হঠাৎ নিভে যাওয়া (দ্বিতীয় পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগlast year

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


দিনভর হারভাঙ্গা খাটুনি পরে সামান্য বেতনে চাকরি করেই রাসেলের জীবন চলছিলো সেই সাথে তার পরিবারের লোকজনের পেটে কিছু আহারও জুটছিলো। দিনকাল এভাবেই চলছিলো। কিন্তু রাসেল বেশ পরিশ্রমী ছেলে। আশেপাশের দোকানের লোকজন সবাই রাসেলের আচার ব্যবহারে তার উপরে খুশি। এর ভিতরে রাসেল তার দোকান থেকে একটু দূরে আরেকটি দোকানে চাকরির অফার পায়। সেই দোকানের মালিক লোকটা অনেক ভালো। যখনই দেখা হয় তখনই রাসেলের সাথে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে। রাসেলের সমস্ত কথা শোনার পরে সেই রাসেলকে তার দোকানে কাজ করার সুযোগ দিতে চায়। বেতনটা ও আগের দোকান থেকে বেশি দিতে চায়।

Polish_20230313_002834723.jpg

শেষ পর্যন্ত রাসেল তার সাথে সমস্ত কথাবার্তা ফাইনাল করে। বলে এখন তো মাসের মাঝামাঝি সময়। এখন যদি আমি আগের মালিকের কাজ ছাড়ি তাহলে ব্যাপারটা খুব খারাপ হয়। আমি সামনের মাসে ১ তারিখ থেকে আপনার দোকানে জয়েন করি। এর ভেতরে আমি বর্তমান মালিককে সবকিছু জানায়। রাসেলের নতুন দোকান মালিক রাসেলের এই সিদ্ধান্তে বেশ খুশি হয়। সে চিন্তা করে এতোটুকু ছেলে হলেও কি হবে। যথেষ্ট দায়িত্ববান মানুষ সে। এরকম একটা ছেলেকে দোকানের কর্মচারী হিসেবে রাখতে পারলে তার ভালোই হবে। তাছাড়া দোকানের কর্মচারীরা বেশিরভাগই সুযোগ পেলেই চুরিচামারী করে। কিন্তু রাসেলের সম্বন্ধে সে কখনো খারাপ কিছু শোনেনি। রাসেলের সততার জন্য সে তার কর্মস্থলে বেশ সমাদৃত।

সেদিন রাসেল কাজ শেষ করে বাড়ি যাওয়ার আগে তার মালিকের কাছে প্রসঙ্গটি তোলে। রাসেল তার মালিককে বলে আমি নতুন একটি জায়গায় চাকরি পেয়েছি। সামনে মাসের ১ তারিখ থেকে আমি সেখানে জয়েন করতে চাচ্ছি। আপনি এর ভেতরে আমার বদলে একজন মানুষ নিয়ে নেন। কিন্তু রাসেলের নতুন চাকরির কথা শুনে তার মালিক কিছু খুশি হতে পারেনা। রাসেলের দোকান মালিক তাকে বলে কালকে তোর সাথে এই বিষয়ে কথা বলব এখন বাড়ি যা। পরদিন রাসেল বাড়ি যাওয়ার সময় আবার তার মালিকে বিষয়টা বলে। রাসেলের দোকান মালিক সেদিনও বিষয়টা এড়িয়ে যায়।

এভাবে দেখতে দেখতে প্রায় মাস শেষ হয়ে যায়। এদিকে রাসেল অনেকটা অস্থির হয়ে গিয়েছে। কারণ শেষ মুহূর্তে তার মালিক কোন প্যাচ দেবে সেটাই সে চিন্তা করছিল। মাস শেষ হওয়ার দুদিন আগে রাসেল যখন বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখন তার মালিক রাসেলের কাছে একটি ব্যাগ দিয়ে বলে এই ব্যাগটা তোর বাড়ি নিয়ে যা। কালকে সকালে নিয়ে আসবি। রাসেল কিছুটা অবাক হয়ে যায়। তার মালিক কে বলে ব্যাগের ভিতর কি আছে? তার মালিক রাসেলকে ধমক দিয়ে বলে কি আছে সেটা তোর জানার দরকার নাই। কালকে সকালে ভালোমতো ব্যাগটা নিয়ে আসবি।

রাসেল মাথা নেড়ে দোকান থেকে বেরিয়ে যায়। দোকান থেকে বের হয়ে রাসেল যখন তার বাড়ি পৌঁছায়। তার কিছুক্ষণ পর তার বাড়িতে পুলিশ আসে। পুলিশ দেখে রাসেলের বাবা-মা অস্থির হয়ে যায়। তারা পুলিশকে বারবার জিজ্ঞেস করতে থাকে স্যার কি হয়েছে? কোন সমস্যা? পুলিশ সে কথার উত্তর না দিয়ে বলে তোমার ছেলেকে ডাকো। তোমার ছেলে তার মালিকের অনেক দামি জিনিস চুরি করে নিয়ে এসেছে। রাসেলের মা-বাবা এই কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ে। তারা পুলিশকে বলতে থাকে স্যার আমার ছেলে চোর না। সে কখনো চুরি করতে পারে না। আমার ছেলেকে সবাই ভালো বলে। সে কোনদিন কারো কোন জিনিস চুরি করেনি।

