সৌভাগ্য যখন দুর্ভাগ্যে রূপান্তরিত হয় পর্ব : ১ || ১০% বেনিফিশিয়ারি shy-fox এর জন্য
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।
আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আজ যে কথাগুলো আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করব তা হয়তো আপনাদের কাছে পোস্ট মনে হবে। কিন্তু এটি এখনো আমার কাছে একদম বাস্তব প্রতিচ্ছবি হয়ে রয়েছে আমার হৃদয় মাঝে। আজ থেকে অনেক অনেক দিন আগে ২০১০ সালে ঘটে যাওয়া একটি মর্মান্তিক ঘটনা আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করব। এই ২০১০ সালে আমার অর্ধাঙ্গিনী প্রথম মা হওয়ার এবং সেই সাথে আমিও বাবা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলাম। কিন্তু সেই সৌভাগ্য যেন আমাদের কপালে দুর্ভাগ্য হয়ে এসেছিল।
আমার অর্ধাঙ্গিনী যখন সাত মাসের গর্ভাবস্থায় ছিল, তখন হঠাৎ করে একদিন তার পেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করেছিল। আমার অর্ধাঙ্গিনী সকাল থেকেই বলছিল আমার পেটে প্রচন্ড ব্যথা, বিকেল হওয়ার পর থেকে তার পেটে এমন তীব্র ব্যথা শুরু হয়েছিল সে যেন আর কোনমতেই সহ্য করতে পারছিল না। তাই আমি খুব দ্রুত আমার অর্ধাঙ্গিনীকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সে সময় প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখেছিলাম তেমন কোনো ভালো ডাক্তারের সন্ধান পাইনি।
তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই আমাদের এখানে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে তাকে ভর্তি করিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানেও যেন দুর্ভোগের শেষ নেই, বিকেল থেকে শুরু করে পরের দিন সকাল পর্যন্ত আমার অর্ধাঙ্গিনী প্রচন্ড কষ্ট করেও সরকারি ডাক্তারের নাগাল পায়নি। তাই আমি এক প্রকার রাগ করেই, সকাল ১০:০০ টার দিকে নতুন করে আবার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যাই। যাইহোক এবার একজন ভালো গাইনি ডাক্তার আমার অর্ধাঙ্গিনীকে দেখে প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করে নেয়। আর সেই ক্লিনিকের নাম হচ্ছে সেবা ক্লিনিক।
সেখানে ভর্তি হওয়া অবস্থায় প্রথমবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করে আমার অর্ধাঙ্গিনীর কোন সমস্যাই তারা বুঝতে পারেনি। বলেছিল আমার অর্ধাঙ্গিনীর গর্ভে একটি মাত্র সন্তান রয়েছে। যা ছিল একদম ভুল আল্ট্রাসনোগ্রাম। যাইহোক আমার অর্ধাঙ্গিনী পুরো দুই দিন প্রচন্ড ব্যথায় শুধু কাতরাচ্ছিল। তাই তাকে আবারও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দ্বিতীয়বারের মত আল্ট্রাসনোগ্রাম করিয়েছিলাম। আর এবার আমরা সকলেই যেন অবাক হয়ে গেলাম। কেননা ডাক্তার আলট্রাসনোগ্রাম এর পরে বলেছিল আমার অর্ধাঙ্গিনী জমজ সন্তানের মা হতে চলেছেন।
সেই সময় এই সংবাদ শুনে আমরা ভীষণ খুশি তো হয়েছিলাম। কিন্তু যখন আমার অর্ধাঙ্গিনীর চিন্তা করছিলাম, পরক্ষণেই যেন আবার সেই খুশি মলিন হয়ে গিয়েছিল। এরপরও আমার অর্ধাঙ্গিনীর কোন সমস্যা ধরতে পারেনি ডাক্তাররা। এমত অবস্থায় আমার অর্ধাঙ্গিনী একদম নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিল, মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়ে আসছিল,জীবনের আশা ছেড়েই দিচ্ছিল ঠিক সেই সময়, ডাক্তার আমার অর্ধাঙ্গিনী কে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যেতে বলল।
অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গিয়েই তারা আমার অর্ধাঙ্গিনীর অবস্থা দেখে ডাক্তার বলে ফেলল, আমার অর্ধাঙ্গিনীর অ্যাপেন্ডিক্স ব্লাস্ট হয়েছে। সেই মুহূর্তে আমরা ডাক্তারকে বললাম আপনি কোন টেস্ট ছাড়াই কিভাবে এই কথা বলেন। তখন ডাক্তার বলেছিল টেস্ট করার সময় নেই, রোগী একদম মৃত্যুশয্যায়। আর অ্যাপেন্ডিক্স টেস্ট করতে হলে এক্সরে করতে হয়। যা গর্ভাবস্থায় কখনোই সম্ভব নয়।
