ছোটগল্পঃ অবাধ্য প্রেম
07-12-2023
২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
' তুই কি এই বখাটে ছেলের সাথে কথা বলা বন্ধ করবি না! ' এই কথা বলেই শিলা বেগম বাহিরে প্লট ছুড়ে মারে! প্লেট মাটিতে পরতেই দু টুকরো!
মিলির সোজা উত্তর, আমি আশিকের সাথেই কথা বলে যাবো। দেখি তোমরা কি করতে পারো! ' মেয়ের এমন কথা প্রতিদিনই শুনতে হয় শিলা বেগমের। সবেমাত্র ক্লাস এস এস সি তে পড়াশোনা করে। সামনে ভালো একটা ভবিষ্যৎ । তা না করে তাদেরই এলাকার একটি ছেলে আশিকের সাথে প্রেম করে বেড়াচ্ছে মিলি। ছেলেটি যে বখাটে এলাকার সবাই জানে! তারপরেও মিলি এই ছেলেটাকে ভালোবাসে।
মিলি আর আশিকের প্রেমে শুরুটা হয়েছিল ক্লাস এইট থেকে। একই সাথে প্রাইভেট পড়ার সময় তাদের মধ্যে সম্পর্কের তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু মিলির সহজ সরল মন যে কোন ছেলেকে আকৃষ্ট করবে। টিনেইজ বয়সে আবেগের কন্ট্রোলটা করা কঠিন। মিলি সেই আবেগের তাড়নায় পরে আশিকের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। আশিকের সাথে একবার কথা না বলে থাকতে পারে না। মিলির তখন ফোনও ছিল না! অনলাইনে কাজ শেখার অযুহাত দিয়ে মাকে বলে স্মার্টফোন কিনে মিলি। তারপর থেকে পড়ার নাম করে ফেইসবুকে একাউন্ট করে প্রতিদিন কথা হতো। কিন্তু মিলির মা জানতো না। দেখতো শুধু মেয়ে অনলাইনে ক্লাস করছে। কিন্তু মিলি যে আশিকের সাথে কথা বলে ফোনে সেটা জানতো না।
মিলির খালার বাড়িও একই সাথে বলা যায়। মিলিদের বাড়ি থেকে হেটেঁ গেলে তিন মিনিটের মতো লাগে। মিলির মা প্রায়ই তার খালার বাড়িতে চলে আসতো। এদিকে মিলি তখন ক্লাস না করে আশিকের সাথে কথা বলতো। ঘন্টা পর ঘন্টা ফোনে কাটিয়ে দিতো। কিন্তু মিলির খালা শামীমা বিচক্ষণ একজন মানুষ! মিলিকে ফোন কিনে দিয়েছে এটা শুনেই আশ্চর্য হয়ে যায় মিলির খালা! কারণ এখনকার জেনারেশন ফোনে কতো কি করে ফেলছে। সামনে জে এস এসি পরীক্ষা! এই মুহূর্তে ফোনটি কিনে দেয়াও ঠিক হয়নি। কিন্তু মিলির মা বিষয়টা ভালোভাবে পাত্তা দেয়নি!
কিছুদিন পর মিলির খালা দেখতে পায় একটা ছেলে তার পিছু পিছু হেটেঁ যাচ্ছে। ছেলেটাকে দেখে চিনতে পারে। একই এলাকার রুহুলের ছেলের আশিক! বাবা একজন অটোরিকশা চালক! কিন্তু ছেলেটা হয়েছে বখাটে! সারাদিন আড্ডা আর দুষ্টুমিতে ব্যস্ত থাকে। এ ছেলের বিরুদ্ধে কেইস পর্যন্ত আছে। এলাকার একটা ছে্লেকে মারধর করার কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু মামলা করেও কাজ হয়নি। ছেলের বাবা হাতে পায়ে ধরে মামলার নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করে। তারপর ছেলেকে ঢাকা শহরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু স্বভাব একটুও পরিবর্তন হয়নি। আগের মতোই এখনও ভন্ডামি করে বেড়ায়! মিলির পিছনের আশিককে দেখে তখনও মিলির খালা বুঝে যায় তাদের মাঝে কিছু একটা আছে।
মিলির খালা মিলির মাকে গিয়ে বলে। মিলি যে লুতুফুতু করছে আশিকের সাথে, সেটার ফলও যে ভালো হবে না আগেই সতর্ক করে দিয়ে যায়। এরপর থেকে মিলির হাত থেকে ফোনটি নিয়ে নেয়া হয়। ফোন ছাড়াই তাকে পড়তে বলে। কিন্তু ফোন নিলে কি হবে তাদের প্রতিদিন দেখা হয়! মিলির জেএসসি রেজাল্টও ভালো হয়নি তারপর থেকে। নবম শ্রেণীতে উঠার পর থেকে তাদের ভালোবাসার গভীরতা আরও বাড়তে থাকে। আশিকের সাথে রাতে ও দেখা করে মিলি। আর মিলির মা ঠিকই বুঝে যায়। তারপর থেকে মিলির সব প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করে দেয়। এরপর বেশ কয়েক মাস তাদের মাঝে কথা বলতে দেখেনি মিলির মা। কিছুটা নিশ্চিন্তে থাকে মিলির মা।
কিন্তু প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোবাসা কি ভুলা যায়। মিলি কোনোভাবেই আশিককে ভুলতে পারে না। আশিকের বাড়ি যেহেতু একই এলাকায় এজন্য মায়ের অগোচরেই মিলি আবার দেখা করে তার সাথে। মিলির চাচাতো ভাই সেটা দেখে ফেলে। মিলির মাকে জানানো হয়! ' আপনার মেয়েকে বলেন ভালো হয়ে যেতে! আমাদের খান বাড়ির মান সম্মান কি রাখবে না? কামলা-মজুরদের সাথে কিসের এতো কথা! '
মিলির মা বুঝতে পারে কিসের কথা বলছে! মেয়েকে নিয়ে খুব টেনশনে পরে যায় মিলির মা। পরিবারের বড় মেয়েকে নিয়ে এতো আশা ছিল সেই মেয়ে আশার মধ্যে পানি ঢেলে দিল! মিলিকে আর ঘর থেকেই বের হতে দেয় না! সামনে এস এস সি পরীক্ষা চলে আসে। কিন্তু মিলির মাঝে পড়াশোনার কোনো বালাই দেখতে পারে না। এদিকে তার মা মিলির চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পরে! পরীক্ষার এক মাস আগে, মিলি সেই আশিকের সাথে পালিয়ে যায়! যাওয়ার আগে টেবলের উপরে একটা চিঠি লিখে যায় মিলি!
' মা, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। তোমার আশা আমি পূরণ করতে পারলাম না। আমি আশিকের সাথে পালিয়ে যাচ্ছি। তুমি ভালো থেকে! '
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
twitter share
আসলেই এটা ঠিক প্রথম প্রেম কেউই ভুলতে পারেনা। মিলি এরকম একটা বকাটে ছেলের সাথে সম্পর্ক করেছিল, যা সত্যি তার মায়ের জন্য অনেক বেশি অসম্মানজনক ছিল। শেষ পর্যন্ত মিলি ওই ছেলেটার সাথে পালিয়ে গিয়েছিল, এটা দেখে সত্যি খুব খারাপ লেগেছে। আর দেখছি মিলি পালিয়ে যাওয়ার আগে তার মায়ের জন্য চিঠি লিখে গিয়েছিল। বড় মেয়ে হওয়ার কারণে তার মায়ের অনেক বেশি স্বপ্ন ছিল তাকে নিয়ে।
জি ভাইয়া আপনি একদম ঠিক ধরেছেন। এজন্য বেশি আশাও করতে নেই সন্তানদের নিয়ে। যাক অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
আপনি অনেক সুন্দর একটা গল্প লিখেছেন যেটা পড়তে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। তবে আবার কিছুটা খারাপও লেগেছে মিলির মায়ের জন্য। মিলির মায়ের অনেক বেশি স্বপ্ন ছিল মিলিকে নিয়ে। কিন্তু মিলি অল্প বয়সেই বখাটে ছেলেটার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়েছিল। আর মিলির মা অনেক চেষ্টা করেছিল ছেলেটার থেকে মিলিকে দূরে রাখার। কিন্তু মিলিও তাকে আর ভুলতে পারিনি, যার কারণে সব শেষে তার সাথে পালিয়ে গিয়েছিল। পুরোটা অনেক সুন্দর করে লিখেছেন আপনি।
জি আপু। প্রথম ভালো লাগা, প্রথম প্রেমের ব্যাপারটাই এমন। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
বর্তমান সমাজে এই ধরনের অবাধ্য প্রেম বেড়ে গিয়েছে। আসলে এই বয়সে আবেগের তাড়নায় ছেলেমেয়েরা অনেক বড় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। হয়তো তখন বুঝতে পারে না একটি সময় ঠিক বুঝতে পারবে। যাই হোক খুবই দুঃখজনক ঘটনা ছিল মা বাবার উচিত ছিল তাকে ফোন না কিনে দেওয়া সেটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য আগে থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ছিল কি আর করার যা হবার তা তো হয়েই গেছে।
আসলেই ভাই, এটা এখন বেড়ে গিয়েছে সমাজে। যাক আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই