দরকারি কাজে পোস্ট অফিসে
17-10-2023
০২ কার্তিক , ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
এই তো দুই দশক আগের কথা! একটা সময় চিঠিই ছিল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। বাবা-ছেলেকে, মা-ছেলেকে অথবা প্রেমিক-প্রেমিকার ভাবের আদানপ্রদান হতো সেই চিঠির মাধ্যমেই। কতোশত আবেগ জড়িয়ে থাকতো চিঠির মাঝে। তখন ফেইসবুক বা ওয়াটসএপের মতো সোস্যাল মিডিয়া ছিল না। মনের পুরো আবেগ বুঝা যেত চিঠি পড়ার মাধ্যমে। ডাকপিয়নের রহমান কাকা অনেকদিন হলো কোনো চিঠি নিয়ে আসে না। সেই নিয়ে এসেছিল ২০০৮ সালের দিকে মেবি! হাতে লম্বা লাঠি, পরনে এক ধরনের ড্রেস! হাতে খাম ভর্তি! চিঠি নিয়ে এসেই বাড়ির সামনে এসে ডাক দিত! সেবার যখন চিঠি এনেছিল আমার আপুর একটা ভার্সিটির নিউজ! আপু তো বেশ খুশি হয়েছিল সেদিন।
আজ আপু নেই! তবে আপুর সেই খামটা খুলে একটা কাগজে কিছু লেখা পড়ে আপুর আনন্দ উল্লাসটা আমার আজও মনে পরে যায়। রহমান কাকা আজ বৃদ্ধ! শুনেছি ডাকপিয়নের চাকরিটা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছে। এখন আর চিঠি বহন করে কারো কাছে নিয়ে আসে না। আর আসবেই বা কেন? চিঠির সেই যুগটা কি এখনও আছে। তবে সেসময়গুলো আপনাকে বাধ্য করবে মস্তিষ্কে স্মৃতি হিসেবে রেখে দিতে। বর্তমান প্রযুক্তির ছোয়া অজপাড়া গাঁ থেকে সবখানেই! ঘরে বসেই যেন সারা পৃথিবীর খবরাখবর রাখা হচ্ছে। শুধুমাত্র একটা স্মার্টফোন হলেই হয়।
যাক, আসল কথায় আসি এবার! দুদিন আগে একটা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পেয়েছিলাম। ডিপ্লোমা করেছি এ বছরেই। ক্যারিয়ার শুরু করার জন্য আপাতত চাকরির পিছনে দৌড়াদোড়ি করতেছি। আসলে মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি থেকে উঠে আসা একজন ছেলে আমি। ডিপ্লোমাটা বলতে গেলে অনেকটা সংগ্রাম করেই শেষ করেছি। তবে মা বাবার গাড়ে বসে আর কতদিন। বাবার শরীরটাও ভালো নেই। একটা কিছুতে জয়েন দিলেও চলবে না। তো চেষ্টা করে যাচ্ছি কোনো একটা জব ম্যানেজ করার। তো কিছুদিন আগে একটা নিয়োগ পেয়েছিলাম। এপ্লিকেশন সাপোর্ট এসিসট্যান্ট পদের জন্য। তো সেটার জন্য প্রয়োজনীয় ডকোমেন্ট ব্যাংক ড্রাফট করে ডাক যোগের মাধ্যমে পাঠাতে হবে।
আমি কখনোই ডাকযোগে কোনো কিছু পাঠায় নাই। সে হিসেবে একদম নতুন এক অভিজ্ঞতা। মোটামোটি এ পর্যন্ত যতগুলো চাকরিতে এপ্লাই করেছি সবকয়টাই অনলাইনের কল্যাণে। খুব সহজেই ঘরে বসে করতে পেরেছি। তো ডকোমেন্টগুলো আবার এ মাসের ২৩ তারিখের মধ্যে পাঠাতে হবে। তার আগে আবার কিছু কাজ করতে হবে। প্রয়োজনীয় ডকোমেন্ট সবগুলা সত্যয়িত করে নিতে হবে। মেডিকেল অফিসারের কাছ থেকে সবগুলো কপি সত্যয়িত করে নিয়েছিলাম। তারপর সোজা চলে গেলাম আমাদের পোস্ট অফিসে! মজার ব্যাপার হলো আমাদের নান্দাইলে যে পোস্ট অফিস আছে নান্দাইল থানার পিছনে সেটা জানতাম কিন্তু এক্সেক্ট লোকেশন মনে পরছিল না। কয়েকজনকে বলে বলে পোস্ট অফিসে এলাম।
পোস্ট অফিসের একদম সামনে ডাকবক্সটা! পুরাতন হয়ে গেছে, জং ধরেছে ডাকবক্সে! কতবছর হয়ে গেল মনে হয় ডাকবক্সে চিঠি পরে না। অবহেলায় আজ ডাকবক্সটাও নষ্ট হওয়ার পথে। পোস্ট অফিসের বিল্ডিংটা অনেক পুরনো। দেয়ালগুলো ফেটে গেছে। সরকার এই ডাক যোগাযোগের কাজে যে টাকা খরচ করতে চাই না সেটা ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম। ডাক যোগাযোগটা এখন রেয়ার হয়ে যাচ্ছে। কদিন পর হয়তো এটার অস্তিত্ব নাও থাকতে পারে! তবে এগুলো না থাকলে চিঠির মাধ্যমে ভাবের যে আদানপ্রদান হতো সেই ফিলিংসটা মনে হয় আর পাওয়া যাবে না। ভিতরে প্রবেশ করেই একজনকে জিজ্ঞেস করলাম কিছু ডকোমেন্ট পাঠাতে হবে ঢাকায়। তবে আমি আসলে জানতাম না যে, ডাক যোগাযোগে কোনো কিছু পাঠালে কত টাকা লাগে!
