দীর্ঘদিন পর পরিবার নিয়ে রমনা পার্ক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।

in আমার বাংলা ব্লগ5 months ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


গত পরশুদিন ঢাকায় এসেছি একটি জরুরি কাজে। সাধারণত ঢাকায় থাকতে আমি একেবারেই পছন্দ করি না। সেই কারণে কাজ শেষ হলে দু একদিন ঘোরাফেরা করেই তারপর বাসায় ফিরে যায়। তবে পছন্দ না করলেও বিভিন্ন কারণে মাঝে মাঝে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজনকে ঢাকায় আসতে হয়। যাই হোক পরশুদিন মোটামুটি ঝামেলা বিহীন ভাবে ঢাকায় এসে পৌঁছেছিলাম। ট্রেনে করে আসতে সময় লেগেছিল সোয়া দুই ঘন্টা। তবে সোয়া দুই ঘন্টা সময় লাগলেও জার্নির প্রস্তুতি সব কিছু গোছগাছ করতে আরো অনেক সময় ব্যয় হয়। যার ফলে ঢাকায় পৌঁছে বেশ ক্লান্ত লাগছিলো। দুপুরে খালাতো বোনের বাসায় পৌঁছে খাওয়া-দাওয়া করে ছোট্ট একটা ঘুম দিয়ে নিয়েছিলাম।

IMG_20240129_185637.jpg

ঘুম থেকে উঠলে খালাতো বোন বললো চল সবাই মিলে রমনা পার্ক থেকে ঘুরে আসি। শুধু শুধু ঘরে বসে থাকার থেকে পার্কে গিয়ে একটু হাটাহাটি করলে ভালো লাগবে। আইডিয়াটা আমার কাছে বেশ পছন্দ হোলো। তাছাড়া রমনা পার্কে যাওয়া হয় না আমার দীর্ঘদিন। সেই বহু বছর আগে একবার রমনা পার্কে ঢুকেছিলাম। কিন্তু তখনকার পরিবেশ দেখে পরবর্তীতে আর সেখানে যাওয়ার আগ্রহ হয়নি। তবে আমার খালাতো বোন জানালো রমনা পার্কের পরিবেশ এখন আগের থেকে অনেক ভালো হয়েছে। যার ফলে পার্কে যাওয়ার আগ্রহ বেড়ে গেলো। ওর বাসা শান্তিনগর হওয়ায় সেখান থেকে আমরা রিক্সা করে সহজেই রমনা পার্কের গেটে পৌঁছে গেলাম। কিন্তু যখন রমনা পার্কের গেটে পৌঁছলাম ঠিক তখনই মাগরিবের আজান শুনতে পেলাম। তখন আমি সাথে থাকা সবাইকে বললাম তোমরা সামনে আগাও আমি নামাজ পড়ে আসছি। তারা রমনা পার্কের ভেতরে ঢুকে গেলে আমি পাশেই সড়ক ভবনের অফিসের সাথে থাকা মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে এলাম।


IMG_20240129_182616.jpg

নামাজ শেষ করে তাদেরকে ফোন দিলে তারা যে জায়গায় রয়েছে সেখানে আমাকে যেতে বললো। আমি অন্য আরেকটা গেট দিয়ে রমনা পার্কের ভেতরে ঢুকে পার্কের ভেতরে বাচ্চাদের খেলাধুলার যে জায়গাটা রয়েছে সেখানে গেলাম। সেখানেই তারা আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো। তবে আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম রাত হয়ে গেলেও তখনও রমনা পার্কের ভেতরে অনেক মানুষজন ছিলো। কেউ কেউ বসে আড্ডা দিচ্ছিলো আবার কেউ কেউ পার্কের ভেতর দৌড়াচ্ছিলো শরীর ঠিক রাখার জন্য। আমার তখন অনেক আগেকার কথা মনে পড়ে গেলো। একটা সময় ছিলো যখন রমনা পার্কের ভেতরের পরিবেশ হয়ে গিয়েছিল একেবারেই নোংরা। আর সন্ধ্যা নামলেই সেখানে ছিনতাইকারী এবং নানা রকম খারাপ লোকদের উপদ্রব বেড়ে যেতো। যার ফলে সন্ধ্যার পরে রমনা পার্কে পারোতপক্ষে কেউ প্রবেশ করতো না।


IMG_20240129_181325.jpg

IMG_20240129_182431.jpg

তবে এখন দেখতে পেলাম রমনা পার্কের গেটে নিরাপত্তা প্রহরি রয়েছে। এই বিষয়টি আমার কাছে বেশ ভালো লাগলো। তাছাড়া পার্কের ভেতরে আমি পুলিশ ও দেখতে পেয়েছি। যাইহোক পার্কের ভেতরে ঢুকে আমি পরিবারের লোকজন যেখানে অপেক্ষা করছিল সেখানে গিয়ে পৌঁছালাম। সেখানে গিয়ে দেখি পার্কের ভেতরে যে লেকটি রয়েছে সেই লেকের দুই ধার দিয়ে কাঠের ব্রিজ বানানো হয়েছে। তারা সবাই সেই ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। কাঠের ব্রিজটা আমার কাছে বেশ পছন্দ হোলো। আমাদের সাথে আমাদের বাচ্চারা ছিলো। তাদেরকে নিয়ে আমরা কাঠের ব্রিজ দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। জায়গাটা বাচ্চারাও বেশ পছন্দ করলো। আসলে ঢাকা শহরের ভেতর এমন খোলামেলা জায়গা খুব বেশি নেই। যার ফলে এখানে এলে বাচ্চারা বেশ ভালো সময় কাটাতে পারে। তারপর আমরা সবাই মিলে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ফিরে বেড়াতে লাগলাম আর খেয়াল করলাম পার্কের দর্শনার্থীরা আস্তে আস্তে সবাই চলে যাচ্ছে। তখন আমরা ঠিক করলাম এখন আমরাও পার্ক থেকে বের হয়ে যাবো। আমরা আগে থেকে পরিকল্পনা করেছিলাম ফেরার সময় হাঁটতে হাঁটতে বেরিয়ে বেইলি রোডের ভেতর দিয়ে বাসার দিকে ফিরবো। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা রমনা পার্ক থেকে বের হয়ে বেইলি রোডের দিকে আগাতে লাগলাম। সেখানে পৌঁছানোর আগেই সাথের বাচ্চারা বায়না ধরল তারা ফুচকা খাবে। তখন আমরা বেইলিরোডের একটি ভ্যানের কাছে গিয়ে ফুচকার অর্ডার দিলাম।


IMG_20240129_185311.jpg

IMG_20240129_185452.jpg

পাশে দেখলাম আরেকটি ফুড কার্টে কাবাব বানানো হচ্ছে। তখন আমি আমার স্ত্রী এবং খালাতো বোনকে জিজ্ঞেস করলাম কাবাব খাবে নাকি? তারা আসলে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলো না যে কাবাব খাবে কিনা। কারণ দুপুরে আমরা সবাই বেশ ভারী খাওয়া দাওয়া করেছিলাম। আমাদের আসা উপলক্ষে খালাতো বোন অনেক কিছু রান্না করেছিলো। তাই দুপুরে খাওয়াটা অনেক বেশি হয়ে গিয়েছিলো। যার ফলে খাওয়া-দাওয়ার প্রতি আমাদের কারোরই খুব একটা বেশি আগ্রহ ছিলো না। কাবাবের গন্ধে পুরো এলাকাটা ভরে গিয়েছিলো। সে কারণে আমি চিন্তা করে দেখলাম কাবাব কিনে বাসায় গিয়ে খাওয়া যাবে। তারপর আমি কয়েকটা চিকেন চাপ আর লুচি পার্সেল নিয়ে নিলাম। তারপর আমাদের ফুচকা খাওয়া শেষ হলে আমরা বাসায় ফিরে গেলাম। তবে পেট ভরা থাকার কারণে বাসায় গিয়েও কেউ কাবাব খাওয়ার আগ্রহ দেখায়নি। অবশেষে আমরা রাত দশটার দিকে সেই কাবাব এবং লুচি খেয়েছিলাম। কাবাব আর লুচি ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলো। যার ফলে আমরা কাবাব থেকে সেই কাঙ্খিত স্বাদ পাইনি। তবে কাবাবটা খেয়ে বুঝতে পারছিলাম গরম অবস্থায় খেতে পারলে কাবাবটা দারুন লাগতো। এভাবেই ঢাকায় আমাদের প্রথম দিন কাটলো।

IMG_20240129_193228.jpg

IMG_20240129_193212.jpg


আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানফরিদপুর

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 5 months ago 

ভাই রমনা পার্ক এখন আগের চেয়ে অনেক সুন্দর করেছে এবং এখন বেশ ভালোই নিরাপত্তা রয়েছে সেখানে। আমরা এই মাসের প্রথম সপ্তাহে রমনা পার্কে ঘুরতে গিয়েছিলাম। কাঠের ব্রিজ দেখতে আসলেই খুব সুন্দর লাগে। আমরা বিকেল বেলা কাঠের ব্রিজে অনেকক্ষণ হেঁটেছিলাম এবং লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করেছিলাম। যাইহোক আপনার ফটোগ্রাফি গুলো দেখে ভীষণ ভালো লাগলো ভাই। কাবাব গুলো পার্সেল করে বাসায় নিয়ে খেয়েছেন বিধায়, খেতে তেমন ভালো লাগেনি। গরম গরম খেলে অবশ্যই বেশ ভালো লাগতো। তবে সব মিলিয়ে আপনারা বেশ ভালো সময় কাটিয়েছেন। যাইহোক এতো সুন্দর মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 57979.07
ETH 3124.67
USDT 1.00
SBD 2.36