খাদ্য যখন মাটি
From Wikimedia Commons, the free media repository
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্যের সেই লেখাটি আজ বড় মনে পড়ছে -
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়,
পূর্ণিমার চাঁদ যেনো ঝলসানো রুটি ।
ক্ষুধার রাজ্যে আসলেই কবিতার প্রবেশ নিষেধ । তীব্র দারিদ্র্য যেখানে, কবিতা সেখানে বিলাসিতা । পেটে খিদের আগুন জ্বললে পূর্ণিমার চাঁদ দেখে আর কবিত্বের ভাব উদয় হয় না, তখন চাঁদটাকেই মনে হয় বিশাল একটা রুটি । এই পৃথিবীতে জঠরাগ্নির মতো আগুন আর কোথাও পরিলক্ষিত হয় না । বেঁচে থাকার তীব্র জৈবিক তাড়নায় আজও পৃথিবীর একটা অংশের মানুষ পশুর মতো খাদ্যাভাস রপ্ত করেছে ।
যে জিনিস আমরা খাওয়া তো দূরে থাকুক, খাওয়ার কল্পনাই কখনো করতে পারি না তাই খেয়ে পেটের ক্ষুধার জ্বালা নিবারণ করছে নিদারুণ অর্থকষ্টে ভুগতে থাকা পৃথিবীর কয়েকটি দেশের জনগোষ্ঠী । আফ্রিকান কিছু দেশে দুর্ভিক্ষ তার কালো পাখা বিস্তার করে নিচ্ছে একটু একটু করে । তবে, আজ আমি আফ্রিকান কোনো দেশের কথা শোনাচ্ছি না । আমি আজ হাইতির কথা বলতে চাচ্ছি ।
হাইতি হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর অন্তর্গত একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র । ক্যারিবীয় সাগরের একটি দ্বীপ হিস্পানিওলা, এই হিস্পানিওলা দ্বীপটির পশ্চিম দিকের তিন ভাগের এক ভাগ নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হাইতি । ১৮০৪ সালে দাসদের এক রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্রান্স এর অধীনতা থেকে মুক্ত হয় । হাইতিই পৃথিবীর একমাত্র রাষ্ট্র যেটি সম্পূর্ণ দাসদের (slaves) দ্বারা নির্মিত ।
হাইতির সব চাইতে বড় প্রব্লেম হলো এর দারিদ্রতা । সারা ল্যাটিন আমেরিকা, উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মধ্যে সব চাইতে গরীব দেশ হলো এই হাইতি । তার ওপর হাইতিতে দুটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা দেশটিকে একদম চরম দারিদ্রতার দিকে ঠেলে দিয়েছে । প্রথম সমস্যা হলো অরণ্য ধ্বংস ও প্রাকৃতিক সম্পদ পাচার করা । আর দ্বিতীয় সমস্যা হলো দেশটিতে প্রতিনিয়ত সহিংস রাজনৈতিক অস্থিরতা ।
এই দ্বিমুখী প্রব্লেমের কারণে দেশটি আজ চরম দারিদ্রসীমার নিচে অবস্থান করছে । দেশটির অর্ধেক জনগোষ্ঠী এত গরীব যে প্রতিদিন খিদের অন্ন জোগাড় করতে ব্যর্থ হয় । ক্ষুধার জ্বালা বড় জ্বালা । বাধ্য হয়ে তাই ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য তারা একদম নাম মাত্র মূল্যের কেক এবং বিস্কুট কিনে খায় । তবে, আসল কেক বিস্কুট নয় । কাদা দিয়ে তৈরী কেক বিস্কুট । কী ? চমকে গেলেন তো ? একদম সত্যি কথা বলছি আমি । এক বিন্দুও মিথ্যে নেই এই কথার মধ্যে ।
আগেই বলেছি খিদের জ্বালা বড় জ্বালা । এই জ্বালা জুড়োতে কত অখাদ্য কুখাদ্য খায় গরীব মানুষেরা । কিন্তু, তাই বলে মাটি খায় ! এটা সত্যিই অভাবনীয় । কিন্তু, হাইতির এক বিরাট জনগোষ্ঠী ক্ষুধার জ্বালা থেকে বাঁচতে মাটি খায় । মাটির কেক এবং বিস্কুট পাওয়া যায় প্রায় সব বস্তি সংলগ্ন দোকান গুলোতে ।
