অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের কবলে পদ্মা নদী।
কয়েকদিন আগে অনলাইনে খবর করতে করতে হঠাৎ করে একটি খবরের দিকে চোখ আটকে গেলো। খবরটি ছিল ফরিদপুরে পদ্মার পাড় থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে সরকারি নির্দেশনা ছাড়াই। যার ফলে পদ্মা পাড় সংলগ্ন মানুষ নদী ভাঙ্গনের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। আপনারা জানেন পদ্মা নদী একটি অত্যন্ত খরস্রোতা নদী। আমি পদ্মা পাড়ের যেখানে ঘুরতে যাই সেখানটাতে এক সময় অনেক বড় বসতি ছিল। কিন্তু নদী ভাঙনের কারণে বিশাল এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছিল। তারপর সরকার নদীর পাড়ে বাধ দিয়ে দেয়। যার ফলে নদী ভাঙ্গন বন্ধ হয়ে যায়।
প্রতিবছর এই সময়টাতে পদ্মার পানি কমে গিয়ে পদ্মা নদীর বুকে বিরাট আকারের চর জেগে ওঠে। বেশ কয়েক বছর যাবত এমন দেখে আসছি। কিন্তু হঠাৎ করে গত বছর থেকে খেয়াল করছি। কিছু লোকজন এই চর থেকে অপরিকল্পিত ভাবে বালি উত্তোলন করছে। প্রথমে মনে করেছিলাম তারা হয়তো সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে কাজটা করে। কিন্তু পরবর্তীতে বুঝতে পারলাম তারা স্থানীয় দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতাদের সাথে মিলে এই কুকর্ম করছে। এই লোকগুলো চর থেকে এমন ভাবে বালু উত্তোলন করে যে তার পরিণতিতে অনেক জায়গায় নতুন করে নদীতে ভাঙ্গন দেখা দেয়।
আমরা আগে এমনটা খুব একটা দেখিনি। তবে বিগত কয়েক বছর যাবত দেখতে পাচ্ছি নদীর ভিতরে যত্রতত্র ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এবং যার বেশিরভাগই অবৈধভাবে করা হয়। এ ধরনের কাজ যে শুধু আমাদের এখানে হচ্ছে তা নয় আরো। কিছুদিন আগে একটি খবর দেখেছিলাম যে পদ্মা সেতুর আশেপাশের কোন এলাকা থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছিল। এই বালু উত্তোলন করার ফলে পদ্মা সেতু হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। খবরটা কতটা ভয়াবহ সেটা চিন্তা করতে পারেন?
বাংলাদেশের অন্যতম ব্যয়বহুল এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা হচ্ছে এই পদ্মা সেতু। যেটা ঢাকার সাথে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের সরাসরি যোগাযোগ তৈরি করেছে। যে সেতুর কারণে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা সেই সেতুর কাছ থেকে ইচ্ছামতো বালু উত্তোলন করেছে। পরে অবশ্য পত্রিকায় নিউজ হওয়ার পরে সেটা বন্ধ হয়েছিল। তো যাই হোক কয়েকদিন আগে খবর পড়ার পরে আমার কাছেও ব্যাপারটা খারাপ লেগেছিল। কিন্তু ব্যাপারটা কতটা খারাপ সেটা বুঝেছি গতকালকে পদ্মার পাড়ে যাওয়ার পরে।
পদ্মার পাড়ে গিয়ে দেখতে পেলাম একটি জায়গায় কিছু সরঞ্জাম যেগুলো বালুর ব্যবসায় ব্যবহার করা হয়। পদ্মার একেবারে পাড়েই দেখলাম দাঁড়িয়ে আছে একটি এক্সকাভেটর। তার একটু সামনেই পদ্মার চড় থেকে তোলা বালু উচুঁ ঢিবি করে রাখা হয়েছে। আরেকটু সামনে তাকিয়ে দেখতে পেলাম ঠিক পাড়ের সাথেই লাগলো যে চর সেখান থেকে খেয়াল খুশিমতো বালু উঠানো হয়েছে। পুরো চরের উত্তর দিকের বিভিন্ন জায়গা থেকে এইভাবে বালু উত্তোলন করা হয়েছে। এবং সেটাও করা হয়েছে পাড়ের একেবারে কাছ থেকে। আমার মত একজন সাধারন মানুষও দেখে বুঝতে পারছিল যে বালু ব্যবসায়ীরা কাজটা মোটেই ঠিক করেনি।
তাদের এই কাজের ফলে শত শত কোটি টাকা খরচ করে নদীর পাড়ে যে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে সেটায় নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে। আর একবার এদিকে নদী ভাঙ্গন শুরু হলে খুব অল্প সময়ে অসংখ্য বসত বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তাছাড়া পদ্মা নদী মূল শহরের আরো কাছাকাছি চলে আসবে। পদ্মা নদীর যেখান থেকে বালু উত্তোলন করা হয়েছে। সেখান থেকে জেলা প্রশাসকের অফিস আর এসপি অফিস খুব একটা দূরে নয়। আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন একটা অন্যায় কাজ তারা কিভাবে করতে পারে?
অবশ্য এটাও বুঝতে পারছিলাম এই কাজের সাথে অবশ্যই স্থানীয় কোন রাজনৈতিক নেতা জড়িত আছে। না হলে এটা কিছুতেই সম্ভব হতো না। যাই হোক পদ্মা পাড়ের অবস্থা দেখে মনে হল খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে। মনে হয় বালু উত্তোলনের কাজ বন্ধ রয়েছে। এটা শুধু আমাদের এখানকার সমস্যা না। সমগ্র দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখন এই ধরনের খবর পাওয়া যায়। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের জন্য বিভিন্ন রকম ব্রিজ বাধ এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু এই অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের কিছুতেই দমন করা যাচ্ছে না। তাদের রাজনীতি সংশ্লিষ্টতার কারণে। তবে তাদের কাজে কিছুটা বাধা সৃষ্টি হচ্ছে পত্রিকার খবর আর সোশ্যাল নেটওয়ার্কে মানুষের সচেতনতার কারণে। তাই যখনই আপনার আশেপাশে এই ধরনের কোন অন্যায় হতে দেখবেন। তখনই যে কোনোভাবে হোক মানুষের ভেতর সচেতনতা তৈরি করার চেষ্টা করবেন।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
| ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
|---|---|
| ফটোগ্রাফার | @rupok |
| স্থান | পদ্মা নদী, ফরিদপুর |

