ফরিদপুর ফেরার পথে ট্রেন জার্নির দারুন অভিজ্ঞতা।
ট্রেনে যেতে হলে অন্তত ৫-৬ দিন আগে টিকিট কেটে রাখতে হয়। কারণ ফরিদপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত এখনো কোন ট্রেন দেয়া হয়নি। রাজশাহী, খুলনা থেকে যে ট্রেনগুলো আসে সেগুলোতে ফরিদপুরের যাত্রীদের জন্য কিছু সংখ্যক আসন বরাদ্দ থাকে। যার ফলে ট্রেনের টিকিট সহজে পাওয়া যায় না। যাই হোক এবার ঢাকা পৌঁছেছিলাম মোটামুটি ঝামেলাহীন ভাবেই। তবে যেহেতু ফেরার তারিখ ঠিক ছিলো না। তাই ফেরার সময়কার টিকেট আগে থেকে কেটেছিলাম না। অবশ্য সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না যে ট্রেনে করে ফিরবো না বাসে করে। শেষ পর্যন্ত যখন সিদ্ধান্ত নিলাম ট্রেনে ফেরার তখন অনলাইনে টিকেট বুকিং দিতে গিয়ে দেখি আমরা যে সময়টাতে ফিরতে পছন্দ করি সেই সময়ের ট্রেনে কোন টিকেট অ্যাভেলেবেল নেই। পরবর্তীতে খুঁজতে খুঁজতে সকালের একটা ট্রেনে কিছু টিকেট পেলাম যেগুলো তখনো বিক্রি হয়নি। তখন বেশি কিছু চিন্তা ভাবনা না করে সেই ট্রেনে তিনটি টিকেট বুকিং দিলাম।
তবে কিছুটা সংশয়ে ছিলাম। কারণ যে ট্রেনে টিকেট কেটেছি সেই ট্রেনটা কেমন হবে সেটা সম্বন্ধে কোন ধারণা ছিলো না। বেশি চিন্তাভাবনা না করে সকাল আটটার সেই ট্রেনে সিট বুকিং দিলাম। যেহেতু সকাল শোয়া আট টাতে ট্রেন ছাড়বে তাই বাসা থেকে বের হতে হবে অনেকটা সকালে। কারণ ঢাকার রাস্তাঘাটের কথা কিছুই বলা যায় না। যদি বের হতে একটু দেরি হয় তাহলে হয়তো ট্রেন মিস হয়ে যেতে পারে। এই চিন্তাটাও মাথায় কাজ করছিলো। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হবে এই টেনশনে গতকাল রাতে ঘুমটা খুব একটা ভালো হয়নি। ঘড়িতে সকাল ছয়টা বাজার আগেই আমি ঘুম থেকে উঠে গিয়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে আমার স্ত্রীকে তাড়া দিলাম দ্রুত তৈরি হয়ে নিতে। আমার মেয়ে তখনও ঘুমাচ্ছিলো। শেষ পর্যন্ত আমি আর আমার স্ত্রী দুজন মিলে তাকে ঘুম থেকে উঠালাম। আমরা উঠে কাপড় চোপড় পড়তে পড়তে দেখি আমার আপু ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে।
আমি তাকে আগের রাতেই বলেছিলাম এত সকালে ঘুম থেকে ওঠার দরকার নেই। কারণ এত সকালে আমরা নাস্তা করে অভ্যস্ত না। আর সকাল দশটার ভেতরেই ফরিদপুর পৌঁছে যাবো। যার ফলে ফরিদপুর পৌঁছে নাস্তা করতে পারবো। তাছাড়া আপু আগের দিন ঘুমিয়ে ছিলো রাত তিনটার দিকে। সেজন্যই তাকে সকালে উঠতে মানা করেছিলাম। আপু ঘুম থেকে উঠেই তাড়াহুড়া করে আমাদের নাস্তার আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আমরাও কোনরকমে নাস্তা করে তৈরি হয়ে নিলাম। তারপর আমি নিচে গেলাম সিএনজি খোঁজার জন্য। বাসা থেকে বের হয়ে দুই তিন মিনিট হাঁটার পরে একটি সিএনজি পেয়ে গেলাম। তখন বাজে সকাল সাতটা। সিএনজি বাসার সামনে এনে তারপর উপরে গিয়ে আমাদের লাগেজ গুলো নামিয়ে এনে সিএনজিতে উঠে বসলাম। বেশি সকাল হওয়ার ফলে তখনও ঢাকার রাস্তাঘাট ছিলো অনেকটা ফাঁকা। যার ফলে আমরা মাত্র ১৫ মিনিটে কমলাপুর রেল স্টেশনে পৌঁছে গেলাম। সেখানে পৌঁছানোর পর দেখি এখনো ট্রেন ছাড়তে বাকি প্রায় ৪৫ মিনিট। এতো আগে আসার জন্য মনে হচ্ছিলো আর একটু দেরি করে বাসা থেকে বের হলে ভালো হোতো।
