ঈদের ছুটিতে বন্ধুদের নিয়ে পদ্মা নদীতে ট্রলার ভ্রমণ (শেষ পর্ব)।

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


পূর্ববর্তী পর্বের লিংক


গত বছর যখন আমরা ট্রলার ভ্রমণে এসেছিলাম সেবারও বিকালের দিকে হাজিগঞ্জ বাজারে থেমেছিলাম। সেখানে নেমে আমরা টুকটাক খাওয়া দাওয়া করেছিলাম। এ কারণেই আমি ট্রলার ওয়ালাকে আগে থেকেই বলে রেখেছি হাজিগঞ্জ বাজারে ট্রলার কিছুক্ষণের জন্য ভেড়াতে। যাই হোক ট্রলার ওয়ালার সাথে কথাবার্তা শেষ করে আমি ট্রলারের ছাদে বসে ছিলাম। ট্রলার ভ্রমণের যে কয়েকটা মুহূর্ত আমার কাছে সবচাইতে বেশি ভালো লাগে তার আরেকটা হচ্ছে বিকালের সময়টা। কারন সে সময় নদীর বুকে অসাধারন দৃশ্যের অবতারণা হয়। বিশেষ করে সূর্য ডোবার কিছুক্ষণ আগের মুহুর্তে।

IMG_20230424_165405.jpg

নদীর খোলা হাওয়ায় ট্রলারের ছাদে বসে থাকতে আমাদের সকলেরই বেশ ভালো লাগছিল। যদিও আমরা অল্প লোক ট্রলার ভ্রমণে এসেছিলাম। কিন্তু সেই অল্প লোকের ভিতরেই দুইটা গ্রুপ হয়ে গিয়েছিল। তার একটি গ্রুপ শুরু থেকেই কার্ড খেলায় ব্যস্ত ছিল। আর আমরা বাকিরা আর একটা গ্রুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকনে ব্যস্ত ছিলাম। চারপাশে যখন এত চমৎকার পরিবেশ তখনো সেই গ্রুপটা তাদের কার্ড খেলা চালিয়ে যাচ্ছিল। আর বাকি সবাইকে দেখলাম চুপচাপ থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করছে। সে এক দারুন মুহূর্ত। ট্রলারের ছাদে বসে থাকার জন্য সব চাইতে ভালো সময় হচ্ছে বিকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত। কারণ এই সময় ট্রলারের ছাদে বসে আপনি যেই অনুভূতিটা পাবেন সেটা আর কোথা থেকে পাওয়া সম্ভব নয়।

IMG_20230424_173318.jpg

IMG_20230424_165400.jpg

এভাবে অবশ্য ট্রলারের ছাদে বসে থাকতে আমাদের কিছুটা ঠান্ডা লাগছিলো। কারণ কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় আবহাওয়া একেবারে শীতল হয়ে গিয়েছিল। নদীর বাতাসটা ছিল অনেক ঠান্ডা। যার ফলে আমাদের সকলেরই হালকা শীত লাগছিল। যাই হোক তারপরে কিছুক্ষণের ভেতরে আমরা হাজিগঞ্জ বাজারে পৌঁছে গেলাম। কিন্তু সেখানে পৌঁছতেই শুরু হলো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। যার ফলে আমরা বেশ কিছুক্ষণ ট্রলারেই বসে ছিলাম। পরে বৃষ্টি থামলে আমরা কয়েকজন ট্রলার থেকে নেমে হাজীগঞ্জ বাজারে গেলাম। আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল হাজিগঞ্জ বাজারের একটি দোকান থেকে দই খাওয়া। আমরা যখনই হাজিগঞ্জ বাজারে আসি। তখনই চেষ্টা করি সেই দোকান থেকে দই খেতে। দইটার সাদ ভালোই যদিও এর আগের বার আমরা দই খেতে এসে সে দোকানটা বন্ধ পেয়েছিলাম।

