ছোটগল্পঃ- ইদ্রিস দরবেশ

in আমার বাংলা ব্লগ8 months ago

21-11-2023

০৭ অগ্রহায়ণ , ১৪৩০ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


halloween-72939_1280.webp

copyright free image from pixabay

শীতের রাত! চারদিকে থমথমে পরিবেশ। একটা প্রাইভেট কারে বসে আছে রেহান। শুধু রেহানই একা নয়, সাথে আছে মিতু, তোয়া ও নাজিম ভাই। নাজিম ভাই মিতুর বড় ভাই। সন্ধ্যা হতেই গ্রামের পরিবেশ নিস্তব্ধ হয়ে যায়। শীতের সন্ধ্যা বলে কথা। কুয়াশা তার উপর ঘুটঘুটে অন্ধকার। সামনের গাড়ির লাইট যত অবধি আলো যায় সেটাই দেখা যায়। রেহান মিতুর ক্লাসমেট সাথে তোয়াও। দুজনেরই জন্মকর্ম শহরে! গ্রামের রূপ রস তেমন উপভোগ করতে পারেনি। সে হিসেবে দুজনেরই গ্রামে প্রথমবার আসা। প্রাইভেট কারের জানালার পাশে বসেছে রেহান। জানালা খুলতেই হিমশীতল হাওয়া রেহারের হৃদয় জুড়িয়ে দিয়ে গেল! কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই রেহানের শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল!

গ্রামের মাটির ঘ্রাণ আসছে বাতাসে ভেসে। ইটপাথরের শহরে যেটা দেখা যায় না। গ্রামের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য যে কাউকে আকৃষ্ট করবে। জানালার পাশে হেলান দিয়ে মাথা বাহির করে হিমশীতল হাওয়ায় হৃদয় জুড়িয়ে নিচ্ছে। পরক্ষণেই তোয়া অনেকটা বিরক্তিরসুরে বলে উঠল!
' রেহান, জানালা খোলা রেখেছিস কেন? আমার শীত করছে ভীষণ! ' রেহান পাত্তা না দিয়ে আনমনে হাওয়া খেয়েই যাচ্ছে রেহান। একটু পর আবার তোয়ার বিরক্তির সুরে জানালা বন্ধ করার কথা বললো। এবার আর খোলা রাখতে পারেনি। জানালার গ্লাসটা অফ করে খুপটি মেরে বসে রইল একপাশে!

গ্রামের যত ভিতরে যেতে লাগল গাড়ির স্পিড ততই কমতে লাগল। মাটির রাস্তা দিয়ে গাড়ি এতো দ্রুতও চলতে পারে না। গ্রামের নাম কল্যাণপুর! এ গ্রামে রেহান কখনো আসেনি। গ্রামে আসার পিছনে একটা কারণ আছে। সেটা আবার বিশেষ কারণ! মিতুর জন্যই গ্রামে আসা। নাজিম ভাই মিতুর আদরের ছোট বোন। ঢাকা শহরে থাকে। রেহান আর তোয়া মিতুর বাল্যবন্ধু। ছোটবেলা থেকেই একসাথে বেড়ে উঠা। মিতু দেখতে মাশাআল্লাহ স্বাস্থ্যবান। কিন্তু ইদানীং অনেকটা শুকিয়ে গেছে। শুকিয়ে বলতে শরীরের হাড় ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। নাজিম ভাইয়ের কাছে শুনেছে রেহান, মিতুকে জ্বিন আসর করেছে। রাত হলেই শরীর ভর করে। গলার স্বর পুরুষের মতো হয়ে যায়। গত কয়েকমাস ধরেই মিতুকে বড্ড জ্বালাচ্ছে জ্বিন। শরীরে বিন্দুমাত্র জোর পায় না। তোয়া ভর করে রেখেছে মিতুকে।

নাজিম ভাই গত কয়েকমাসে অনেক ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়েছে মিতুকে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। নাজিম ভাই জানতে পারে তাদের গ্রামে এক দরবেশের কথা! নাম তার ইদ্রিস দরবেশ। গ্রামের গভীর জঙ্গলে রাতে বসে। নাজিম ভাই জানতে পারে গ্রামের অনেক মানুষই নাকি ইদ্রিস দরবেশের কাছে গিয়ে ভালো হয়েছে। নাজিম ভাইয়ের কথাতেই গ্রামে আসা। সেই সকালে শহর থেকে রওয়ানা দিয়েছিল রেহানরা। গ্রামের মেঠোপথ ধরে কিছুদূর যেতেই ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দিল। কিছু না বলেই রমেশ চাচা গাড়ি থেকে নেমে কোথায় যেন হারিয়ে গেল!