তো আমরা একপ্রকার বাধ্য হয়েই ডাক্তারকে অপারেশনের অনুমতি দিয়েছিলাম। যখন ডাক্তার অপারেশন করেছিল তখন আমার অর্ধাঙ্গিনীর পেটের নাড়ি অনেক দূর পচে গিয়েছিল বলে কেটে ফেলতে হয়েছিল। অপারেশন শেষ করে ডাক্তার যখন আমাদের সেই পচা নাড়ি এনে দেখিয়েছিল, তখন যেন আমরা একদম বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমি শুধু চিন্তা করেছিলাম আমার অর্ধাঙ্গিনীর পেটের ভেতরে এমন অবস্থা হয়েছে, তাহলে সে কতই না কষ্ট করেছে।
এখানেই যেন কষ্টের শেষ হয়নি। আমার অর্ধাঙ্গিনীর কষ্টের যেন নতুন ধাপ শুরু হয়ে গিয়েছিল। একদিকে আমার অর্ধাঙ্গিনীর গর্ভে সাত মাসের যমজ সন্তান।
অন্যদিকে অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশন, তাও আবার গর্ভে সন্তান রেখে। এমত অবস্থায় আমার অর্ধাঙ্গিনী যেন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিল। তার এই মুমূর্ষ অবস্থা দেখে আমার পুরো পরিবার এবং আমার অর্ধাঙ্গিনীর পুরো পরিবার একদম ভেঙে পড়েছিল। আর আমার কথা কি বলবো, আমি যেন কিছুতেই আমার অর্ধাঙ্গিনীর দিকে তাকাতে পারছিলাম না। সে সময় দুর্বিষহ সময়টুকু আমি যে কিভাবে পার করেছি তা বলার বাইরে। আমার অর্ধাঙ্গিনীর জীবন যুদ্ধ লড়াই এখানেই শেষ নয়। আবারো নতুন করে বিপদের সম্মুখীন হতে চলেছিল আর সেই নতুন বিপদ নিয়ে আমি আগামী পর্বে হাজির হবো। তা না হলে আমার আজকের এই পোস্ট অনেক বড় হয়ে যাবে। আজ আর লিখছি না, দেখা হবে আগামী পর্বে।
আশা করি আমার পোস্ট আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।
আসলে জীবনের এই কঠিন সময়গুলোর কথা মনে পরলে ভীষণ কষ্ট লাগে। আমাদের দেশের চিকিৎসা সেবা এতটাই নিম্ন মানের যেখানে ডাক্তারের দেখা পেতে পেতেই রোগী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে। আপনার স্ত্রীর শেষ পর্যন্ত জমজ বাচ্চা পেটে নিয়েই এপেনডিসাইট অপারেশন হয়েছে যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তারপরে কি হয়েছিল আশাকরি পরের পোস্টে জানতে পারবো।
ভাই জীবনের এই কঠিন সময়ে সত্যিই আমরা ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম। আর তাই এক সময় ভেবেই বসে ছিলাম আমার অর্ধাঙ্গিনী হয়তো আর বাঁচবে না। তবে রিজিকের মালিক মহান আল্লাহ তাআলা, তার কুদরতের কারিশমায় হয়তো আমার অর্ধাঙ্গিনী তার জীবন ভিক্ষা পেয়েছে। পরবর্তী পোস্ট খুব শীঘ্রই উপস্থাপন করব ভাই।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
জীৱনে মাঝে মাঝেই এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় তা যে ফেস করে সেই শুধুমাত্র উপলব্ধি করতে পারে।তাছাড়া আপনার অর্ধাঙ্গিনীর কথা জেনে খুবই খারাপ লাগলো ।আর সরকারি ডাক্তারগুলি ও আজব ।তবুও আশা করি ভালোভাবেই অপারেশনটা হয়ে গিয়েছিল।পরের পর্বে নিশ্চয়ই আপনার সন্তানদের ভালো খবর শুনবো,অপেক্ষায় রইলাম।ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো ভাইয়া।
আপু, খুবই দুঃখজনক কথা এই, আমার জমজ সন্তান আর পৃথিবীতে নেই, তাই কিভাবে কি হলো জানার জন্য আপনাকে পরবর্তী পোস্ট পড়তে হবে। আর পরবর্তী পোস্ট খুব শীঘ্রই উপস্থাপন করব।
😢👍
এইসব ব্যাপারে আপনাকে অনেক আগে থেকেই সতর্ক হওয়া উচিত ছিল ভাই। যদিও এখনো এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন আমি হয়নি। তবে একদম শেষের দিকে আপনার ডাক্তার এবং ক্লিনিক এর সাথে যোগাযোগ রাখার একান্তই প্রয়োজন ছিল। কারণ কখন সমস্যা হয়ে যায় সেটা তো আর বলা যায় না। যাইহোক ইন্টারেস্টিং জায়গায় গিয়ে শেষ করে দিলেন আজকে লেখাটা। দেখি আগামী পর্বে কি লেখেন...