প্রথমে একদল ব্যবসায়ী শ্রেণীর মানুষ পাহাড়ের পাদদেশ খনন করে নরম লালচে পলিমাটি সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করে । সেই মাটি কিনে নেয় এক শ্রেণীর মানুষ, যাদের পেশাই হলো মাটির কেক, বিস্কুট তৈরী করা । প্রথমে তারা এই শুকনো মাটিকে মিহি করে গুঁড়ো করে, এরপরে চালুনি দিয়ে কাঁকর, নুড়ি, বালুকণা ও পাথরকুচি ঝেড়ে বের করে ফেলে । তারপরে সেই গুঁড়ো মাটির সাথে খাওয়ার জল মিশিয়ে লেই তৈরী করে । তারপরে তার সাথে খাবার নুন, সোডা এবং মশলা মেশায় । এরপরে আঠালো হয়ে গেলে কেক ও বিস্কুটের আকৃতি দেয় সেগুলোকে । তারপরে কয়েকদিন ভালো করে রোদে শুকিয়ে এরপরে আগুনে সেঁকে নেয় । ব্যাস, এ ভাবেই তৈরী হয় মাটির কেক ও বিস্কুট ।
একেবারে প্রায় নামমাত্র মূল্যে বিকোয় এই সব মাটির তৈরী কেক ও বিস্কুট । হাইতির গরীব মানুষেরা গোগ্রাসে কিনে খায় এইসব কাদা দিয়ে গড়া খাবার তাদের উদরের আগুন নেভাতে । আর আমরা কি পরিমাণ খাবার নষ্ট করি প্রতিদিন ভাবুন একবার !
------- ধন্যবাদ -------
পরিশিষ্ট
আজকের টার্গেট : ৫২৫ ট্রন জমানো (Today's target : To collect 525 trx)
তারিখ : ০৪ জুলাই ২০২৩
টাস্ক ৩১৪ : ৫২৫ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron
আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx
৫২৫ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :
TX ID : db45d881ba2ed1b011c720ca9becc4d595cd1f95139365fa7881951f8ffb882b
টাস্ক ৩১৪ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি
Account QR Code
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Welcome dear
welcome to steemit continue to post your achievement using this guides
Lists of Achievements by Cryptokannon
You can check out our new community, where quality post must be upvoted before the expire, and give aways might be done monthly
Please Just visit click the link below 👉Steem Aware
Make posts And subscribe for free
You can join any community you wish using this to link Explore steem communities then you scroll down to community of your choices and subscribe (it's absolutely free)
ঠিক বলেছেন দাদা, এই মাটির বিস্কুট ও কেক খাওয়ার বিষয়টি আমরা কখনো কল্পনা করতে পারি না কিন্তু আফ্রিকান সেই দেশের মানুষেরা সেগুলো খেয়েই জীবন ধারন করছে।
এসব বিষয়গুলো দেখলে অনেক কষ্ট লাগে। সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজারো লাখো কোটি শুকরিয়া যে আমরা অন্যদের তুলনায় অনেক অনেক ভালো আছি। এই বিষয়ে কিছুদিন আগে আমি একটি প্রতিবেদন দেখেছিলাম, দেখে তো আমার চোখ দিয়ে পানি পরছিল।
লেখাগুলো পড়তে গিয়ে কখন জানি দু চোখের কোণে জল চলে এসেছে দাদা। আসলে এই পৃথিবীতে মানুষ অনেক অসহায়। এমন কিছু মানুষ আছে যারা নিজের ক্ষুধা নিবারণের জন্য কত কিছুই না করছে। ক্ষুধার জ্বালা সবচেয়ে বড়। মাটি দিয়ে তৈরি করা কেক কিংবা বিস্কুট খাওয়ার কথা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। অথচ সেই অসহায় মানুষগুলো এসব খেয়ে বেঁচে আছে।