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
| 250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness

OR





Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ঠিক বলেছেন ভাইয়া,বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে ব্যবসা করছে অনেকে। তারা নিজেদের লাভের জন্য কি পরিমাণে দেশের ক্ষতি করছে সেটা একবারও ভাবে না। তবে সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা পত্রিকার নিউজের জন্য অনেক সময় বাধা সৃষ্টি হয়। তাই আমাদের সকলের উচিত সচেতনতা বৃদ্ধি করা। যাইহোক এমন সচেতনতা মূলক একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
ভাই এই সমস্যা সারা বাংলাদেশ চলছে ৷ যত নদী আছে অবৈধ আর অপরিকল্পিত হবে বালি উত্তোলন করছে ৷ যা নদী এলাকার মানুষের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাড়িছে ৷ যার প্রতি বছর হাজার হাজার জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ৷ তাই এর জন্য সরকারের একটা পদক্ষেপ দরকাপদরকার ৷
আপনার পোস্টি পড়ে বেশ মনটা খারাপ হয়ে গেল। এত এত টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করা হয়েছে যে পদ্মা সেতু দূনীর্তিবাজ মানুষরা সেখানেও ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা ছাড়েনি। আসলে দেশটা যে এখন কে চালাচ্ছে সেটাই তো বুঝা যাচ্ছে না। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জায়গাতেই দেখা যাচ্ছে দূর্নীতিবাজ কিছু মানুষ রাজনৈতিক নেতাদের ছত্র ছায়ায় এ ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। আশা করি দেশের সাথে আর দেশের প্রকৃতি রক্ষায় সরকার এই বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রাখবেন।
ভাইয়া আপনি আজ সচেতনমূলক একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন খুব ভাল লাগলো। আপনি ঠিক বলেছেন, মানুষ অবৈধ ভাবে ড্রেজার বসিয়ে নদী থেকে বালি উত্তোলন করছে।এতে যে এক সময় আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবো।এটা কেউ ভাবছি না।তাই সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর একটি টপিক নিয়ে পোস্ট শেয়ার করার জন্য।