গল্প-বোবা কান্না||
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে সময় পেলে গল্প লিখি। গল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। তাই আজকে আমি একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার লেখা গল্প সবার ভালো লাগবে।
বোবা কান্না:
Source
সবুজ মাত্র কয়েক মাস হলো বিয়ে করেছে। বিয়ের ৬ মাস পেরোতে না পেরোতেই তাকে প্রবাসে পাড়ি জমাতে হবে। পরিবারের কথা চিন্তা করে নিজের ভেতরের চাপা কষ্ট গুলো আর প্রকাশ করতে পারেনি সবুজ। পরিবারের সবাইকে ছেড়ে চলে যায় দূর প্রবাসে। জীবনটা ততটাও সহজ ছিল না। নিজের কাজের ফাঁকে একটুখানি সময় পেলেই প্রিয় মানুষটির সাথে কথা বলতো সবুজ। যখন সে কথা বলতো তখন তার ভেতরটা যেন বারবার ভেঙে চুরমার হয়ে যেন। কোন কথাই বের হতো না। অপর প্রান্ত থেকে তার আপন মানুষগুলোও কষ্ট পেতো। কিন্তু প্রকাশ করতো না। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো।
সবুজ বাবা হতে চলেছে তাই তার প্রিয় মানুষটির প্রতি তার ভালোবাসা যেন আরো বেড়ে গিয়েছিল। ওই অবস্থাতেও তাকে চলে আসতে হয়েছিল। সময় যত যেতে লাগলো সবুজের সন্তান এই পৃথিবীতে আসার সময় ঘনিয়ে এলো। প্রিয় মানুষটির এই দিনগুলোতে সে তার পাশে থাকতে পারেনি। সব সময় মানসিক সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করেছে। দেখতে দেখতে কেটে গেল বেশ কয়েক মাস। সবুজ কঠোর পরিশ্রম করে বাড়িতে টাকা পাঠাতো। বিদেশে আসার পর সবুজ বুঝতে পারল সে যেন এক যান্ত্রিক জীবনে পতিত হয়েছে। নিজের ভালো লাগা কিংবা ভালো থাকার কোন উপায় নেই। যান্ত্রিক মেশিনের মত পরিশ্রম করে যেতে হচ্ছে তাকে। হাজার পরিশ্রমের মাঝেও যখন প্রিয় মানুষটির সাথে কথা বলতো এবং তার অনাগত সন্তানের কথা চিন্তা করত তখন তার সব কষ্ট যেন নিমিষেই দূর হয়ে যেত।
হঠাৎ একদিন সবুজ কাজের সময় খেয়াল করল তার স্ত্রী তাকে বারবার ফোন করছে। কাজে থাকার কারণে সে ফোন রিসিভ করতে পারছে না। এরপর যখন কিছুটা সময় পেয়েছে তখন দৌড়ে আড়ালে চলে গিয়েছে। সবুজ বারবার বাড়িতে ফোন করছিল। কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করছিল না। এরপর হঠাৎ করে সবুজের বোন ফোন রিসিভ করে। সে জানায় তার ভাবি অনেক অসুস্থ। তাই তাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। তার স্ত্রীর অসুস্থতার কথা শুনে সবুজ কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। দূর প্রবাসে তার এই কষ্ট দেখার কেউ নেই। সে যে বড্ড নিরুপায়। চাইলেও ছুটে যেতে পারবেনা তার পরিবারের কাছে। এরপর সবুজের সাথে তার পরিবারের লোকগুলোর আর কোন কথা হয়নি। চিন্তায় ও অস্থিরতায় দিন কাটছিল সবুজের। পুরো দিন কেটে যখন রাত হয়ে গেল তখন সবুজের এক বন্ধু তাকে ফোন করে জানায় তার স্ত্রী এবং সন্তান কেউ বেঁচে নেই।
এই কথা শুনে সবুজ নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। চিৎকার করে কেঁদেছিল সবুজ। প্রবাসের মাটিতে একাকিত্বের আঘাত তাকে আরো বেশি আহত করেছিল। প্রিয় দুজন মানুষকে হারিয়ে সবুজ আজ দিশেহারা। তার ভেতরের বোবা কান্না দেখার মত কেউ নেই। তার আর্তনাদ শোনার মতো কেউ নেই। যাদের কথা চিন্তা করে দূর প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছে তারাও আজ চলে গেছে। শেষ দেখাটা দেখার মত ভাগ্য হলো না তার। শেষবারের মতো নিজের স্ত্রীর মুখ খানি দেখতে পারলো না সবুজ। নিজের প্রথম সন্তানকে স্পর্শ করে আদর করতে পারলো না সবুজ। সবুজের ভেতরটা যেন ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। এই কান্না জীবনের এক কষ্টের কান্না। এই বোবা কান্না কেউ দেখে না। এই বোবা কান্না নিঃশব্দে হৃদয়ের মাঝে ক্ষত সৃষ্টি করে।
