে আজকে তারা অনেক ভালো একটা জীবন কাটাতে পারতো। আর ভাষা শহীদের আত্মাও শান্তি পেতো। যাইহোক এটা একান্তই আমার নিজস্ব চিন্তা ভাবনা। সরকারের উচিত ভাষা শহীদদের পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি নজর দেয়া। আর ভাষা শহীদদের ইতিহাস যেন সঠিকভাবে সংরক্ষিত হয় সেদিকে খেয়াল রাখা।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানফরিদপুর

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 5 months ago 

এটা ঠিক অনেকে ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল বেলা আবেগের জায়গা থেকে স্কুল কলেজের শহীদ মিনারে ফুল দিতে যায়। ছোটবেলায় আমরাও অনেক গিয়েছি, তবে এখন যাওয়া হয় না। তবে এটা ঠিক,সরকারের উচিত ভাষা শহীদদের পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি সুনজর দেওয়া। এতে করে ভাষা শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। আসলে সবকিছুই এখন লোক দেখানো হয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গরা শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিয়ে থাকে শুধুমাত্র লোক দেখানোর জন্য। যাইহোক সকাল বেলা কলেজের শহীদ মিনারে গিয়ে বেশ ভালোই ঘুরাঘুরি করেছেন ভাই। এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 5 months ago 

সত্যিই ভাইয়া ২১ শে ফেব্রুয়ারী প্রভাত ফেরীতে সবাই বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যায়।এই একদিন ফুলে ফুলে শহীদ মিনার ভরে উঠে।বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা আমাদের সব সময় থাকা উচিত। আর সরকারের উচিত শহীদদের পরিবারের প্রতি সুদৃষ্টি স্থাপন করা।আপনার চিন্তা ভাবনা গুলো সত্যিই প্রশংসনীয় ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে অমর একুশে নিয়ে আপনার অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 66052.74
ETH 3320.33
USDT 1.00
SBD 2.69