ক্রিয়েটিভ রাইটিং || শিমুর বিয়ে (পর্ব -০২) শেষ পর্ব

in আমার বাংলা ব্লগ8 days ago

নমস্কার,

তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই অনেক অনেক ভালো আছো। আমি যদিও ভালো নেই, মনটা আজ দুপুর থেকে অনেক খারাপ।

আজকের এই ব্লগে তোমাদের সাথে একটি গল্প শেয়ার করবো । গল্পটির নাম "শিমুর বিয়ে"। গল্পটির দ্বিতীয় বা শেষ পর্ব নিচে দেখে নেওয়া যাক।

wedding-rings-3611277_1280 (1).jpg

ইমেজ সোর্স

প্রথম পর্বের লিংক

দীপার কাছে পরামর্শ নিতে গিয়ে শিমু কান্না করে ফেলে। তবে এই সময় দিপা শিমুকে সেরকম কোন পরামর্শ দিতে পারেনা। কারণ পরিস্থিতি এরকম দাঁড়িয়েছিল যে কারো কোন পরামর্শ কাজে লাগার মত ছিল না। পরামর্শ না পেলেও দীপার কাছে কান্না করে শিমুর মন কিছুটা হালকা হয়। সেদিন দুপুরবেলায় দীপা দের বাড়ি থেকে শিমু ভাত ও খেয়ে এসেছিল। বাড়ি এসে তাই শিমু আর কোন খাবার খায় না। বিগত কিছুদিন ধরে শিমুর সাথে এরকমটাই চলতে থাকে। কোনদিন অল্প খায় আবার খায় না। শিমুর বাবা এবং শিমুর সৎ মা এই ব্যাপারটা বুঝতে পারছিল। কিন্তু তারা এ নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করছিল না। অর্থাৎ জোর করে মেয়েকে যে খাওয়াতে হবে সেরকম কোন কিছুই করছিল না।

কিছুদিন পরেই বিয়ের পাকা কথা ফাইনাল হয়ে যায়। এমনকি বিয়ের তারিখ ও ঠিক হয়ে যায়। এই গ্রামের সেই বৃত্তশালী সাগরের সাথে শিমুর বিয়ে পুরোপুরি ঠিক হয়ে যায়। বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পর সাগর বিয়ের বাজার করতে শহরে যায়। অনেক কিছু বাজার করে নিয়ে আসে সেই সময় সাগরের সাথে শিমুর বাবাও শহরে এসেছিল বাজারে। সাগরের কাছ থেকে শিমুর বাবা সম্পত্তি এবং টাকা পয়সা বুঝে নিতে চায় আর সাগরও সেগুলো বুঝিয়ে দেয়। শহরে যখন সাগর বিয়ের বাজার করতে গেছিল শিমুর বাবাকে নিয়ে শিমুর বাবা জমিতে রোপন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের বীজ কীটনাশক ইত্যাদি শহর থেকে কিনে নিয়ে আসে ওই বিয়ের বাজারে সঙ্গে সঙ্গে।

বিয়ের আগে আগে দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে থাকতে শিমুর শরীর তো অনেকটা খারাপ করে। এই সময়টাতে মাঝে মাঝে শিমু তার প্রিয় মানুষ রাজের সাথে দেখা করতেও যেত। তবে রাজের বয়স খুব বেশি একটা না থাকায় রাজ এই বিষয়ে কি করবে কিছু কোন পরামর্শ দিতে পারত না দুজনে শুধু কান্না করত। অনেকবার শিমু ভেবেছে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবে। কিন্তু পালিয়ে কোথায় যাবে কার কাছে যাবে এরকম বারবার প্রশ্ন তার মনে আশায় সে আর পালিয়ে যেতে পারেনি। গ্রামের এক সহজ সরল মেয়ে বাইরে পালিয়ে টিকে থাকবে কি করে সেটাও বড় প্রশ্ন। অবশেষে বিয়ের দিন চলে আসে ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ের আয়োজন করা হয়। শিমুর বাবা গরীব হলেও এই আয়োজন ঠিক ঠাক করতে পেরেছিল সাগরের টাকায়।

