ছোটগল্পঃ- পথে হলো পরিচয়
20-12-2023
০৬ পৌষ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
শীতের সকাল! স্টেশনে এসে মনে হলো শীত নেই! মানুষের ভীড়ে একটা ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। একটু পরেই ট্রেন ছাড়বে। ট্রেনের পাশে একই ট্রেনের যাত্রীরা কেউ দাঁড়িয়ে আছে কেউবা ট্রেনের ভিতরে গিয়ে সিটে বসছে! আবির ট্রেনের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। সকালে কিছু খেয়ে বের হয়নি! আবিরের একটা অভ্যাস! কোথাও যাওয়ার পথে কিছু খেতে চাই না! সবসময় মাথায় চিন্তা হয় যদি খেতে খেতে দেরি হয়ে যায়! ট্রেন ছাড়তে এখনও বিশ মিনিট বাকি।
স্টেশনে অনেক ছোট ছোট দোকান। সকালের নাস্তায় কলা আর বিস্কিট হলে ভালোই হয়! হালকা নাস্তা করে নেয়! আবিরের গন্তব্য চট্রগ্রামে! বোনের বাসায় বেড়াতে যাবে! শীতের সময়টা ঘুরার জন্য পারফেক্ট। ভার্সিটি সেমিস্টার শেষে ছুটি দিয়েছে কয়েকসপ্তাহ! এই কয়েক সপ্তাহ ঘরতে পারলে মন্দ হয় না! নাস্তার বিল মিটিয়ে একটা মিনারেল ওয়াটার হাফ মিলি বোতল নিয়ে নেয়। পথে তৃষ্ণা পেতে পারে। আর ট্রেনের ভিতরে পানির দামটাও দশটাকা বেশি রাখে। এজন্য বাহির থেকে কিনে নিলে আলাদা সেই দশটাকা দেয়ার প্রয়োজন পরে না!
কাধেঁ ব্যাগ নিয়ে ট্রেনের ঠ বগীতে উঠে বসে আবির! আবিরের জানালার পাশে বসে যেতে পছন্দ করে! উপরের তাকে ব্যাগটি রেখে চুপটি মেরে বসে থাকে। ফোনে হেডফোন লাগিয়ে আবিরের প্রিয় গান কেউ না জানুক, তুমি তো জানো, শুধু আমার প্লে করে! ট্রেন চলতে শুরু করেছে! ট্রেনে একা যাওয়ার মাঝে তেমন ভালো লাগা কাজ করে না। আগের বার অপুর সাথে গিয়েছিল চট্রগ্রামে! তারই ভাগ্নে অপু! কথা বলতে বলতে যাওয়া যায়। আবির গান শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে গেল টেরই পায়নি! নরসিংদী স্টেশনে এসে পরেছে!
" এই যে জনাব, আমার সিটটা ছাড়ুন। আমার সিটটা জানালার পাশে! "
একটা মেয়ের কন্ঠ ভেসে আসলো তার কানে! কিন্তু অচেনা একটি মেয়ের এমনভাবে কথা শুনে অনেকটাই বিরক্ত হলো!
" জ্বি, ছাড়ছি। একটু ভদ্রভাবে বললে কি হয়! দিলেনতো ঘুমটা নষ্ট করে। "
" অন্যের সিট ছেড়ে তারপর জমিদারের মতো ঘুমান, না করছে কে? "
মেয়ের কথা শুনে আবিরের আরও রাগ বেড়ে গেল। কিন্তু রাগ নিয়ন্ত্রণ করে আর কিছু বললো না! মেয়েটি জানালার পাশে সিটে গিয়ে বসলো!
আবিরের মনে কেন জানি একটা অজানা ভালো লাগা কাজ করছিল! মেয়েটির হাতে নীল রঙের চুরি আর কপালে ছোট করে কালো টিপ! পরনে হলুদ রঙের জামা। মনে হচ্ছে যেন সদ্য ফোটাঁ রজনীগন্ধা ফুল! মেয়েটিকে প্রথম দেখাতেই আবিরের ভালো লেগে যায়! আবিরের হার্টবিট কেন জানি বারবার উঠা নামা করছে! আগে এমন কখনো হয়নি। হয়ত আবির মেয়েটিকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলে!