যাইহোক যেহেতু চলে এসেছি এখন আর দেরি করে লাভ নেই। কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছে আমরা খুঁজে খুঁজে আমাদের ট্রেনটি যে প্ল্যাটফর্মে দাড়ানো ছিলো সেখানে চলে গেলাম। সেখানে পৌঁছে ট্রেনটা দেখে বেশ ভালো লাগলো। কারণ এতদিন আমরা যে ট্রেনে আসা-যাওয়া করেছি সেটা ছিল একেবারেই ভাঙাচোরা একটি ট্রেন। দেখেই মনে হোতো বহু আগেই এই ট্রেনের মেয়দ শেষ হয়ে গিয়েছে। তবে আজকে যে ট্রেনটাতে চড়ে ঢাকা থেকে ফরিদপুর এসেছি সেটা দেখতে পেলাম একেবারে নতুনের মত লাগছে। আমরা খুজে খুজে যে বগিতে আমাদের সিট ছিল সেখানে উঠলাম। সেখানে উঠে সেখানকার বসার ব্যবস্থা দেখে বেশ ভালো লাগলো। দেখতে পেলাম সিটগুলো বেশ পরিষ্কার। তাছাড়া ট্রেনের ভেতরেও তেমন কোন ময়লা দেখতে পেলাম না। আমরা যখন ট্রেনে উঠি তখন দেখি ট্রেনের টয়লেট গুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। ট্রেনে উঠে আমরা আমাদের লাগেজ গুলো জায়গামতো রাখলাম। তারপর অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন ট্রেন ছাড়বে। এক মিনিট ও দেরি না করে ঠিক নির্ধারিত সময়ে ট্রেনটি ছেড়েছিলো। সবকিছু মিলিয়ে এবারের জার্নিটা আরো অনেক বেশি উপভোগ্য মনে হচ্ছিলো। যদিও আমি আমার পরিবারের সাথে বসতে পারিনি এই একটা বিষয় বাদে বাদবাকি আর সবই ভালো লাগছিলো। অবশ্য ট্রেন যখন ছাড়ে তখন আমি আমার স্ত্রী আর মেয়ের পাশের সিটটা খালি দেখে সেখানে বসে ছিলাম। পরে সেখানকার যাত্রী এলে আমি সেখান থেকে উঠে আমার নির্ধারিত আসনে বসে পড়ি। এর ভেতরে অবশ্য একজন স্ট্যান্ডিং টিকেটের জাতির সাথে আমার কিছুটা কথা কাটাকাটি হয়েছিলো।
যাই হোক ট্রেন চলতে শুরু করার কিছুক্ষণের ভেতরেই দেখতে পেলাম ট্রেনের ডাইনিং কারের কর্মচারীরা কফি নাস্তার বক্স নিয়ে ট্রেন ভরে ছোটা ছুটি করছে। আমরা সকালে নাস্তা খেয়ে বের হওয়ার ফলে আর সেখান থেকে খাওয়ার আগ্রহ দেখালাম না। পদ্মা সেতু পার হওয়া পর্যন্ত ট্রেনটি বেশ জোরেই চলেছিলো। কিন্তু পদ্মা সেতু পার হয়ে কিছুদূর আগানোর পর থেকে ট্রেনের গতি কিছুটা কমে গেলো। তারপরের পুরোটা রাস্তা ট্রেন কিছুটা ধীরগতিতে এগিয়েছে। পুরো সময় যদি ট্রেন একই গতিতে চলতো তাহলে আমরা নির্ধারিত সময়ের আগে পৌঁছাতে পারতাম। অবশ্য ট্রেনগুলো সবাই নাকি তাদের নির্ধারিত সময় ধরে চলে। যার ফলে কখনো জোরে চালালেও শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ের সাথে এডজাস্ট করার জন্য পরবর্তীতে আবার কিছু সময় আস্তে চলে। যাই হোক ঠিক ১০:১৫ মিনিটে ট্রেন ফরিদপুর রেল স্টেশনে এসে থামলো আমরা আগে থেকেই লাগেজ গুলো লাগেজ রাখার জায়গা থেকে নামিয়ে তৈরি হয়েছিলাম। কারণ শুনেছিলাম ট্রেনটি নাকি মাত্র তিন মিনিটের জন্য ফরিদপুর স্টেশনে থামবে। সে কারণেই