হয়তো সবুজের মতো হাজারো প্রবাসী জীবনে নেমে আসে এই বোবা কান্না। যে কান্না নিঃশব্দে নিরালায় নিজের ভেতরটাকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। যে কান্না কেউ অনুভব করতে পারে না। দূর প্রবাসে থেকে আপন মানুষ হারানোর কষ্ট সত্যিই অনেক বেশি। যারা তাদের আপন মানুষ হারিয়েছে তারাই হয়তো সেই কষ্ট বুঝতে পারবে। সবুজের মতো এমন অনেক প্রবাসী আছে যারা শেষবারের মতো তাদের প্রিয় মানুষটির মুখ দেখার সুযোগ পায় না। ভেতরের বোবা কান্না সারা জীবন ধরে তিলে তিলে তাদের হৃদয়টাকে শেষ করে দেয়।
আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।
https://x.com/Monira93732137/status/1819562079923355675?t=9WVgyQKMwqWEMFdf84sXig&s=19
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপু প্রবাস জীবনটা সত্যিই ভীষণ কষ্টের এবং যন্ত্রনার। যারা প্রবাসে থাকে তারাই বুঝতে পারে সেই অনুভূতি ।তবে আপনার গল্পটা কিন্তু চমৎকার হয়েছে ।যদিও পড়ে বেশ কষ্ট লেগেছে । তারপরেও ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে।
সত্যি আপু যারা প্রবাসে থাকে তারাই এই কষ্টটা বুঝতে পারে। আমি চেষ্টা করেছি নিজের মতো করে এই গল্পটি লেখার। মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ আপু।
প্রবাস জীবন এর কষ্টটা অনেক বেশি। নিজের আপন জন সারা জীবনের জন্য চলে গেলেও শেষবারের মতো আর তাদের মুখ দেখতে পায়না দূর প্রবাসে থাকা এই মানুষগুলো। নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করে এত দূরে থাকে, কিন্তু নিজের পরিবারের মানুষগুলো সারা জীবনের জন্য চলে গেলে দেখতে পায় না। এটা সত্যি সবথেকে বেশি কষ্টকর। সবুজ নিজের স্ত্রী এবং সন্তান দুজনকে হারিয়েছে এটা শুনে অনেক খারাপ লাগলো। আপনি পুরোটা সুন্দর করেই লিখেছেন।
ঠিক বলেছেন আপু প্রবাস জীবন অনেক কষ্টের। নিজের আপনজন জীবন থেকে হারিয়ে গেলেও শেষ দেখা দেখার সুযোগ হয় না।
গল্পটা যেন একটা বাস্তব ঘটনা। আর এরকমই হচ্ছে, ঘটছে প্রতিনিয়ত আমরা হয়তো সবকিছুই জানিনা। সবুজ নিজের কষ্ট উপেক্ষা করে পরিবারের জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কিন্তু তার স্ত্রী সন্তান কেউই বেঁচে নেই। এটা আসলেই মর্মান্তিক একটা ঘটনা। এরকম আরো কতশত ঘটনা ঘটে বিভিন্ন প্রবাসীর জীবনে। তারা বাইরে থেকে এই বিষয়টা বুঝতে পারে।গল্পটা খুব ভালো লেগেছে আপু ।
সবুজের মতো অনেক প্রবাসীর জীবনে এরকম মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। তাই আমি নিজের উপলব্ধি থেকে এই গল্পটি লেখার চেষ্টা করেছি আপু। ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার গল্প গুলো ভালো লাগে আপু,তাইতো সামনে পড়লেই পড়া হয়।
আপু আপনার ক্রিয়েটিভ গল্প গুলো আমার বেশ ভালো লাগে।বাস্তবিক আঙ্গিকে গল্পগুলোর রূপ দেন আপনি।বোবা কান্না গল্পটিও অনেক সুন্দর লেগেছে।প্রবাস জীবনটা অনেক কষ্টের।আমরা দেশে থেকে সেটার মর্ম কখনোই হয়তো বুঝতে পারব না।গল্পের সবুজের মতো আর অনেক পরিবার এভাবেই সাফারার হয়ে থাকছে প্রতিনিয়ত ।তবে পরিবার ছেড়ে দূরের জীবনটা অনেকটা বোবা কান্নার সৃষ্টি করে কথাটি গল্পের টাইটেল এর সাথে একদম মিলে গেছে।ধন্যবাদ সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য আপু।
আমার লেখা গল্পগুলো আপনার কাছে ভালো লাগে জেনে সত্যি ভালো লাগলো আপু। সব সময় চেষ্টা করি বাস্তবতার সাথে মিল রেখে গল্প লিখার।
আপু আপনার লেখা ক্রিয়েটিভ রাইটিংটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো।প্রবাস জীবন সত্যি অনেক কষ্টের। প্রবাসে যারা থাকে তারাই বুঝতে পারে যে প্রবাস জীবনটা কতটা যন্ত্রণাদায়ক। গল্পের সবুজের মতো আরো অনেক পরিবার এইভাবে স্বার্থপর হয়ে থাকছে প্রতিনিয়ত। সবুজ নিজের কষ্টের কথা চিন্তা না করে পরিবারের জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কিন্তু তার স্ত্রীর সন্তান কেউ বেঁচে নেই। এটাই সবথেকে বেশি কষ্টকর।গল্পটি পড়ে সত্যি অনেক খারাপ লাগলো। ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য।