পুলিশ বলে তোমার ছেলে কত ভালো সেটা এখনই দেখাচ্ছি। এই বলে পুলিশ রাসেলের ঘরের ভেতরে ঢুকে যায়। ঘরের ভিতর একটু খোঁজাখুঁজি করতেই পুলিশ ব্যাগটি পেয়ে যায়। তারপর তারা রাসেলকে হাতকড়া পরিয়ে এরেস্ট করে থানায় নিয়ে যায়। এখন রাসেলের মা কি করবে সে কিছুই চিন্তা করতে পারে না। এর ভিতরে আশেপাশের পাড়া প্রতিবেশী অনেকেই রাসেল বাড়িতে এসেছে। তারা অনেকেই বলতে থাকে রাসেলকে তো অত্যন্ত ভালো ছেলে হিসেবে জানতাম। ও কবে থেকে এরকম চুরি করা শুরু করলো। আবার কেউ কেউ রাসেলের চুরি করার কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।

রাসেলের পাশের বাড়ির লোক তার মাকে পরামর্শ দেয় তুমি তাড়াতাড়ি চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে যাও। তার কাছে গিয়ে সাহায্য চাও। রাসেলের মা চিন্তা করে এটাই সবচাইতে ভালো হবে। কারণ তার তো থানায় যাওয়ার মত কোন লোক নেই। সে নিজেও থানা পুলিশ চেনেনা। রাসেলের মা দৌড়ে চেয়ারম্যানের বাড়িতে যায়। তারপর চেয়ারম্যান কে বলে চেয়ারম্যান সাহেব আমার ছেলেকে পুলিশ চুরির অপবাদে ধরে নিয়ে গিয়েছে। আপনি কিছু একটা করেন। আপনি তো রাসেলকে ছোটবেলা থেকেই চেনেন। ঘটনাটা শুনে চেয়ারম্যান নিজেও অবাক হয়ে যায়। কারণ সে রাসেলকে অত্যন্ত ভালো ছেলে হিসেবে চিনতো। যখনই রাসেলের সাথে তার দেখা হতো। রাসেল অত্যন্ত বিনয়ের সাথে সালাম দিয়ে তার কুশলাদি জিজ্ঞেস করতো। আজকালকার দিনে এরকম ছেলে পেলে খুব একটা দেখা যায় না। এই কারণেই সে রাসেলকে বেশ পছন্দ করে।

ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

আপনার গল্পের মাধ্যমে রাসেলের ব্যাপারে যতই জানছি ততই অবাক হচ্ছি ভাইয়া। আসলেই রাসেলের মত এমন মানুষ এই যুগে খুব কমই আছে। আর এমন ভালো মানুষদের বিপদেও পড়তে হয় বেশি। রাসেল নেহাত ভালো মানুষ বলে দোকানের মালিককে আগে থেকেই বলে দিয়েছিল কাজ ছেড়ে দেওয়ার কথা,যেন সে অন্য কোন মানুষ নিয়ে নেয় কাজের জন্য। আগে থেকে বলে দেওয়াটাই রাসেলের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো। অনেক মানুষ আছে হুটহাট কাজ ছেড়ে কর্মস্থলের মালিকদের বিপদে ফেলে দেয়। রাসেলের দোকানের মালিকের সাথে এমনটাই হওয়া উচিত ছিল। তাহলে সে উচিত শিক্ষা পেত। যাইহোক রাসেলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে এই ব্যাপারটা পড়ে খুবই খারাপ লাগলো। এত সুন্দর একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

 last year 

রাসেলের জন্য সত্যি অনেক খারাপ লাগলো। আসলে তার মালিক মোটেও কাজটি ঠিক করেননি। হয়তো রাসেল চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিল বলেই তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তবে যার দ্বারা মালিকের অনেক উপকার হয়েছিল শেষে তাকে এভাবে ভাসিয়ে দিল ব্যাপারটি ভীষণ খারাপ লাগলো। এভাবেই হয়তো রাসেলের মত ছেলেরা বিপদে পড়ে যায়। আর তাদের জীবন থমকে দাঁড়ায়। ভাইয়া আপনার লেখা গল্পটি সত্যি শিক্ষনীয় ছিল। অনেক ভালো লেগেছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.31
TRX 0.12
JST 0.033
BTC 64485.37
ETH 3156.53
USDT 1.00
SBD 4.05