একটু আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়েছিলো। ট্রেন থামলে যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে নামতে লাগলো। আমি আমার পরিবার নিয়ে কিছুটা পরে নেমেছিলাম। তবে আমাদের নামতে কোন সমস্যা হয়নি। যেহেতু সকালে নাস্তাটা পেট ভরে খাওয়া হয়নি। তাই আমি আমার পরিবারকে স্টেশনে বসিয়ে রেখে পাশের একটি হোটেল থেকে নাস্তা কিনে নিয়ে এলাম। তারপর সবাই মিলে বাড়ি ফিরে এলাম।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | ঢাকা, ফরিদপুর |
![logo.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZEaz6VZmitMY1N8dSXHuT2tfgXFnDKjY8iV7jNGuNwEE/logo.png)
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
![standard_Discord_Zip.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTvJLqN77QCV9hFuEriEWmR4ZPVrcQmYeXC9CjixQi6Xq/standard_Discord_Zip.gif)
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
![witness_vote.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmW8HnxaSZVKBJJ9fRD93ELcrH8wXJ4AMNPhrke3iAj5dX/witness_vote.png)
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ভাইয়া আপনার ট্রেন জার্নির অভিজ্ঞতার কথা জেনে ভালো লাগলো। যেহেতু এবারের ট্রেনটা অনেকটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ছিল তাই জার্নিটা বেশ ভালো হয়েছে বুঝতেই পারছি। তবে নির্দিষ্ট সময়ের আগে স্টেশনে পৌঁছে গেলে অনেকটা চিন্তামুক্ত থাকা যায়। তবে মাত্র তিন মিনিটের জন্য ট্রেন ফরিদপুর স্টেশনে থামবে এটা শুনে প্রথমে একটু ভয় লেগেছিল। কারণ দ্রুত নামতে গেলে অনেক সময় সমস্যা হয়ে যায়। যাইহোক আপনারা সবাই ভালোভাবেই বাসায় ফিরেছেন জেনে ভালো লাগলো ভাইয়া।
আসলেই ট্রেন জার্নি বেশ আরামদায়ক। আপনারা ট্রেনে চড়ে ঢাকা থেকে বেশ ভালোভাবে ফরিদপুর পৌঁছাতে পেরেছেন, এটা জেনে ভীষণ ভালো লাগলো ভাই। আসলেই পাবলিক ট্রান্সপোর্টে উঠলে, অনেক সময় অনিচ্ছাকৃত সত্ত্বেও কথা কাটাকাটি হয়ে যায় অনেকের সাথে। তবে আপনারা সবাই একসাথে বসতে পারলে, জার্নিটা আরো বেশি উপভোগ করতে পারতেন। যাইহোক পোস্টটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো ভাই। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ট্রেন জার্নি আমার ও ভীষণ ভালো লাগে।আপনি ব্যক্তিগত কাজে বেশ সময় ধরে ঢাকা আসা যাওয়া করছেন।আর এজন্য ট্রেনের জার্নিটা বেছে নিয়েছেন।এর আগের ট্রেন জার্নির গল্প আমার পড়া হয়েছিল।এর আগের ট্রেন পুরনো,ভাঙ্গা চুরা হলেও এবারের ট্রেন কিন্তু দারুন ছিল।আপনার শেয়ার করা ফটোগ্রাফি দেখে বেশ বোঝা যাচ্ছে। এবারের জার্নি আপনার বেশ আরামে কেটেছে।যদিও একজন লোকের সাথে সামান্য কথা কাটাকাটি হয়েছিল।আপনার অনুভূতি গুলো পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাইয়া। ধন্যবাদ জানাই আপনাকে সুন্দর অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য।