কিছু অপ্রচলিত এবং বিস্মৃতির আড়ালে চলে যাওয়া বাংলা ছড়া
Copyright Free Image Source : PixaBay
ছোটবেলায় আমার পড়ার টেবিলে সবসময় প্রচুর সংখ্যায় বাংলা ছড়ার বই সাজানো থাকতো । বড্ড ভালোবাসতাম এইসব ছড়া পড়তে । সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা - ফাঁক পেলেই বসে যেতাম ছড়ার বই খুলে । বয়স আমার তখন কতই বা ? ছ'সাত হবে । ক্লাস টু- থ্রী । আমার পড়ার আগ্রহ দেখে বাবা-দাদা প্রচুর বাংলা ছড়ার বই এনে দিতো । গোগ্রাসে গিলতাম সেগুলো আমি ।
একটু বড় হয়ে সেগুলো আর না পড়লেও যত্ন করে সাজিয়ে রাখতে বেশ ভালো লাগতো আমার। আমি ছোটবেলায় ছড়া মুখস্থ করতে ভীষণ ভালোবাসতাম । প্রচুর ছড়া এখনো মনে গেঁথে আছে । কিন্তু, বর্তমান সময়ে সেই সব ছড়া এখন আর প্রচলিত নেই । আমার ছেলে স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরে প্রচুর ছড়ার বই কেনা শুরু করেছি আবার । এছাড়াও ইউটিউবের দৌলতে প্রচুর বাংলা রাইমসের চ্যানেলে ভিডিও দেখেছি বাপ ব্যাটায় মিলে । প্রচুর ছড়া পেয়েছি যেগুলো আমার ছেলেবেলায় পড়া । কিন্তু, কিন্তু আমার ভীষণই প্রিয় কিছু বাংলা ছড়া তন্নতন্ন করে খুঁজেও বর্তমান সময়ে আর কোথাও পাইনি । না ছড়ার বইয়ে, না ইউটিউবে ।
সেগুলো মনে হয় এখন বিলুপ্ত । সম্পূর্ণ অপ্রচলিত । বিস্মৃতির কোন এক অতলে হারিয়ে গিয়েছে হয়তো সেই ছড়াগুলি । কিন্তু, আমার মনের মণিকোঠায় এখনো তাদের কিছু কিছু সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রয়েছে । নস্টালজিক সেই সব ছড়ার কয়েকটি নিয়ে আমার আজকের আয়োজন । তো চলুন দেখে নেওয়া যাক - কিছু অপ্রচলিত এবং বিস্মৃতির আড়ালে চলে যাওয়া বাংলা ছড়া ।
বিঃ দ্রঃ নিচের সব ক'টি ছড়াই সম্পূর্ণ আমার স্মৃতি থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে, তাই মূল রচনার সাথে অনিচ্ছাকৃত অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হতে পারে ।
সাত বছরের ছেলে বুড়ো,
খোকন হলো তারই খুড়ো ।
খোকন চিবোয় পান-সুপারি,
বুড়ো চিবোয় টফি।
চু কিত্ কিত্ বুড়ো খেলে,
খোকন দাবার ছকটি পেলে
ঘোড়ার চালে মাত করে দেয়
নিয়ে গরম কফি ।
রতনের ভাই যতনলাল,
তার ছিল দুই তোবড়া গাল ।
তোবড়া গালে পান পুরে,
জোরসে দিতো গান জুড়ে ।
আজিনপুরের গাজিন খাঁ,
গান শুনে সে বললে, "হাঁ ।"
"বহুত আচ্ছা গানা হ্যায়",
বখশিশ এক সিকি দেয় ।
সেই সিকিতে যতনলাল,
পান কিনে ফের ভরলো গাল ।
এক যে ছিল,
কি ছিল ভাই ?
খ্যাঁক শেয়ালের মাসি ।
আঁধার রাতে ঠন ঠনা ঠন,
বাজায় ভাঙা কাঁসি ।
শব্দ শুনে রাজা-রানী,
বললে হেঁকে, "কেরে ?"
সিপাইরা সব বাগিয়ে লাঠি,
আসলে পিছে তেড়ে ।
তারপরেতে কি হলো ভাই ?
হবে আবার কি ?
