অভিমানে অবসরে যাওয়া অতঃপর ফিরে আসা।

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


২০০৭ সালের বিশ্বকাপ। বাংলাদেশ বনাম ইন্ডিয়ার ম্যাচ। বাংলাদেশি বোলারদের দারুন বোলিংয়ে ইন্ডিয়া ১৯২ রানে আটকে যায়। অত্যন্ত শক্তিশালী ইন্ডিয়ার ব্যাটিং লাইনআপকে ১৯২ রানে থামিয়ে দেয়ার মূল কৃতিত্ব ছিলো বোলার মাশরাফির। তবে ১৯২ রান তখন বাংলাদেশের জন্য অনেক রান। অন্য আর দশজন বাংলাদেশি সাপোর্টারের মতো আমিও চিন্তা করছিলাম। ইন্ডিয়ার এই মহা শক্তিধর ব্যাটিং অর্ডার যেখানে ১৯২ এর বেশি করতে পারেনি। সেখানে বাংলাদেশ দল কতদূর যেতে পারবে?

IMG_20230709_012213.jpg

Cric 2 cricket নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে স্ক্রিনশট নেওয়া হয়েছে

এদিকে টিমে বেশ কয়েকজন কম বয়সী প্লেয়ার ঢুকেছে। বাংলাদেশ দল যখন ব্যাটিংয়ে নামে তখন মনে মনে দোয়া করছিলাম যেন দ্রুত উইকেট না পড়ে যায়। দলে নতুন যারা ঢুকেছিল তাদের সকলেই সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ। তার ভেতরে তামিম ইকবাল নামের ছেলেটির খেলাটা কিছুটা অন্যরকম লাগছিলো। তার খেলা দেখে মনে হচ্ছিল সে একজন ন্যাচারাল স্ট্রোক মেকার। মাঝে মাঝেই ডাউন দা ট্রাক এসে শক্তিশালী ইন্ডিয়ান বোলিং লাইন আপের বোলারদের বল গুলো বাউন্ডারির বাইরে আছড়ে ফেলছিলো।

এর ভিতরে তামিম ইকবাল ম্যাচের দশম ওভারে ইন্ডিয়ান বাঁহাতি ফাস্ট বোলার জহির খানের বলে ডাউন দা ট্রাক এসে বিশাল এক ছক্কা মারেন। জহির খান ফাস্ট বোলারদের স্বভাবসুলভ অভিব্যক্তিতে আগুন দৃষ্টিতে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে থাকেন। ছেলেটিও দমে যাওয়ার পাত্র নয়। সেও একইভাবে জহির খানের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। তখনই বুঝে গিয়েছিলাম এই ছেলেটি একসময় বাংলাদেশ ক্রিকেটের চেহারা পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেই সময়ে আমরা বাংলাদেশ দলের ওপেনারদের কাছ থেকে ৬০/৭০ স্ট্রাইক রেটে ৫০ রান পেলে খুশি থাকতাম। আমরা মনে প্রাণে চাইতাম আমাদের ওপেনাররা অন্তত ১০-১৫ ওভার টিকে থাকুক। বিপক্ষ দলের ফাস্ট বোলারদের কে ডমিনেট করে খেলবে এমন ওপেনার তখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দেখেনি।

তামিম ইকবাল নামের ছেলেটি বাংলাদেশি দর্শকদের সেই আশা পূরণ করে দিলো। তামিম ইকবাল আসার পর থেকে বাংলাদেশ দলে অনেক ওপেনার এসেছে আবার চলেও গিয়েছে। কিন্তু তার অবস্থান এতটুকু নড়চড় হয়নি। ইংলিশ সামারে ইংল্যান্ডের সিমিং কন্ডিশনে যেখানে অন্যান্য ব্যাটসম্যানরা রীতিমতো খাবি খাচ্ছিলো। সেখানে তামিম ইকবাল পরপর দুটো বিস্ফোরক সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে বাংলাদেশের মাথা উঁচু করেছিলো। সেই কথা এখনো ভুলতে পারিনি। গত দুদিন যাকে নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট অঙ্গনে অনেক নাটক হয়েছে আমি সেই তামিম ইকবালের কথাই বলছি।

বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি জেতার আগে বাংলাদেশের খেলা তেমন একটা দেখা হতো না। অবশ্য আন্তর্জাতিক ম্যাচ বাংলাদেশ খেলতোও কালে ভদ্রে। তবে আইসিসি ট্রফি জেতার পর থেকে বাংলাদেশ যখন ওয়ানডে স্ট্যাটাস পেয়ে গেলো। তখন আমরা যারা আগে অন্য দলের সাপোর্ট করতাম সবাই নিজের দেশের সাপোর্ট করার সুযোগ পেলাম। তখন থেকেই ক্রিকেটটা দেখে আসছি। কিন্তু ২০০৭ বিশ্বকাপের সেই ম্যাচের পর থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেক বড় একটা পরিবর্তন এসেছিলো। তারপর থেকে আমার মত লাখো কোটি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভক্তরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শিখেছিলো। তারপর থেকে তামিম ইকবাল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। যদিও এর ভিতর নানা রকম চড়াই উৎরায় এসেছে তার জীবনে। কিন্তু দলের ভালো পারফরমেন্সে তামিম ইকবালের অবদান এতটুকুও কমেনি।

হয়তো বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে এখন সেই আগের মত এগ্রেসিভ খেলাটা খেলে না বা হয়তো দলের প্রয়োজনেই সে এখন কিছুটা ধীরস্থির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তবে এখনো খেয়াল করলে দেখবেন বাংলাদেশ যতগুলো ম্যাচ জিতেছে তার বেশিরভাগ ম্যাচেই তামিম ইকবালের পারফরম্যান্স অনেক ভালো। এটাই আসলে একটা প্লেয়ারের কার্যকারিতা প্রমাণ করে। দীর্ঘ ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে তামিম ইকবালকে অনেক চড়াই উতরায় পার হতে হয়েছে। শুরুর দিকে তামিম ইকবাল যখন অনেক আগ্রেসিভ ক্রিকেট খেলতো তখন তার পারফরমেন্সে কনসিসটেন্সি ছিল না। পরে একটা সময় যখন সে কন্সিসেন্টলি রান করার দিকে মনোযোগ দেয় তখন তার স্ট্রাইকরেট কিছুটা কমে আসে। তখন দেশের একশ্রেণীর দর্শক তাকে রীতিমত গালাগাল শুরু করে। কিন্তু যারা ক্রিকেট বোঝে তারা ঠিকই তামিম ইকবালের ইতিবাচক পরিবর্তনটা ধরতে পেরেছিলো।

এই তামিম ইকবাল জীবনে অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়েছে। কখনো তাকে কম স্ট্রাইক রেট এর জন্য গালাগালি শুনতে হয়েছে। কখনও আবার স্ট্রাইক রোটেট করতে না পারার জন্য গালাগাল শুনতে হয়েছে। কখন আবার ওজন বেড়ে যাওয়ার জন্য গালাগাল শুনতে হয়েছে। কিন্তু বারবারই তামিম তার ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে সবাইকে ভুল প্রমাণিত করেছেন। গত পরশু হঠাৎ করে প্রেস কনফারেন্স ডেকে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে রিটায়ারমেন্টের ঘোষণা দেন। অবশ্য তার আগেই আমরা মিডিয়াতে কিছু কানাঘুষা শুনতে পাচ্ছিলাম যে অধিনায়ক তামিম ইকবাল এবং কোচ আর বোর্ড প্রেসিডেন্টের সাথে কোন একটা ঝামেলা চলছে। কিন্তু তার পরিণতিতে যে তামিম ইকবাল হঠাৎ করে রিটায়ারমেন্ট ঘোষণা করবেন এটা কেউ ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করেনি। তামিম ইকবাল রিটায়ারমেন্ট ঘোষণা করার ফলে আমার মত তার যারা ভক্ত রয়েছেন তারা অনেকেই আশাহত হয়েছিলেন। কারণ এবার ইন্ডিয়ার মাঠে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের সমর্থকরা সবাই বেশ আশা করে বসে রয়েছে ভালো কিছুর জন্য।

এর ভেতরে হঠাৎ করে তামিম ইকবালের সিদ্ধান্তে আমরা সকলেই হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। যাইহোক শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপে তামিম ইকবাল তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। তার সিদ্ধান্তকে আমি সাধুবাদ জানাই। তবে তিনি যেভাবে রিটায়ারমেন্ট ঘোষণা করেছিলেন সেটা আমার কাছেও একেবারে ভালো লাগেনি। তার উচিত ছিল আরো পরিণত আচরণ করা। যাইহোক যেহেতু তিনি ফিরে এসেছেন তাই আশা করব তার এবারের অধ্যায়টা আগের মতই হবে। আবার আগের মতই তার ব্যাটে রানের ফোয়ারা ছুটবে। তাতে তার সমালোচকেরা এবং তাকে যারা টিম থেকে বাদ দিতে চেয়েছিল তারা সকলেই শায়েস্তা হবে। আর আমরা যারা বাংলাদেশ টিমের সাপোর্টার আছি তাদের মুখে আবার হাসি ফুটে উঠবে।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.17
JST 0.031
BTC 86273.50
ETH 3305.14
USDT 1.00
SBD 2.81