একটি চুরির ঘটনা
Image Created with AI, powered by DALL·E (Microsoft Bing)
আজ একটি চুরির ঘটনা বলবো ।
সে অনেকদিন আগের কথা । আজ থেকে কুড়ি-বাইশ বছর আগের কথা । আমি তখন একদম ছোট্ট । গ্রামের বাড়িতে থাকতাম আমরা তখন । বাবা থাকতো শহরে । স্কুল টীচার ছিলেন তিনি । সপ্তাহ শেষে দু'দিন কাটিয়ে যেতেন গ্রামে আমাদের সাথে। আমার জেঠু, কাকুরাও স্কুল টীচার ছিলেন । শহরে আমার বাবার সাথে আমার এক কাকুও থাকতো । সেও ছিল স্কুল টীচার ।
তো কাকুর বিয়ের পর একবার শ্বশুর বাড়ি থেকে প্রচুর নলেন গুড়ের সন্দেশ এনেছিলো । সপ্তাহন্তে আমাদের বাড়ি আসার সময় বাবার সাথে কাকুও এলো । সঙ্গে নিয়ে এলো প্রকান্ড একটি মিষ্টির বাক্স । বাক্স বোঝাই খাঁটি নলেন গুড়ের সন্দেশ । বাড়িতে ঢুকেই মায়ের হাতে বাক্স তুলে দিয়ে বললো - "বৌদি, এটা আগে তুলে রাখো । খাঁটি নলেন গুড়ের সন্দেশ । আমার শ্বশুর বাড়ির এলাকার মিষ্টি । আজকাল তো আর খাঁটি নলেন গুড়ের সন্দেশ পাওয়াই যায় না । সব ভেজাল ।"
মাও সঙ্গে সঙ্গে সন্দেশের প্যাকেট একটা গোপন জায়গায় রেখে পরে বেমালুম ভুলে গেলো । মায়ের ছিল ভুলো মন । আর অনেকদিন পরে কাকু আমাদের বাড়িতে এসে হৈ চৈ লাগিয়ে দিলো । পুকুর থেকে মাছ ধরা চললো । খালেও মাছ ধরতে গেলো বাবা ও কাকু । বাড়িতে হাঁস কাটা হলো । সে এক এলাহী ব্যাপার স্যাপার । স্কুলে টানা ২ দিনের ছুটির সাথে সাপ্তাহিক বন্ধের ছুটি মিলিয়ে দিন তিনেকের ছুটি । তাই হৈ চৈ চললো বিস্তর ।
এই গোলমালে সবাই সন্দেশের প্যাকেটের কথা বেমালুম ভুলে গেলো । ভুললাম না শুধু আমার ভাই আর আমি । দুই ভাই পুরো একটি বেলা বাড়ি তোলপাড় করে ফেললুম প্যাকেটের খোঁজে । অবশেষে বিকেলবেলা খোঁজ মিললো । পিঁপড়ের হাত থেকে বাঁচাতে মা চালের মুনির (মাটির তৈরী গোলাকার পাত্র) ভেতর চালের মধ্যে প্যাকেট রেখে দিয়েছে । খুঁজে তো পেলুম কিন্তু এখন এটাকে স্থানান্তরিত করা জরুরি । তা না হলে নির্বিঘ্নে সাবাড় করা মুশকিল । এই আইডিয়াটা আমার ভাইয়ের । এসব বুদ্ধি তার মাথাতেই খেলে ভালো চিরকাল ।
দুই ভাই তারপরে গোপনে একটা নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে ফেললাম প্যাকেটটা । নিরাপদ জায়গাটা ছিল আমাদের বাড়ির একদম পেছনের বারান্দায় দাদুর খাটের নিচে । এ জায়গায় বাড়ির কেউ আসে না দাদুর মৃত্যুর পর । দুই ভাই সেখানেই লুকিয়ে রাখলাম মস্ত প্যাকেটটা । এরপরে চললো কিছুক্ষণ ধরে ভোজনপর্ব । মস্ত বড় প্যাকেট, প্রচুর সন্দেশ আর ছোট্ট দুটি পেট । তাই খুব বেশিক্ষণ একটানা মুখ চালানো সম্ভব হলো না ।