এই বিয়েতে কেমন জানি সবাই খুশি ছিল শিমু বাদে। বিয়ের আগের দিন সারারাত ধরে শিমু কান্না করে। তার এই চোখের জল দেখার জন্য কেউই যেন নেই। এই সময় শিমু নিজের মাকে কল্পনা করে। ছোটবেলায় যখন মা মরে গেছে শিমু কোন কিছু বুঝতে পারত না। সে নিজের মতো করে মাকে কল্পনা করে নেয় এবং এটা ভাবে যে তার মা থাকলে হয়তো এরকম কোন কিছু তার জীবনে আসত না। এসব ভাবতে ভাবতে শিমুর তাদের বাড়িতে কিনে রাখা তার বাবার কীটনাশকের বোতল দেখতে পায় যেগুলোকে বিষ বলা হয়। শিমুর মাথায় কি এলো কে জানে সে সেই রাতেই বিষ খেয়ে নিল। সেই বিষটা তার কাছে সে রাতে এনে রাখল। সকালবেলা সব কিছুই নরমাল ভাবেই চলছিল। গ্রামে বিয়ের যেরকম আয়োজন হয় সবকিছুই ছিল। সকালবেলা শিমু রাতে যে বিষ এনে রেখেছিল তা খেয়ে নিল। তা খেয়ে বিষের যন্ত্রণায় ছটফট শুরু করল। চারদিকে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেল। বিয়ের আনন্দ যে কখন শোকে পরিণত হয়ে গেল কেউ বুঝতে পারল না।

এই গ্রামে কোন হসপিটাল নেই। এই বিষ খাওয়ার পরে তাকে কিভাবে বাঁচাবে সেটাই বড় ব্যাপার ছিল। গ্রাম্য পদ্ধতিতে বিষ খাওয়ার পরে কিছু চিকিৎসা করা হলেও কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু কাজ হলো না একচুয়ালি অল্প বিষ পান করলে হয়তো তাকে বাঁচানো সম্ভব হতো কিন্তু সে অনেকটাই বিষ পান করে ফেলেছিল। এভাবে ছটফট করতে করতেই বিয়ের দিন সকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে শিমু। এই মৃত্যুর কারণ স্পষ্টই ছিল। তবে কেমন জানি সবাই চুপ হয়ে গেল। এভাবেই না ফেরার দেশে চলে যায় শিমু। শেষ পর্যন্ত শিমুর বিয়ে তো হলো না তবে জীবনটা চলে গেল তার।


পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীক্রিয়েটিভ রাইটিং (গল্প)
লোকেশনবারাসাত , ওয়েস্ট বেঙ্গল।
বন্ধুরা, আমার আজকে শেয়ার করা "শিমুর বিয়ে" গল্পের দ্বিতীয় বা শেষ পর্ব তোমাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিও । সবাই ভালো থাকো, সুস্থ থাকো , সুন্দর থাকো ,হাসিখুশি থাকো , নিজের পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকো , সবার জন্য এই শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ সবাইকে






আমার পরিচয়

IMG_20220728_164437.jpg

আমি সুবীর বিশ্বাস( রঙিন)। কলকাতার বারাসাতে আমি বসবাস করি। আমি স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিস এন্ড ফিসারিস সাবজেক্ট নিয়ে। বর্তমানে আমি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যানরত আছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটু শান্ত স্বভাবের । চুপচাপ থাকতেই বেশি ভালোবাসি আমি। নতুন নতুন জিনিস শিখতে আমার খুব ভালো লাগে। মাঝে মাঝে আর্ট করা, ফটোগ্রাফি করা, রেসিপি করা , গল্প লেখা আমার বেশ ভালো লাগে। আমি স্টিমিটকে অনেক ভালোবাসি এবং সব সময় স্টিমিটে কাজ করতে চাই।

🌷🌷 সমাপ্ত 🌷🌷

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 7 days ago 

গল্পটা পড়ে খুবই খারাপ লাগলো ভাইয়া। আসলে এমন অনেক বাস্তব গল্প আছে। ভালোবাসার মানুষকে না পেয়ে জীবন বিসর্জন দেয়। শিমুও সেটাই করলো। গল্পটা পড়ে মনে হলো যেন কোনো বাস্তব ঘটনা শুনছি। এটা আসলেই বেদনাদায়ক ছিল।

 7 days ago 

এটা আসলেই বেদনাদায়ক ছিল।

হ্যাঁ আপু, এই গল্পটি সত্যিই বেদনাদায়ক ছিল।

 7 days ago 

শিমুর বিয়ে গল্পটার প্রথম পর্ব আমি পড়েছিলাম। আজকে এই গল্পের শেষ পর্ব পড়ে সত্যি অনেক খারাপ লেগেছে। আসলে কিছু কিছু পরিবার রয়েছে যারা টাকার জন্য এতটাই নিচে নেমে যায় যে, নিজের সন্তানকে কিসের মুখে ফেলে দিচ্ছে এটাও চিন্তা করেনা। আর ঠিক তেমনি ভাবে শিমুর বাবা আর তার সৎ মা তাকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিয়েছে। শিমু আত্মহত্যা করেছে তাও আবার এরকম ভাবে বিষয়টা ভাবতেই খারাপ লাগছে। এই গল্পের শেষটা এত বেশি দুঃখজনক হবে এটা ভাবতেই পারিনি একেবারে।

 7 days ago 

হ্যাঁ আপু, আসলেই অনেক দুঃখজনক ছিল এই গল্পের শেষ অংশটা।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 57956.22
ETH 3126.99
USDT 1.00
SBD 2.45