নাজিম ভাইও গাড়ি থেকে নেমে গেল! ড্রাইভার কিছুক্ষণ পর আসলো। এসেই বললো -
' সামনে গাড়ি যাইবো না। সামনে ভাঙা ব্রিজ। আপনাগো হেটেঁই বাকি পথ যেতে হবে! '

রমেশ চাচার কথাশুনে কিছুটা বিরক্তই হয়ে গেল নাজিম ভাই। গভীর রাতের আগেই যেতে হবে দরবেশের কাছে। গ্রাম সেখান থেকে হেটেঁ গেলে আর এক ঘন্টার মতো লেগে যাবে। এই কনকনে শীতে হেটেঁ যাওয়াও কঠিন। কিন্তু কিছু করার নেই! হেটেঁই বাকি পথ যেতে হবে। নাজিম ভাই রেহানকে বললো গাড়ি থেকে ব্যাগ নামিয়ে নিতে। গাড়ির পিছনে দুটি ব্যাগ রেহান বের করলো। তোয়া মিতুকে ধরে নামালো। কিন্তু মিতু এতো দূর্বল শরীর নিয়ে হেটেঁই যাবে কি করে!

নাজিম ভাই আর তোয়া মিতুকে ধরলো। রেহানের হাতে ব্যাগ। রমেশ চাচা রাতটা গাড়িতেই কাটিয়ে দিবে। ভাঙা ব্রিজের পাশেই বাশেঁর সাকো ছিল। দুজন ধরাধরি করে মিতুকে নিয়ে বাশেঁর সাঁকো পার হলো। কিন্তু রেহান দুটি ব্যাগ নিয়ে আস্তেও কষ্ট হচ্ছিল। তার উপর ঘুটঘটে অন্ধকার চারিদিক। দুটি ব্যাগ কাধেঁ নিয়ে অনেক কষ্টেই সাঁকো পার হলো রেহান! দরবেশের কাছে যেতে আরও অনেকটা পথ! গ্রামের মাটি রাস্তা ধরে হাটঁছে সবাই। নাজিম ভাই মিতুকে নিয়ে ভয় করছিল! রাত হলে মিতুর সমস্যা বেড়ে যায়। এখন যদি জ্বিন আসর করে বসে তাহলে আরেক বিপত্তি।

আস্তে আস্তে হেটেঁ যাচ্ছে সবাই। কিছুক্ষণ হাটার পরই দেখতে পায় একজন ভ্যানচালককে। সবাই কিছুটা অবাকই হয়ে যায় ভ্যানচালককে দেখে। এই নির্জন রাস্তায় ভ্যানগাড়ি! রেহান দেখে অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাসই ফেললো। 'যাক বাবা, শেষ রেহাই পেলাম। ব্যাগ টানতে টানতে বেহাল দশা রেহানের! ' নাজিম ভাই ভ্যানগাড়ির চালককে দেখে মনে হলো কোথায় যেন দেখেছে! পরিচয় জিজ্ঞেস করে জানতে পারে তিনি সবুজ কাকা! তবে এই নির্জন পরিবেশে কি করছিলেন তিনি!

' আপনারা কই যাইবেন! সামনে আর গাড়ি পাইবেন না। '

' আমরা কল্যাণপুর যাবো। ইদ্রিস দরবেশের এখানে। যাবেন আপনি? ' বললো নাজিম ভাই।

'হুম, যামু। তই ভাড়াটা একটু বেশি দিতে হইবো! '

' আচ্ছা সমস্যা নেই। আপনি চলেন! '

এই বলে সবাই ভ্যানগাড়িতে উঠে বসে পড়ল। কারের থেকেও ভ্যানগাড়িতে চড়া বেশি মজার। রেহান খুব খুশি হয়েছিল। কিন্তু খোলা হাওয়ায় গায়ের লোম পর্যন্ত দাড় হয়ে যাচ্ছিল! তারপরেও বাহিরের কনকনে পরিবেশটা রেহান উপভোগ করতে থাকে! ভ্যানগাড়ি চালক দেখতে দেখতে একটা জঙ্গলের সামনে এসে দাঁড়াল। জঙ্গলের ভিতরেই ইদ্রিস দরবেশ বসে!