এটা তো বেশ ভালো খবর ছিলো তাহলে ঐ সময়।
ভাই আমি আগে থেকেই সতর্ক ছিলাম, আর তাইতো যখন আমার অর্ধাঙ্গিনী তিন মাসের গর্ভাবস্থায় ছিল তখন থেকেই তাকে একজন মহিলা গাইনি বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি হঠাৎ করেই ট্রেনিং এর জন্য বাইরের দেশে চলে গিয়েছিলেন আর সেই সময় এই দুর্ঘটনাটি ঘটে যায়। আর তাই আমাকে ডাক্তার চেঞ্জ করতে হয়েছিল।
ভাই আপনার কাহিনীটা শুনে যতটাই খুশি হয়েছিলাম, ঠিক ততটাই কষ্ট পাচ্ছি। আসলে প্রথমে শুনে খুবই খুশি লাগছিল যে আপনারা প্রথমবার বাবা মা হচ্ছেন তাও আবার জমজ সন্তানের। কিন্তু শুনে খুবই খারাপ লাগছিল যে গর্ব অবস্থায় আপনার স্ত্রীর এপেনডিক্স ফেটে গিয়েছিল তার আবার অপারেশন করতে হচ্ছে। যাইহোক পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া।
আপু, আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি যমজ সন্তানের বাবা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলাম। কিন্তু সেই সৌভাগ্য আমার দুর্ভাগ্যে পরিণত হয়েছে। আর কিভাবে এই দুর্ভাগ্যের কষ্ট আমাকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তা পরবর্তী পোস্টে জানতে পারবেন।
আপনাদের জীবনের এমন একটা মর্মান্তিক ঘটনার ব্যাপারে জেনে সত্যিই আমার চোখে জল চলে এসেছে। এরকম ঘটনা গুলো শুনলে সত্যিই মনটা একেবারে ভেঙে যায় এবং খুবই কষ্ট লাগে। প্রেগনেন্ট অবস্থায় অপারেশন করানো সত্যি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ তাও জমজ সন্তান ছিল গর্বে সাত মাসের। আমি তো আর পারছি না পরের করবে কি হবে তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি শেয়ার করবেন।
ভাই, বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, আমিও যখন এই পোস্ট উপস্থাপন করছিলাম তখন আমিও আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। এখনো মনে হচ্ছে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। বড় সৌভাগ্য করে জমজ সন্তানের বাবা হতে পেরেছিলাম। কিন্তু সেই সৌভাগ্য আমার কপালে সহ্য হয়নি। নিমিষেই যেন দুর্ভাগ্যে পরিণত হয়েছিল।
ভাই এমন মর্মান্তিক ঘটনা পড়ে সত্যিই খুব খারাপ লাগলো। আমাদের দেশের সরকারি হাসপাতালের অবস্থা খুবই খারাপ। কারো রেফারেন্স ছাড়া সরকারি হাসপাতালে গেলে তারা রোগীর গুরুত্ব দেয় না বললেই চলে। যাইহোক আপনি রাগ করে প্রাইভেট হসপিটালে নিয়ে গিয়েছেন, আর সেখানে গিয়েও ভালো কোন সমাধান পাননি মনে হচ্ছে। আর বাচ্চা পেটে নিয়ে অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশন সত্যিই খুব ঝুকিপূর্ণ। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাই। আপনার পুরো পরিবারের জন্য অনেক অনেক দোয়া এবং শুভকামনা রইল।
গর্ভাবস্থায় এপেনডিক্স অপারেশন সত্যিই খুব ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আর তাই সে সময় আমাদের খুবই মানসিক চাপে পড়তে হয়েছিল। দুর্বিষহ সেই দিন আজও যেন মনে পড়লেই গায়ে কাটাও দিয়ে ওঠে। যাইহোক ভাই, আমার পোস্টে এসে সুন্দর মন্তব্য করে আমাকে সহযোগিতা করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।