অনুভূতির গল্প- হৃদয়ের টানে কোলকাতা (পর্ব-০৪)
হ্যালো বন্ধুরা,
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ্য আছেন। আজ শেয়ার করবো অনুভূতির গল্পের চতুর্থ পর্ব। আমাদের ক্যাব এগিয়ে চলছে আর আমরা ড্রাইভারের ভিবিন্ন পরামর্শ শুনে নিচ্ছি, বেশ ভালো লাগছিলো। আসলে প্রথম কোন জায়গায় যখন আসা হয় তখন অনেক কিছু এবং অনেক ভাবনাই কাজ করে মনে কিন্তু কেউ যখন সাহস যোগায় এবং ভালো কিছু পরামর্শ দেয় তখন কিন্তু সেই ভাবনা কিংবা ভয়গুলো আর থাকে না। আমাদের অবস্থাও তখন তেমনই ছিলো, চারপাশের দৃশ্যগুলো দেখছি আর ড্রাইভারের সাথে গল্প করছি। ফটোগ্রাফির সাথে সাথে কিছু বিষয় অবশ্য লক্ষ্য করেছি, কোথায় কোন ট্রাফিক জ্যাম নেই, গাড়ি থামলেও সাথে সাথে আবার চালু হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ এক মিনিটেরও কম সময় ট্রাফিক সিগন্যাল থাকছে এবং সবাই সেটা বেশ আন্তরিকতার সাথে মানছে। কারো কোন তাড়া নেই, আইনের প্রতি সবাই বেশ শ্রদ্ধাশীল, যার কারনে ট্রাফিক ব্যবস্থা বেশ ভালো। কেউ সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে না এবং সিগন্যাল মানতে বাধ্য করছে না বরং সবাই ট্রাফিক লাইট দেখেই সাথে সাথে থেমে যাচ্ছে এবং আবার লাইট দেখেই চলা শুরু করছে।
আসলে একটা দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থা তখনই সুন্দর এবং উন্নত হয় তখন দেশের মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়, আইন যতটা সুন্দরভাবে মানা হয় পরিস্থিতি ততোটা সুন্দরভাবে উন্নত হয়, এটাই বাস্তবতা। কেউ কারো আগে যাওয়ার চেষ্টা করছেন না, সিগন্যাল ভঙ্গ করার ব্যাপারে কারো কোন আগ্রহ নেই। দুই পাশের বিল্ডিংগুলো দেখে আরো বেশী অবাক হচ্ছি, একদম যেন পুরান ঢাকার প্রতিচ্ছবি, পুরনো ডিজাইন এবং পুরনো বিল্ডিং, সবই একদম অক্ষত এবং পরিস্কার। কিন্তু পুরান ঢাকার বিল্ডিংগুলো অনেকটাই হারিয়ে যাচ্ছে, যে যেভাবে পারছে সেগুলোকে দখল করছে, ভেঙ্গে নতুন করে আধুনিক স্থাপনা গড়ে তুলছেন, যার কারণে অতীত ঐতিহ্য একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোলকাতায় দেখলাম ভিন্ন দৃশ্য, পুরনো বিল্ডিংগুলো ঠিক আগের মতো দাঁড়িয়ে আছে, অতীত ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে। পুরনোটা ঠিক আগের অবস্থানে আছে কিন্তু নতুন কিছু নতুন জায়গায় নতুনভাবে আধুনিক রূপে তৈরী হচ্ছে, এটাও ভালো দিক ছিল।
গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে আর দুই পাশের দৃশ্যগুলো উপভোগ করার চেষ্টা করছি আমরা। তবে আরো একটা বিষয় অনুভব করেছি সেটা হলো, সড়কের পাশে প্রচুর গাছ রয়েছে কিন্তু গরম ঢাকার তুলনায় অনেক বেশী। যদিও ঢাকায় আগের মতো অতো বেশী সবুজ প্রকৃতি নেই কিন্তু তবুও কোলকাতার তুলনায় ঢাকায় গরম কিছুটা কম। আমরা গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম, তারপর হোটেলে উঠার আগেই নির্দিষ্ট দোকান হতে সিম এ্যাকটিভ করে নিলাম। কারণ এটা ছাড়া দাদার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হবে না। তারপর হোটেলে উঠলাম এবং গোসল সেরে খেতে গেলাম। সেই ড্রাইভারের কথা মতো নির্দিষ্ট দোকানে গেলাম এবং খাবার খেয়ে বেশ তৃপ্ত হলাম। আসলে তার সবগুলো পরামর্শ আমাদের জন্য বেশ কার্যকর ছিলো। যে কোন স্থানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে যথাযথ গাইড পাওয়াটা জরুরী, না হলে অনাকাংখিত অনেক ঘটনার জন্ম হতে পারে।
