হঠাৎ দুঃসংবাদ পেয়ে নানি বাড়িতে যাওয়া।
আজকে সকালে হাঁটাহাঁটি শেষ করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট গুলো ঘাটাঘাটি করে একটা ছোটখাটো ঘুম দিয়েছিলাম। সকালে হাঁটাহাঁটি করলে আমার প্রচন্ড ক্লান্ত লাগে। তখন আর দুচোখের পাতা খুলে রাখতে পারি না। যার ফলে তখন বেশ ভালো একটা ঘুম হয়। প্রচন্ড ক্লান্তিতে কেবল চোখ বন্ধ করেছি। হঠাৎ এর ভেতর মামাতো ভাইয়ের ফোন পেলাম। এত সকালে মামাতো ভাইয়ের ফোন দেখেই বুঝতে পেরেছি হয়তো খারাপ কোন খবর আছে। সে ফোন দিয়ে জানালো আমাদের এক চাচাতো মামা মারা গিয়েছে। হঠাৎ করে সকালবেলায় উঠে এমন খবর শুনে মনটা একেবারেই খারাপ হয়ে গেলো। আমি তখন আমার মামাতো ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম তোরা কখন বাড়িতে যাবি? সে বলল একটু পরে তারা রওনা দিচ্ছে। তখন আমি তাকে জানালাম ঠিক আছে তোরা যা আমি কিছুক্ষণ পরে আসছি।
মামাতো ভাইয়ের সাথে কথা বলার কিছুক্ষণ পরে আমি আমার স্ত্রীকে খবরটা দিতে গেলাম। গিয়ে দেখি সে ইতিমধ্যে খবর পেয়েছে। তার সাথে কথাবার্তা বলে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। এই ঘুম ভাঙলো বেলা দশটার দিকে। ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করতে লাগলাম যে আমরা কখন রওনা দেবো। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম বেলা ১১টা থেকে ১২ টার ভেতরে আমরা নানি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেবো। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা সবকিছু গোছগাছ করতে লাগলাম। তবে আকাশের অবস্থা দেখে মনে মনে কিছুটা দুশ্চিন্তা হচ্ছিলো। কারণ আকাশ ক্ষণে ক্ষণে তার রং পাল্টাচ্ছিলো। কখনো মনে হচ্ছিল রোদ উঠেছে আবার কখনো ঘন কালো মেঘে আকাশ ঢেকে যাচ্ছিলো। যাই হোক আমি বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে গেলাম একটি অটো রিক্সা ভাড়া করতে।
অটো রিক্সা রিজার্ভ করে আমরা সকলে মিলে রওনা দেয়ার কিছুক্ষণ পরেই শুরু হলে তুমুল বৃষ্টি। বৃষ্টির তেজ এতটাই বেশি ছিল যে একসময় আমাদের অটোওয়ালা রাস্তার পাশে অটো থামাতে বাধ্য হলো। কারণ বৃষ্টির কারণে সামনের প্রায় কোন কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। এদিকে আমি অটো রিক্সার ভিতরে বসে হালকা ভিজে যাচ্ছিলাম। কারণ বৃষ্টির ছাট এসে গায়ে লাগছিলো। বেশ কিছুক্ষণ এমন মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার পর হঠাৎ করে বৃষ্টি থেমে গেলো। তখন আমরা আবার রওনা দিলাম নানিবাড়ির উদ্দেশ্যে। শহর থেকে আমার নানি বাড়ির দূরত্ব ১০ কিলোমিটার মতো। যার ফলে সেখানে পৌঁছতে আমাদের খুব বেশি সময় লাগেনি। সেখানে পৌঁছে সকলের চেহারায় শোকের ছায়া দেখতে পেলাম। নানি বাড়ি পৌঁছে নানীর সাথে দেখা করে আমরা গেলাম সেই মামার লাশ দেখতে। সেখানে আমরা যেতেই আমার খালারা কান্নাকাটি শুরু করলো।
এখন এই মামার সম্বন্ধে আপনাদেরকে কিছু জানিয়ে রাখি। আমাদের এই মামা দীর্ঘদিন থেকেই অসুস্থ ছিলো। বলতে গেলে ছোটবেলা থেকেই সে জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলো। সেই রোগটি হচ্ছে প্রাণঘাতী থ্যালাসেমিয়া। এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা সকলেই মারা যায়। তবে আমরা যখন ছোট তখন শুনতে পেতাম উনি বেশি দিন বাঁচবেন না। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে তারপরেও উনি দীর্ঘদিন বেঁচে রইলেন। আমরা হিসাব করে দেখলাম ওনার বয়স হয়েছিল প্রায় ৪৭ বছর। অথচ ডাক্তাররা অনেক আগেই বলেছিল উনি বেশি দিন বাঁচবেন না। যাইহোক উনার লাশ দেখে আমি এবং আমার মামাতো ভাইয়েরা চলে গেলাম মসজিদে নামাজ পড়তে। কারন ততক্ষণে প্রায় জুম্মার নামাজের সময় হয়ে গিয়েছে।