মাসিকে ধরে রাণী বানালো
খাস তালুকের ঝি ।
আস্ত রাঙা মুলো,
কিনে খাচ্ছে ভুলো ।
কারোর কথা শুনবে না তাই,
কানে দিয়েছে তুলো ।
ওই যে দেখো বলা,
খাচ্ছে পাকা কলা ।
আর খাচ্ছে বাবার কাছে,
দু'বেলা কান মলা ।
বোসেদের বাদল,
খাচ্ছে ভাতে ওল
দেখতে দেখতে গলাটা তার,
ফুলে উঠেছে ঢোল ।
নদী নদী ছোট্ট নদী,
জল থৈ থৈ করে ।
ছোটকা বাবু ছাতা মাথায়,
ছিপ দিয়ে মাছ ধরে ।
ফাৎনাটা যেই নড়েছে,
টান মেরেছে যেই,
মাছ উঠেছে কিন্তু যে তার
মাথায় ছাতা নেই ।
ছোটকা বাবুর ছাতা তখন
ভাসে জলের তোড়ে,
হারিয়ে ছাতা ছোটকা বাবু
পুঁটিই ধরে আনে ।
আন্না পিসী রান্না ঘরে বাটনা বাটে শিলে,
ওদিকে উঠোন থেকে মাছ নিয়ে যায় চিলে ।
পিসী এলো চিল তাড়াতে শিলের নোড়া হাতে,
উনুনে ভাত চড়-চড় জল পড়ে না তাতে ।
ভাতের হাঁড়ি নামিয়ে পিসী চড়ায় মাছের কড়া,
হয়নি মাছে হলুদমাখা ধুলোয় পড়ে নোড়া ।
নোড়া ধুয়ে বাটতে হলুদ মাছ পুড়ে খাক হয়,
বিপদ যত আন্না পিসীর, রান্না করা নয় ।
রান্না বড় বেয়াড়া কাজ সামলানো যে দায়,
রান্নাঘরের কোণে বসে কান্না শুধু পায় ।
------- ধন্যবাদ -------
পরিশিষ্ট
আজকের টার্গেট : ৫২০ ট্রন জমানো (Today's target : To collect 520 trx)
তারিখ : ১৮ জুন ২০২৩
টাস্ক ২৯৯ : ৫২০ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron
আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx
৫২০ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :
TX ID : 023dbbdba886a9bb0cce8ed161ee368953094c838c6219b2fec10425b99c9a62
টাস্ক ২৯৯ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি
Account QR Code
VOTE @bangla.witness as witness
OR
কবিতাগুলো আমি কখনো পড়িনি। আসলে হয়তো আমরা যখন পড়াশোনা শুরু করেছিলাম তখন হয়তো কবিতা গুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাই আর পড়ার সুযোগ হয়নি। কিন্তু এতো বছর পরেও এতো বড় বড় কবিতা যে আপনি মনে রাখতে পেরেছেন, এটা ভেবেই বেশ অবাক হলাম দাদা। ব্যাপারটা সত্যিই খুব নস্টালজিক।
সত্যি বলতে দাদা এই ছড়াগুলো কখনো পড়া হয়নি। তবে এটা ঠিক যে বর্তমানে অনেক অনেক ছড়া আড়ালে পড়ে গেছে যেগুলো আমরা পড়ে এসেছি সেগুলো এখন বইতে দেখতে পাওয়া যায় না। দিন দিন নিত্য নতুন ছড়া বইতে দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের সময়ের ছড়াগুলো এখন একদমই নেই। যাই হোক অনেক ভালো লাগলো পুরনো কিছু ছড়া পড়তে পেরে। আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
দাদা সেই ছেলেবেলার কথা কি আর বলতে। ছড়া পড়তে পড়তে ভাত খেতে বুলে যেতাম। কোথায় যে গেল সেই ছড়াগুলো। ইউটিউব খুঁজেও সেগুলো আর পাওয়া যায় না। কেন যে সেসব ছড়া গুলো কে যাদু ঘরে সংরক্ষন করা হয়নি। দেখলেনই তো আপনি আর টিনটিন কত চেষ্টা করে ইউটিউবে আপনার প্রিয় ছড়া গুলো সব খঁজে পাওয়া গেল না।
দাদা ছোটবেলায় আমিও এমন কবিতার ছড়া পড়তে খুব ভালবাসতাম। আমি অনেক ছড়া পড়েছে এবং আমার মুখস্থ আছে। কিন্তু আস্তে আস্তে সেগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। যেমন আপনার পড়া এই ছড়া গুলো আমি পড়িনি। আবার আমার আম্মুদের কাছে যেসব ছড়া শুনি সেগুলো আমরা পড়েনী। আবার আমরা যেগুলো পড়ছি সেগুলা ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরা পাবে না। এই ছড়াগুলো পড়ে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আপনার স্মৃতিশক্তি তো দেখছি বেশ ভালো দাদা এখনো কত সুন্দর মনে আছে সব।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.
Come and visit Italy Community
ছোট্টবেলার কথা কি বলব দাদা সেই দিনগুলো সবাই মিস করে। কত ছড়া কবিতা পড়েছি সত্যিই খুব ভালো লাগতো যেগুলো এখনো স্মৃতি হিসেবে রয়ে গেছে। অনেক ছড়াই এখনো মুখস্ত আছে যেমনটা আপনিও ছড়া পড়তে পছন্দ করতেন। টিনটিন বাবুকে এখনো সেই সুন্দর সুন্দর ছড়া পড়িয়ে থাকেন অনেক ভালো লাগলো।
কত সুন্দর ছিল দাদা আপনাদের সময়ের ছড়াগুলো। আমি নোট করে রাখবো ছড়াগুলো।ইউটিউব রাইমসের চ্যানেলের কথা জানা ছিল না। আমি অবশ্যই চ্যানেলে গিয়ে ভিডিওগুলো দেখব। আপনারা বাপ ছেলে দুজনে খুব বেশি দেখেন ভিডও গুলো। ধন্যবাদ দাদা। আপনার স্মৃতির পাতা থেকে এ ছড়াগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ।
দাদা আপনার পোস্টটা দেখে আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। আসলে আমরা ছোটবেলায় অনেক ধরনের কবিতা পড়েছি কিন্তু সেই কবিতগুলো আজ বিলুপ্তির পথে হারিয়ে গিয়েছে।তারপরও মনে কোন জিনিস গেথে থাকলে সেটি হারিয়ে যাওয়ার মতো নয়। আপনার স্মৃতির পাতা থেকে কবিতাগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন প্রত্যেকটি কবিতা অসাধারন ছিল দাদা।
আপনার স্মৃতিশক্তি দেখছি অনেক ভালো সব কবিতা বেশ সুন্দরভাবে মনে রেখেছেন।