আবোল তাবোল জীবনের গল্প [ একাল- সেকাল ]

in আমার বাংলা ব্লগ4 months ago

হ্যালো বন্ধুরা,

কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি এবং সুস্থ থাকার চেষ্টা করছি। যদিও সব কিছু আমাদের উপর নির্ভরশীল না কিন্তু তবুও আমরা যদি নিয়মের সাথে কিছু বিষয়ের প্রতি যত্নশীল থাকি তাহলে হয়তো ভালো এবং সুস্থ থাকা দুটোই নিশ্চিত করা সহজ হবে। আমি এর আগেও বলেছিলাম, আগের দিনের মানে আমাদের প্রজন্মের আগের প্রজম্নের মানুষগুলো তুলনামূলকভাবে অনেক বেশী সুস্থ ও সবল ছিলেন। দেখুন সুস্থ থাকা এক বিষয় আর সবল থাকা আরেক বিষয়। তারা কিন্তু দুটোতেই দারুণ অবস্থায় থাকতে সক্ষম হয়েছিলেন। এখন হয়তো আমরা হাজার হাজার রোগের নাম ভয়েই মুখস্ত রাখছি, তাদের সময় তারা হয়তো এগুলোর নাম শুনলে হাসতে হাসতেই অজ্ঞান হয়ে যেতেন। কারন তারা ছিলেন শতভাগ সুস্থ। কিন্তু আমরা কেন এমন হলাম?

আসুক আজকে একটু আলোচনা করি আমাদের এই অবস্থার জন্য কারা দায়ী? কিভাবে আমরা এমন অবস্থানে পৌঁছালাম। আমাদের অভ্যেস এর জন্য দায়ী, আমাদের অলসতা এর জন্য দায়ী, আমাদের আরামপ্রিয়তা এর জন্য দায়ী, ভুল মানসিকতা আমাদের এখানে নিয়ে আসছে। খুব সহজেই বলে দিলাম, কিন্তু বিষয়টি কি আসলে এতো সহজেই ঘটে গিয়েছিলো? মোটেও না, বরং ধীরে ধীরে আমরা একটার পর একটা স্থরে পৌঁছেছি, তারপর নিজেকে এবং নিজেদের মানসিকতাকে পরিবর্তন করেছি। এখানেও খুব সহজে এট ঘটে নাই, আগের প্রজন্মের সেই মানুষগুলো নানাভাবে আমাদের বুঝাতেন কিন্তু আমরা মূর্খ, ক্ষেত এসব নানা শব্দের দ্বারা তাদের অপমান করতাম, আমাদের থেকে তাদের দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করতাম, যাতে খুব বেশী নীতি কথা বলতে না পারেন।

tunnel-698518_1280.jpg

এই যে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন, নিজেকে পরিবর্তন না করার দৃঢ় চেতনা এবং ভিন্ন অভ্যেসের মাধ্যমে নিজের অস্তিত্বকে নষ্ট করার প্রতিযোগিতা, এগুলো কিন্তু ধিরে ধিরে আমাদের শেষ করে দিয়েছে, আমাদের অবস্থানে আলগা করে দিয়েছে, যার কারনে আগের প্রজন্মের মাঝে যে অভ্যেসগুলো ছিলো, যে নীতিতে তারা সবল ছিলেন, যেভাবে তারা নিজেদের জীবন ব্যবস্থা সাজিয়েছিলেন, সেখান হতে আমরা অনেক দূরে সরে যাই, নতুন একটা অস্বস্তিকর অভ্যেস বা জীবন ব্যবস্থা আমরা গড়ে তুলি, যার শেষ পরিণতি আমাদের এই ভঙ্গুর অবস্থা, হাজার রোগের সাথে বসবাস করা। এখন চাইলেও আমরা এখান হতে বেরিয়ে আসতে পারি না, কারন আমাদের এই খারাপ অভ্যেসগুলোর উপর নির্ভর করেই আমাদের সমাজ ব্যবস্থাও পরিবর্তন হয়ে গেছে।

একটা উদাহরণ দেই, ছোট বেলায় আমি বাবার সাথে প্রায় তিন মাইল দূরে যেতাম বাজার করতে, পুরো পথটাই কিন্তু আমরা হেঁটে হেঁটে যেতাম, দারুণ একটা আনন্দময় অনুভূতি তখন চঞ্চল থাকতো হৃদয়ের মাঝে। শুক্রবার আমি সবার আগে ঘুম হতে উঠতাম যেন বাবার সাথে বাজারে যেতে পারি। আর এখন বাড়ির মোরে মোরে বাজার, সবজির দোকান, মাছের দোকান, কিন্তু কেন? কারন আমাদের অভ্যেস, আমরা দূরে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছি, হাঁটতে রাজি নই এখন। অতো সকালে ঘুম ভাঙ্গে না আমাদের, ঘুম হতে উঠতে খুব কষ্ট হয়, তাই বাজার এখন দুই তিন মাইল দূরে না বরং বাড়ির কাছেই তৈরী হয়ে গেছে। আবার এখন আমার ছেলেকে খুব সকালে ঘুম হতে উঠাতে চাইলে বলে তুমি উঠেছো কিন্তু আমার ঘুম কেন নষ্ট করছো? বাজারে যাবে তো দূরের কথা, হাজার টাকা দিতে চাইলেও সে ঘুম হতে উঠবে না, এটাই বাস্তবতা!

