৪র্থ পর্বঃ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা [ গোল্লাছুট ]
19-01-23
০৬ মাঘ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
৩য় পর্বের পর থেকে
গ্রাম বাংলার চিরাচরিত আরেকটি খেলা হলো গোল্লাছুট। এ খেলাটা খেলে নাই এমন লোক খুব কম পাওয়া যাবে। বিশেষ করে যারা গ্রামে থাকে তারা নিশ্চয় এ খেলাটার সাথে পরিচিত। নাম শুনেই হয়তো বুঝে গেছেন আমি কোন খেলার কথা বলছি! খেলার নামের পিছনেও কিন্তু একটা ইতিহাস আছে। গোল্লা! খেয়েছেন কখনো? হাহাহা, আমি বলছি কাল্পনিক গোল্লার কথা! অনেকেই যেটাকে মিষ্টি বলতে পারেন। গোল্লা হলো কাল্পনিক এক প্রকার মিষ্টি বলতে পারেন! আর ছুট হলো দৌড়া! তার মানে দাঁড়ালো দৌড়াঁর মাধ্যমে যখন কোনো একটা নির্দিষ্ট রেখা পার হওয়া যায় তখনই এক গোল্লা বলা হয়! ব্যাপারটা আরেকটু খেয়াল করি।
ধরুন, আমি আর আপনি গোল্লাছুট খেলবো! এখন আমরা দুইজন মিলে একটা সীমানা নির্ধারন করবো! যদি আমি সীমানা পর্যন্ত যেতে পারি আর আপনি যদি আমাকে টাচ না করতে পারেন তাহলে আপনি এক গোল্লা খাবেন। ঠিক একইভাবে যখন আপনি দৌড়ঁ দিবেন আর আমি যদি আপনাকে টাচ করতে না পারি তাহলে আমি এক গোল্লা খাবো! আশা করি ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন! যারা গ্রামে থেকে এ খেলা খেলেছেন তারা হয়তো আগেই বুঝে গেছেন ব্যাপারটা ।
গ্রামে তখন ধান কাটা হয়ে যেত! ধান ক্ষেত একদম ফাকাঁ। বিকাল হলেই চলে যেতাম আমরা পাড়ার ছেলেমেয়েদের নিয়ে ক্ষেতে! বিশাল আকারের জমি! জমির আইল থাকতে আমাদের কাঙ্খিত সীমানা। পাড়ার ছেলে-মেয়েরা সবাই চলে আসতো এ খেলা খেলার জন্য। এই@লট খেলার বিশেষ পার্ট হচ্ছে যারা একটু দৌড়েঁ এগিয়ে থাকতো তারা জিততে পারাাতো। দ্রুত যারা দৌড়াইতে পারতো! খেলায় দুইপক্ষ থাকতো। প্রতি দলে সমান সংখ্য প্লেয়ার! ছেলে মেয়ে দুদলেই থাকতো! খেলা শুরুর আগে নির্ধারণ করা হতো কোন দল আগে দৌড়াঁবে! আমরা এটাকে বলতাম বাটা। অর্থাৎ টসের মাধ্যমে নির্ধারণ। যে দল টসে জিততো তারা আগে দৌড়ানোর সুযোগ পেত!
সব থেকে মজার কাজ ছিল একজনের হাত ধরে আরেকজন অনেক বড় লম্বা লাইন তৈরি করা হতো! খেলায় একজনকে সিলেক্ট করা হতো যাকে আমরা বলতাম গুড়ি। খেলায় প্রধান যাকে বলে। দলে একে একে সবাই ঘর থেকে বের হয়ে দৌড়ঁ দিত। বিপক্ষ দল যাকেই আইল পার হওয়ার আগেই টাচ করে ফেলতো সে মৃত, হাহাহা! মানে হচ্ছে তাকে বসতে থাকতে হবে। যদি গুড়ি দৌড়ঁ দিয়ে আইল পার হতে পারতো তবেই বাকিরা খেলার সুযোগ পেত! একটা গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করতো গুড়ি। খেলার প্রধান বলতে পারতেন অথবা দলনেতা। দলনেতা সবসময় সুযোগ খুজেঁ দৌড়ঁ দেয়া লাগতো! বিপক্ষ দল তাকে টার্গেট করেই রাখত! টাচ করতে পারলে তো সবাই শেষ! এই খেলায় বুদ্ধিমত্তা ও গতির একটা ব্যাপার ছিল! দৌড়েঁর স্পিড যার বেশি সে সবসময় এগিয়ে থাকত।
আমি মোটামোটি ভালোই দৌঁড়াতে পারতাম! মাঝে মাঝে দৌড়তে গিয়ে উল্টে পরে গেছি! ধানের জমিতে ধানের শিকড় ঠিকই থেকে যেত। সেগুলোতে অনেক সময় দৌড়াঁতে গিয়ে লেগে পরে যেতাম। যেহেতু আমরা গোল্লাছুট বিকালে খেলতাম, তখন আমাদের লক্ষ্য থাকতো সন্ধ্যের আগে খেলা শেষ করে দেয়ার জন্য। কিন্তু অনেক সময় সন্ধ্যের পরও খেলতে হতো। কারণ দুদলের গোল্লা সেইম হয়ে যেত। যে দলের বেশি গোল্লা সে দল জিতবে। কোনো দল না জেতা পর্যন্ত খেলা চলমান থাকতো।
তখনকার সময়ে এ খেলাটা বেশ জনপ্রিয় ছিল। তখন আমি সম্ভবত ক্লাস থ্রি বা ফোরে পড়াশোনা করি। ক্রিকেট খেলা হতো কিন্তু তেমন পারতাম না! সিনিয়ররা দেখতাম ক্রিকেট খেলতো। আর আমরা একপাশে সবাই গোল্লাছুট খেলা শুরু করে দিতাম। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এই খেলাটাও তার জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। গ্রামে গেলে এখন আর এই খেলা করতে দেখা যায়! অথচ গ্রামীণ খেলার ঐতিহ্যের মধ্যে গোল্লাছুট একটি! এখনকার তরুণ যারা আছে তারা এই খেলাটাকে বড্ড মিস করবে! গ্রামে গেলে এখন শুধু চোখে পড়ে ফুটবল আর ক্রিকেট। গ্রামীণ যে খেলা আছে সেগুলো প্রায় বিলুপ্ত প্রায়! এখন জমি পরে থাকে কিন্তু খেলার মানুষ নেই! আধুনিকতার সফল হয়তো গ্রামেও এসেছে।
আমার শৈশবের প্রিয় একটি খেলার মধ্যে গোল্লাছুট একটি। প্রাইমারী লেভেল অবধি এই খেলাটা খেলেছি। তখন এ খেলাগুলাই তো প্রচলন ছিল বেশি। এখনও চোখের সামনে ভেসে উঠে শৈশবের সেই দিনগুলোর কথা। কোথায় যেন হারিয়ে গেল! যাক, শৈশবের সেই দিনগুলো আসলেই অনেক রঙিন ছিল! গ্রামের ঐতিহ্যের আরও একটি খেলা নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হবো! সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন! আল্লাহ হাফেজ 🌼🦋
চলবে....
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Thank you, friend!
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmd7of2TpLGqvckkrReWahnkxMWH6eMg5upXesfsujDCnW/image.png)
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmWDnFh7Kcgj2gdPc5RgG9Cezc4Bapq8sQQJvrkxR8rx5z/image.png)
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
twitter share link
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
পুরোনো দিনের কথা মনে করিয়ে দিলেন ভাই।অনেক খেলেছি এটা। আমাদের এদিক গুড়ি কে বলা হত বুড়ি।ধান কাটা শেষ হলেই এই খেলার ধুম পড়ে যেত।কতবার যে পড়ে গিয়ে ধুলোবালি মেখে ভূত হয়েছি।আপনার এই সিরিজটি অনেক ভাল লাগল।ধন্যবাদ ভাই।
হাহাহা! ভাইয়া একেক জায়গায় একেকভাবে ডাকা হতো! তবে সবাই মিলে খেলাটার মজাই ছিল অন্যরকম।
আমি খেলেছি গোল্লাছুট। আমার বাসার সামনে বড় একটা ক্ষেত ছিলো শীতকালে পানি শুকিয়ে যেত,তখন কোট করে আমরা অনেকে মিলে খেলতাম।যদি আমি বেশি খেলা পারতাম না,তবে আমি বউচি ভালো পারতাম।আসলে আমাদের শৈশবের খেলাগুলো মজা ছিলো,এখনকার বাচ্চারা এই নামগুলো শুনলে বেশ অবাক হয়ে যায়।আসলেই গ্রামীণ খেলার মধ্যে গোল্লাছুট অন্যতম।ধন্যবাদ
জি আপু! মেয়েরাও অনেক পারতো! তারা তো সুযোগ খুজেঁই দৌড়ঁ দিয়ে দিত