আমরা খেয়ে আবার হোটেলে চলে আসলাম এবং কিছুটা সময় বিশ্রাম করলাম। তারপর আরিফ ভাই দাদার সাথে যোগাযোগ করে একটা নম্বার নিলেন, তারপর সেই নাম্বারে আমরা নিয়মিত আপডেট শেয়ার করতাম। অবশ্য সিমকার্ড নেয়ার সাথে সাথে আমাদের ইন্টারনেট সেবা চালু হয়ে গিয়েছিলো, যার কারনে আমরা আমাদের গ্রুপে আবার এ্যাক্টিভ হয়ে গিয়েছিলাম। কিছুটা সময় বিশ্রাম শেষে আমরা ছুটলাম, নতুন জুতা কেনার অভিযানে। কোলকাতা আসার আগেই শুনেছিলাম শ্রীলেদারস সবচেয়ে নামকরা ব্র্যান্ড এবং জুতার মানও অনেক ভালো। তাই আমরা সরাসরি চলে গেলাম আমাদের হোটেলে নিকটবর্তী শ্রীলেদারস শো-রুমে। এটা অবশ্য খুব বড় ছিলো না, কিন্তু তবুও বেশ ভালো কালেকশন ছিলো। প্রথমে আমরা পুরোটা একটু ঘুরে দেখি, কি কি কালেকশন আছে, তারপর আমি আর আরিফ ভাই দুইজন দু’জোড়া সু কিনি। দাদার সাথে সাক্ষাতে যাবো, একটু স্মার্ট হয়ে না গেলে কি চলে? হি হি হি।
এটা ছিলো আবারও অবাক হওয়ার বিষয়, কারন আমাদের দেশে অধীক চামড়া শিল্প থাকলেও জুতোর দাম আকাশ ছোঁয়া কিন্তু এখানে দেখলাম সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থা, জুতোর দাম অনেক অনেক কম, মানে আমাদের দেশে এক জুড়ো জুতোর দামে এখানে চার জুড়ো জুতা কেনা সম্ভব না। না না সস্তা বলে যে মান খারাপ কিংবা কোয়ালিটি খাবার সেটা কিন্তু না, বরং কোলকাতায় সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হলো এই শ্রীলেদার্স। আমরা যাদের সাথেই কথা বলেছি সবাই প্রথম সুপারিশ ছিলো এই শ্রীলেদার্স। আমরা সেটার যথার্থ ঠিকই খুঁজে পেলাম। আর আরিফ ভাইতো যা দেখে সেটাই তার পছন্দ হয়ে যায়, তারপর নতুন আরেকটা দেখে দ্বিধায় পড়ে যান কোন রেখে কোনটা নিবেন? শেষে সুমন ভাই সিলেক্ট করে দেন, তারপর একই সুযোগ আমিও নিই, আমার জোড়াও সুমন ভাই চয়েস করে দেন।
তারপর রুমে ফিরে আসলাম আর শুরু হলো অন্য রকম এক উত্তেজনা, কে কোন ড্রেস পড়বো? কাকে কোনটায় বেশী মানাবে? দারুণ কিছু সময় পার করলাম এভাবে। বেশ সময় নিলাম আমরা প্রস্তুত হওয়ার জন্য। এদিকে দাদা বের হয়ে গেছেন এটা শুনে তাড়াহুড়ো শুরু করে দিলাম আমরা, না না না বেশী সময় লাগে নাই যেহেতু মেকআপের ঝামেলা ছিলো না আমাদের, হা হা হা। তারপর রুম হতে বেরিয়ে ক্যাব নিয়ে ছুটলাম কাংখিত লক্ষ্যে চরম উত্তেজনা নিয়ে। মনে মনে কল্পনা করতে থাকলাম দাদা দেখতে কেমন হবে? কতটা স্মার্ট হবে? যদিও দাদা ছবি আগে দেখেছি কিন্তু তবুও অন্য রকম একটা উত্তেজনা মনে কাজ করতে ছিলো। যেই উদ্দেশ্যে কোলকাতায় আসা আজ সেটা পূর্নতা পাবে, দাদার সাথে দেখা হবে, এক সাথে কিছু সময় ব্যয় করবো, উত্তেজনা যেন ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো। বাকিটা পরের পর্বগুলোতে পাবেন ......
তারিখঃ মার্চ ২৫, ২০২৩ইং।
লোকেশনঃ মারকুইস স্ট্রিট কলকাতা, কোলকাতা।
ক্যামেরাঃ রেডমি-৯ স্মার্টফোন।
ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah
আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।

