বিষ্ণুপুর জোরমন্দির শ্রেণী

in আমার বাংলা ব্লগ15 days ago

নমস্কার বন্ধুরা,

দলমাদল কামান বর্তমানে সময়ে দাঁড়িয়েও মল্ল রাজাদের তথা বাঙালি জাতির বীরত্বের গাঁথা আমাদের সবার সামনে তুলে ধরে। মনের কোণে সেখানের এক টুকরো ইতিহাস গেঁথে এগিয়ে গেলাম কিছু দূরেই অবস্থিত জোর মন্দির শ্রেণীর দিকে। মূলত মাকড়া পাথরের তিনটি ভিন্ন মাপের মন্দিরকে নিয়েই তৈরী হয়েছে জোর মন্দির শ্রেণী। যা ছিন্নমস্তা মায়ের মন্দির এবং দলমাদল কামানের মাত্র পাঁচশো মিটারের মধ্যেই অবস্থিত। হাঁটতে হাঁটতে বিষ্ণুপুরে বর্তমানে যেখানে হাট বসে তার পাশ দিয়েই পৌঁছে গেলাম জোর মন্দির শ্রেণীর কাছে।

PXL_20240128_111313244_copy_1209x907.jpg

PXL_20240128_111259487_copy_1209x907.jpg

যদিও মন্দিরটি পরিচিত জোড় মন্দির বা জোড়া মন্দির নামে তবে আসলে এটি তিন এক-রত্ন মন্দিরের সমষ্টি বিশেষ। বর্তমানে সবকটি মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ দ্বারা হয়ে থাকে। মন্দির প্রাঙ্গনে ছিলো দুটি এক আকারের বড় মন্দির এবং একটি তুলনামূলক ছোট মাপের মন্দির। তিনটি মন্দিরই মল্লরাজ গোপাল সিংহ ও তার মহিষী ধ্বজামণি দেবী দ্বারা ১৭২৬ সালে নির্মাণ করা হয়। মন্দির গুলির বিশেষত্ব হলো সবই এক রত্ন ধাঁচের এবং বানানো হয়েছে মাকড়া পাথর বা লাল ল্যাটেরাইট পাথর দিয়ে। মন্দিরের ছাদ বাঙালি শৈলীর চালার মতো। উপরের অংশটিতে শিকাড়া রয়েছে।

PXL_20240128_111252927_copy_907x1209.jpg

PXL_20240128_111459342_copy_1209x907.jpg

PXL_20240128_111833988_copy_1209x907.jpg

তথাকথিত এক রত্ন মন্দির শৈলির প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো এই জোর মন্দির শ্রেণি। মন্দিরের চারপাশে নানান মূর্তি রয়েছে আর তিন দিকে বেশ চওড়া বারান্দা। মন্দিরের গাত্রে সবেতেই মাকড়া পাথরের সুন্দর শিল্প-কর্ম দ্বারা সজ্জিত। যেখানে ভারতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক পটভূমি তুলে ধরা হয়েছে। তার মধ্যে স্থান পেয়েছে রামায়ণ ও মহাভারতের বিভিন্ন পর্বের ইতিহাস। যদিও বেশিরভাগ শিল্পকর্মই বর্তমানে ক্ষয়ে হয়ে গেছে তবে যেগুলো এখনো কিছুটা বোঝা যাচ্ছে সেখান থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার হয় যে সেই সময়ে কিভাবে আমাদের ইতিহাস মন্দির গাত্রে সংরক্ষণ করা হতো।

20240128_112224_HDR_copy_1209x907.jpg

PXL_20240128_111541635_copy_1209x907.jpg

যে সময়টাই আমরা গেছিলাম সে সময়টায় তুলনামূলক কম ভিড় থাকায় মন্দির চত্বরটাকে খুব সুন্দরভাবে ঘুরতে পেরেছিলাম। তবে মন্দির ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকলেও মন্দিরের মূল বিগ্রহ বর্তমান সময়ে মন্দিরের গর্ভ গৃহে স্থাপিত নেই। ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ মন্দিরগুলি নিজেদের আওতায় সংরক্ষণের জন্য নিয়ে নিলে সেই সময়ে বিষ্ণুপুরের শহরের মানুষ এই বিগ্রহ গুলোকে রাধা গোবিন্দ মন্দিরে নিয়ে স্থাপিত করে।

PXL_20240128_111342212_copy_907x1209.jpg




IMG_20220926_174120.png

Vote bangla.witness

Or

Set @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 15 days ago 

সেখানে গিয়ে তো বেশ ভালোই ঘুরাঘুরি করেছেন দাদা। প্রথমে ছিন্নমস্তা মায়ের মন্দির,এরপর দলমাদল কামান এবং তারপর জোরমন্দিরের দিকে ঘুরতে গিয়েছেন। তাহলে এই মন্দির প্রাঙ্গণে তিনটি মন্দির রয়েছে। তবে দুটি মন্দির একই সাইজের বলে,এটাকে জোরমন্দির বলা হয়ে থাকে। পোস্টটি পড়ে জোরমন্দির সম্পর্কে বেশ ভালোই তথ্য পেলাম। তাছাড়া ফটোগ্রাফি গুলো জাস্ট অসাধারণ হয়েছে দাদা। সব মিলিয়ে পোস্টটি বেশ উপভোগ করলাম। যাইহোক এতো সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 9 days ago 

একই সাইজের জন্য হয়তো জোর মন্দির বলা হয় না। তবে জোর মন্দির দেখতে গিয়ে তিনটে মন্দির পেলাম সেটা বেশ মজার ছিল।

 14 days ago 

আরিব্বাস৷ দারুণ পোস্ট৷ বিষ্ণুপুরের মন্দির বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷ আপনি যেভাবে দলমাদল কামানের কথাও তুলে আনলেন, তা অনবদ্য। বিষ্ণুপুর বা প্রাচীন মল্লভূম বাংলার ইতিহাসে এক গৌরবান্বিত অধ্যায়৷ দুর্ধর্ষ বর্গীরাও এখান থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এমন একটি মন্দির নিয়ে লেখবার জন্য

 9 days ago 

বঙ্গের ঐতিহ্যই বটে। এতো সুন্দর কারুকাজ, সত্যিই খুব সুন্দর।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 58006.10
ETH 3098.72
USDT 1.00
SBD 2.43