ছেলেটাকে বাঘে নিয়ে গেল (পর্ব-০২) || by @kazi-raihan
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@kazi-raihan বাংলাদেশের নাগরিক।
আজ - ২০শে চৈত্র | ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | বুধবার | বসন্ত-কাল |
আমি কাজী রায়হান,আমার ইউজার নাম @kazi-raihan।আমি বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে অভিনন্দন।
প্রথম পর্বে রহিম মিয়ার ছেলেকে বাঘে ধরেছিল। সে নিজে গিয়ে বাঘের সাথে লড়াই করে তার ছেলেকে নিয়ে আসে কিন্তু তার ছেলের ঘাড়ের পেছনে বাঘ কামড়ে ধরে ছিল বলে সেখান দিয়ে প্রচন্ড রক্ত ঝরছিল। গামছা পেঁচিয়ে বেঁধে দেওয়ার পরেও রক্ত ঝরা যেন বন্ধ হচ্ছিল না। কোস্টগার্ডের সহযোগিতায় তার ছেলেকে দ্রুত হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাওয়া হলো দীর্ঘ দুই ঘন্টা নদীপথে নৌকা নিয়ে যাওয়ার পরে ঘাটে পৌঁছানো হলো। ঘাটে গিয়ে কোন মত একটি গাড়িতে করে তার ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। যখন গাড়িতে করে তার ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল তখন তার ছেলের সাথে বারবার কথা বলার চেষ্টা করছিল কিন্তু তার ছেলে তো চোখ বড় বড় করে আকাশ পানে চেয়েছিল কিছুই বলছিল না। রহিম মিয়া এমন অবস্থা দেখে তার ছেলেকে বারবার বলছিল বাবা আর একটু সহ্য কর অল্প একটু দূর তাই আমরা হাসপাতালে পৌঁছে যাব। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর কর্তব্যরত চিকিৎসক রহিম মিয়াকে জানায় তার ছেলে আর বেঁচে নেই সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গিয়েছে।
রহিম মিয়া এই কথা শুনে চমকে উঠলো আর কান্না শুরু করে দিল সে ডাক্তারকে বারবার বলছিল দেখুন না ডাক্তার সাহেব আপনার কোথাও যেন ভুল হচ্ছে আমার খোকা এখনো তো তাকিয়ে আছে সে তো চোখ বন্ধ করেনি সে বেঁচে আছে। বারবার এই কথা বলছিল আর চিৎকার করে কান্না করছিল। ডাক্তার জানায় ঘাড়ের পেছনের অংশে বাঘের দাঁত পুরোপুরি বড় ক্ষত সৃষ্টি করেছে যার কারণে অধিক রক্তকরণে রহিম মিয়ার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। রহিম মিয়া বারবার নিজেকে দোষারোপ করছিল আর কান্না করছিল। হাসপাতাল থেকে তার ছেলেকে আবার বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো, তার স্ত্রী এই দৃশ্য দেখেই হাও মাও করে কান্না শুরু করে দিল। অভাবের সংসারে এমন দুঃখের ছায়া তার প্রতিবেশীরা কখনোই আশা করেনি। অল্প বয়সের একটা ছেলে সকালবেলা নদীতে মাছ ধরতে গেল তার বাবার সাথে আর শেষ বেলায় বাবার সাথে লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরল এমনটা কেউ যেন মেনে নিতে পারছিল না। তার ছেলেকে বাঘে ধরে নিয়ে গিয়েছিল আর বাঘের হাতেই তার মৃত্যু লেখা ছিল এমনটাই তার প্রতিবেশীরা বলছিল।
