জেনারেল রাইটিং-নববর্ষের শুভেচ্ছা ও কিছু মধুর স্মৃতি||
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। প্রথমেই সবাইকে নববর্ষের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। নববর্ষ মানেই বাঙালী হৃদয়ের এক অদ্ভুত ভালোলাগা। আর নববর্ষের এই বিশেষ দিনে নিজের অনুভূতি থেকে কিছু কথা উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার পোস্ট সবার ভালো লাগবে।
নববর্ষের শুভেচ্ছা ও কিছু মধুর স্মৃতি:
নববর্ষ মানে বাঙ্গালীদের আলাদা রকমের অনুভূতি। নববর্ষ মানেই সাদা শাড়ি লাল পেড়ের অদ্ভুত এক মায়া। নববর্ষ মানে হাতে রেশমি চুড়ি আর খোঁপায় গোজা বেলি ফুলের মালা। তবে সময়টা বড্ড কঠিন। সময়ের সাথে সাথে অনুভূতিগুলো যেমন ফিকে হয়ে গেছে তেমনি ভালো লাগাগুলো হারিয়ে গেছে জীবনের এই অদ্ভুত সমীকরণে। আমরা কখন যে মধুর সময় গুলো হারিয়ে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি। শৈশবের সেই স্মৃতিগুলো আজও মনে পড়ে যায়। বিশেষ করে ছোটবেলায় যখন নববর্ষের সময় হতো তখন আগে থেকেই সবাই প্লান করে রাখতাম নববর্ষের দিন কি করবো। কত রকমের প্লান পরিকল্পনা করা হয়ে যেত।
সাদা শাড়ি লাল পাড় যেন হৃদয়ের মাঝে এক দারুণ অনুভূতি। পহেলা বৈশাখ আসার আগেই লাল পেড়ে সাদা শাড়ি কিনে ফেলতাম। এই শাড়িগুলোর দাম যদিও খুব একটা বেশি নয় তবে অদ্ভুত রকমের এক মায়া কাজ করতো। সবাই মিলে একই রকমের শাড়ি কিনতাম। আর যদি কেউ শাড়ি কিনতে ব্যর্থ হত তখন সবাই আত্মীয় স্বজনের বাসায় খোঁজ নিতাম কার কাছে শাড়ি আছে। মাঝে মাঝে অনেকে অন্য রকমের কালারফুল শাড়ি পরতো। সেই সময় আনন্দটা অনেক ছিল। সেই সময়টা সত্যি অনেক আনন্দের ছিল। হয়তো সময়ের সাথে সাথে সেই আনন্দ হারিয়ে গেছে। তবে এখনো সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে। শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে মাটির মালা আর কানের দুল কিনে ফেলতাম। সবাই একই রকমের সাজসজ্জার জিনিসপত্র কিনে ফেলতাম। এরপর বিভিন্ন রকমের প্রোগ্রাম করে ফেলতাম।
আমার এখনো মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা যখন স্কুলে পড়তাম তখন প্রত্যেক বছর স্কুল মাঠে পান্তা ভাতের প্রোগ্রাম করা হতো। সবাই মিলে আগের দিন সন্ধ্যাবেলায় স্কুল মাঠে চলে যেতাম। আর যার বাসা স্কুলের কাছাকাছি ছিল তার বাসায় দায়িত্ব থাকতো সব রান্না বান্নার। ১০ প্রকারের ভর্তা আর সাথে পান্তা ভাত সেই অনুভূতির কথা মনে হলেই এখনো খেতে ইচ্ছে করে। আশেপাশের মানুষজনকে আমরা পান্তা ভাতের দাওয়াত দিতাম। বিনিময়ে তারাও আমাদেরকে উপহার দিত। আমাদের আনন্দে শামিল হওয়ার জন্য তারাও এই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতো। যখন সবাই মিলে একসাথে পান্তা খেতাম তখন সত্যিই অনেক ভালো লাগতো। হয়তো সেভাবে ইলিশ মাছ কেনা হতো না তবে ঝাল ঝাল ভর্তা দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়ার সেই অদ্ভুত অনুভূতি এখনো হৃদয়ের মাঝে ভালোভাবে তৈরি করে।
এখনো মনে পড়ে সেই ছোটবেলার কথা। বৈশাখ মানেই বিভিন্ন রকমের মেলার আয়োজন ছিল। বৈশাখী মেলায় ঘুরতে গিয়ে রঙ বেরঙের বেলুন কিনতাম। সেই সাথে মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র গুলো কিনতাম। আর তেলে ভাজা খাবারগুলো তো আছেই। মাটির বিভিন্ন খেলনা গুলো কিনতে আমার বেশি ভালো লাগতো। তাইতো বাড়ির বড়দের সাথে মেলায় যেতাম আর মেলায় গিয়ে অনেক সুন্দর সময় কাটাতাম। তবে এখন কেন জানি সময় বদলে গেছে। ছোটবেলার সেই দিনগুলো হারিয়ে গেছে। সেই সাথে অনুভূতিগুলো এখন আর নেই। এমনকি আজকালকার বাচ্চাদের মাঝে সেই আমেজ উদ্দীপনা কিছুই নেই। তারা আর পহেলা বৈশাখের সেই আনন্দ খুঁজে পায় না। তারা বুঝতেই পারেনা সেই অদ্ভুত অনুভূতির কথা। কারণ সময়টা যে বদলে গেছে।
