পাকিস্তান বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচে নিয়ে আমার মতামত।
তারা দু'জনে ১০২ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক ধাক্কাটা সামাল দেন। পরে পাথুমা নিসাঙ্কা ৫০ রান পার করে আউট হয়ে গেলে কুশলম্যান্ডিসের সঙ্গী হন সামারাবিক্রমা। এই দুজনের দারুন ব্যাটিংয়ে শ্রীলংকার শেষ পর্যন্ত ৩৪৪ রানের বড় স্কোর গড়তে সমর্থ হয়। যদিও শ্রীলংকার ইনিংস আরও বড় হওয়ার সুযোগ ছিলো। কিন্তু পাকিস্তানি বোলারদের দক্ষতায় তারা ৩৪৪ রানের ভেতরে আটকে যায়। এত বড় স্কোর হওয়ার পরে পাকিস্তানি সমর্থকেরা হতাশ হয়ে পড়েছিলো। কারণ এত বড় স্কোর তাড়া করে জয়ের কোন রেকর্ড বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ছিলো না। তারপর যখন ম্যাচ শুরু হলো তখন পাকিস্তান মাত্র ৩৭ রানের ভেতর দুটো উইকেট হারিয়ে বসে। সেই দুটো উইকেটের ভেতরে একটা ছিল পাকিস্তান ব্যাটিংয়ের মূল ভরসা বাবর আজমের উইকেট। বাবর আজম আউট হওয়ার পরে সকলে চিন্তা করেছিলো এই ম্যাচ জেতা পাকিস্তানের পক্ষে আর সম্ভব না।
কিন্তু তারপরেই শুরু হয় পাকিস্তানের ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। পাকিস্তান স্কোয়াডে নতুন অন্তর্ভুক্ত হওয়া আব্দুল্লাহ শফিক এবং পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের অন্যতম ভরসাস্থল মোহাম্মদ রিজওয়ান মিলে শুরু করেন প্রতিরোধ। প্রথমে তারা ধীরে ধীরে জুটি গড়ার দিকে মনোযোগ দেন। পরে তারা সেট হয়ে যাওয়ার পরে আস্তে আস্তে করে রান রেট বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেন। একটা জুটির এতো বড় স্কোর চেজ করতে হলে কিভাবে খেলা উচিত তারা যেন সেটারই একটা উদাহরণ তৈরি করছিলেন। আবদুল্লাহ শফিক প্রথমে কিছুটা ধীরগতিতে ব্যাটিং করলেও ধীরে ধীরে তার স্ট্রাইক রেট বাড়তে থাকে। একটা সময় গিয়ে তিনি তার শতরান পূরণ করেন। তিনি প্রথম পাকিস্তানি হিসেবে বিশ্বকাপ ডেবুতে সেঞ্চুরি করেন। তার পরপরই তিনি দারুন এক ক্যাচের শিকার হয়ে আউট হয়ে যান। আউট হওয়ার আগে আব্দুল্লাহ শফিক ১০৩ বলে ১১৩ রানের দারুণ একটি ইনিংস উপহার দেন।
ততক্ষণে পাকিস্তান জয়ের একটা ভিত তৈরি হয়ে গিয়েছে। তারপরের গল্পটা পুরোটাই মোহাম্মদ রেজওয়ানের। যদিও তার সাথে সৌদ শাকিল নামের আরেক তরুণ ব্যাটসম্যান বেশ ভালই একটা ইনিংস খেলেছিলো। কিন্তু রেজওয়ান এদিন দলের প্রতি তার ডেডিকেশন পুরো বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছেন। বারবার শারীরিকভাবে নানা সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার পরেও রেজোয়ান তার লড়াইটা চালিয়ে যান এবং শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানকে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। ১২১ বলে ১৩১ রানের রেজওয়ানের ইনিংসটা হয়তো এই বিশ্বকাপেরই অন্যতম একটা সেরা ইনিংস হয়ে থাকবে। যে ম্যাচে এক সময় মনে হচ্ছিল পাকিস্তান নিশ্চিত হেরে যাবে সেই ম্যাচ পাকিস্তান প্রায় দু ওভার বাকি থাকতে জিতে নেয়।
আমি মাত্র দুদিন আগেই ইন্ডিয়ান এক ক্রিকেট বিশ্লেষকের বিশ্লেষণ শুনছিলাম। তিনি বলেছিলেন আপনি যখন পাকিস্তান টিমের কাছ থেকে কিছু আশা করবেন তখন তারা আপনাকে হতাশ করবে। যখন আপনি পাকিস্তান টিম নিয়ে আশা করা ছেড়ে দেবেন তখনই তারা তাদের সেরা পারফরম্যান্সটা দেবে। শ্রীলংকার সাথে এই ম্যাচটা দেখে আমার সেই কথাটাই বারবার মনে পড়ছিলো। যখন খোদ পাকিস্তানি সমর্থকেরা ম্যাচ জেতার আশা পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছিলো। ঠিক সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তারা দুর্দান্ত একটি জয় তুলে নেয়।