ভাড়া মিটমাট করে জঙ্গলের ভিতর প্রবেশ করতে থাকলো সবাই! রেহান খুব ভয় পাচ্ছিল। গভীর জঙ্গলে ভূতের ভয়ের সাথে সাপ বিচ্ছুর ভয় তো আছেই। নাজিম দূর থেকে দেখতে পেল মোমবাতির আলো! বুঝতে পারল ইদ্রিস দরবেশ সেখানেই বসে। মোবাতির কাছে যতই যেতে লাগল ততই যেন রেহান ভয় পাচ্ছে। কিন্তু তোয়া কোনো ভয় পাচ্ছে না! তার সাথে আবার মিতু। মোমবাতির কাছে যেতেই দেখতে পেল একজন লাল কাপড় পরা, দাড়ি-গোফ ভর্তি একজন লোক চোখ বন্ধ করে ধ্যান করছে।

থরথর গলায় নাজিম ভাই দরবেশ বাবাকে মিতুর সমস্যর কথা বলে। ইদ্রিস দরবেশ নাজিম ভাইকে তখন বলে মিতুকে মোমবাতির বৃত্তের ভিতরে বসাই! সবাইকে দূরে সরে যেতে বলে। রেহান আর তোয়া তখন ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। নাজিম ভাই দুইজনকে ভয় না পেতে বলে! কিছুক্ষণ পরেই একটা ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়ে যায়। হঠাৎ করেই মিতুর দূর্বল শরীরটা সবল হয়ে উঠে। ইদ্রিস দরবেশ তখন বুঝতে পারে জ্বিন এসে পরেছে। জ্বিনকে তখন জিজ্ঞেস করে -
' এই মেয়ের প্রবেশ করেছিস কেন? কি ক্ষতি করেছে সে! যদি ভুলবশত তোর ক্ষতিও করে থাকে তুই ওকে ক্ষমা করে দে। ওর শরীর থেকে চলে যা! ' মিতুর কন্ঠ পুরুষ টাইপের হয়ে যায়। রেহান সেটা শুনে আরও ভয় পেতে থাকে!

' এই মেয়ে আমার চুলে পা দিয়েছিল। তাই আমি ওর শরীরে ভর করেছি। আমার চুল আমার খুব প্রিয়! '

' তুই যদি ওর শরীর থেকে না যাস তাহলে তোকে আজীবনের জন্য বোতলের ভিতর ভরে রাখা হবে। ' এই বলেই ইদ্রিস দরবেশ মিরমির করে কি মন্ত্র পড়তে থাকে। একটা বোতল হাতে ধরে!

ঠিক তখন, জ্বিন চিৎকার দিয়ে বলে!

' আমাকে ছেড়ে দে! আমি এই মেয়ের কোনো ক্ষতি করবো না। '



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg



আমি কে?

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 8 months ago 

একটি সুন্দর গল্প ইদ্রিস দরবেশ। বেশ ভালো লিখেছেন। ভালো লেগেছে আমার। শহুরে বসবাসরতদের শীতের রাতে গ্রামীণ পরিবেশে ইদ্রিস দরবেশের কাছে মিতুর জ্বীন তাড়াতে নিয়ে যাওয়ার গল্প পড়ে গা ছমছমে করে উঠলো। গল্পের প্লোট-লেখার স্টাইল বেশ ভালো। ছোটগল্প লেখা চালিয়ে যান ভাইয়া। আপনি ভালো করবেন। ইদ্রিস দরবেশ গল্পটি আমাদের সাথে শেয়ার করে পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 8 months ago 

আপনার মন্তব্যটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগল আপু। আশা করছি এভাবেই উৎসাহ দিবেন 💟

 8 months ago 

ভাইয়া এমন গল্প লিখে তো ভয় পাইয়ে দিলেন। আমি এই ধরনের গল্প পড়তে যেমন পছন্দ করি তেমনি শুনতেও অনেক ভালো লাগে। কিন্তু দিনের বেলায় ভালো লাগে। রাতে এমন গল্প শুনলে খুব ভয় করে। যাই হোক আপনার গল্প পড়ে খুব ভালো লাগলো। মিতুর শরীরের পুরুষ জ্বিনকে অবশেষে ইদ্রিস দরবেশ জব্দ করতে পেরেছিলো কিনা জানার অপেক্ষায় রইলাম।

 8 months ago 

জি আপু। আপনার কাছে গল্পটি পড়ে ভালো লাগলো জেনে খুশি হলাম 🍃

 8 months ago 

আপনার লেখা গল্পটি ছোট হলেও বেশ মজার।ছোটবেলায় এই জ্বীনের গল্পগুলো বড়দের কাছ থেকে আমরা শুনতাম।

নাজিম ভাই মিতুর আদরের ছোট বোন।

ভাইয়া, এখানে মনে হয় নাজিম ভাই মিতুর বড় ভাই হবে।যাইহোক শেষমেষ জ্বীন পালিয়েছে জেনে ভালো লাগলো, ধন্যবাদ আপনাকে।

 8 months ago 

জি দিদি একদম ঠিক বলেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি 🍃

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 64153.02
ETH 3205.80
USDT 1.00
SBD 2.63