মাঝে মাঝে যখন নিজের শৈশবের সাথে বর্তমান সময়ের ছোট বাচ্চাদের আনন্দগুলো তুলনা করি তখন মনটা খারাপ হয়ে যায়। কি অপেক্ষা করছে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য? তারা কি হারিয়ে ফেলল তাদের জীবনের সোনালী দিনগুলো? ইলেকট্রিক ডিভাইস, মোবাইল, ল্যাপটপ এগুলোতে যেন আটকে গেছে তাদের সোনালী শৈশব। আটকে গেছে তাদের আনন্দগুলো। সেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন, শাড়ি পড়ে ঘুরে বেড়ানো, মাথায় ফুলের বেনি পড়া, আর পান্তা ভাত খাওয়ার সেই অনুভূতি তারা বুঝতেই পারল না। কিংবা ভোর বেলায় উঠে রং মাখামাখির আনন্দ তারা খুঁজেই পেল না। হয়তো এভাবেই তাদের সোনালী দিনগুলো বদলে যাচ্ছে। হয়তো কোন একদিন তারা জীবনের কোন আনন্দ খুঁজে পাবে না। আর বেরঙিন হয়ে যাবে তাদের অনুভূতিগুলো। পহেলা বৈশাখের এই বিশেষ দিনে নিজের অনুভূতি থেকে কিছু কিছু কথা লেখার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আমার পোস্ট সবার ভালো লাগবে।
আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
প্রথমেই আপনাকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই।
আপনার আজকের পোস্টের মাধ্যমে নববর্ষ কে ঘিরে আপনার পুরনো দিনের অনেক আবেগ অনুভূতি, আপনি স্পষ্ট ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। আসলে যুগের পরিবর্তনের হাওয়ায় সবকিছু ধীরে ধীরে বদলে যেতে শুরু করেছে। আপু কষ্ট পাবেন না নিজের ভেতরের চাপা অনুভূতিগুলো আপনি নিজের আঙ্গিকে পরিবারের সাথে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করুন যতটুকু সম্ভব। আশা করি আপনার কাছে কিছুটা ভালো লাগা কাজ করবে।
অনেক ধন্যবাদ চমৎকার পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া নববর্ষ ঘিরে আমাদের অনেক স্মৃতি আছে। আর সেই অনুভূতি থেকে কিছু কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।
আপনাকেও শুভ নববর্ষ এর অনেক শুভেচ্ছা আপু।আসলেই বর্তমান প্রজন্ম বাস্তবের সুন্দর বেড়াজাল থেকে অনেক কিছু মিস করে যাচ্ছে।যেগুলো আমরা উদারভাবে পার করেছি,আপনার শৈশবের স্মৃতি পড়ে মনে পড়ে গেল।আমরাও শুভ নববর্ষ এবং সরস্বতী পূজার সময় নতুন বিয়ে হওয়া বৌদিদের কাছ থেকে শাড়ি নিয়ে পড়তাম।বেশ মজা হতো সেই মুহূর্তগুলি, সবই হারিয়ে গেছে যেন।ধন্যবাদ আপু সুন্দর স্মৃতি শেয়ার করার জন্য।
ঠিক বলেছেন আপু বর্তমান প্রজন্ম তাদের শৈশব হারিয়ে ফেলছে। আর সেভাবে সুন্দর সময় কাটাতে পারছে না। অনেক অনেক ধন্যবাদ অপু মন্তব্য প্রকাশের জন্য।
আপনাকেও নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই এবং আজকে আপনি এই নববর্ষ নিয়ে খুবই সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন৷ এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি আপনার অনুভুতি খুব ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন৷ আপনার কাছ থেকে এরকম সুন্দর একটি পোস্ট দেখে খুবই ভালো লাগলো৷ আসলে এখন যে সংস্কৃতি রয়েছে তা পূর্ববর্তী সময় থেকে একেবারে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে৷ তবে তারপরেও সে উৎসব জন সকলে পালন করে যাচ্ছে৷
ভাইয়া আমি চেষ্টা করেছি নববর্ষের মধু স্মৃতিগুলো তুলে ধরার। আপনার মন্তব্য পড়ে অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার এই পোস্টও আমার অনেক ভালো লেগেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকেও।
আপু নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ছোটবেলায় পহেলা বৈশাখের দিন আমরাও অনেক মজা করতাম। আগেই প্ল্যান করে রাখতাম সকালে ঘুম থেকে উঠে পান্তা ভাত,ইলিশ মাছ এবং কয়েক রকমের ভর্তা দিয়ে নাস্তা করবো। তারপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতাম এবং বৈশাখী মেলায় গিয়ে অনেক ঘুরাঘুরি করতাম। এখন তো সেই আনন্দ একেবারেই নেই। আসলে সেই দিনগুলো বড্ড বেশি মিস করি। যাইহোক এতো সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।