পরিবার নিয়ে রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়ার অভিজ্ঞতা।

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


আজ মাসের তিন তারিখ। দুদিন আগে থেকেই আমার মেয়ে আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করছিলো বাবা আমরা রেস্টুরেন্টে কবে খেতে যাবো। গতকাল একবার খাওয়া বাইরে যাওয়ার জন্য সে জিদ ধরেছিলো। কিন্তু নানা রকম সমস্যার কারণে আর গতকালকে যেতে পারিনি। আমি প্রতি মাসেই পরিবার নিয়ে দুই একবার বাইরে খাওয়া দাওয়া করি। কারন আমার পরিবারের আমরা সবাই বাইরে খাওয়া দাওয়া করতে খুবই পছন্দ করি। বিশেষ করে আমার মেয়ে তো বাইরের খাবার পেলে তার আর কিছুই লাগে না। যাইহোক মাস শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আমার মেয়ে বারবার আমাকে বলছিল বাইরে খেতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। শেষ পর্যন্ত আমার স্ত্রীর সাথে কথাবার্তা বলে ঠিক করলাম আজ দুপুরে বাইরে খাওয়া-দাওয়া করবো। যদিও শুক্রবার দিনটা আমার বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করতেই ভালো লাগে। তবে আমার স্ত্রী কিছুটা অসুস্থ থাকায় ঠিক করলাম আজকে দুপুরে বাইরে খাওয়া দাওয়া করি। তাহলে তার কিছুটা বিশ্রাম হবে। সেই পরিকল্পনা মতোই আমরা যাওয়ার আগেই ঠিক করেছিলাম কোন রেস্টুরেন্টে খেতে যাবো। কি ধরনের খাবার খাবো সেটারও একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে গিয়েছিলাম।

IMG_20231103_150335.jpg

ফরিদপুরের কোন রেস্টুরেন্টে কেমন খাবার পাওয়া যায় এটা সম্বন্ধে মোটামুটি আমার বেশ ভালো ধারণা রয়েছে। যাই হোক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম জুম্মার নামাজ পড়ে তারপর আমরা রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেবো। আমি নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে আমার স্ত্রী এবং মেয়েকে বলে গিয়েছিলাম আমি আসার আগেই তোমরা রেডি হয়ে থাকবে। কারণ শুক্রবারে জুমার নামাজ পড়ে এসে আমার অনেক ক্ষুধা লাগে। আর এই সমস্ত রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে তারা খাবার পরিবেশন করতে বেশ কিছুটা সময় লাগায়। অতক্ষণ আমার জন্য ক্ষুধা পেটে থাকা মুশকিল। এজন্য তাদেরকে আমি মসজিদে যাওয়ার আগেই বলে গিয়েছিলাম। কিন্তু এদিন মসজিদ থেকে ফিরতে আমারই কিছুটা দেরি হয়েছিলো। কারণ নামাজ পড়ে বের হয়ে দেখি আমার কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে। ওদের সাথে দুই মিনিট কথা বলতে গিয়ে রীতিমতো আটকে গেলাম। ওরা আমাকে পেয়ে বলছিল কোথাও ঘুরতে যাওয়া দরকার। পরে ওদের সাথে কথাবার্তা বলে সুন্দরবনে ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যদিও সিদ্ধান্ত পুরোপুরি ফাইনাল করা হয়নি। যাইহোক ওদের সাথে কথাবার্তা সংক্ষিপ্ত করে আমি দ্রুত বাসায় চলে এলাম।


IMG_20231103_150255.jpg

বাসায় এসে দেখি আমার স্ত্রী আর কন্যা দুজনেই তৈরি হয়ে বসে আছে। দুজনেই দেখলাম আমার উপর কিছুটা রাগ। কারণ আমি তাদেরকে আগে থেকেই তৈরি হয়ে থাকতে বলেছিলাম। তখন আমি আমার স্ত্রীকে ঘটনাটা খুলে বলার পরে সে আমাকে বলল তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিতে। আমি দুই-তিন মিনিটের ভিতরে তৈরি হয়ে তাদেরকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আমাদের বাসা শহরের প্রায় মাঝামাঝি জায়গা হওয়ার কারণে আমার বাসা থেকে ফরিদপুর শহরের কোন জায়গার দুরত্ব খুব একটা বেশি নয়। যে রেস্টুরেন্টটিতে গিয়েছিলাম সেখানে যেতে রিক্সায় মাত্র ৬-৭ মিনিট সময় লেগেছিলো। যেহেতু পেটে ক্ষুধা তাই বেশি সময় না নিয়ে মেনু কার্ড দেখতে লাগলাম কি অর্ডার করা যায়। যদিও আগে থেকেই মোটামুটি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছিলাম তারপরেও এখানকার মেনু কার্ড দেখে কিছুটা কনফিউজড হয়ে গেলাম। প্রথমে মনে করেছিলাম চাইনিজ সেট মেনু অর্ডার করবো। কিন্তু সেট মেনু গুলো তেমন পছন্দ না হওয়ার কারণে আমরা শেষ পর্যন্ত অর্ডার করলাম চিকেন ফ্রাইড রাইস, থাই ফ্রাইড চিকেন আর চিকেন সিজলিং। অর্ডার করে আমরা খাবারের জন্য বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম।