নামাজ শেষে সেই মামার জানাজার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। তবে বৃষ্টির কারণে আমাদের সকলের একটু সমস্যা হচ্ছিলো। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তার জানাজার সময় আর বৃষ্টি হয়নি। আমার নানি বাড়িতে প্রায় যাওয়াই হয় না। গত কয়েক মাসের ভেতরে যে কয়বার নানি বাড়ি গিয়েছি প্রতিবারই কোন না কোন খারাপ সংবাদ পেয়ে সেখানে গিয়েছি। জানিনা এরপরে আবার কোন সংবাদে সেখানে যাওয়া হবে। তবে অনেকদিন পরপর নানি বাড়ি যাওয়ার কারণে সেখানে গেলে সময়টা বেশ ভালই কাটে। তাছাড়া নানি বাড়িতে গেলে আমার মেয়ের সময়টাও ভালো কাটে। কারণ তার সমবয়সী বেশ কিছু বাচ্চাকাচ্চা নানি বাড়িতে রয়েছে। তাদের সাথে খেলাধুলা করে সময়টা তার দারুন কাটে। যদিও আজকে সকলেরই মন খারাপ ছিলো। তারপরেও সবার সাথে গল্প করে কথাবার্তা বলে সময়টা বেশ ভালোই কেটেছিলো। আর আজকে নানি বাড়ি গিয়ে আরও একটা জিনিস হয়েছে। সেটা হচ্ছে অনেক আত্মীয়-স্বজন যাদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে দেখা হয় না তাদের অনেক একসাথেই আজকে দেখা হয়েছে। জানাটা শেষ হওয়ার পরে নানী বাড়ি ফিরে খাওয়া দাওয়া করলাম। তারপর বেশ কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে বিকালের দিকে বাসায় ফিরে এসেছি।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | কোমরপুর |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
মধ্যরাতে কিংবা খুব ভোরে যদি ফোন কল আসে তখন সত্যিই আমরা চিন্তায় পড়ে যাই। আসলে সেই সময়গুলোতে খারাপ খবর বেশি আসে। থ্যালাসেমিয়া খুবই জটিল রোগ। তবুও তিনি অনেক দিন বেঁচে ছিলেন এটা সত্যিই সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত। কোন আত্মীয়-স্বজন মারা গেলে তখন সবাই একত্রিত হওয়া যায় এবং সবার সাথে দেখা হয়ে যায়। বৃষ্টির মধ্যেও অনেক কষ্ট করে আপনারা সেখানে গিয়েছেন বুঝাই যাচ্ছে। আসলে বিপদ যখন হয় তখন সবদিক থেকেই হয় ভাইয়া।
আর আমি তো প্রিয় মানুষগুলোর ফোন পেলেই বেশ ভয় পাই। আসলে সৃষ্টি কর্তা যাকে যতোদিন হায়াত দিয়ে রেখেছেন ততদিনই বাচঁবে। আর আপনার এই মামার ক্ষেত্রেই তাই হয়েছে। আপনার মামার জন্য দোয়া রইল তিনি যেন ওপারে ভালো থাকেন।
সকালে বিশুদ্ধ বাতাশ গায়ে লাগলেই ঘুম আসে ,তার উপরে হাঁটাহাঁটি করলে তো চোখকে আটকানোই যায় না।যাইহোক আপনার চাচাতো মামার আত্মার শান্তি কামনা করি।যদিও উনার বয়স বেশি না তবে নিয়তি মেনে নিতে হবে সকলকে।যখন তখন বৃষ্টি হলে খুবই বিরক্তিকর লাগে।সবার সাথে গল্প করে আপনার সময়টা ভালো কেটেছিলো জেনে ভালো লাগলো।ধন্যবাদ ভাইয়া।
কারো মৃত্যু সংবাদ শুনলে মনটা যেন কেমন করে উঠে। একদিন তো আমাদেরকেও পৃথিবী থেকে এভাবে বিদায় নিতে হবে। যাইহোক আপনার চাচাতো মামার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আসলে থ্যালাসেমিয়া রোগটি খুবই মারাত্মক। থ্যালাসেমিয়া রোগ হলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। যাইহোক পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে আপনার মামার মৃত্যুর খবর শুনে আমার মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল। আসলে মানুষ মরণশীল। প্রত্যেক মানুষই যেকোনো কারণেই মৃত্যুবরণ করবে এটাই স্বাভাবিক। আর এরকম বিপদের মুহূর্তে প্রাকৃতিকভাবে বৃষ্টি হলে পরিস্থিতিটা আরো বেশি খারাপ হয়ে যায়। যাহোক, মহান সৃষ্টিকর্তা যেন আপনার মামাকে জান্নাত দান করেন এমনটাই আমি প্রত্যাশা করি।
সকালে পরিশ্রম করলে একটু ঘুম আসে সবার। মামাতো ভাইয়ের ফোন কল পেয়ে আপনি খুব চিন্তিত ছিলেন বোঝাই যাচ্ছে। আর খুব কষ্ট করে বৃষ্টিতে ভিজে নানি বাড়ি গিয়েছেন। বৃষ্টির সময় সৎ কাজ করতে গেলে অনেক সমস্যার মধ্যেই পড়তে হয় কিন্তু সেই সময়টাতে যাক বৃষ্টি হয়নি সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপা। আর সমবয়সী কাউকে পেলে আসলে ছোট বাচ্চাদের সময়টা ভালই কাটে। ধন্যবাদ দাদা আপনার ঘটনাটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।