man-1253004_1280.jpg

আর দুই তিন মাইল হাঁটার কথা শুনলে তো অজ্ঞান হয়ে যাবে নিশ্চিতভাবে, গ্রামের বাড়িতে খুব একটা যেতে চায় না কিছুটা পথ হাঁটতে হবে বলে, সবজি খেতে হবে বলে, ছোট ছোট মাছ খেতে হবে বলে, এগুলো শুধু আমার ছেলের ক্ষেত্রেই হচ্ছে তা না কিন্তু, বরং প্রতিটি পরিবারের মাঝে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের সবার মাঝেই এমন ভাব দেখা যাচ্ছে। বাস্তবতা সত্যি আমাদের এক কঠিন পরিস্থিতিতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, আমরা চাইলেও এখান হতে আর বেরিয়ে আসতে পারবো না। সমস্যা আমাদের কাছে আসে না বরং আমরা সমস্যাকে ডেকে আনি, সমস্যাকে তৈরী করি তারপর আফসোস করতে করতে সমস্যা পিছনে দৌঁড়াতে থাকি। আগের প্রজন্মের মানুষগুলো সত্যি অনেক বেশী সুখী ও সুন্দর জীবনের অধিকারী ছিলেন, আর আমরা আমাদের অভ্যেস ও মানসিকতার শিকলে বন্দি হয়ে ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছি। পরিবর্তন আসুক নতুনভাবে, জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে।

Image taken from Pixabay 1 and 2

ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah

break .png
Leader Banner-Final.pngbreak .png

আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।

break .png

Banner.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 4 months ago 

আবোল তাবোল হোক আর যাই হোক আপনার লেখা গুলো কিন্তু আমার কাছে দারুন লাগে। আজকেও দারুন লিখেছেন। আগের দিনের মানুষের সাথে কিন্তু আমরা কিছুতেই আমাদের তুলনা করতে পারবো না। পারবো না আমাদের কে সেই ভাবে পরিচালিত চালিত করতেও । নিজের বাড়ির বেশ দারুন উদাহরন তুলে ধরেছেন ভাইয়া। দারুন ছিল আজকের লেখা গুলো।

 4 months ago 

সত্যি বলতে মাঝে মাঝে বেশ অবাক লাগে, বর্তমান প্রজন্মের পরিবর্তনগুলো দেখে। অনেক ধন্যবাদ

 4 months ago 

খুব সুন্দর কথা বলেছেন ভাইয়া। আসলেই আগের প্রজন্মের মানুষের কোন রোগ ছিল না ,ছিল না কোন চাহিদা ,আশা। আর এটাও ঠিক বলেছেন বর্তমানে মানুষের এত পরিবর্তনের কারণ আমরা অনেক আরামপ্রিয় ,অলস এবং আমাদের মানসিকতা। আপনার এই কথাগুলোর মাধ্যমে অনেক কিছুই শিখতে পারলাম। অনেক শিক্ষানীয় কথা আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করেছেন ভাইয়া আপনি। ভাইয়া আপনি মানুষকে খুব সুন্দর ভাবে বোঝাতে পারেন যেটা দেখে আমি মুগ্ধ। ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর একটি জীবনের গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ।দোয়া ও শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 4 months ago 

আর এখন বর্তমান প্রজন্মের মানুষের চাহিদা যেমন বেশী তার সাথে সাথে লোভও অনেক বেশী। ধন্যবাদ

 4 months ago 

জি ভাই, এখন চিকিৎসা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে আবার রোগও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এখন মানুষ অনেক সুবিধাবাদী হয়ে গিয়েছে। আগে একটু হাত কাটলে কচু গাছের রস আরো এটা সেটা দিত। আবার কেউ কিছু করতোই না। আর এখন হালকা একটু কেটে গেলেই ফার্মেসিতে বা ডাক্তারের কাছে চলে যাই। বেশি পরিমাণে কেটে গেলে সেটা ভিন্ন কথা। আর আগে বাজারে কিংবা কোথাও যেতে হলে বেশ কিছু পথ হেঁটে যেতে হতো।তাই তাদের আর আলাদা ভাবে হাঁটা লাগতো না। আর এখন শরীর সুস্থ রাখতে আলাদাভাবে হাঁটার প্রয়োজন হয়। যাইহোক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর লেখাগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 4 months ago 

আগের দিনের মানুষ সম্পূর্ণরূপে প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল ছিলো, যার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিলো না। অনেক ধন্যবাদ

 4 months ago (edited)

আমি বিদেশে থাকি,এখন আমার গ্রামকে অনেক মিস করি, বাড়িতে যখন সবজি রান্না হতো এবং ছোট মাছ তখন রাগ করে খাইতাম না,আর এখন এটাকেই মিস করি ভাই,ধন্যবাদ বাস্তবতা নিয়ে পোস্ট করেছেন,

 4 months ago 

এটাই জীবন সামনে যা থাকে তার প্রতি আগ্রহ থাকে না কিন্তু পরবর্তীতে আমরা সেটাকেই খুব মিস করি।

 4 months ago 

আগের দিনের মানুষেরা প্রচুর পরিশ্রমী ছিলেন এবং নির্ভেজাল খাবার খেতেন,তাই তারা সুস্থ এবং প্রচুর শক্তিশালী ছিলেন। আর আমরা তো এখন কাছাকাছি দূরত্বেও রিকশা দিয়ে চলাফেরা করে থাকি। তাছাড়া কায়িক পরিশ্রম তো একেবারেই কম করি। মোটকথা আমরা এখন অলস জাতিতে পরিণত হয়েছি। তাইতো হসপিটালে গেলে রোগীর অভাব নেই। আর আগের দিনের মানুষ জ্বর, ডায়রিয়া এবং পাতলা পায়খানা ছাড়া কোনো রোগের নাম-ই জানতো না। যাইহোক দারুণ লিখেছেন ভাই। পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 61320.84
ETH 2394.93
USDT 1.00
SBD 2.56