IMG_20231103_150242.jpg

খেয়াল করে দেখলাম রেস্টুরেন্টে আমরা ছাড়া আর মাত্র দুজন কাস্টমার রয়েছে। শুক্রবার দিন দুপুরে রেস্টুরেন্টে এত কম লোক দেখে আমরা অবাক হয়ে গেলাম। পরবর্তীতে অবশ্য এদের মেনু কার্ডে খাবারের দাম দেখে লোক কম হওয়ার কারণ কিছুটা ধারণা করতে পারলাম। এই রেস্টুরেন্টটি ফরিদপুরের যে কয়েকটি একটু উঁচু মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে তাদের ভিতর একটি। যার ফলে এখানে খাবারের দাম তুলনামূলক বাইরে থেকে বেশ কিছুটা বেশি। সেজন্যই মনে হয় এখানে লোকজন কম আসে। যাই হোক অর্ডার দেয়ার মিনিট ১৫ এর ভেতরে আমাদের সামনে খাবার চলে এলো। আমরা প্রত্যেকটা খাবার ৩:১ অর্ডার করেছিলাম। খাবারের পরিমাণ দেখে এবার বুঝতে পারলাম হয়তো পুরোটা আমরা শেষ করতে পারবো না। তবে খাবারটা দেখে বেশ ভালই মনে হচ্ছিলো। খাবার যখন মুখে দিলাম তখন খেতে খারাপ লাগেনি খাবারটা। মোটামুটি ভালোই ছিলো।


IMG_20231103_144407.jpg

তবে একটু খেয়াল করে দেখতে পারলাম এদের খাবারের ভেতর কিছুটা ফাঁকিবাজি রয়েছে। কারণ আমরা যে চিকেন ফ্রাইড রাইস অর্ডার করেছি তার ভেতরে চিকেনের পরিমাণ ছিল খুবই কম। প্রায় না থাকার মতোই। এর আগে স্টার কাবাব নামের একটি রেস্টুরেন্টে খেয়েছিলাম সেখানে ফ্রাইড রাইসের ভেতর প্রচুর পরিমাণে চিকেন দেয়া ছিলো। এদের সিজলিংয়ের দেখলাম একই রকম অবস্থা। সেটার ভিতরেও চিকেনের পরিমাণ কম। আমি আর আমার স্ত্রী গল্প করতে লাগলাম যে আগের রেস্টুরেন্টের খাবারই বেশি ভালো ছিলো। যাই হোক এখানকার খাবার অবশ্য খেতে যে খুব খারাপ লেগেছে তা নয়। তবে চিকেনের পরিমাণ কম থাকায় কিছুটা বিরক্ত হয়েছিলাম। আগেই বলেছিলাম খাবার দেখে মনে হচ্ছিল এবারও আমরা শেষ করতে পারবো না। হয়েছিলোও তাই আমরা খাওয়ার পরেও প্রায় অনেকটা খাবার বেঁচে গিয়েছিলো। সেগুলো আমরা ওয়েটারকে বললাম পার্সেল করে দিতে। তারপর খাওয়া-দাওয়া শেষ হতেই আমরা বিল মিটিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। কারণ ভরপেট খাওয়ার পরে রীতিমতো ঘুম আসছিলো। চিন্তা করলাম বাড়িতে গিয়ে অন্তত আধা ঘন্টা হলেও ঘুমাতে হবে। রেস্টুরেন্ট থেকে আমাদের বাড়িতে ফিরতে বেশি সময় লাগেনি। বাড়িতে ফেরার কিছুক্ষণ পরই এই পোস্টটি লিখছি।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানফরিদপুর


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 11 months ago 

মাঝেমধ্যে বাহিরে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করতে আসলেই খুব ভালো লাগে। আর বাচ্চারা তো বাহিরে যেতে আরও বেশি পছন্দ করে। ভাই আপনার মতো আমারও জুম্মার নামাজের পরপরই ক্ষুধা লেগে যায়। যাইহোক অনেক রেস্টুরেন্ট আছে বাড়তি লাভের আশায়, বিভিন্ন রেসিপির মধ্যে প্রধান উপকরণ কিছুটা কম দেয়। চিকেনের পরিমাণ কম হলেও খাবার খেতে ভালো লেগেছিল, এটা জেনে খুব ভালো লাগলো ভাই। এতো সুন্দর মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

আপনি আপনার পরিবার বাইরে খেতে পছন্দ করেন সেটা প্রতিনিয়ত পোস্ট পড়েই বুঝতে পেরেছি।তাইতো মাস শুরু না হতেই মেয়ে বাইরে খাওয়ার বায়না করলো।খাবার বেশ ভালোই বললেন।কিন্তু ফ্রাইড রাইসে চিকেন কম দিয়েছে।এটা আসলে ঠিক নয়।লোক ঠকিয়ে বিজনেস ভালো হয় না।এতে কাস্টমার ও কমে যায়। খাওয়া-দাওয়ার পর দ্রুত বাসায় এসে ঘুমাবেন ঠিক করলেন।সুন্দর অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 60968.19
ETH 2367.91
USDT 1.00
SBD 2.56