উত্তেজনাকর ক্রিকেট ম্যাচের মন খারাপ করা সমাপ্তি।

in আমার বাংলা ব্লগlast year

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


আমি ছোটবেলা থেকেই খেলা পাগল মানুষ। খেলাধুলা করতে এবং খেলা দেখতে আমি খুবই পছন্দ করতাম। বিশেষ করে ক্রিকেট খেলা। ছোটবেলায় একটা সময় প্রায় সারাদিন ভরে ক্রিকেট খেলে বেড়াতাম। একটু বড় হওয়ার পর খেলার সাথে সাথে খেলা দেখার প্রতিও প্রচন্ড আগ্রহ তৈরি হয়। যদিও সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। খেলা দেখার সেই আগ্রহে কিছুটা ভাটা পড়েছে। আর খেলার তো প্রশ্নই উঠে না। তবে আগ্রহ কিছুটা কমলেও এখনো ক্রিকেট খেলা দেখতে আমি খুবই পছন্দ করি। অবশ্যই সব সময় চেষ্টা করি বাংলাদেশের সবগুলো খেলা দেখতে। শুধু যে বাংলাদেশের খেলা দেখি তা নয়। ইন্ডিয়া, শ্রীলংকা পাকিস্তানের খেলাও আমি দেখি। যদিও শ্রীলঙ্কার বর্তমান দলটা আগের থেকে অনেকটা দুর্বল। এইজন্য তাদের খেলা এখন কিছুটা কম দেখা হয়।

IMG_20230826_235315.jpg

স্ক্রিনশটটি নেয়া হয়েছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের ইউটিউব চ্যানেল থেকে

তবে আমার কাছে সবচাইতে উত্তেজনা কর খেলা মনে হয় যখন বাংলাদেশ ভারতের সাথে খেলে। আবার ভারত পাকিস্তানের সাথে খেলে সেই ম্যাচগুলো। কিন্তু বর্তমান সময়ে আরো একটি দল এই দলে যুক্ত হয়েছে। সেটি হচ্ছে আফগানিস্তান। আফগানিস্তান যখনই পাকিস্তানের সাথে খেলে তখন সেই ম্যাচগুলোতে দারুন উত্তেজনা তৈরি হয়। আফগানিস্তানের ক্রিকেট নিয়ে বলতে গেলে সেটা আমার কাছে রীতিমত রূপকথা মনে হয়। যেই দেশে কোন স্টেডিয়াম নেই, যেই দেশ এখন পর্যন্ত তাদের হোম গ্রাউন্ডে একটা ম্যাচও খেলতে পারেনি, যাদের সুযোগ-সুবিধা খুবই সীমিত, যেই দলের ডমেস্টিক ক্রিকেট ইনফ্রাস্ট্রাকচার বলতে কিছু নেই। তারপরেও তারা অতি অল্প সময়ের ভেতর এত দুর্দান্ত খেলা উপহার দিয়ে সবার সমীহ আদায় করে নিয়েছে।


আপনারা যারা আমার পোস্ট পড়েন তারা জানেন কিছুদিন আগে আমি একটি স্মার্ট টিভি কিনেছি। টেলিভিশন কেনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে খেলা দেখা। সামনে আছে এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপ। এই খেলা গুলো ভালোমতো দেখার উদ্দেশ্যেই মূলত টিভিটা কেনা হয়েছে। তবে টিভি কেনার পরপরই খেয়াল করে দেখলাম বর্তমানে আর কোন খেলা নেই। তবে প্রায় মাসখানেক এভাবে কাটানোর পর ইন্ডিয়ার কিছু খেলা দেখতে পেলাম। এদিকে আবার পাকিস্তান আফগানিস্তানের ভেতরেও খেলা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে দুটো ম্যাচ হয়েও গিয়েছে। সে দুটো পাকিস্তান জিতেছে। কিন্তু পাকিস্তান দুটো ম্যাচ জিতলেও দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তান দারুন ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে সবার মন জয় করে নিয়েছিলো।


সেই ম্যাচের একটা অংশ নিয়ে এখন কিছু কথা বলবো। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তান কে মাত্র ৫৯ রানে অলআউট করে দিয়ে পাকিস্তানের সিরিজে দারুণ সূচনা হয়েছিলো। যদিও পাকিস্তান ব্যাট হাতে মোটেও ভালো কিছু করতে পারেনি। কিন্তু তাদের দুর্দান্ত বোলারদের কল্যাণে আফগানিস্তানকে একেবারে অল্প রানে গুটিয়ে দিয়েছে। স্বভাবতই প্রথম ম্যাচ এত বাজে ভাবে হারার কারণে দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছ থেকে প্রত্যাশা ছিল খুবই কম। কিন্তু সেখান থেকেই শুরু আরেকটি আফগান রূপকথার। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের যেসব ফাস্ট বোলারের সামনে আফগান ব্যাটসম্যানরা দাঁড়াতে পারেনি। দ্বিতীয় ম্যাচে সেই বোলারদেরই তারা তুলোধুনো করে। প্রথম ইনিংস শেষে আফগানিস্তান স্কোরবোর্ডের ৩০০ রান জড়ো করেছিলো। যেটাকে মনে হচ্ছিল ম্যাচ জেতার জন্য একটা ভালো স্কোর।


এদিকে আফগানিস্তানের বোলাররাও মোটামুটি ভালোই বল করছিলো। পুরো ম্যাচেই পাকিস্তান চাপে ছিলো। ম্যাচের দ্বিতীয় অংশে সব সময় মনে হচ্ছিল আফগানিস্তান ম্যাচটা জিতে যাবে। বিশেষ করে যখন বাবর আজম এবং রিজওয়ান দুজনই আউট হয়ে যায়। কিন্তু খেলা আস্তে আস্তে সামনের দিকে গড়াতে থাকে আর পাকিস্তান তাদের লড়াকু ক্রিকেট দিয়ে ম্যাচে ফিরে আসতে থাকে। কিন্তু একেবারে শেষের দিকে ৪৮ এবং ৪৯ নম্বর ওভারে আফগানিস্তান বোলাররা অনেক রান দিয়ে দেয়। যার ফলে শেষ ওভারে পাকিস্তানের জয়ের জন্য প্রয়োজন থাকে ১১ রান। এই ওভারের শুরুতেই এমন একটা ঘটনা ঘটে যেটা পুরো ম্যাচের আবহটা নষ্ট করে দিয়েছিলো। যে আফগানিস্তানের খেলা আমার কাছে এত পছন্দের তাদের একটা কাপুরুষোচিত কাজ তাদের প্রতি মনটা বিষিয়ে দেয়। যে আফগানদের হার না মানা লড়াকু মানসিকতার প্রশংসা সকলেই করে তাদের কাছ থেকে এমন কাজ একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। আফগান বোলার নন স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান সাদাব খানকে মানকাড করে। এই ধরনের আউট যদিও ক্রিকেটের নিয়ম বহির্ভূত নয়। তবে এই ধরনের আউট আসলে ক্রিকেটের স্পিরিটের সাথে যায় না।


দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেট খেলা দেখার ফলে আমি এরকম বেশ কিছু মুহুর্তের সাক্ষী হয়েছি। যেখানে বোলার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ব্যাটসম্যান কে মানকাড করে নাই। বাংলাদেশের বোলার রফিক একবার ম্যাচের শেষের দিকে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যান ক্রিজ ছেড়ে বের হয়ে যাওয়ার পরও তাকে আউট না করে সাবধান করে দেয়। বাংলাদেশ ম্যাচ হারলেও রফিকের এই আচরণ সকলের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছিলো। কিন্তু আফগানিস্তানের ফাস্ট বোলার ফারুকী যে ন্যাক্কারজনকভাবে সাদাব খানকে আউট করে তাতে পুরো ম্যাচের সৌন্দর্যটাই ম্লান হয়ে যায়। যদিও শেষ পর্যন্ত নাসিম সাহেব দৃঢ়তায় পাকিস্তান ম্যাচটি জিতে যায়। এই ম্যাচ থেকে একটা শিক্ষনীয় ব্যাপার রয়েছে। যদি ফারুকী সাদাব খানকে ওইভাবে আউট না করতো। আউট না করে যদি তাকে সাবধান করে দিতো। তাহলে ম্যাচ হারলেও আফগানিস্তানের এই বোলার নায়ক হিসেবে বিবেচিত হতো। অপরপক্ষে ম্যাচটি যদি শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তান জিতেও যেতো। তাতে মানুষ ফারুকীর এই নেতিবাচক মানসিকতাকে ধিক্কার জানাতো। অনেক সময় হেরেও মানুষের মন জয় করা যায়। আবার অনেক সময় জিতেও মানুষের কাছে খলনায়ক হতে হয়। সেদিনের ম্যাচে আফগানিস্তানের ফাস্ট বোলার ফারুকী সবার কাছে খলনায়ক হিসেবেই বিবেচিত হয়েছে। এই কাজটা আফগান মানসিকতার সাথে একেবারেই যায় না। আফগানদেরকে বলা হয় বীরের জাতি। যাই হোক হয়তো ভবিষ্যতে এই ঘটনা থেকে আফগানিস্তান একটা শিক্ষা নেবে।


আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।



logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

আসলেই ফারুকী আর সাদাব খানের বিষয়টা কারোর কাছেই ভালো লাগেনি। তবে আমার কাছে এই ম্যাচে রহমান উল্লাহ গুলবরাজ এর ব্যাটিং টাই বেশি ভালো লেগেছে। আর শেষের দিকে এশিয়া কাপে যেমন নাসিম শাহ নায়ক হয়েছিল ঠিক এখানেও একই ঘটনা ঘটেছে।

 last year 

ভাই এই ম্যাচ টি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত দেখেছি। এই খেলাটি আসলে অনেক সুন্দর একটি খেলা ছিল। ৩০১ রানের টার্গেটে পাকিস্তান ব্যাট নেবে মনে হয়েছিল খুব সহজে তারা জিতে যাবে। কিন্তু মাঝখানে পরপর কয়েকটি উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে পুরোটাই তারা ব্যাকফুটে পড়ে যায়। এই খেলা শেষ আকর্ষণ তো তখনই যখন নায় উইকেট পড়ে যায়। তখন শেষ ওভারে রান দরকার ১১। নাসিম শাহের ব্যাটিং দক্ষতায় তারা পুনরায় এক উইকেটে জিতে যায়। ঠিক এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই দুই দলের মধ্যে। সেখানে ওই নাসিম শাহ হয়েছিল জয়ের নায়ক। এটা একটি শ্বাসরুদ্ধকর একটা ম্যাচ ছিল। ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

ঐদিনের আফগানিস্তান আর পাকিস্তানের ম্যাচটি অনেক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ফারুকীর আচরনটা কেউ সাপোর্ট করেনি। সবাই তাদের খেলার প্রশংসা করেছে। পাকিস্তানের মত টিমকে পুরো পঞ্চাশ ওভার চাপে রেখেছে। যদিও খেলাটা আফগানিস্তান হেরেছে তারপরও তাদের পক্ষে অনেক মানুষ সাপোর্ট করেছে। তবে ফারুকীর ব্যবহারটা কাম্য ছিল না। ধন্যবাদ।

 last year 

ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট খেলার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ আমার। একটা সময় প্রায় সারাদিনই ক্রিকেট খেলতাম। খেলা হলে তো টিভির সামনে থেকে উঠতাম ই না। যাইহোক স্মার্ট টিভি কিনেছেন, সেই পোস্টটি আমি পড়েছিলাম। আসলেই আফগানিস্তান টিম তেমন সাপোর্ট না পেয়েও দারুণ ক্রিকেট খেলে। শাদাব খানকে মানকাড আউট করা ফারুকীর মোটেই উচিত হয়নি। যাইহোক পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 58482.75
ETH 2615.94
USDT 1.00
SBD 2.42