IMG_20230424_173133.jpg

তবে এবার ভাগ্য সুপ্রসন্ন। আমরা গিয়ে দেখি দোকানটা খোলা আছে। আমরা সেই দোকানে ঢুকে দই অর্ডার করলাম। বড় গ্লাসে করে আমাদেরকে দই দিল। এতখানি দই দেখে মনে হচ্ছিল খেতে পারব না। তবে খেতে খেতে একসময় দেখি সবার দই শেষ হয়ে গিয়েছে। যাই হোক তারপর দই এর দাম মিটিয়ে আমরা হাজীগঞ্জ বাজারের ভিতরে ঢুকলাম। বাজার ভিতর ঢুকে আমরা ঘুরে ফিরে দেখছিলাম। বাজারের ভেতর ঘোরাফেরা শেষ হলে আমরা চলে গেলাম নদীর পাড়ে। সেখানে গিয়ে দেখি এলাকার অনেক মানুষ এসেছে বিকালটা নদীর পাড়ে কাটাতে। আবহাওয়া ঠান্ডা থাকায় নদীর পাড়ে সময় কাটাতে সবারই ভালো লাগছিল। আমরা তিন বন্ধুও নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে বেশ খানিকটা সময় কাটালাম। এর ভিতরে আমাদের আরেক বন্ধু সুমন সে তাড়া দিল ট্রলারে ওঠার জন্য। কারণ তার আবার একটা কাজ আছে। সেজন্য তাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে।

IMG_20230424_180111.jpg

যদিও আমাদের খুব একটা ইচ্ছা ছিল না। তারপরেও কি আর করা যেহেতু সকলে একসাথে এসেছি তাই সবার একসাথেই ফেরার ইচ্ছা ছিল। সেই কারণে আমরা সবাই ট্রলারে উঠে বসলাম। তারপর ট্রলার ওয়ালা ট্রলার ছেড়ে দিল আমাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণের ভেতরেই আমরা সাইনবোর্ড নামক স্থানে পৌঁছে গেলাম। সেখানে ট্রলার ভেড়ানোর পরে রাফসান এবং তার সাথে তিন বন্ধু সেখানে নেমে গেলো। কারণ সেই জায়গা থেকে ওদের বাড়িতে যেতে সুবিধা হবে। ওরা চলে যাওয়ার পর আমরা খেয়াল করে দেখলাম একটি দোকানে গরম গরম সিঙ্গারা চপ এগুলি ভাজা হচ্ছে। যদিও আমাদের পেটে খুব একটা জায়গা ছিল না। তারপরেও গরম সিঙ্গারা দেখে আর লোভ সামলাতে পারলাম না। কয়েকটি সিঙ্গারা কিনে নিয়ে ট্রলারে এসে বসলাম। সিঙ্গারার সাথে দিয়েছিল বিট লবন আর পেঁয়াজ। পেটে খুব একটা জায়গা না থাকলেও ছোট সাইজের সেই লোভনীয় গরম সিঙ্গারা আমি কয়েকটি খেয়ে ফেললাম।

IMG_20230424_183703.jpg

এর ভেতরে বন্ধু রাসেল বলল ছাউনির নিচে আরো বেশ কিছু সিঙ্গারা আছে। ও নাকি হাজীগঞ্জ বাজার থেকে সবার জন্য সিঙ্গারা কিনেছিলো। আমি তখন বন্ধু রাসেলকে বললাম আগে থেকে বলবি না। তাহলে এতগুলো সিঙ্গারা থাকতে আমরা আর সিঙ্গারা কিনতাম না। আমি ছাওনির নিচে গিয়ে দেখি সেখানে একটি পলিথিনের ভেতর বেশ কিছু সিঙ্গারা রয়েছে। পরে সেই সিঙ্গারা গুলো নিয়ে আমি ট্রলার ছাদে চলে গেলাম যেখানে সবাই বসে ছিল। তবে সবার পেট ভরা থাকায় কারোরই দেখলাম সিঙ্গারা খাওয়ার দিকে খুব একটা আগ্রহ নেই। শুধু বন্ধু দেবাশীষ ব্যানার্জি আমার সাথে কয়েকটি সিঙ্গারা খেলো। বাদবাকি সবাই গোধূলি বেলার নদীর সৌন্দর্য উপভোগে ব্যস্ত ছিলো। হঠাৎ করে দূরে চোখ পড়ায় দেখতে পেলাম সূর্য প্রায় অস্ত যাচ্ছে। আর নদীর বুকে দারুন এক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। ঝটপট সকলে মিলে ছবি তুলতে লাগলাম। এমন দৃশ্য রোজ রোজ দেখা যায় না। তাই সকলের চেষ্টা ছিল এই চমৎকার মুহূর্তটি ক্যামেরায় বন্দি করে রাখার। কিছুক্ষণের ভেতরেই সূর্য অস্ত গেল আর আমরা সবাই ট্রলারের ছাদে বসে আমাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর অপেক্ষা করছিলাম।

IMG_20230424_180450.jpg

দীর্ঘ দিন পর বেশ কিছু বন্ধু-বান্ধব মিলে এরকম ট্রলার ভ্রমণ করতে পেরে সকলের ভালই লাগছিল। সাথে এই চিন্তাটাও মনে উদয় হচ্ছিল আর কখনো এভাবে চলার ভ্রমন করা সম্ভব হবে কিনা কে জানে। কারণ দিন দিন আমাদের ট্রলার ভ্রমণে অংশগ্রহণ করা বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা কমছে। তাছাড়া ট্রলার ভ্রমণের আয়োজনে অংশগ্রহণে অনেকের অনীহা খেয়াল করেছি। যার ফলে পরবর্তী বছর থেকে আর এমন আয়োজন হবে কিনা সেটা নিয়েও আমার মনে সন্দেহ জেগেছে। যাই হোক প্রায় ৪০ মিনিট পর আমাদের নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। বিদায় বেলায় মনটা বেশ খারাপ লাগছিল। কারণ সারাটা দিন বন্ধু-বান্ধবের সাথে কাটানোর পর আবার যখন সেই প্রতিদিনের জীবনে ফিরতে হবে। এই চিন্তাটাতে কেমন যেন লাগছিল। তবে মন যত খারাপই হোক আমাদের সকলকেই শেষ পর্যন্ত ঘরে ফিরতে হয়। এটাই জীবন এভাবেই বেঁচে থাকি আমরা। এভাবেই জীবন এগিয়ে যায়। আর এভাবেই আমাদের এবারের ট্রলার ভ্রমণ সম্পন্ন হলো। (শেষ)

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানপদ্মা নদী

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

যাক ভাইয়া অবশেষে আজ সুন্দর একটি পোষ্টের মাধ্যমে তোর ট্রলার ভ্রমণের পরিসমাপ্তি ঘটলো। বেশ সুন্দর ছিল প্রতিটি পর্ব। একথা সত্য যে বিকেলে ট্রলারের উপরে বসে নদী আর প্রকৃতির যে দৃশ্য উপভোগ করা যায় সেটা আর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। আমার মনে হয় যে গ্রুপটি কার্ড খেলছিল তারা অনেক কিছুই মিস করে গেছে। যাইহোক অবশেষে হাজিগঞ্জ বাজারে ঘুরে সিঙ্গারা আর দই খেতে পারলেন। ধন্যবাদ ভাই এত সুন্দর ভ্রমণের কাহিনী আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

বৃষ্টি পড়ার পর যে ঠান্ডা আবহাওয়াটা হয় সেটা খুব চমৎকার লাগে, বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা একটা অনুভূতি শরীর শীতল হয়ে যায়। আপনারা বেশ অনেকদূর জার্নি করে পছন্দের সেই দই খেতে পেরেছেন এবং নদীর চমৎকার পরিবেশ উপভোগ করেছেন খুব ভালো লাগলো আপনার ঈদের ছুটির এই ঘটনাটি।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 years ago 

বৃষ্টি হলে পরিবেশ খুব শীতল হয়ে যায়। তখন ঘুরতে আরো বেশী ভালো লাগে।আপনারা দই খাবেন বলেছিলেন।যাক দই ও খাওয়া হলো।সূর্য অস্ত যাওয়ার দৃশ্যটি নদীর মাঝে দাঁড়িয়ে দেখতে খুব ভালো লাগে আসলে।আপনার ঘোরাঘুরির অনুভূতি গুলো পড়ে খুব ভালো লেগেছে ভাইয়া।শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

ভাইয়া পদ্মা নদীতে ডলার ভ্রমণের শেষ পর্বটি পড়ে বেশ ভালো লেগেছে আমার। বিশেষ করে, এবার যে আপনারা দইয়ের দোকান থেকে দই খেতে পেরেছেন এটা সত্যিই আপনাদের জন্য অনেক আনন্দের ছিল। ভাইয়া এরকম একটি আনন্দদায়ক ট্রলার ভ্রমণ শেষে বাড়িতে আসার পূর্বে মন খারাপই হওয়ার কথা। অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.09
TRX 0.32
JST 0.033
BTC 108414.97
ETH 3828.36
USDT 1.00
SBD 0.60