৭ম পর্বঃ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা [ ইচিংবিচিং ]
29-01-23
১৬ মাঘ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
৬ষ্ঠ পর্বের পর
গ্রামের সর্বজন স্বীকৃত আরেকটি খেলা হচ্ছে ইচিংবিচিং! এই খেলাটা তখনকার সময়ে অনেক জনপ্রিয় ছিল। বয়স হবে তখন ৭ কি ৮। যে কোনোদিন মার্বেল খেলা খেলে নাই সেও মনে হয় এই খেলাটি খেলেছে। তবে বরাবরের মতো মেয়েরা কিন্তু এই খেলায় এক্সপার্ট ছিল! সাত আট বছরের হাত পা আর কতটুকু বড় থাকে! কিন্তু প্রচেষ্টা থাকে অনেক উচুঁ! এই খেলায় দুই পাশে দুইজন বসে থাকে। প্রথমে পায়ের গোড়ালি দিয়ে একজনের উপর আরেক পা রেখে উচুঁ করে রাখে! অন্যদিকে বাকি দুজন এটার উপর দিয়ে লাফিয়ে যাওয়া আসা করে! যাওয়ার সময় যদি পা লেগে যায় তাহলে কিন্তু শেষ। এজন্য সাবধানে লাফ দিয়ে এপাশে আসতে হয়।
খেলাটির উৎপত্তি হয়েছে সম্ভবত ইচিংবিচিং চিচিং চা,প্রজাপতি উড়ে যা এই ছড়া বা গান থেকে। আমি আসলে সঠিক জানিনা এটা ছড়া নাকি গান!! তবে যখন খেলা হতো তখন উপর দিয়ে পার হওয়ার সময় এই লাইনটা বলে পার হতো! এই খেলায় মোট চারজন করে খেলার সুযোগ পেত! প্রথমে দুইজন বসে পরতো আর দুইজন তাদের পায়ের গোড়ালির উপর দিয়ে পার হয়ে যেত! তবে যারা বসে থাকত তারা কিন্তু হাতের আঙুল দিয়ে আরও উচুঁ করতো। যাতে লাফ দিয়ে যাওয়ার সময় পা লেগে যায়! আর পা লাগলেই তো শেষ। এই খেলায় গ্রামের ছোটরা বেশি খেলতো তখন। আমিও খেলেছি। তবে খুব কম। দেখতাম গ্রামের আপুরা খেলতো বেশি।
বিকাল হলেই আমাদের বাড়ির উঠোনে খেলা শুরু হয়ে যেত। একে একে পার হতো "ইচিংবিচিং চিচিং চা, প্রজাপতি উড়ে যা " বলে। দশবার পার হতে পারলে ডান হাত দিয়ে আরেকটু উচুঁ করা হতো। আবার যদি দশবার পার হয়ে যেত তাহলে দুই হাত উচুঁ করে ধরে রাখতো! তবে দুই হাত উচুঁ করে ধরার পর অনেকেই পার হতে পারতো না। পা লেগে যেত আঙুলে! তখন সুযোগ পেত যারা বসেছিল তারা। এই খেলার সব থেকে ভালো একটা দিক ছিল, এই খেলার ফলে অনেকেই স্কুলের দৌড়,লাফ প্রতিযোগিতায় জিততে পারতো। তারা একটু বেশি এগিয়ে থাকতো অন্য প্লেয়ারদের থেকে।
তবে এই খেলাটা বেশিক্ষণ খেলা হতো না। কয়েকবার খেলার পর অন্য খেলার পর মুভ করা হতো। কারণ একদলই বারবার সুযোগ পেয়ে যেত। আর কান্ডামিও হতো এই খেলায়! কান্ডামি মানে হচ্ছে ধরেন আপনি লাফ দিলেন আঙুলের উপর দিয়ে তখন বিপক্ষ দল বলবে তাদের আঙুলে পা লেগেছে। এ নিয়ে লেগে যত গন্ডগোল! এমন হয়েছে ঝগড়া পর্যন্ত লেগে যেত খেলা নিয়ে। আর ছোটবেলায় তখন একটা কিছু হলেই ঝগড়া লেগে যেত! যেহেতু আমাদের উঠোনে আমাদেরই চাচাতো বোনেরা বেশি খেলতো তখন দেখতাম তাদের মাঝে যতসব গন্ডগোল! ঝগড়া লেগে তিন-চার দিনের জন্য খেলা বন্ধ আবার কথা বলা বন্ধ! তবে তাদের অভিমান কিন্তু বেশি থাকে না। কয়েকদিন পরেই সব ঠিক হয়ে যেত!
এখন এই খেলাটিও বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলা যায়! অনেকেই তো নামই শুনেনি কখনো! আর মাটিতে বসে এই খেলা খেলবে প্রশ্নেই আসে না! অথচ তখনকার সময়ে মাটিতে বসেই যেন অনেকটা সময় পার হয়ে যেত। গ্রামের এই খেলাটা বর্তমান প্রজন্ম হয়তো আর পাবে না! কখনো জানবে কি না জানিনা ! তবে শৈশবের এই খেলাগুলো আমাদের স্মৃতির পাতায় আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে! এসবই ছিল যে আমাদের সেনালী অতীত।
যাক, আজ এই পর্যন্তই! আবারো হাজির হবো গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খেলা নিয়ে অনুভূতি শেয়ার করার জন্য। সেই পর্যন্তই সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। আল্লাহ হাফেজ 🌼🦋
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
twitter share link
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ভাইয়া জীবনেও ইচিংবিচিং এই খেলার নাম শুনি নাই। আপনার পোষ্ট পড়ে কিছুটা ধারনা পেলাম। আমার ধারনা এই খেলাটা মনে হয় কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে। ছোট সময় অনেক ধরনের খেলা খেলেছি যা এখন শুধুই স্মৃতি। ধন্যবাদ ভাইয়া।
এই খেলাটি ছোটবেলায় প্রচুর পরিমাণে খেলেছিলাম। যা এখনো মনে পড়ে। আপনি আজকে গ্রামের শ্রেষ্ঠ খেলা গুলোর মধ্যে একটি খেলা শেয়ার করলেন দেখে ভীষণ ভালো লাগলো আমার কাছে। ছোটবেলার সেই স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন এই পোস্টের মাধ্যমে। সবাই মিলে ইচিং বিচিং খেলাটি খেলতাম। অতীতের সেই দিনগুলো এখন স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরনো দিনের এত সুন্দর একটি খেলা মনে করিয়ে দিলেন দেখে ভালো লাগলো। পুরো পোস্ট ভালই লেগেছে পড়তে আমার কাছে।