বিয়ের অনুষ্ঠানে জম্পেশ খাওয়া দাওয়া।
বন্ধুর বিয়ে শেষ হওয়ার পরেই মনে পড়লো এই মাসে তো আরো একটি বিয়ের দাওয়াত রয়েছে। সেই বিয়ে খাওয়ার জন্য অবশ্য আমাদেরকে দূরে কোথাও যেতে হবে না। কারণ বিয়েটি হবে আমাদের দোতলার ভাড়াটিয়ার মেয়ের। এই পরিবার দীর্ঘ ৪-৫ বছর যাবত আমাদের বাসায় ভাড়া রয়েছে। তাদের সাথে এখন বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়ার সম্পর্ক থেকেও ঘনিষ্ঠ একটা সম্পর্ক হয়েছে। তারা আগে থেকেই বলে রেখেছিল সেই বিয়ের দাওয়াতের কথা। অনেকদিন আগে থেকে বলে রাখার ফলে আমরা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকদিন আগে থেকেই তারা বাসা বাড়ি বেশ সাজগোজ করছিলো।
একদিন খেয়াল করে দেখি কিছু লোকজন এসে আমার বাড়িতে লাইটিং করছে। আমি তো একটু অবাক হয়ে গিয়েছি। পরে বুঝতে পারলাম দোতলার ভাড়াটিয়ারা হয়তো এই কাজ করছে। প্রথমে কিছুটা বিরক্ত হয়েছিলাম এই কারণে যে কাজটা করার আগে তার উচিত ছিল আমাকে একবার জানানো। যাইহোক তারপর চিন্তা করলাম যে তারা একটু বেশি আন্তরিক হওয়ার কারণে হয়তো আর অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। তাছাড়া বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান হবে এ কারণে আমারও বেশ ভালো লাগছিলো। যদিও তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। কিন্তু তাদের বিয়ের আয়োজন দেখে আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম। বিয়ের আয়োজন দেখে মনেই হচ্ছিলো না যে এই পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। রীতিমতো এলাহী আয়োজন করেছিলো তারা।
আমাদের অবশ্য সব পর্বেই দাওয়াত ছিলো। আজকে কনে পক্ষের অনুষ্ঠান ছিলো। সেই অনুষ্ঠানটি অবশ্য করা হয়েছে শহরের একটি ভালো কমিউনিটি সেন্টারে। গতকাল রাতে হলুদের যে অনুষ্ঠান হয়েছে সেটা আমাদের বাসার ছাদেই করা হয়েছিলো। যাইহোক আজ সকাল থেকেই আমি আর আমার স্ত্রী পরিকল্পনা করেছিলাম আমরা নামাজ পড়ে তারপর কমিউনিটি সেন্টারের উদ্দেশ্যে রওনা দিবো। আমি নামাজ পড়ে এসে দেখি তখনো আমার স্ত্রী এবং মেয়ে তৈরি হয়নি। তাদের সাজগোজ পর্ব চলছে। শেষ পর্যন্ত তাদের সাজগোজ পর্ব শেষ হলে আমি তাড়াতাড়ি করে তৈরি হয়ে সবাই মিলে কমিউনিটি সেন্টারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সেখানে পৌঁছে দেখি ইতিমধ্যে লোকজন খেতে বসে গিয়েছে। আমরা প্রথমে কিছু ছবি তুলে নিলাম। তারপর মেয়ের বাবার অনুরোধে খেতে বসে গেলাম।
আমি মনে করেছিলাম হয়তো সাধারণত আমাদের শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো বিয়েতে যে ধরণের আয়োজন করে থাকে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন অনেকটা তেমনই হবে। তবে খেতে বসে দেখলাম তারা মাটন কাচ্চি, চিকেন রোস্ট, জালি কাবাব, বোরহানি, দই সবকিছু মিলিয়ে বেশ ভালো আয়োজন করেছিলো। আর রান্নাটা হয়েছিল দারুণ। বিশেষ করে কাচ্চির মাংসটা এতটা সফট হয়েছিল যে মাংসটা ধরার সাথে খুলে আসছিলো। কাচ্চির মাংস যদি সফট না হয় তাহলে সেই কাচ্চি খেয়ে মজা পাওয়া যায় না। যাইহোক ধীরেসস্থে খাওয়া-দাওয়া পর্ব শেষ করলাম। আমাদের খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই শুনতে পেলাম বরযাত্রী আসছে। তো আমরা গেটের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়িয়ে বরযাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