অবশ্য এদিন পাকিস্তান জিতলেও তাদের বেশ কিছু জায়গা নিয়ে কাজ করতে হবে। তার ভিতরে অন্যতম হচ্ছে ইমামুল হকের অফ ফর্ম। সেই সাথে বাবর আজমের পরপর দুটো ম্যাচে ব্যর্থ হওয়া। এ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ভালো করতে হলে বাবর আজমের রানে ফেরা খুবই জরুরী। তাছাড়া পাকিস্তানের বোলিংটাও খুব দুর্বল দেখাচ্ছে। পাকিস্তান সাধারণত বোলিং এর উপর নির্ভর করে। কিন্তু এই বিশ্বকাপে দেখা যাচ্ছে তাদের বোলিংয়ের অবস্থা খুবই খারাপ। তাদের পেস বোলাররা এটা নতুন বলে উইকেট নিতে পারছে না। আবার তাদের স্পিনাররা মাঝের ওভার গুলিতে উইকেট নিতে এবং রান আটকাতে ব্যর্থ হচ্ছে। ইন্ডিয়ায় এই বিশ্বকাপে ভালো করতে হলে যে কোন দলের স্পিন ডিপার্টমেন্টটা ভালো হওয়া জরুরি। এদিক থেকে পাকিস্তানের অবস্থা খুবই খারাপ। পাকিস্তানের এখন ভালো মানের কোন স্পিনার দেখা যাচ্ছে না। যদিও আমার মতে ওসামা মীরকে দুটো ম্যাচে খেলানো উচিত। কারন শাদাব খান মাঝের ওভার গুলিতে একেবারেই উইকেট নিতে পারছে না।
আবার শ্রীলংকারও বেশ কিছু জায়গায় উন্নতি দরকার। শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানরা গত দুটো ম্যাচেই ভালো ব্যাটিং করেছেন। বিশেষ করে কুশল মেন্ডিস দারুন ব্যাট করছেন। তবে তাদেরও বোলিংয়ের অবস্থা খুবই খারাপ। যদিও শ্রীলংকার ভালো মানের কয়েকজন স্পিনার রয়েছেন। কিন্তু তাদেরকে বোলিংয়ের ব্যাপারে আরও ডিসিপ্লিন হতে হবে। ভালো লাইন লেনথে বল করতে হবে। তাছাড়া এই বিশ্বকাপে তাদের জন্য ভালো কিছু করা খুবই মুশকিল হয়ে যাবে। যাইহোক এই ম্যাচটি দেখে দারুন মজা পেয়েছি। দীর্ঘদিন পর পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে এরকম ব্যাটিং দেখতে পেলাম। রিজওয়ান ধীরেধীরে তার জাত চেনাচ্ছেন। তিনি আস্তে আস্তে নিজেকে পাকিস্তানি ব্যাটিং লাইন আপের মেরুদন্ডে পরিণত করছেন। যাই হোক আশা করি বিশ্বকাপে আরো দারুন কিছু ম্যাচ দেখতে পাবো। আশা করব আপনারাও বিশ্বকাপটা দারুন ভাবে উপভোগ করবেন।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
এই ম্যাচে প্রথমেই কুশাল মেন্ডিসের ঝড়োয়া ব্যাটিং সবাইকে আকৃষ্ট করেছিল তবে পরবর্তীতে রিজুয়ানের হারনামারা ইনিংসটা পাকিস্তানকে জয়ের দিকে নিয়ে যায়। হ্যাঁ এটা বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার রেকর্ড হয়েছে। তবে ম্যাচটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে বেশ জমে ছিল।
আজকে আমার বন্ধুদের সাথে আলোচনা করছিলাম চলমান ওয়ার্ল্ড কাপের দলগুলো নিয়ে। পাকিস্তানের বোলিং দেখে আমিও অবাক। কারণ অনেক দুর্বল হয়ে গিয়েছে পাকিস্তানের বোলিং লাইনআপ। এদিকে শ্রীলংকার ব্যাটিং লাইনআপ বেশ ভালো, তবে বোলিং লাইনআপ আরও উন্নত করতে হবে, যদি চলমান বিশ্বকাপে ভালো কিছু করতে চায়। যাইহোক শফিক এবং রিজওয়ান এর ব্যাটিং বেশ উপভোগ করেছি। পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাই। শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
শ্রীলংকা এবং পাকিস্তানের এই ম্যাচটি আমি দেখেছিলাম। খেলাটি খুবই জমজমাট একটি খেলা হয়েছে। এ ধরনের খেলা দেখতে আমার কাছে ভীষণ ভালো লাগে। আপনি খুবই চমৎকার ভাবে এই খেলার মতামত প্রকাশ করেছেন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই।