দরিদ্র বাবার ছোট্ট আশা পূরণ (প্রথম পর্ব)।
গফুর মিয়া প্রতিদিনকার মত সকাল সকাল বাড়ি থেকে বের হয় কাজের জন্য। দৈনিক মজুরির বিনিময়ে সে একটি কারখানায় কাজ করে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাকে সেখানে কাজ করতে হয়। কিন্তু যে টাকা সে বেতন পায় সে টাকা দিয়ে সংসার চালানো দায়। স্বামী স্ত্রী আর চার সন্তান মিলে তাদের ৬ জনের সংসার। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে তিন বেলা খেয়ে পড়ে থাকা তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে গিয়েছে। মাঝে মাঝেই তার ঘরে দুবেলার বেশি রান্না হয় না। ঘর ভাড়া বিদ্যুৎ বিল এই সমস্ত টাকা পরিশোধ করার পরে যে সামান্য টাকা অবশিষ্ট থাকে। সেটা দিয়ে তার পরিবারের সমস্ত চাহিদা মেটাতে হয়।
যাইহোক কষ্টে সৃষ্টে তাদের দিন চলে যাচ্ছিল। গত তিন-চারদিন থেকে তার ছেলেমেয়েরা বায়না ধরেছে তারা পোলাও রোস্ট খাবে। বস্তিতে তাদের পাশের ঘরের সবুর মিয়ার ছেলে মেয়েদের কে তারা পোলাও রোস্ট খেতে দেখেছে। তারপর থেকেই তাদের বাবার কাছে বায়না পোলাও রোস্ট খাওয়ার। কিন্তু এই দুর্মূল্যের বাজারে ৬ জন মানুষের জন্য পোলাও রোস্ট রান্না করতে গেলে অনেকগুলো টাকা বেরিয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে মাসের শেষের দিকে তাদেরকে না খেয়ে থাকতে হবে। অর্থনৈতিক সমস্যার ব্যাপারটা সে বুঝতে পারলেও ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলোর তো বোঝার কথা না। যার ফলে তারা প্রতিদিনই তারা বাবাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে পোলাও রোস্ট খাওয়ার কথা।
গোফুর মিয়া চিন্তা করে বের করতে পারছে না কোথা থেকে সে এই পোলাও রোস্ট খাওয়ার জন্য বাড়তি টাকা জোগাড় করবে। কয়েকদিন ধরেই তার মাথায় এই একই চিন্তা কাজ করছে। ছেলেমেয়েগুলো কখনো তেমন কিছু চায় না। বাবা হয়ে যদি তাদের এই ছোট্ট আবদারটাও সে রক্ষা করতে না পারে। তাহলে তার নিজের কাছেই অনেক খারাপ লাগবে। গফুর মিয়া প্রতিদিন দুপুরে খাওয়ার জন্য ৩০-৪০ টাকা খরচ করে। কারণ এত সকালে সে বাড়ি থেকে বের হয় যে তখনও তার বাড়িতে রান্নাবান্না হয় না। যাই হোক সেদিন কাজ শেষ করে গফুর মিয়া তার এক বন্ধুর সাথে হেঁটে হেঁটে বাড়ির দিকে আসছিল। পরে তার বন্ধুকে বাড়ির দিকে কিছুটা এগিয়ে দিতে গিয়েছিলো।
যখন সে নিজের বাড়ির দিকে ফিরছিলো। তখন হঠাৎ করে খেয়াল করে দেখল রাস্তার অপর পাশে কিছুটা দূরে দুটি ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে। সেই ভ্যান ঘিরে বেশ কিছু মানুষের জটলা। বিষয়টা কি দেখার জন্য গোফুর মিয়া ধীরে ধীরে সেদিকে এগিয়ে গেলো। ভ্যানের কাছাকাছি যেতেই তার নাকে সুস্বাদু খাবারের ঘ্রাণ এলো। ভ্যানের কাছে গিয়ে সে দেখতে পেল সেখানে তার মত অনেক মানুষজন ভ্যান থেকে পোলাও রোস্ট রেজালা কিনছে। এই ধরনের খাবার সাধারণত বিয়েবাড়িতে খাওয়ানো হয়। লোকজন সেগুলো কিনছে এবং খাবারগুলি তুলনামূলক বেশ কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এই বিষয়টা দেখেই গফুর মিয়ার আগ্রহ কিছুটা বেড়ে গেল।
সেখানে গিয়ে গফুর মিয়া কিছু লোককে দেখতে পেল যারা একেবারেই হতদরিদ্র। তার থেকেও অবস্থা যাদের খারাপ। তারা মানুষের এঁটো খাবার কিনে খাচ্ছে। এই খাবারগুলো বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার থেকে আসে সেখানে। সেখানে গফুর মিয়া মূলত দুই ধরনের খাবার দেখতে পেলো। এক ধরনের খাবার ছিল যেগুলো মানুষ তাদের প্লেটে উচ্ছিষ্ট হিসেবে রেখে দিয়েছিল। আর এক ধরনের খাবার ছিল যেগুলো রান্নার পর বেঁচে গিয়েছিল। অনুষ্ঠানের পর বেঁচে যাওয়া খাবারগুলো কমিউনিটি সেন্টারের কর্মচারীরা তাদের কাছে এনে বিক্রি করে। সেই খাবার গুলোই তারা দরিদ্র মানুষের মাঝে কম দামে বিক্রি করে। গফুর মিয়া খাবারের দাম জিজ্ঞেস করে হিসাব করে দেখল আড়াইশো টাকা হলে সে তার পরিবার নিয়ে পোলাও রোস্ট খেতে পারবে।
ভ্যানওয়ালার সাথে কথা বলে গফুর মিয়ার মনে আশার সঞ্চার হলো। কিন্তু পরক্ষণে তার মনে হল এই বাড়তি আড়াইশো টাকা যোগাড় করাও তো তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব। যাইহোক তারপরেও সে মনে মনে চিন্তা করতে লাগল যেভাবেই হোক এই টাকাটা তাকে জোগাড় করতে হবে। সন্তানদের মুখে ভালো-মন্দ খাবার তুলে দিতে পারলে যে কোন পিতার মনে শান্তি লাগে। তিনিও তার ব্যতিক্রম নন। কিন্তু কিভাবে সে টাকাটা জোগাড় করবে সে কথা চিন্তা করতে করতে সে বাড়িতে পৌঁছালো। যখন বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছেছে তখন তার হঠাৎ করে মনে হল। প্রতিদিন সে ৩০/৪০ টাকা রাখে দুপুরে খাওয়ার জন্য। সেই টাকাটা থেকেই তাকে বাঁচাতে হবে। কয়েকদিন দুপুরের খাওয়াটা বন্ধ রাখলেই সে তার ছেলে মেয়ের মুখে একটু ভালো-মন্দ খাবার তুলে দিতে পারবে।
| ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
|---|---|
| ফটোগ্রাফার | @rupok |

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
| 250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness

OR



Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
একজন বাবা তার সন্তানদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য নিরলস ভাবে পরিশ্রম করে যায়। সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে প্রতিটা বাবার কলিজা শান্তি হয়ে যায়। যাইহোক আপনার গল্পের গফুর মিয়া তার সন্তানদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আড়াইশো টাকা জমানোর চিন্তা করেছে নিজে দুপুরে না খেয়ে। এর চেয়ে বড় ত্যাগ আর কি বা হতে পারে। পৃথিবীর বুকে প্রতিটি পিতা ভালো থাকুক, সেই কামনা করছি। গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাইয়া। শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন সবসময়।
এরই নাম হচ্ছে বাবা, যে সংসারের বোঝা মাথায় নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে, পরিবারের সুখ শান্তি বজায় রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। আর তাইতো গফুর মিয়া নিজের খাবারের টাকা থেকে সন্তানদের পোলাও রোস্ট খাওয়ার চিন্তাভাবনা করেছে। এমন কি ছেলেমেয়েদের মুখে হাসির ফিরিয়ে আনতে গফুর মিয়াকে কয়েকদিন দুপুরে না খেয়ে থাকতে হবে। কিন্তু কি আর করার, তবুও তো সে বাবা। আর এমন বাবাদের জন্য মন থেকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। দরিদ্র বাবার ছোট্ট আশা পূরণ নিয়ে সুন্দর একটি পোস্ট উপস্থাপন করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।