হঠাৎ নিভে যাওয়া (প্রথম পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগlast year

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


রাসেল তড়িঘড়ি করে কিছু নাকে-মুখে গুজে তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো। পিছন থেকে ওর মা বলতে লাগলো কিরে খাওয়া শেষ না করে যে বের হয়ে যাচ্ছিস যে? রাসেল উত্তর দিলো সময় নেই মা। তাড়াতাড়ি কাজে পৌঁছতে হবে। দেরি হলে মালিক রাগ করে। দোকান মালিকের কথা মনে হতেই তার মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। সে বিড়বিড় করে দুটি গালি দিলো। মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো। মালিকটা একটা আস্ত অমানুষ। পান থেকে চুন খসলেই চরম দুর্ব্যাবহার করে। মাঝে মাঝে গায়ে হাত তোলে। তাই রাসেল ঠিক করে রেখেছে যেদিন সে চাকরি ছাড়বে। সেদিন মালিককে ইচ্ছা মতো গালিগালাজ করবে।

Polish_20230313_002834723.jpg

এই কথা চিন্তা করতে করতে সে তার কর্মস্থলের দিকে যেতে লাগলো। হঠাৎ তার মনে হলো আজকে তো বাড়ি থেকে ভাত আনা হয়নি। দুপুরে তার হালকা কিছু খেয়ে কাটাতে হবে। কারণ প্রতিদিন সে সকাল বেলায় বাড়ি থেকে ভাত খেয়ে যায়। আর দুপুরে খাওয়ার জন্য নিয়ে যায়। কিন্তু যেদিন সে বাড়ি থেকে ভাত নিতে পারেনা সেদিন তাকে বাইরে থেকে খাবার খেতে হয়। যখন রাসেলের পকেটে কিছু টাকা পয়সা থাকে তখন সে দুপুরে ভাত খায়। কিন্তু যখন তার পকেটে বেশি টাকা পয়সা থাকে না। তখন চা আর রুটি খেয়ে দিনটা পার করে।

১৬ বছর বয়সে তাকে সংসারের দায়িত্ব নিতে হয়েছে। সংসারে তারা ছয় জন মানুষ। বাবা মা, আর তারা চার ভাই বোন। যতদিন তার বাবা কর্মক্ষম ছিল ততদিন তাদের কোনোভাবে দিন চলে গিয়েছে। কিন্তু তার বাবা হঠাৎ করেই একটি দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যাওয়ার পর থেকে সংসার দায়িত্ব তার কাঁধে নিতে হয়েছে। সেটাও প্রায় দুই বছর হয়ে গেল। তারপর বয়সী ছেলেরা সবাই স্কুলে যায়, খেলাধুলা করে। আরো কত রকম দুষ্টুমি করে। আর সে সকাল থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত গাধার খাটুনি খাটে।

রাসেলের বাড়ি থেকে তার কর্মস্থল অনেকটা দূরে। বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রথমে তার বেশ খানিকটা পথ হেঁটে বাসে ওঠতে হয়। তারপর বাস থেকে নেমে টেম্পোতে করে বেশ খানিকটা পথ যেতে হয়। তারপর আবার বেশ খানিকটা পথ হাঁটতে হয়। এই পুরোটা পথ যেতে তার প্রায় দেড় থেকে দু'ঘণ্টার মতো লেগে যায়। এদিকে আবার সকাল নটার ভেতর তাকে দোকানে পৌঁছতে হয়। সেজন্য রাসেল চেষ্টা করে প্রতিদিন সকাল সাতটার ভেতর বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য। যাতে সময় মতো দোকানে পৌঁছতে পারে। কিন্তু ট্রাফিক জ্যামের কারণে মাঝে মাঝেই তার দেরি হয়ে যায়।

যেদিন তার দোকানে যেতে দেড়ি হয় সেদিনই মালিক তার সাথে প্রচণ্ড দুর্ব্যবহার করে। রাসেল মালিককে অনেকবার বলেছে যে ট্রাফিক জ্যামে পড়লে তার কি করার আছে। কিন্তু মালিক কোন কথাই শুনতে চায় না। তাই এখন আর সে মালিক বকাঝকা করলেও কোন কথা বলেনা। রাসেল খেয়াল করে দেখেছে যেদিন তার বাড়ি থেকে বের হতে দেরি হয়ে যায়। সেদিনই সে ট্রাফিক জ্যামে আটকে যায়। এজন্য তাড়াহুড়া করে বাড়ি থেকে বের হয়েও তার খুব একটা লাভ হয় না। কারণ তারপরও তার মাঝে মাঝে দোকানে পৌঁছাতে দেড়ি হয়ে যায়।

যাইহোক শেষ পর্যন্ত সে দোকানে পৌঁছে দেখে তখন পর্যন্ত সে ছাড়া অন্য কেউ আসেনি। এ দৃশ্য দেখে সে হাফ ছেড়ে বাঁচল। মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো আজকের মত বাঁচা গেলো। যদি মালিক এর ভিতরে চলে আসতো। তাহলে আজকেও তার সকালটা শুরু হতো অত্যন্ত বাজেভাবে। রাসেল দোকানে পৌঁছে দোকানের সামনেই বসে রইল বেশ কিছুক্ষণ। এভাবে বসে থাকার পর দেখতে পেলো তার মালিক আসছে। রাসেল দৌড়ে গিয়ে তার কাছ থেকে দোকানের চাবি নিয়ে দোকান খুলতে লাগলো।

রাসেল যে দোকানটাতে চাকরি করে সেটি বেশ বড় একটি সেনেটারির দোকান। এই দোকানে বেশিরভাগ দামি সেনেটারি জিনিসপত্র পাওয়া যায়। তার মালিকের এইরকম আরো তিন-চারটি দোকান আছে। মালিকের অঢেল পয়সা কিন্তু তার মনটা খুবই ছোট। প্রতিদিন সকাল ৯ টায় দোকান খুলে। আর সে দোকান বন্ধ হয় রাত দশটার দিকে। দোকান বন্ধ করে রাসেলের বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেজে যায় প্রায় রাত বারোটা। অল্প কয়েক ঘন্টার ঘুম দিয়ে আবার সকাল সাতটায় সে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় দোকানের উদ্দেশ্যে। অথচ মাস গেলে সে বেতন পায় মাত্র আট হাজার টাকা। সেই টাকার আবার খানিকটা অংশ চলে যায় আসা-যাওয়ার ভাড়া দিতে। (চলবে)

ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

রাসেলের মতো এমন অনেক কম বয়সী ছেলে আছে যারা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। অথচ এই বয়সে রাসেলের পড়াশোনা করার কথা, সবার সাথে মাঠে খেলাধুলা করার কথা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, কিছুই করার নেই রাসেলের মতো এমন কম বয়সী হাজারো কিশোরদের। অপরদিকে রাসেল যে দোকানে কাজ করে সে দোকানের মালিকের মতো এমন অসংখ্য মালিক রয়েছে, যারা রাসেলের মতো খেটে খাওয়া কিশোরদের সাপোর্ট না করে, উল্টো তাদেরকে প্রতিনিয়ত নানান ভাবে অত্যাচার করে। যাইহোক গল্পটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো ভাইয়া। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটি শেয়ার করার জন্য। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.30
TRX 0.12
JST 0.033
BTC 64344.02
ETH 3142.36
USDT 1.00
SBD 4.01