লেখাগুলো পড়লাম আর বুকের ভেতর কষ্ট অনুভব করলাম।ক্ষুধার জালা মেটাতে মানুষ কি না কি খাচ্ছে।জীবনধারনের জন্য কত কি করছে। আমি অবশ্য খাবারের জিনিস নষ্ট করিনা।ধন্যবাদ দাদা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
একটি দেশ টিকিয়ে রাখতে হলে এবং স্বাবলম্বী করতে হলে অবশ্যই প্রাকৃতিক সম্পদ দেশের মধ্যে যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। এবং অস্থিরতা এবং রাজনীতি ক্ষমতার অপব্যবহার এই গুলা বাদ দিতে হবে।
সত্যি চমকে যাওয়ার মতোই যেখানে আমরা ভালো ভালো খাবার খাচ্ছি ।কত খাবার নষ্ট করছি ।সেখানে পৃথিবীর অন্য মানুষ খাবার না পেয়ে মাটির কেক বিস্কিট খাচ্ছে।
আপনার লেখাগুলো পড়ে বুকের মধ্যে কেমন যেন এক ধরনের একটা অস্থিরতা কাজ করছে। নিজেকে যদি ওই জায়গায় দাঁড় করাতে যাই।
সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা রইল তিনি যেন তাদের সুদিন ফিরিয়ে দেন।।
হাইতির ব্যাপারে আগেও অনেক শুনেছি। দেশটি আসলে খুব দরিদ্র। তবে এতোটা দরিদ্র সেটা জানা ছিল না। দাদা আপনার পোস্ট পড়ে হাইতির সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেলাম। আমরা কত খাবার অপচয় পর্যন্ত করি। আর তারা খেতেই পায় না। মাটির তৈরি কেক এবং বিস্কুট খেয়ে বেঁচে আছে। আসলে ভাবতেই অবাক লাগছে। মনে হচ্ছে আদি যুগের কোনো গল্প পড়ছি। সত্যিই সেখানকার মানুষদের কথা ভেবে খুব খারাপ লাগলো। যাইহোক হাইতি সম্পর্কে এতো সুন্দর ধারণা দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।
নতুন একটি ঘটনা জানলাম দাদা । মাটি দিয়ে তৈরি বিস্কুট ও মানুষ খায় এটা জানা ছিল না ।ক্ষুধার যন্ত্রণায় মানুষ কত কি খায়। কিন্তু মাটি দিয়ে তৈরি বিস্কুট খায় জানা ছিল না একেবারেই। সত্যি পৃথিবী বড়ই রহস্যময়। এর কতটুকু জানতে পেরেছি আমরা । ধন্যবাদ আপনাকে নতুন একটি তথ্য দেওয়ার জন্য।
দাদা হাইতির মানুষের গল্পটা পড়ে অনেক কষ্ট পেলাম। তারা খিদা নিবারণ করতে মাটি খায়। আর আমরা কত খাবার নস্ট করি। হাইতির সমস্যা গুলো দ্রুত সমাধান হলে ভালো হতো। ধন্যবাদ দাদা।
দাদা আপনি আজকে যেটা শেয়ার করেছেন এই বিষয়টি আমি অনেক আগেই ডিসকভারি চ্যানেলে দেখেছিলাম। সত্যি বলতে দাদা ঐদিন দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলাম না। এতটা খারাপ লাগছিল বলে বোঝাতে পারবো না। আমরা এত ভালো-মন্দ খাই তারপরও আমরা আফসোস করি। কিন্তু এরা মাটি খেয়ে জীবন ধারণ করছে। যেটা কখন আমরা কল্পনাতেও আনতে পারি না। আফ্রিকার এই মহাদেশের মানুষগুলো খুবই দায়িত্ব সীমার নিচে এবং অভাবের মধ্যে জীবন যাপন করছে। এরা নিজেদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য মাটির ক্ষেপ বেঁচে আছে। দাদা আপনি আজকে খুবই সুন্দর একটা টপিকস নিয়ে আলোচনা করেছেন। এই ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করতাম।