তার বড় ছেলের মৃত্যুর সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে। রহিমের সংসারে যেন সুখের ছায়া এখনো শেষ হয়নি এদিকে তার সংসারে অভাবের তাড়নায় খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দশ দিনের মাথায় রহিম মিয়া তার ছোট ছেলেকে নিয়ে আবার নদীতে মাছ ধরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। যাওয়ার পথেই লোকজন বলছিল রহিম মিয়া তোমার বড় ছেলেকে ১০ দিন আগেই তো বাঘে ধরে নিয়ে গেল আর এখন তুমি তোমার ছোট ছেলেকে নিয়ে আবার সুন্দরবনের অঞ্চলে মাছ ধরতে যাচ্ছ। তখন রহিম মিয়া এই প্রশ্নের জবাবে বলছিল ভাই কি করব পেটের ক্ষুধা কোন মতে তো মেটাতে হবে এখন আমার দ্বারা সম্ভব না টাকা দিয়ে একজন লোক ঠিক করে আমি মাছ ধরতে যাব। তাছাড়া দু'মুঠো ডাল ভাত খেয়ে তো বেঁচে থাকতে হবে। গরিবের জীবন ভাই বাঘের সাথে লড়াই করে হলেও বেঁচে থাকতে হবে। আরো বলছিল ছেলেটাকে হারিয়েছি কিন্তু কেউ কোন সাহায্য করেনি। সরকার থেকেও তো কোন অনুদান আসলো না শুনেছি বড় দেশগুলোতে নাকি ভাতা দেওয়া হয় আমি তো ভাই আমার ছেলে হারানোর পরে কোন মানুষের সাহায্য পেতাম না। আর যে কাঁকড়া ধরি সেটা তো সবাই আর আমার থেকে কম দামে কিনে নিতে চায় বাড়তি দাম আর কোথায় দেয়।
রহিম মিয়ার এমন কথাগুলো শোনার পরে লোকটি চুপ হয়ে গেল আসলে তিনি বুঝতে পারলেন রহিম মিয়ার সংসারে কতটা অভাব পড়েছে। তবে রহিম মিয়া এবার আর সেই ভুল করবে না সে তার ছোট ছেলেকে বলছিল বাবা প্রয়োজনে এক বেলা খেয়ে আর এক বেলা না খেয়ে থাকবো তাও আর সুন্দরবনের মধ্যে কাঁকড়া ধরতে যাব না আর সুন্দরবনের এলাকায় জাল ফেলাবো না। তুমি বাবা নৌকার উপরে বসে বরশি ফেলাও যদি মাছ ধরে তাহলে সেটা বাজারে বিক্রি করে খাব আর যদি মাছ না ধরে তাহলে প্রয়োজনে না খেয়ে থাকব তবুও আমি তোমাকে হারাতে চাই না বাপ। রহিম মিয়ার ছোট ছেলে কথা শুনে তার বাবার দিকে তাকিয়ে থাকলো। রহিমের ছোট ছেলে বয়সে এখনো অনেক ছোট তাই সে বিষয়গুলো এখনো পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারছে না। ভাঙ্গা মন নিয়ে রহিম মিয়া রাতের খাবারের জন্য নৌকার উপরেই চুলা জ্বালিয়ে ভাত চড়িয়ে দিল।
সারারাত নদীতে বড়শি পেতে বাপ ছেলে মিলে মাত্র কয়েকটি মাস ধরতে পারল আর সকালবেলা সেই মাছগুলো নিয়ে আবার লোকালয়ের উদ্দেশ্যে রহিম মিয়া নৌকা নিয়ে রওনা হলো। আবারো পোস্ট গার্ডের সদস্যদের সাথে রহিম মিয়ার দেখা হল তারাও রহিম মিয়াকে একই কথা বলল দশ দিন হল তার বড় ছেলেকে হারিয়েছে আবার ছোট ছেলেকে নিয়ে নদীতে এসেছো। কোস্টগার্ডের ক্যাপ্টেন বুঝতে পারল আসলে রহিম মিয়া কতটা অভাবের মানুষ তাই সে রহিম মিয়াকে আশ্বাস দিল আমি তোমার জন্য উপর মহলে কথা বলেছি যদি সম্ভব হয় তোমার আর তোমার এই ছোট ছেলের জন্য কিছু অনুদানের ব্যবস্থা করব। রহিম মিয়া ভার কন্ঠ নিয়ে বলল স্যার আর অনুদান নিয়ে কি হবে আমার কলিজার টুকরা তো হারিয়ে গিয়েছে এখনই ছোট ছেলেকে নিয়ে কোন মত দুবেলা ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে পারলেই হয়। এভাবেই রাতের বেলায় বসে ফেলে দু'চারটা মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে রহিম মিয়ার জীবন চলতে থাকে।
এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।
সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan
আমার পরিচয়
আমি কাজী রায়হান। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও বাইক নিয়ে ঘুরতে খুবই ভালোবাসি। মনের অনুভূতির ডাকে সাড়া দিয়ে কবিতা লিখতে পছন্দ করি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.