খেলতে খেলতে যখনই আমাদের একটু খিদে পেতো নিঃশব্দে চলে যেতুম বাড়ির পেছনের বারান্দায় দাদুর খাটের নিচে । তারপরে কিছুক্ষণ নীরবে সন্দেশ গলাধঃকরণ । অতঃপর মুখ মুছে রান্নাঘরে জল খেয়ে আবার খেলতে যেতুম । চলে যাওয়ার আগের রাত্রে খেতে বসে হঠাৎ কাকুর মনে পড়লো সন্দেশের কথা ।
"বৌদি, সে সন্দেশ তো দিলে না । খাওয়ার পরে দিও সবাইকে ।"
খাওয়ার পরে শুরু হলো খোঁজাখুঁজি । মা আর মনে করতেই পারে না কোথায় রেখেছিলো । সম্ভব অসম্ভব সব জায়গাতেই খোঁজ চললো । কিন্তু, পাওয়া গেলো না । বাবা মৃদু তিরস্কার করলো মাকে । তারপরে সকালে বাবা-কাকু দু'জনেই চলে গেলো । এরপরে আরো ২-৩ দিন ধরে আমরা দুই ভাই নীরবে সন্দেশ সাবাড় করেছিলুম । খাঁটি নলেন গুড়ের সন্দেশ । যেমন তার সুগন্ধ তেমনই তার স্বাদ । আমরা দুই ভাই তাই কোনোক্রমেই হাতছাড়া করতে পারিনি ।
তবে চুরি কিন্তু পরে ধরা পড়ে গিয়েছিলো । খালি প্যাকেট ফেলতে ভুলে গিয়েছিলুম । প্রায় মাসখানিক পরে বাড়ি পরিষ্কার করার সময় মা সেই প্যাকেট পেয়েছিলো । অতঃপর জেরা । আর জেরায় সব ফাঁস হয়ে গেলো । তবে, মা কিন্তু রাগ করেনি । বাবাও পরে শুনে খুব হাসাহাসি করেছিল । দুই কিলো সন্দেশের সবটা আমরা দুই ভাই সাবাড় করে দিয়েছিলাম । চুরি করে । হে : হে : )
বহুদিন পরেও এই ঘটনা এখনো মনের ভেতর জ্বল জ্বল করে ।
------- ধন্যবাদ -------
পরিশিষ্ট
আজকের টার্গেট : ৫২৫ ট্রন জমানো (Today's target : To collect 525 trx)
তারিখ : ০৮ জুলাই ২০২৩
টাস্ক ৩১৮ : ৫২৫ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron
আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx
৫২৫ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :
TX ID : d6a273a957d771abfa022ab353d72f73a08697237b920f0e9bb9bdb061208646
টাস্ক ৩১৮ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি
Account QR Code
VOTE @bangla.witness as witness
OR
I just love the picture 💝️
দাদা আপনাদের দুই ভাইয়ের নলেন গুড়ের সন্দেশ চুরির কথা পড়ে হাসতে হাসতে আমি শেষ। কতোটা চালাক ছিলেন সেই ছোটবেলায় থেকেই। আপনারা দুইজন লুকিয়ে লুকিয়ে দুই কেজি নলেন গুড়ের সন্দেশ খেয়ে শেষ করে ফেললেন। প্যাকেট না ফেলার কারণে অবশেষে ধরা পড়ে গেলেন। ছোটবেলায় টুকটাক এমন চুরি আমিও করেছি দাদা। আসলে এইসব স্মৃতি গুলো কখনোই ভুলবার মতো নয়। যাইহোক এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।
Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.