আমি ভেবেছিলাম ঢাকার বাইরে যেভাবে কুরিয়ার চার্জ নেই ১২০ টাকা করে মনে হয় এভাবেই নিবে। কিন্তু ভদ্রলোককে বলে জানতে পারলাম ডকোমেন্টগুলো পাঠাতে মাত্র ১০ টাকা দিলেই হবে। আমি রীতিমতো খুশি হয়েছিলাম। আমার মনে হয় কুরিয়ার থেকে এভাবে ডাকযোগের মাধ্যমেই কোনো কিছু পাঠালে ভালো। টাকার পরিমাণটাও কম লাগবে। খামের ভিতরে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র দিয়ে উপরে প্রেরক ও প্রাপকে এড্রেস দিয়ে দিলাম। মজার ব্যাপার হলো প্রেরক, প্রাপক কিভাবে খামের উপরে লিখতে হবে সেটাও ভুলে গেছিলাম। ইউটিউব এর কল্যাণে সেখানে বসেই দেখে ফেললাম কিভাবে লিখতে হয়। তারপর লিখে গাম দিয়ে খামটা ভাজ করে দিলাম।
ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করেছিলাম ঢাকা যেতে কতদিন লাগবে। ভদ্রলোক বললো তিনদিনের মতো লাগবে। আগে মনে হয় এক সপ্তাহের বেশি লাগতো। এখন তিন দিনের মধ্যেই ঢাকা পৌঁছে যাবে। জেনে আসলে ভীষণ ভালো লাগলো। তারপর সেখান থেকে চলে এলাম। তবে অনেকদিন পর পোস্ট অফিসে গিয়ে ভালো লাগলো। মনে হয়েছিল শৈশবের একটা নিদর্শন এখনো আছে।
Device | Oppo A12 |
---|---|
Photographer | @haideremtiaz |
Location | w3w |
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
twitter share link
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আজকের যুগে পোস্ট অফিসে মানুষের তেমন আনাগোনা দেখা যায় না। এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এক স্হান থেকে অন্য স্হানে যোগাযোগ হয়। তবে এটা শুনে সত্যি অবাক লাগে আজ থেকে আরও কয়েকবছর আগে যোগাযোগ এর প্রায় সবটুকুই ছিল এই পোস্ট অফিস। যাইহোক ধন্যবাদ আপনাকে।
ঠিক বলেছেন ভাই, এখন তো মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যোগাযোগ করা যায়।
সরকারি সমস্ত অফিসগুলো দেখা যায় প্রতি বছর পরিবর্তন করে এটা ভাঙে সেটা ভাঙ্গা নতুন করে তৈরি করে কিন্তু আপনাদের পোস্ট অফিসের যে দুর্দশা দেখছি ভাইজান আজও যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বা নতুন করে করা হয়নি পুরাতনী রয়ে গেছে। যাই হোক খুব সুন্দর একটি বিষয় আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন এই পোস্ট এর মাঝে, আর এই থেকে বেশি অনেক কিছু ধারণা অর্জন করতে পারলাম।
পোস্ট অফিসের অবস্থা তেমন ভালো দেখলাম না ভাই, দেয়াল সব ফেটে গেছে
দূর দূরান্তের খবর পেতে আগেরকার মানুষ এই ডাক যোগের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করত। সেই দিনগুলো এখন আর নেই প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সবকিছু হাতের নাগালে চলে এসেছে। কত শত মানুষের অপেক্ষার প্রহর ছিল পোস্ট অফিস আসলেই সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে।
আসলেই ভাই। প্রযুক্তি এখন সব সহজ করে দিয়েছে। তবে চিঠির মাধ্যমে ভাবের আদানপ্রদানে যতটা মায়া জড়িয়ে থাকতো বর্তমানে মেসেজে তা পাওয়া যায় না
এখন আর পোস্ট অফিসের তেমন বেশি গুরুত্ব নেই। পোস্ট অফিসের কাজ সম্পূর্ণভাবে করতে পেরেছেন জেনে ভালো লাগলো। পোস্ট অফিসে যাওয়ার অনুভূতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
আসলেই ভাই। পোস্ট অফিস এখন আর আগের মতো নেই, কেউ আসেও না তেমন
এক সময় পোস্ট অফিসে অনেক যাওয়া হত। পোস্ট অফিসে অনেক আবেদন জমা দেওয়া হতো। এবং অনেক এডমিড নিয়ে আসা হতো। কিন্তু সেই দিন এখন আর নেই। এখন সবকিছু অনলাইনের মাধ্যমে। তবে সরকারি চাকরি গুলোর ক্ষেত্রে পোস্ট অফিসের লেনদেন গুলো আছে এখনো। অনেক সুন্দর একটি অনুভূতি প্রকাশ করলেন ভালো লাগলো। আপনার জন্য দোয়া রইল ভালো একটা যেন ভাল চাকরি পেয়ে যান খুব সহজে।
আপু, চাকরিটা পেলে আপনাকে মিষ্টি খাওয়াবো নে 🥰
চিঠির যুগ এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে।তবুও আপনি চিঠি পাঠিয়েছেন আর তার চার্জ এত কম জেনে ভালো লাগলো।আপনার বাবার দ্রুত সুস্থতার জন্য কামনা করছি।আশা করি আপনার প্রচেষ্টা অবশ্যই একদিন সফল হবে।যাইহোক আপনার আপুর কি হয়েছিল ভাইয়া?শুভকামনা রইলো।
আসলে আমার আপু ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল দিদি। আপু মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করতো তখন 🥲
সত্যিই দুঃখজনক ভাইয়া।😢😢