যে ছেলেটির সাথে বিয়ে হচ্ছে সেই ছেলেটিকে আমি এর আগে ভালোভাবে দেখিনি। তাই আমিও একটু কৌতূহল নিয়ে গেটের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিলাম দেখার জন্য। শেষ পর্যন্ত বেশ কিছুক্ষণ পর তারা কমিউনিটি সেন্টারের গেটে এসে পৌঁছল। তারপরে পাত্রীপক্ষের লোকজন গেটে তাদেরকে আটকে দিলো। শেষ পর্যন্ত অনেকক্ষণ কথা কাটাকাটির পরে তারা ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি পেলো। অবশ্য গেটে কত টাকা দিয়েছিলো সেটা আমি জানতে পারিনি। পাত্রপক্ষ কমিউনিটি সেন্টারে প্রবেশ করার পরে আমি আমার স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি চলে এসেছিলাম। কারণ আমার স্ত্রী আগে থেকেই বলেছিল সে কমিউনিটি সেন্টারে আরো অনেক সময় থাকবে। কিন্তু আমার কিছু কাজ থাকার দরুণ আর সেখানে সময় কাটাতে পারিনি। সবকিছু মিলিয়ে বিয়ের আয়োজনটা আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। আর বিয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ হচ্ছে খাওয়া দাওয়া। বিয়ের অনুষ্ঠানের খাবার যদি ভালো না হয় তাহলে নানা রকম কথা উঠে। কিন্তু এদিক থেকে বলতে হবে আয়োজনটা ছিল একেবারে সেরা।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i, oppo reno 8t |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | ফরিদপুর |
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো না হলেও,অনেকে জমকালো আয়োজন করতে চেষ্টা করে। কারণ অনেকেরই স্বপ্ন থাকে ধুমধাম করে বিয়ে হবে। যাইহোক খাবারের আইটেম গুলো দারুণ ছিলো। এখন ওয়েদার কিছুটা ঠান্ডা এবং এখন তো বিয়ের সিজন শুরু। চারিদিকে বিয়ের ধুম পড়ে যাবে। যাইহোক পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাই। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
বর্তমান সময়ে সবাই নিজেদের আদরের সন্তানদের বিয়ের আয়োজনে কোন কমতি রাখেনা। অনেকের হয়তো অর্থনৈতিক অবস্থান অনেক সময় ভালো থাকে না। কিন্তু তবুও নিজের সেরা আয়োজন করার চেষ্টা করে। বিয়ে বাড়িতে অনেক সুন্দর সময় কাটিয়েছেন জেনে ভালো লাগলো ভাইয়া। আর কিছু কিছু মানুষ আছে যারা দীর্ঘদিন একই বাসায় ভাড়া থাকার কারণে অনেকটা আপন হয়ে যায়।
অর্থনৈতিক অবস্থা যেমনই হোক না কেন মেয়ের বিয়েতে সবাই চায় সুন্দর আয়োজন করার।কারন বিয়ে তো একবারই হয় ভাইয়া।খুব সুন্দর আয়োজন করেছে বিয়েতে আপনার তোলা ফটোগ্রাফি দেখেই বেশ বুঝতে পারলাম।সুন্দর সময় কাটিয়েছেন জেনে খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ ভাইয়া শেয়ার করার জন্য।