চমৎকার দিনের ঝামেলা পূর্ন সমাপ্তি।

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


ফেরদৌসের সাথে ঘোরাফেরা শেষে আমরা বাড়ির দিকে ফিরছিলাম। ফেরদৌসের মোটরসাইকেলের কাগজপত্রে কিছু সমস্যা থাকার কারণে ফেরদৌস শহরের ভেতরে খুব একটা ঢোকে না। তাই বেশিরভাগ সময় আমি আমাকে ট্যাপা খোলা বাসস্ট্যান্ডের ওখানে নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে আমি রিক্সা করে বা অটো রিক্সা করে বাসায় চলে আসি। সেদিন দুই বন্ধু গল্প করতে করতে টেপাখোলা বাস স্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে কোত্থেকে যেনো দুই পুলিশ সদস্য এসে উপস্থিত হলো। পুলিশ দেখার সাথে সাথে আমরা বুঝে গিয়েছিলাম যে ঝামেলা হতে চলেছে। কারণ ফেরদৌসের গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করা ছিলো না। আমি ফেরদৌসকে আগেও অনেকবার বলেছিলাম গাড়ির কাগজপত্র সব ঠিকঠাক করে নাও। না হলে মাঝে মাঝেই এই ধরনের সমস্যা হতে পারে।

IMG_20231023_070000.jpg

গত মাস দুয়েকের ভেতর ফেরদৌস প্রায় দুই তিন বার পুলিশের ঝামেলা সম্মুখীন হয়েছে। সেই ২-৩ বারই পুলিশকে কিছু ঘুষ দিয়ে বেঁচে গিয়েছে। এবারও মনে করেছিলাম তেমনি কিছু একটা হবে। কিন্তু ট্রাফিক সার্জেন্টের পরবর্তী কর্মকান্ডে বুঝতে পারলাম আজকে আর বাঁচার সুযোগ নেই। কারণ ট্রাফিক সার্জেন্ট মোটরসাইকেলের চাবি হাতে নিয়েই তার মোটরসাইকেলের পেছন থেকে কেসের কাগজ বের করে সেখানে লেখা শুরু করে দিলো। আর একবার কেস লেখা হয়ে গেলে সেখানে আর কোন তদবির চলে না। মাত্র ২-৩ মিনিটের ভেতরে সবকিছু ঘটে গেলো। আমি আর ফেরদৌস তখন চিন্তা করছিলাম এখন কি করবো। পরে সেখানে উপস্থিত ট্রাফিকের কাছ থেকে জানতে পারলাম মোটরসাইকেল গুলো সব পুলিশ লাইনে পাঠিয়ে দেয়া হবে। আমাদেরকে এসপি অফিসে যোগাযোগ করতে বললো মোটরসাইকেল ছাড়ানোর জন্য। দুই বন্ধু তখনই চলে গেলাম এসপি অফিসে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম যেই পুলিশ অফিসারের সাথে আমাদের যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিলো তিনি অফিস থেকে চলে গিয়েছেন। আমাদেরকে বললো পরদিন দুপুর ১২ টার ভিতরে সেখানে আসতে।


আমরা তখন এক পুলিশের কাছ থেকে পরামর্শ নিলাম এখন কি করা যায়। তখন তিনি বললেন আপনাদেরকে মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। আমরা হিসাব করে দেখলাম প্রায় ১৪/১৫ হাজার টাকার ধাক্কা। তারপরেও কোনো উপায় নেই। শেষ পর্যন্ত আমি ফেরদৌসকে বললাম এবার রেজিস্ট্রেশনটা করেই নাও। তাছাড়া মোটরসাইকেল ছাড়ানোর আর কোন উপায় দেখছি না। তারপর দুই বন্ধু পরামর্শ করে ঠিক করলাম আগামীকাল সকাল ১১ টার দিকে দুজন এসপি অফিসের সামনে আসবো। সেখানকার একটি দোকান থেকে অনলাইনের মাধ্যমে মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশনের কাজটা সম্পন্ন করবো। তারপর সেই কাগজ নিয়ে আমাদেরকে আবার এসপি অফিসে যেতে হবে। পরদিন যথা সময়ে দুই বন্ধু এসপি অফিসের সামনে উপস্থিত হলাম। তারপর ১১ হাজার টাকা খরচ করে ফেরদৌস তার রেজিস্ট্রেশনের কাজটা সম্পন্ন করলো। যদিও পুরো কাজ সম্পন্ন হয়নি। কারণ এটা শুধু সরকারের টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। টাকা জমা দেয়ার এই রিসিট বি আর টি এ অফিসে জমা দিয়ে নাম্বার প্লেট করাতে হবে। যদিও এই ব্যাপার সম্বন্ধে আমাদের দুজনের কারোরই তেমন একটা অভিজ্ঞতা ছিলো না। তবে মানুষের কাছ থেকে শুনে শুনে আমরা কাজ গুলি করলাম।