মেয়েটির চুল বাতাসে যেন বার বার দুল খেয়ে আবিরের শরীরে আসছিল! মনে হচ্ছিল। বসন্তের কৃষ্ণচূড়া ফুলের মতো পাপড়ি হয়ে তার মাথায় পরছে!
হঠাৎ করেই মেয়েটি বলে উঠল,
হ্যালো, জমিদার সাহেব! কোথায় যাবেন আপনি?
এমন কথা শুনে আবির কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে বসলো! তবে অনেকটা খুশি ও হলো! মেয়েটি নিজ থেকে তাকে জিজ্ঞেস করছে কোথায় যাবে!
' আবারো আপনি জমিদার বললেন! ' আবির কিছুটা মুচকি হেসে।
বাই দা ওয়ে! আমি আবির। চট্রগ্রাম যাচ্ছি। আর আপনি?
আমি তিন্নি! চট্রগ্রামের দিকেই যাচ্ছি!
বেড়াতে যাচ্ছেন?
না, এমনিই যাচ্ছি!
তিন্নির এমন কথা শুনে আবিরের কেন জানি সন্দেহ হলো! নরসিংদী থেকে চট্রগ্রাম! এমনিতেই কেউ বেড়াতে যায়!
আপনি কি এমনিতেই যাচ্ছেন! নাকি আমাকে বলতে চাচ্ছেন না!
বলতে চাচ্ছি না আসলে। কিছু মনে করবেন না প্লিজ!
একজন অজানা-অচেনা ছেলেকে না বলাটাই স্বাভাবিক! তবে আপনার সাথে পরিচয় হয়ে ভালো লাগলো।
জ্বি। ঝালমুড়ি খাবেন!
আপনি খাওয়ালে খাবো!
এই মামা! আমরা দুজনকে বিশ টাকার ঝালমুড়ি দেন!
ঝালমুড়ি মামা দুজনকে ঝালমুড়ি দিল! আবির ভাবছে মেয়েটির সাহস আছে! নয়তো একা একা এতোদূর অবধি যাচ্ছে কি করে! তবে এতোদূরে একাও যাওয়া ঠিক না! অজানা অচেনা একটি জায়গায়!
' ঝালমুড়ি আপনার প্রিয়!' আবির বলে উঠল
' হুমম, ঝালমুড়ি খেতে ভালোই লাগে! আমাদের কলেজের পাশে আসাদ মামার ঝালমুড়ি তো দূর্দান্ত লাগে! '
আবিরের বুঝতে বাকি রইল না মেয়েটি সবেমাত্র কলেজে পড়াশোনা করছে। এ বয়সে একটু চঞ্চলতা কাজ করবেই! তবে তিন্নি দেখতে মাশাআল্লাহ! ঠিক যেন মায়াবতী মেয়ে! আবিরের প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায় তিন্নিকে!
কিন্তু আবিরের ভালো লাগার কথাটা হয়তো কখনো বলা হবে না তিন্নিকে। দেখতে দেখতে চট্রগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে এসে পরেছে। তিন্নি আবিরের আগেই নেমে পরলো! আবির রেলওয়ে স্টেশনে নেমে এদিক-সেদিক দেখছে! কিন্তু কোথাও দেখতে পেল না! বিদায়টাও ভালো করে দেয়া হলো না!