|| আমার বাংলা ব্লগ-শুরু করো বাংলা দিয়ে ||




>>>>>|| এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য ||<<<<<

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
| 250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness

OR
















Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
এটা ঠিক ই বলেছেন নতুন জায়গায় যদি কেউ গাইডলাইন দেয় তবে বেশ ভাল ও সাহস ও পাওয়া যায়। আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছিল আপনারা ছেঁড়া জুতা পরে গেছেন।😂যাই হোক নতুন সুন্দর জুতা কিনলেন দাদার সাথে দেখা হবে বলে।এটা ও ঠিক কলকাতায় গরম বেশি ঢাকার চাইতে।আমি যখন গিয়েছিলাম তখন মে মাস, ছিল প্রচন্ড গরম। খুব ই অসহ্য ছিল।বাইরে গেলে ভাবতাম কখন হোটেলের এসির রুমে আসব।যাই হোক দাদাতো বেড়িয়ে গেলো।আপনারা মেক আপ না করলে ও প্রথম দাদার সাথে দেখা এই উত্তেজনায় আপনারা হয়ত কি করবেন, কি করছেন এতেই কিছু সময় কেটে গেছে।কারন আমি নিজে ফিল করছি আপনাদের ব্যাপারটা।ধন্যবাদ ভাইয়া খুব সুন্দর গুছিয়ে পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।
আরে না, অতো বড় মানুষের সাথে দেখা করতে যাবো একটু স্মার্ট সেজে না গেলে কি হয়? হি হি হি
আসলে ভাইয়া শুধুমাত্র ট্রাফিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রেই না, যে দেশের মানুষ আইনের প্রতি বেশি শ্রদ্ধাশীল হবে সে দেশের সমস্ত ব্যবস্থার ক্ষেত্রেই উন্নত লক্ষ্য করা যাবে। আরিফ ভাইয়া এমনিতেই স্মার্ট বয়, তার উপরে সুন্দর জুতা কিনে নিশ্চয় আরো বেশি স্মার্ট হয়ে গিয়েছিল। ভাইয়া এবার কলকাতায় গেলে দাদার সাথে দেখা করার পূর্বে একটু মেকআপ করে নিয়েন,হা হা হা। মেকআপ করলে দেখতে আরো বেশি সুন্দর লাগে,হি হি হি।
একদমই, আর দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমরা কোন ক্ষেত্রেই কেন জানি আইন মানতে চাই না যার কারনে আমাদের এই অবস্থা।
হা হা হা । ভাইয়া আপনার আজকের পোস্টটি পড়ে কিন্তু বেশ মজা পেলাম। তাই কিছুক্ষন হাসলাম। যাই হোক আমার মনে হয় আপনারা যা স্মার্ট তাই মেকাপের প্রয়োজন ছিল না। আর এত গরমের মধ্যে মেকাপ করলে তো সব নষ্ট হয়ে যেত তখন দাদা কি আপনাদের কে চিনতে পারতো। তো লাভার বয় আরিফ ভাইকে নিশ্চয় নতুন জুতা পড়ায় আরও হ্যান্ডসাম লাগছিল, তাই না ভাইয়া।
বেশী হাসলে কিন্তু ফি দিতে হবে হি হি হি। আসলেই তা, এই জন্যই তো মেকাপ না করেই দ্রুত চলে গিয়েছি।
আমাদের কলকাতার ট্রাফিক ব্যবস্থা অনেক উন্নত হাফিজ ভাই। এখানে খুব বেশি একটা সমস্যা হয় না। আসলে ট্রাফিক সিগন্যাল ভেঙে কেউ চলে যাবে এ কথা কেউ চিন্তাও করেনা।
শ্রী লেদার্স এ জুতোর দাম এবং কোয়ালিটি সত্যিই অনেক ভালো। আমি দেখেছি, আমি যখন কলকাতায় শ্রী লেদার্স এ জুতো কিনতে যাই, সেখানে দেখি প্রচুর বাংলাদেশের লোক এসে জুতো কেনে। বেশ টানটান উত্তেজনা ছিল আপনার আজকের পোস্টটা তে।
একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া ইন্ডিয়া জুতার দাম অনেক কম।আমাদের দেশে তো সবকিছুই আকাশ ছোয়া দাম,নিজেদের উৎপাদিত পণ্য হলেও।ইন্ডিয়া জুতার দাম কম আবার মান ভালো,আর অনেক দিন টেকসই হয়।আমি এটা জানি এজন্য যে,ইন্ডিয়া থেকে একবার জুতা নিয়ে আসা হয়েছিল।মেকআপের ঝামেলা না থাকলে কি।কে কোন ড্রেস পড়বেন এটা নিয়ে তো বেশ উৎফুল্ল ছিলেন সবাই।দাদার সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় অনেক কিছুই ভেবেছিলেন।পরবর্তী পর্বে দেখতে পাবো নিশ্চয় দেখা করার অনুভূতি গুলো।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।