তারপর রেজিস্ট্রেশন করার কাগজটা নিয়ে আমরা সেই পুলিশ অফিসারের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। শুনেছিলাম তিনি বারোটার ভেতরে অফিসে আসবেন। কিন্তু অপেক্ষা করতে করতে আমরা একেবারে অধৈর্য হয়ে গিয়েছিলাম। তাছাড়া আমার শরীরটাও বেশ খারাপ ছিলো। প্রচন্ড দুর্বল লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো এসপি অফিসের বারান্দাতে বসেই ঘুমিয়ে পড়ি। শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে করতে দেড়টার দিকে সেই পুলিশ অফিসার আসলো। ততক্ষণে আমি পাশের মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছি। এর ভেতরে ফেরদৌস আমাকে ফোন দিলো। নামাজ শেষ করে এসে দেখি ফেরদৌস কাগজ জমা দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? তখন ফেরদৌস জানালো সবার কাছ থেকে কাগজপত্র জমা নিয়ে নিয়েছে। আর সবাইকে ২০০০ টাকা করে জরিমানা করে ছেড়ে দিচ্ছে যদি তাদের রেজিস্ট্রেশনের কাগজ থাকে তাহলে। আমি আর ফেরদৌস দুজনে দাঁড়িয়ে রইলাম আমাদের নাম ডাকার জন্য। শেষ পর্যন্ত বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর ফেরদৌসের ডাক পড়লো। তারপর ফেরদৌস গিয়ে ২০০০ টাকা জমা নিয়ে দিয়ে একটি কাগজ নিয়ে নিলো।


তারপর ফেরদৌসকে একটি ঝুড়ি দিয়ে বলল এর ভেতরে আপনার মোটরসাইকেলের চাবি রয়েছে খুজে বের করে নিন। সেই ঝুড়ির ভেতর কয়েকশ মোটরসাইকেলের চাবি ছিলো। যার ফলে তার ভেতর থেকে মোটরসাইকেলের চাবি খুঁজে বের করা খুবই সমস্যা ছিলো। তাই ফেরদৌস আমাকে ডাক দিল ওকে সহায়তা করার জন্য। শেষ পর্যন্ত দুই বন্ধু মিলে খুঁজে ওর মোটরসাইকেলের চাবি পেলাম। তারপর সেই চাবি নিয়ে ফেরদৌস চলে গেল পুলিশ লাইনে। সেখান থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে ফেরদৌস বাড়িতে চলে গেলো। আর আমি এসপি অফিস থেকেই ফেরদৌসের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়িতে ফিরলাম। এভাবেই ঝামেলা শেষ হোলো। তবে ঝামেলা হলেও এবার একটা ভালো কাজ হয়েছে। সেটা হচ্ছে ফেরদৌসের মোটরসাইকেলের কাগজ না থাকার জন্য আমরা ফরিদপুর শহরের বাইরে কোথাও যেতে পারতাম না। তবে এবার রেজিস্ট্রেশন এর কাগজ হয়ে যাওয়ার কারণে এখন আমরা যেখানে খুশি যেতে পারবো। ফেরদৌস এবার যাওয়ার আগে বলে গিয়েছে সামনে বার এলে দুই বন্ধু মিলে ফরিদপুর ডিস্ট্রিকের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াবো। যেহেতু গাড়ির কাগজ হয়ে গিয়েছে তাই এখন আর আমাদের দূরে যেতে কোন বাধা নেই। আমি এখন সেই আশায় দিন গুনছি।


আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানফরিদপুর


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

গাড়ির কাগজপত্র না থাকলে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হলেই মনে ভয় ভয় কাজ করে। তাই অবশ্যই কাগজপত্র থাকা দরকার এবং সময়মতো কাগজপত্র আপডেট করা দরকার। যদিও বিআরটিএ গেলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায় অনেক সময়। দালাল ছাড়া তেমন কোনো কাজ করা যায় না। যাইহোক বিআরটিএ গিয়ে রেজিষ্ট্রেশন এর কাজ সম্পূর্ণ করে, দূর দূরান্তে ফেরদৌস ভাইয়ের সাথে ঘুরতে যেতে পারবেন। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

আপনার সম্পুর্ন পোস্টটি পড়ে বুঝতে পারলাম, যে, আপনারা দুই বন্ধু লাইসেন্স বিহীন গাড়ি নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের কাছে ধরা পড়ে গিয়েছিলেন। আমার সাথে ও ইতোমধ্যে দুইদিন এরকম ঘটনা ঘটেছিল। যাইহোক ভাই আপনাদের একটি অভিজ্ঞতা হয়েছে ওইখান থেকে।

 last year 

রেজিস্ট্রেশন ছাড়া মোটরসাইকেলে চালানো ঠিক না। যাইহোক এই বিপদের মাধ্যমে আর যাইহোক ফেরদৌস ভাইয়ের মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন টা তো হয়ে গেল। এটাই অনেক। এসব কাজে টাকার পাশাপাশি বেশ ঝামেলাও হয়ে থাকে। এখন থেকে আপনি এবং ফেরদৌস ভাই ঐ বাইক নিয়ে ফরিদপুর এর বাইরেও যেতে পারবেন যেহেতু বাইকের রেজিস্ট্রেশন হয়ে গিয়েছে।।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 78890.33
ETH 3180.07
USDT 1.00
SBD 2.68