হঠাৎ করে আবিরের কানে তিন্নির কথা ভেসে আসে! সে ফোনে কাউকে বলছে, কারো জন্য সে চট্রগ্রাম এসে পরেছে! যে ছেলেটির কথাশুনে এসেছে সে ছেলেটি বিবাহিত! একটা ছেলেও আছে! ফেইসবুকে পরিচয় হয়ে তিন্ন এতোদূর অবধি চলে এসেছে! তিন্নি মন খারাপ করে বসে আছে! প্রথম দেখাতেই যাকে ভালোবেসেছিলাম তাকে সে ভালোবাসার কথায় বলা হলো না! নিয়তির কি খেলা! দুজনের গন্তব্য এক, কিন্তু উদ্দেশ্য ভিন্ন! হয়তো একটা আক্ষেপ থেকে যাবে তিন্নিকে ভালোবাসার কথা না বলার।
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
twitter share
কাল্পনিক গল্প টা অনেক ভাল লেগেছে ভাই।এই ধরনের গল্প পরতে আমার কাছে খুবই ভাল লাগে।ধন্যবাদ এই সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই চমৎকার একটি মন্তব্য করার জন্য 🌼
গল্পটি দারুন ছিল। আসলে প্রত্যেকটা মানুষের কাছে আমি মনে করি ট্রেন জার্নিটা সবচেয়ে বেস্ট । সেখানে অচেনা অনেক মানুষের সাথে পরিচিত হতে পারা যায়। এরকম বয়সে মেয়েদের সাথে সাক্ষাৎ হতে পারাটা কথোপকথন । সব মিলিয়ে ভালোবাসা একটা সম্পর্কের মতো তৈরি হয়ে যায় । যেটা আমরা মুভি বা নাটকে দেখে থাকি দারুন লাগলো গল্পটি পড়ে।
আপনার কাছে ভালো লাগলো জেনে খুশি হলাম ভাই। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে 🌼
প্রথমদিকে গল্পটা পড়তে অনেক বেশি ভালোই লাগছিল। তবে শেষের দিকটা পড়ে অনেক খারাপ লাগলো। আবির তিন্নিকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছিল। তারা দুইজন একই জায়গায় যাচ্ছিল, তবে তাদের উদ্দেশ্য আলাদা ছিল। আবিরের ও আর কখনো বলা হয়ে ওঠেনি, তিন্নির প্রতি তার ভালোবাসার কথা। তিন্নি এই পর্যন্ত এত দূরে যে ছেলেটার জন্য এসেছিল, সেই ছেলেটা দেখছি বিবাহিত এবং তার ছেলেও রয়েছে। যাইহোক সুন্দর করে আপনি এই ছোট গল্পটা লিখেছেন দেখে আমার কাছে ভালো লেগেছে।
জি আপু শেষটা এমনভাবেই করেছি যাতে খারাপ লাগতে পারে 🙆♂️। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আপু চমৎকার মন্তব্য করার জন্য 🌼
তিন্নির সাথে যখন আবিরের প্রথম দেখা হয়েছে, তখনই আবির তিন্নিকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছিল। তবে তাদের গন্তব্য হলে ও উদ্দেশ্য ভিন্ন ছিল। আর আবির তিন্নিকে সেই কথাটা বলার আগেই দুজন দুজনের গন্তব্যে চলে গিয়েছিল। কিন্তু তিন্নি দেখছি অন্য আরেকজন মানুষের জন্য এসেছিল। সেই মানুষটা তাকে ঠকিয়েছে, তা তার পরিচয় জেনেই বুঝতে পারলাম। যাইহোক সব মিলিয়ে সম্পূর্ণটা সুন্দর করেই লিখেছেন।
এই ধরনের গল্প পড়তে আমার খুব ভালো লাগে। আপনি বেশ ভালো লিখেন। যাইহোক অনেক সময় আমরা প্রথম দেখাতেই কাউকে ভালোবেসে ফেলি। আবিরও তিন্নিকে প্রথম দেখায় ভালবেসে ফেলেছে। তবে ভালোবাসলে ও অনেক সময় মুখ ফুটে বলা যায় না। ফেসবুকে পরিচয়ের মাধ্যমে তিন্নির মতো অনেক মেয়েই প্রতারণার শিকার হয়। যাইহোক পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাই। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার কাছে গল্পটি পড়ে ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। তবে সামনে আরও গল্প নিয়ে হাজির হবো 🌼