Come and visit Italy Community
সেইরকম চোর ছিলেন দেখি দাদা।
খাওয়া শেষ আর প্যাকেটের চিন্তা করে লাভ কি। কিন্তু দুই তিন দিনেও সন্দেশ ভালো ছিলো। নষ্ট হয়ে যায়নি? যখন সবাই খোঁজাখুঁজি করছিলো তখন তো অন্তত বের করে দিতে পারতেন। বেচারা চাচা কত শখ করে এনেছিলো। চোর হলে কি হবে বেশ সৎ চোর ছিলেন। সব আবার স্বীকার ও করে দিয়েছেন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
দাদা চোরের গল্পটি পড়ে বেশ মজা লাগলো। আসলে ছোটবেলার এই সমস্ত ঘটনাগুলো মনে পড়লে নিজে নিজেই অনেক হাসি পায়। কোথায় চুরি করা খাবারটি খাবেন সেই জায়গা ঠিক করে ফেলেছেন কিন্তু প্যাকেট ফেলার কথা মনে ছিল না বিধায় সন্দেশ চোর ধরা পড়ে গেল। সন্দেশ চোরের সততায় অবাক হচ্ছি,
সব আবার স্বীকার করেও দিয়েছিলেন। অনেক ভালো লাগলো দাদা গল্পটি পড়ে। আসলে ছোটবেলার স্মৃতি সবাইকে একটি সময় মনে করিয়ে দেয় এবং সেই স্মৃতিগুলো ভাবতেও ভালো লাগে।
হাহাহা,দাদা আপনার চুরির গল্প শুনে ভীষণ হাসি পেয়েছিল। বড় ভাইয়ের বুদ্ধির বলেই কিন্তু আপনারা খেতে পেরেছিলেন সন্দেশ গুলো। ভাবা যায় কতগুলো সন্দেহ ছিল দুই থেকে তিন দিন ধরে আপনার দুই ভাই নীরবে সন্দেশ গুলো সাবাড় করছিলেন। তবে পরিশেষে চোর যতই চালাক হোক না কেন? কোন না কোন প্রমাণ রেখেই যায়। আপনারা খেয়েছিলেন কিন্তু খালি প্যাকেট ফেলতে ভুলে গিয়েছিলেন প্রায় দুই মাস পরে পরিষ্কার করতে গিয়ে সেই প্যাকেট পেয়েছিল। ২ কিলো সন্দেশ খেয়ে ফেলেছিলেন। এগুলো শোনার পরে বাবা-মা হাসবে এটাই স্বাভাবিক। যতটুকু বুঝি সন্তান খেলে বাবা-মা খুশি হয়। আপনার লেখা পড়ে দারুন লেগেছে দাদা সত্যি বলতে অনেক মজা পেয়েছি। কারণ আপনার লেখাগুলো পড়ছিলাম আর মনে মনে ভাবছিলাম আর এর জন্য মজাটা বেশি পেয়েছি। আর এই ধরনের কাজ আমি যে কত করেছি তা বলে শেষ করতে পারবো না।
হা হা 😄
সন্দেশ চুরি করে খাওয়ার গল্পটা দারুন লাগলো।
ভাগ্যিস আপনারা ঐ প্যাকেটটা খুঁজে পেয়েছিলেন, তাইতো বেশ সময় নিয়ে স্বাদের জিনিসটা সাবার করতে পারলেন। ছোট বেলার এই খুনসুটি গুলো মনে পরলে সত্যিই দারুন লাগে।
দাদা আপনার চোরের গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো।সত্যি দাদা এমন চোর আমার মনে হয় ঘরে ঘরে ছিল। এখনো হয়তো আগের থেকে কম পাওয়া যায় এই ধরনের চোর গুলো। তবে চোর ভালো সময় ধরা পড়েছে খাবার শেষে খালি প্যাকেটে। তখন ধরা পড়লে তেমন কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।আর এমন চোর ধরা পরাও মুশকিল। ধন্যবাদ গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো।
দাদা কি গল্প লিখলেন হাসঁতে হাসঁতে পেট ব্যাথা হয়ে গেল। আপনার মা সন্দেশের কথা ভুলে গেলেও আপনারা দুই ভাই ভুলেনি,হি হি হি। যাক শেষ পর্যায়ে ধরা পড়ে ভালই হলো। সব গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে গেল,হা হা হা।
গল্পটা পড়ে অনেক মজা পেলুম। ধন্যবাদ দাদা।